৬ নভেম্বর মঙ্গলবার সারাদিন ভোট
- প্রকাশের সময় : ০৮:৩৭:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ নভেম্বর ২০১৮
- / ৬৯০ বার পঠিত
আবু জাফর মাহমুদ: সকল ধর্ম বিশ্বাসী এবং ধর্ম বিশ্বাসহীনরা ধর্ম, জাতি, রঙ নির্বিশেষে আমেরিকান। ভোট দেয়ার নাগরিক অধিকার এবং দায়িত্ব পালনের মহান একটা দিন ৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচন। এই নির্বাচনের ভোটের ফলাফলের উপর নির্ভর করছে মেডিকেইড হোমকেয়ার, নাগরিকত্ব সংক্রান্ত ট্রাম্পের আপত্তিকর নীতি কার্যকর হবে নাকি তাঁর নিষ্ঠুর আদেশগুলো পুনর্বিবেচনা হবে।
৬ নভেম্বর মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভোট দেয়ার সময়। ডেমোক্র্যাটদেরকে ভোট দিতেই আমরা এবার ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছি সমাজের দরিদ্র, নিন্ম আয়ের এবং মধ্যম আয়ের মানুষদের রক্ষার জন্যে। আমরা ডেমোক্র্যাটদেরকে এবার একচেটিয়া ব্যালট পেপার দেখে দেখে ভোট দিচ্ছি মানবিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালনের কর্তব্যের চেতনায় এবং বিদেশে আমেরিকার মিত্রদেরকে আবারো আমেরিকামুখী করার সমর্থনে। নিজে কোন পার্টি করি বা না করি, ডেমোক্র্যাট ব্যালটেই দেবো ভোট।
রোববার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা জ্যামাইকায় নিউইয়র্ক ষ্টেট সিনেটের প্রার্থী জন ল্যুর সমর্থনে নারীদের শক্তিশালী সংগঠন নিউ আমেরিকান ওম্যান্স ফোরামের মহিলাদের ব্যানারে নির্বাচন প্রচারণায় মিছিলে শ্লোগান দিচ্ছিলাম ছাত্রজীবনের পুরো সময়ের চেতনায় ফিরে যাবার আগ্রহ নিয়ে। ভোটের মাত্র এক দিন বাকি। বৃদ্ধ যুবক মাঝ বয়সী এবং কমবয়সীদের মধ্যেও একই সমর্থনের প্রতিফলন দেখে হয়েছি অভিভূত।
মোরশেদ আলমের নেতৃত্বাধীন মহিলাদের এই সংগঠন প্রতিটি নেতা কর্মীকে পেলাম উজ্জীবত। স্থানীয় সংগঠকদের আন্তরিকতা ছিলো রাজনৈতিক পরিবেশের প্রাণশক্তি। প্রার্থী জন ল্যুকে দেখা গেছে খুবই পরিপক্ষ জননেতার আদলে। তার প্রতিটি কথা ছিলো প্রচলিত রাজনীতিবিদদের পপ্রথাগত প্রচলিত বাক্য থেকে বেশী অন্তরিক।দীর্ঘকালের রাজনৈতিক সাংগঠনিক এবং সমসাময়িক তূলনামূলক রাজনীতির আলোকে তার ভেতর রয়েছে মানুষের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেবার হৃদয় এবং বুদ্ধি।
দীলিপ, দেলোয়ার, জয়, উৎপল ও মিলন সহ আরো অনেকেই নারী নেতাদের সক্রিয়তার মধ্যে যথার্থ অবদান সহ উপস্থিতিকে করেছেন স্বার্থক। কিছু বৃদ্ধ মানুষ জীবনের অভিজ্ঞতায় আমাদের উচ্চকিত পদচারণাকে করেছেন উৎসাহিত। এরা সকলেই ডেমোক্র্যাটদের ভোট দেয়ার কথা জানিয়েছেন। সাংবাদিকরা এই সাংগঠনিক ক্যাম্পেইনে তাদের দায়িত্ব পালনের বাহিরেও পালন করেছেন প্রশংসিত ভূমিকা।
সর্বত্রই চলছে ভোটারদের ৬ নভেম্বর মঙ্গলবারে ভোট কেন্দ্রে আনার প্রস্তুতি। যে যাকে ভোট দেয়ার তাকেই দেবেন। তবুও সবাই যেনো কেন্দ্রে এসে ভোট দিয়ে তাদের মতামত জানান। এই চিন্তা থেকেই আজকের লিখায় হাত দেয়া। কাউকে প্রভাবিত করে নয়, সব নাগরিকই যেনো ভোট দেয়া জেনে নিই এবং ভোট প্রয়োগ করি।
অনেক মানুষ বহু দিনের ডেমোক্র্যাট নেতা তবুও ডেমোক্র্যাটরা প্রাইমারিতে তাদেরকে বিদায় দিয়েছেন তাদের কর্মফলের জন্যে। তারা যদি সত্যিকার অর্থে ক্ষমতা ভোগের চেয়ে দল এবং দলের সমর্থকদেরকে সম্মান করেন তারা নিশ্চয়ই দল বাদ দিয়ে অন্য দলের হয়ে ভোটে প্রার্থী হবেননা। যদিও তাদের প্রার্থী হবার সুযোগ আছে নাগরিক অধিকারে। রিপাবলিকানদেরকে কম আয়ের মানুষরা দেখছেন নিজেদের অস্তিত্ব বিনাশের কারণরূপে। আসলে বিষয়টি দুশ্চিন্তার।
মধ্যবর্তী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সক্রিয়তা বেড়েছে। আমেরিকার সব জরিপে দেখা গেছে, মঙ্গলবার ৬ নভেম্বরের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থিত প্রার্থীরা কংগ্রেসে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব করবে। সিনেটের অবস্থাও অনিশ্চিত। নির্বাচনে প্রভাব বাড়ানোর প্রস্তুত্তিতে যে নিষ্ঠুর নীতি দেখাচ্ছেন তাতে ধরে নেয়া যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ভয় পেয়েই করছেন শেষ চেষ্টা। আমেরিকায় জন্ম নেয়া শিশু আমেরিকানদের নাগরিকত্ব বাতিল করবেন বা নাগরিকত্ব দেয়া হবেনা। বাবা মা নাগরিক না থাকলে বা গ্রীনকার্ডধারী না থাকলে তার অপরাধের দায়ে সারা জীবন শাস্তি ভোগ করবে শিশু আমেরিকান? বেশী আজগুবি ইচ্ছা তার। আমেরিকা কারো একার যথেচ্ছাচারে কি চলে? আসলে প্রেসিডেন্ট কি পারবেন? তার কি আছে সেই ক্ষমতা জন্মসূত্রে নাগরিকদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করতে?
সীমান্ত পথে আমেরিকায় স্থায়ী বসবাসের আশায় প্রবেশে ইচ্ছুকদেরকে প্রতিরোধ করার জন্যে তিনি সামরিক বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে। ওদের মধ্যে বিপদাপন্ন কোন কেউ যদি ক্ষিপ্ত হয়ে আমেরিকান সামরিক বাহিনীর কোন সদস্যকে পাথর বা ঢিল ছোঁড়ে টাকে গুলী কোড়ে কোড়ে মারার আদেশ দিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট। বিশ্বের সেরা সামরিক শক্তিকে কি কোথায় ব্যবহার করতে হয় তার তো জানা থাকার কথা। তাই, মনে হচ্ছে, আমাদের প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা হারানোর ভয়ে এতোই ভীত হয়েছেন যে, সব দিকে সবকিছুকেই শত্রু ভাবছেন।
কথা হচ্ছে, তিনি কাদেরকে খুশী করতে এই উদ্ভট পথে রওয়ানা দিয়েছেন? তিনি কি কট্টর উগ্রপন্থি ও বর্ণ-বিদ্বেষীদের উস্কিয়ে দিতে চলেছেন সমগ্র আমেরিকার ভেতর এলোমেলো পরিস্থিতি সৃষ্টির আশায়? নাকি কেবল তাদের ভোট ব্যাংক আকৃষ্ট করে ক্ষমতায় দীর্ঘ আয়ু আশা করছেন? ইমিগ্র্যান্টদের বিরুদ্ধে তিনি যে অভিযানে নেমেছেন, তাতো তারা নিজের বিরুদ্ধেই করছেন। কেননা, তিনি নিজেই ইমিগ্রন্ট পরিবারের লোক। তবে যদি তিনি তা মনে না রেখে ক্ষমতার ব্যবসার স্বার্থে অথবা তিনি যদি আদি আমেরিকানদের স্বার্থ রক্ষা করতে একটা নজির সৃষ্টি করতে আগ্রহী হন, তাহলে তিনি আদিবাসী রেডইন্ডিয়ানদের পক্ষে আইন করতে প্রস্তাব করতেন। তা কি তিনি করেছেন? তা করেননি। তাহলে তিনি ইমিগ্র্যান্ট বিরোধী পদক্ষেপ এবং মধ্যবিত্ত নিন্মবিত্তদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন কেনো? বুঝলাম আমেরিকা ধনতান্ত্রিক দেশ এবং দুনিয়ার ধনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার নেতা। ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থাতো কেউ আমেরিকায় ভাংছেনা। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বা রিপাবলিকান পার্টি তো ধনতন্ত্রের বিপক্ষে আইন তৈরীর জন্যে আগ্রহী হচ্ছেনা।
তাহলে তিনি কেনো কট্টর উগ্রবাদী হচ্ছেন, কেনো তিনি ষ্ট্যালিন মাওসেতুংকে অনুসরণ করছেন, ভিন্নমতাবলম্বীদের সহ্য করছেননা। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভোটের শক্তি মধ্যবিত্ত নিন্মবিত্ত মানুষদের পেটে লাথি মারছেন? সমাজের অসঙ্গতি এবং নাগরিক জীবনে অধিকার ভোগে বর্ণবৈষম্য এবং অঞ্চল ভেদে সুযোগ দেয়া না দেয়ার রীতি চালু করার ফল তো আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বিচ্ছিন্নতার পরিবেশ সৃষ্টি করা। একজনের ক্ষমতা ভোগের বিলাসিতার বাবতে কি রাষ্ট্রের ও নাগরিক চেতনার ক্ষতি করার কোন যুক্তি আছে?
হোম কেয়ার সার্ভিস বা মেডিকেইড বাতিলের পদক্ষেপ নিতে চলেছেন? এই উদ্যোগ কি দেশপ্রেমের নাকি মানবতার? এসব তো আমেরিকান মানুষের অর্ধেকের বেশীর ভাগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। আমেরিকান জাতি কেনো একজনকে নাগরিক ভোটে পরাজিত দেখেও মেনে নিয়েছেন? কেনো ফুড ষ্ট্যাম্প বা জীবনের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে সরকারের দেয়া সামান্য আর্থিক সুযোগ গ্রহনকারীদেরকে নাগরিকত্ব ত্যাগে বা স্থায়ী বসবাসের অধিকার ত্যাগে বাধ্য করতে পারবেন? আমেরিকার আইন কি আপনাকে এতো ক্ষমতা দিয়েছে? এতো ক্ষমতা আপনার নেই।
যাহোক, আপনি জেনেছেন বা বুঝেছেন মধ্যবর্তী নির্বাচনে আপনার কারণে রিপাবলিকান আসন কংগ্রেসে কমে গেলে আপনি ইম্পিচ হবেন ক্ষমতা হারাবেন। এই বিষয় বুঝে যাবার জন্যে ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি ইম্পিচ নাও হতে পারেন। আপনার ক্ষমতার মেয়াদ ঠিক থাকতে পারে। এমনকি মেয়াদ ডাবলও হতে পারে। আরেকবার ও নির্বাচিত হতে পারেন একইভাবে। তবে আপনি সীমান্ত পাহারা মজবুত করে অন্যায় প্রবেশ রোধ করতে পারেন। তা আপনার দায়িত্ব। তা করুন। তবে আপত্তিটা হচ্ছে আপনার সুরে জাতি বিদ্বেষ এবং বর্ণ বিদবেষ। তাই আপনাকে সন্দেহে দেখছেন অনেকে।
আপনার ভক্তরা আপনার কথায় অনুপ্রানিত হয়ে প্রার্থনারত ইহুদীদেরকে গুলি করে হত্যা করেছে বলে পত্রিকায় পড়লাম। এটাকি হিটলারের জার্মানীর প্রেতাতœার শাসনে আছি? আপনার বিরুদ্ধ দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রধান নেতাদের ঠিকানায় আপনার ভক্তরা যে ভয় দেখানোর খেলা খেলেছে, পার্সেল বোমা চিঠি পাঠিয়েছে, তাকি আপনার প্রতি মানুষের ক্ষোভ বাড়িয়েছে নাকি আপনার ও আপনার কোন কোন অনুরাগীর দুঃসাহসের বা হীনমন্যতার জন্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে? ভাবলে ভালো হয়।
আমেরিকার সমাজ জীবনে আগুণ লাগিয়ে দিয়ে কোন ধনাঢ্য ব্যক্তি মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা কিনে নিয়ে বসবাস করতে পারবেন কিছুকাল। তবে আপনি কি দুনিয়ার মতো আয়ু পাবেন? এতো সময় আপনি পাবেননা। আপনাকেও কেউ হত্যা করবে। তিনি হচ্ছেন আল্লাহর ফেরেস্তা। ইঞ্জিল, বাইবেল, কোরান সহ সব ধর্মগ্রন্থই এই হত্যার কথা একইভাবে জানিয়ে দিয়ে সতর্ক করেছন মানব জাতিকে।
হন্ডুরাস থেকে আগত ঠেকানোর জন্যে হাজার সৈন্য পাঠিয়ে আমেরিকাকে কি প্রমান করতে চাইছেন? আমরা আপনাকে ক্ষমতায় মেনে নিয়েছি, আমাদের সবাইকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব আপনার। তবে এবার মানুষের ক্ষোভ যেভাবে বেড়েছে তাতে আপনার শেষরক্ষা হবেতো? নিউইয়র্কে আপনার নিজের জায়গায় ম্যানহাটন সহ কুইন্স, ব্রুকলীন, ব্রঙ্কসের অবস্থায় আপনার বেগতিক পরিস্থিতি দেখছি। ইহুদী মেরে ইহুদীদের ভয় লাগিয়ে ভোট চাইছেন? স্টেটেন আইল্যান্ডে বসবাসরতদের মধ্যে কি পরিস্থিতি?
আমরা সকল ধর্ম বিশ্বাসী এবং ধর্ম বিশ্বাসহীনরা ধর্ম, জাতি, রঙ নির্বিশেষে ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিতে আগ্রহী দেখছি। ৬ নভেম্বর মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভোট দেয়ার সময়। ডেমোক্র্যাটদেরকে ভোট দিতেই আমরা এবার ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছি সমাজের দরিদ্র, নিন্ম আয়ের এবং মধ্যম আয়ের মানুষদের রক্ষার জন্যে। আমরা ডেমোক্র্যাটদেরকে এবার একচেটিয়া ব্যালট পেপার দেখে দেখে ভোট দিচ্ছি মানবিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালনের কর্তব্যের চেতনায়। নিজে কোন পার্টি করি বা না করি ডেমোক্র্যাট ব্যালটেই দেবো ভোট।
লেখক: আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক এবং আমেরিকান রাজনীতিক।