সুরতহাল-
- প্রকাশের সময় : ১২:৪১:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪
- / ৩১ বার পঠিত
সাঈদ তারেক: শেখ হাসিনা জানতেন।
তবে পিনাক রঞ্জন যেটার কথা বলেছেন সেটা না। ৫ আগষ্ট কিছু যে একটা ঘটতে যাচ্ছে বা সরকার পড়ে যাচ্ছে এটা ভারত সরকার আগেই জানতো, পিনাক রঞ্জন এমনটাই দাবী করেছেন। তার মতে, তবে এটা শেখ হাসিনা জানতেন না। হাসিনা জানতেন তার বিরুদ্ধে একটা বড় ঘোট পাকানো হচ্ছে। ওয়াশিংটনের সূত্রে এ তথ্য তার কাছে চলে আসে বেশ কয়েক বছর আগেই। রাশিয়ার গোয়েন্দা সূত্রও সতর্ক করেছিল ওয়াশিংটন তার বিরুদ্ধে আরব বসন্তের মত একটা ছাত্র অভ্যুত্থান ঘটানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। শেখ হাসিনা এটাও জানতেন ওয়াশিংটনের পছন্দ ড. ইউনুস। তাকে সড়িয়ে ইউনুসকে বসানো হবে।
ইউনুস সাহেব তার টার্গেট হন অবশ্য তারও বেশ আগে। অনেক আশা ছিল শান্তিতে একটা নোবেল ঝুলিতে উঠবে। টাউট বাটপাররা তাকে এইরকম একটা ধারনা দিয়ে নাচাচ্ছিল। কিন্তু প্রফেসর ইউনুসের কপালে শিকা ছিড়লে তিনি ক্ষিপ্ত হন। নিছকই মধ্যবিত্ত বাঙালী রমনীর টিপিকাল মানসিকতা থেকে প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে ওঠেন। গ্রামীন ব্যাংক কেড়ে নেন। সুদখোর গরীবের রক্তচোষা ঠগ প্রতারক- নানা অপবাদ দিয়ে পচাতে চেষ্টা করেন। বিশ্বব্যাংকের টাকা ঠেকিয়ে দিয়েছেন এমন আওয়াজ তুলে তাকে ব্রীজ থেকে টুপ করে পদ্মায় ফেলে বা চুবিয়ে আনার মনোবাঞ্ছাও প্রকাশ করেন। ইউনুস নিধন যজ্ঞে মাঠে নামান তাবৎ মিডিয়া তথাকথিত সুশীল দলদাস কবি সাহিত্যিক শিল্পী সংষ্কৃতিজীবিদেরকে। সবাই তারস্বরে কোরাস গেয়ে ইউনুস সাহেবের মুন্ডুপাত করতে থাকেন। অবশ্য এতে প্রফেসর ইউনুসের একগাছি লোমও ছেড়া যায় না। যে দিন শেখ হাসিনা ওয়াশিংটন-প্লান সম্পর্কে জানতে পারেন তার পর থেকে ইউনুসকে ক্ষমতার জন্য হুমকী বিবেচনা করতে থাকেন। পচানোর নতুন মাত্রা যোগ হয়। শুরু হয় একের পর এক মামলার পালা। অর্থাৎ কোন একটা মামলায় সাজা দিয়ে ওয়াশিংটনসহ তার বন্ধুবান্ধবদেরকে দেখানো, লোকটা একটা সাজাপ্রাপ্ত আসামী, ক্রিমিনাল, তাকে সরকারে বসানোর আইডিয়া বাদ দাও।
অনেকেরই হয়তো স্মরণ থাকবে, ২০১৮ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপিসহ সকল বিরোধী দল যখন আন্দোলন করছে তখন একটা ফর্মূলা নিয়ে বেশ দৌড়ঝাপ চলছিল। মান্না সাহেবসহ বেশ কয়েকজন নেতা বলছিলেন তত্ত¡াবধায়ক সরকার থাকতে হবে কমপক্ষে দুই বছরের জন্য। অর্থাৎ তারা ধরে নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবে এবং পরের নির্বাচন একটা তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে। নির্বাচনের আগে সে সরকার বেশ কিছু সংষ্কার করবে। এটাই ওয়াশিংটন-প্লান বলে সে সময় রটেছিল। বিএনপি এই ফর্মূলার সাথে একমত হয় নাই। তারা বলছিল যে কোন অবস্থায় তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের কথা। রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে একমত হতে না পারায় সে যাত্রা ওয়াশিংটন-প্লান স্থগিত হয়। এ সময়কালটায় প্রফেসর ইউনুসকেও কিছু রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে দেখা গেছিলো। প্লান স্থগিত হলে তিনি চুপ হয়ে যান। ওয়াশিংটন ইজারা রিনিউ করে দিয়ে ফিরে যায়। শেখ হাসিনাই পরের সরকার গঠন করবে, দিল্লীর এ বার্তা পেয়ে বিরোধী দলগুলো আন্দোলন রেখে একটা পাতানো নির্বাচনে অংশ নেয়।
বাইডেন সাহেব প্রেসিডেন্ট হয়ে বিশ্বে গনতন্ত্র সমুন্নত রাখার সংকল্প ঘোষনা করলে শেখ হাসিনার কপালে ভাজ পড়ে। গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রন না জানানোয় মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে যায় প্লান পরিত্যক্ত হয় নাই। তা আরও স্পষ্ট হয় র্যাবসহ কিছু বাহিনী প্রধানের ওপর স্যাংশন আরোপ করায়। পরবর্তীকালে পিটার হাসের দৌড়ঝাপ তো আমাদের দেখা। এবার মোটামুটি নিশ্চিত ছিল গনেশ পাল্টাবে। কিন্তু এবারও দিল্লী সামহাও ওয়াশিংটন ম্যানেজ করে ফেলে। হাস সাহেব ক্ষুব্ধ হয়ে ঘরে বসে যান। বিরোধী দলগুলো অকুল পাথারে পড়ে। দিল্লীর পৃষ্ঠপোষকতায় শেখ হাসিনা একটা ডামি নির্বাচন করে আবার পাঁচ বছরের জন্য বসে যান।
কিন্তু দশ কি এগারো সাল থেকে রাজনীতিতে যে একটা নীরব পরিবর্তন হয়ে চলেছে এই বাস্তবতাটা রয়ে যায় সবার হিসাবের বাইরে। জামাত-শিবির দেশে যে একটা সংগঠিত এবং আদর্শভিত্তিক সংগঠন এটা খোদ আওয়ামী সরকারও স্বীকার করতো। ভারত তার পরিকল্পনায় হুমকী হিসেবে এই একটি সংগঠনকেই মনে করতো। একে ধ্বংশ করার জন্য যুদ্ধাপরাধি বিচার গনজাগরন মঞ্চ সহ নানাবিধ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। জামাত-শিবির ধরা, তাদেরকে হত্যা করা, গুম করা, আয়না ঘরে আটকে রাখা, মেরে পঙ্গু করে দেওয়া, মামলা দিয়ে জেলে আটকে রাখা, রিমান্ডে নিয়ে পেটানো, শিবিরের ছেলেদের শিক্ষাজীবন ধ্বংশ করে দেওয়া, কাউকে বাড়ীতে থাকতে না দেওয়া, ধরে ধরে ইচ্ছামত টাকা আদায়, মিলাদে বসলেও জঙ্গী বলে ধরে নিয়ে আসা, কোরআন হাদিসের বইকে জ্বেহাদী বই বলে আসামী চালান করে দেওয়া- ইত্যাকার হেন কোন নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা নাই যা তাদের ওপর প্রয়োগ করা হয়নি। পুলিশ এবং লীগ কর্মীদেরকে শিবির ধরা পেটানোর জেনারেল লাইসেন্স দিয়ে রাখা হয়েছিল। জামাত-শিবির মারা ছিল তাদের কাছে একটা খেলা। এমন পরিস্থিতিতে দলটা তাদের কৌশল পরিবর্তন করে। প্রকাশ্য তৎপরতা থেকে সম্পূর্ণ গুটিয়ে এনে ভেতরে ভেতরে কাজ শুরু করে। শিবিরের ছেলেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যায়। লেখাপড়ায় মন দিয়ে সর্বত্র ভাল রেজাল্ট করে চলে। অত্যন্ত কৌশলে নতুন রিক্রুট ও সংগঠন গড়ে তোলার কাজ চালিয়ে যায়। ক্যামোফ্লেজ হিসেবে ছাত্রলীগ ছাত্রদল বা অন্যান্য সংগঠনে অন্তর্ভূক্ত হয়। কিছুসংখ্যক ঢুকে যায় আইটি সেক্টরে। দীর্ঘ এক যুগের প্রয়াসে তারা দেশের প্রায় প্রতিটি বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গোপনে নিজেদের অবস্থান সংহত করে নিতে সক্ষম হয়। ’১৮ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলনটা ছিল তাদের জন্য টেস্ট কেস। সেখানে ব্যপকভাবে অংশগ্রহন করে এবং ক্ষেত্রবিশেষে নেতৃত্ব দেয়। এই আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিয়ে এরা পরের ধাপের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। শেখ হাসিনার তাবৎ গোয়েন্দা বাহিনী পুলিশ প্রশাসন দুইহাতে টাকা কামানোর নেশায় এতটাই মত্ত ছিল এই ডেভলপমেন্টটা তাদের এন্টেনার বাইরে রয়ে যায়।
এবারের কোটা সংষ্কার আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরী করেছেন শেখ হাসিনা নিজে। ’২০১৮ সালের আন্দোলনে ছাত্ররা চেয়েছিল সংষ্কার। উনি মহামহিম মহারানী, রাগের মাথায় পুরো কোটা সিস্টেমই বাতিল করে দিলেন। উনার মুখনি:সৃত বানী ছিল ঐশীবানী। তা পরিবর্তন হতো না। সরকার গেজেট করে কোটা বাদ দিয়ে দিলো। এবার যেটা হয়েছে, প্রশাসনে এবং দলে ৫০/৫৫ বছর বয়সী ভূয়া মুক্তিযোদ্ধারা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালে কোনভাবে শেখ হাসিনাকে পটাতে সক্ষম হয়। এতদিনে তাদের ছেলে মেয়েরা মোটামুটি চাকরির বয়সে পৌঁছেছে। গাধা-গর্দভ এইসব হারামপুতদেরকে সরকারি চাকরিতে ঢোকাতে কোটা ছাড়া উপায় নাই। শেখ হাসিনা এদের কথায় নেচে কোর্টে এক চাকরকে দিয়ে কোটা বাতিলে তারই করা আদেশ বাতিল করিয়ে দেন। ছাত্ররা ইস্যু পেয়ে যায়।
শেখ হাসিনা বা সরকার এ আন্দোলনকে ধর্তব্যের মধ্যেই নেয়নি। প্রথমদিকে হাসি ঠাট্টা করেছে। ছাত্রলীগ একাই যথেষ্ঠ! পরে হুমকী। কিন্তু মধ্য জুলাইয়ে আবু সাঈদসহ ছয়জন শহীদ হলে সাধারণ ছাত্রদের মাঝে ব্যপক ক্ষোভের সৃস্টি হয়। দলে দলে তারা নেমে আসতে থাকে রাস্তায়। কেউ কেউ দাবী করেন এ আন্দোলন দমাতে ভিনদেশী বাহিনী আনা হয়। শুরু হয় নিষ্ঠুর দমনপীড়ন। সেই পুরনো কৌশলে গুলী হামলা মামলা গ্রেপ্তার। এ আন্দোলনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে শেখ হাসিনাসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তারা ব্যঙ্গবিদ্রæপাত্মক বক্তব্য দিতে থাকেন। উদ্ধত শেখ হাসিনা আন্দোলনকারিদেরকে রাজাকারের নাতিপুতি বলে কটাক্ষ করলে পরিস্থিতির অবনতি হয়। ‘ভাত হারুন’ কিছু সমন্বয়ককে গ্রেপ্তার করে মনে করেন সব ঠান্ডা হয়ে গেছে। কিন্তু ছাত্রনেতাদের কৌশলের কাছে সরকারি সব অপচেষ্টা ব্যর্থ হতে থাকে। প্রতিদিনই দেশের এখানে সেখানে ছাত্রসহ সাধারন মানুষ মৃত্যুবরন করতে থাকলে পরিস্থিতির অবনতি হয়ে চলে। এ সময় শেখ হাসিনা ‘বাঙ্গালকে হাইকোর্ট’ দেখান। কোর্ট আগের আদেশ স্থগিত করে চূড়ান্ত রায়ের জন্য এক মাস সময় নেয়। কাজ হয় না। কারন ততদিনে একটা সর্বব্যপী আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরী হয়ে গেছে। প্রথমদিকে রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি দুরে অবস্থান করলেও কৌশলে নেতাকর্মীদেরকে ছাত্রদের সাথে মাঠে নামায়। জামাতে ইসলামী প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিতে থাকে। কারন সারা দেশে ছাত্র নেতা বা সংগঠকদের অধিকাংশই ছিল শিবির বা সমমনা।
এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা কিছুটা ঘাবড়ে যান। বিজিবি আর্মি ট্যাংক কামান নামিয়ে দেখামাত্র গুলী, হেলিকপ্টার থেকে ব্রাশফায়ারে সাধারন ছাত্র জনতা এমনকি শিশু কিশোর হত্যা গোটা দেশবাসীকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এমনি এক সময়ে প্যারিসে বসে প্রফেসর ইউনুস দীর্ঘদিন পর দেশের পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য রাখলে বোঝা যায় কিছু একটা পাকাচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশ ও লীগগুন্ডারা মিলে হাজারখানেক মেরে ফেলেছে। জারী করা হয় কারফিউ। ওয়াশিংটন প্লানের কুশীলবরা এই পর্যায়ে জোরেসোরে ইনভল্ব হন। মনে করা হয় আর একটু ধাক্কা দিলেই সরকার পড়ে যাবে। জাতিসংঘ ও মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে আরও হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দেওয়া হয়, যাতে ইঙ্গিত ছিল সেনাবাহিনীর ওপর স্যাংশন এবং শান্তিরক্ষী মিশন থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেওয়ার। এসব ইঙ্গিত থেকে প্রতিরক্ষা বাহিনী নিজেদের ভবিষ্যত বিপদ সম্পর্কে কিছুটা আঁচ করে থাকতে পারে। জেনারেল ওয়াকার দরবার ডাকলে মোটামুটি ষ্পষ্ট হয়ে ওঠে তারা একটা অবস্থান নিতে যাচ্ছে।
এতদিনে শেখ হাসিনার গোয়েন্দারা খবর দেয় পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে জামাতে ইসলামী আর ফ্রন্টলাইনে নেতৃত্ব দিচ্ছে শিবিরের ছেলেরা। কিন্তু ততদিনে ডিসিশন যা হবার ফাইনাল হয়ে গেছে। উপায়ন্তর না দেখে হাসিনা বুদ্ধি নিতে দুই দফা ১৪ দল নামে কিছু মিসকিন বা হাভাতে নেতার সাথে মিটিং করেন। এরা প্রথমবার বুদ্ধি দেয় কারফিউ জারী করে বেশুমার বা দেখামাত্র গুলী চালাতে। দ্বিতীয় দফায় বলে মুল কুশীলব জামাতে ইসলামীকে ব্যান্ড করে দিতে। গবুচন্দ্রীয় বুদ্ধি! বেকুবরা বোঝায় জামাত ব্যন্ড করে দিলেই তারা সবাই আন্দোলন রেখে সুরসুর করে ঘরে ঢুকে যাবে! শেখ হাসিনাও তাই বুঝে একদিন পর প্রজ্ঞাপন জারী করে জামাতকে নিষিদ্ধ করেন। প্রতিক্রিয়ায় ঘোষিত হয় এক দফা। এর পর তো মাত্র তিনদিন। ৪ তারিখে ছিল শহীদ মিনারে সমাবেশ। বলা হয়েছিল ৬ তারিখে কারফিউ ভেঙ্গে মার্চ টু ঢাকার কথা। কিন্তু কুশীলবরা একদিন অতিরিক্ত সময় দিতে চাইলেন না। ফাইনাল হিটের সময় এক দিন এগিয়ে আনা হলো।
শেখ হাসিনার পরিবার পরিজনরা ততক্ষনে গেম বুঝে গেছে। কিন্তু তিনি গোঁ ধরে থাকলেন আরও হাজার মানুষ হত্যা করে হলেও তাকে ক্ষমতায় রাখা হোক। এই পর্যায়ে বিভিন্ন বাহিনীপ্রধান একটা ঐতিহাসিক ভুমিকা পালন করেন। তারা শেখ হাসিনাকে বাস্তবতা মেনে প্রাণ নিয়ে পালাতে রাজী করান। পাঁচ তারিখ বেলা বারোটা পর্যন্ত কিন্তু ঢাকার রাস্তা প্রায় জনমানবশুণ্য। কারফিউয়ের মধ্যে ফাঁকা রাস্তায় সেনা টহলের ভিডিও প্রচার করছিল টিভি চ্যানেলগুলো। মানুষ তখনও নামে নাই। এ সময় একটি দৈনিকের অনলাইন ভার্সানে সেনাপ্রধানের ভাষন প্রচারের একটা ছোট্ট নিউজ ছাপা হয়। কিছু পর থেকে টিভি চ্যানেলগুলোয় স্ক্রলে একই কথা প্রচার শুরু হলে মানুষ বুঝে যায় গেম ইজ ওভার। গনেশ উল্টে গেছে। বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত নেমে আসে পথে। ছুটে চলে গনভবনের দিকে।
সূচনা হয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন ইতিহাসের। যিনি গোঁ ধরেছিলেন কেয়ামত পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার, তাকে মাত্র পয়তাল্লিশ মিনিটের নোটিশে তল্পিতল্পা রেখে প্রাণ নিয়ে পালাতে হয়। তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিতে ক্ষমতার পালাবদলে ফাইনাল রাউন্ডটা খেলে থাকে সেনাবাহিনী। এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি। জেনারেল ওয়াকার শেখ হাসিনার খুব আস্থাভাজন ছিলেন। অনেক যাচাই বাছাই করে আত্মীয় দেখে তাকে সেনাপ্রধান পদে বসনো হয়েছিল। বিশ্বাস ছিল অন্য সেনাপ্রধানদের মত তিনিও সুবোধ বালকের মত ন্যয় অন্যায় সব আদেশ নির্দেশ মেনে নেবেন। কিন্তু মানুষ হত্যার নির্দেশ না মেনে তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন না মনুষত্বের পরিচয় দিয়েছে সে বিচারের ভার দেশবাসীর। তবে এক ব্যক্তির ক্ষমতা ধরে রাখার অভিলাষ পুরনে মানুষ হত্যা করে সেনাবাহিনীর সর্বনাশ ডেকে আনার পথে না গিয়ে নি:সন্দেহে তিনি যে একজন সত্যিকার দেশপ্রেমিকের ভুমিকাই পালন করেছেন, ইতিহাস তার স্বাক্ষ্য দেবে। যুগে যুগে এমন ওয়াকাররা থাকে বলেই দেশ বাঁচে মানবিকতার জয় হয়। লেখা হয় নতুন ইতিহাস। -লেখকের ফেসবুক থেকে।