মির্জা ফখরুল যারটা তাকেই বুঝতে দেন
- প্রকাশের সময় : ১১:৩৫:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪
- / ৫১ বার পঠিত
সাঈদ তারেক: আওয়ামী লীগ নিয়ে মির্জা ফখরুল সাহেবের আগ বাড়িয়ে কথা না বললেই ভাল হয়। এমন তো না যে দলটা মীর্জা সাহেবকে তাদের মুখপাত্র বানিয়েছে। আওয়ামী লীগ কি করবে, রাজনীতি করবে না নিজেদেরকে অবলুপ্ত করবে, দল গোছাবে না ভেঙ্গে টুকরাটুকরা হবে, নির্বাচনে যাবে না বর্জন করবে- এগুলো আওয়ামী লীগের ভাববার বিষয়। এ নিয়ে মীর্জা ফখরুলের আদিখ্যেতাটা একটু বেশী বেশী হয়ে যায়। চোখে লাগে, অনেকে কষ্ট পান।
আজকের আওয়ামী লীগের এই অবস্থার জন্য আওয়ামী লীগ নিজেরাই দায়ী। ১৯৭৫ সালে একবার নিজেরাই দলটিকে বিলুপ্ত করেছিল। আরও কয়েকটা অবলুপ্ত দল মিলে করেছিল বাকশাল। ১৫ই আগস্ট বাকশালেরই একটি অংশ সেনা অভ্যুত্থানের অংশ হয়ে ক্ষমতায় যায় এবং বাকশাল বিলুপ্ত করে। ৩রা নভেম্বর পর্যন্ত খন্দকার মোশতাক সরকার চালায় আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে। তবে সে সরকারকে কখনও আওয়ামী সরকার বলে ঘোষনা করেনি। এরপর ৭ই নভেম্বর এবং রাজনীতির দীর্ঘ বিরতি। ’৭৮এ ভরা মার্শাল ল’র মধ্যে জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করেন। পিপিআরের অধীনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অনুমতির আবেদন করে। তখনও আওয়ামী লীগের তাবৎ নেতাকর্মী হয় পলাতক না হয় জেলে। সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন সাহস করে আওয়ামী লীগ নামে দরখাস্ত করেন। অনুমতি লাভ করেন এবং আহবায়ক হন। সে সময়ও কথা ওঠে। একটা পলাতক স্বৈরাচারী দলকে কেন রাজনীতি করার অনুমতি দেওয়া হলো। জিয়াউর রহমান নিজের ক্ষমতার ভিত সম্পর্কে খুবই কনফিডেন্ট ছিলেন। মনে করেছিলেন রাজনীতিতে তার একটা শক্ত প্রতিপক্ষ থাক। যে দল নিজেরাই নিজেদেরকে অবলুপ্ত করেছিলো, জিয়াউর রহমান চাইলে তাদেরকে অনুমতি না দিলেও পারতেন। সে অবস্থায় হয়তো রাজনীতি করতে ইচ্ছুক আওয়ামী লীগারদেরকে অন্য নামে দল করতে হতো। কিন্তু জিয়া সাহেব সম্ভবত: চেয়েছিলেন একটা ঐতিহ্যবাহী দল ওভাবে হারিয়ে না যাক। শুধু তাই না, নিজের ব্যপারে এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ’৮১তে দিল্লী থেকে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে দলের হাল ধরার অনুমতিও দিয়েছিলেন। এর মাত্র কয়েকদিন পরই সেনা অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হন।
মির্জা ফখরুলরা হয়তো পরের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় যাওয়ার ব্যপারে খুবই আশাবাদী, কিন্তু আওয়ামী লীগের ফিরে আসা যে তাদের সে আশাকে মূহুর্তে দুরাশায় পরিনত করে দিতে পারে গত পনের বছর নিশ্চয়ই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। এতকিছুর পরও যদি না পেয়ে থাকেন শেখ হাসিনাকে বলা যেতে পারে আরও পনের বছর ক্ষমতায় থেকে বিএনপিকে একটু ভাল করে টের পাইয়ে দিতে!
হয়তো মনে করছেন আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে না আসে তা সার্বজনীন হবে কিনা, গ্রহনযোগ্য হবে কিনা। আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনে আসবেই তার কি গ্যারান্টি আছে! অনুকুল পরিবেশ না পেলে বা মেজরিটি সীটে জেতার সম্ভাবনা না দেখলে তারা নির্বাচন বর্জনও করতে পারে। শেখ হাসিনা কি পাঁচ দশটা সীট নিয়ে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা হওয়ার রাজনীতি করেন! নাকি জিয়াউর রহমানের মত তাদেরকে দিয়ে শক্তিশালী বিরোধী দল বানাবেন! শেখ হাসিনা তো বিরোধী দল হওয়ার রাজনীতিও করেন না! আর এখন তার সে অবস্থাও নেই।
তাহলে কি করবেন, নির্বাচনে আনার জন্য তাদের সব শর্ত মেনে নেবেন! শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সব মামলা তুলে নেবেন! তাকে সসম্মানে দেশে ফিরে আসার সুযোগ করে দেবেন! দলের তাবৎ চোর ডাকাত খুনী বদমাশকে জেল থেকে ছেড়ে নির্বাচনে অংশ নিতে দেবেন! এসব তো হিসাবের কথা! আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনতে চাইলে এ দাবী তো উঠবেই! তখন কি করবেন!
কাজেই ভেবেচিন্তে কথা বলাই ভাল। আসল খেলা সামনে। বিএনপির উচিত হবে এখন থেকে সেই খেলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। হোমওয়ার্ক করা।
আওয়ামী লীগের ভাবনা আওয়ামী লীগকেই ভাবতে দেন। (লেখকের ফেসবুক থেকে)