নিউইয়র্ক ০২:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আ. লীগের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব-

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৩৮:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৪৭ বার পঠিত

সাঈদ তারেক: বার বার দলটার সাথে কেন এমন ঘটনা ঘটে! আন্দোলন সংগ্রাম করে সরকারে যায়, গিয়েই বেশুমার লুটপাটে মেতে ওঠে। আবার পতন হলেই সদলবলে ভারতে পালায়! এ কি কপালের দোষ না রক্ত খারাপ! নাকি কোন অভিশাপ বয়ে বেড়াচ্ছে জন্ম থেকে!
আত্মপ্রকাশের পর থেকে আওয়ামী লীগের পথচলা কখনই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পথ বেয়ে ’৭০ এর নির্বাচনের মাধ্যমে যখন পাকিস্তানের সরকার গঠনের দ্বারপ্রান্তে, বাগড়া বাধলো। এলো স্বাধীনতার দাবী। পরিস্থিতি একেবারে অনুকুলে, অথচ ৭ই মার্চ স্বাধীনতা ঘোষনা হলো না। ঐতিহাসিকরা বলেন রেসকোর্স মাঠ থেকে যদি ঘোষনাটা আসতো দেশ স্বাধীন হয়ে যেতো সেদিনই। এত যুদ্ধবিগ্রহ ৩০ লক্ষ ২ লক্ষের কোন ব্যপারই ঘটতো না। নেতা পাকিস্তান ভাঙার দায় নিতে চাইলেন না, এমনকি তাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে যেন অভিযুক্ত না করা হয় সে জন্য শুধু ২৭ তারিখে একটা হরতাল ডাকলেন। হানাদাররা পাকিস্তানে নিয়ে গেলো। দিক নির্দেশনাহীন নেতা-কর্মীরা ভারত গিয়ে উঠলেন। সেটা না হয় উপায় ছিল না, আমরা সবাই গেছিলাম। স্বাধীনতার যুদ্ধ।
’৭৫এর ১৫ই আগষ্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলো। একদল নেতা লাশ মাড়িয়ে গিয়ে মন্ত্রী হলো। কয়েকজন জেলে গেলেন। বাকিরা আবার ভারত! ’৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের বদান্যতায় রাজনীতি শুরু করে এক বছরের মধ্যেই ভাঙন। নেতৃত্ব নিয়ে কামড়াকামড়ি যখন আর এক দফা ভাঙনের উপক্রম ঘটালো ভারত থেকে এসে শেখ হাসিনা কোন রকমে সামাল দিলেন। কিছুদিনের মধ্যে ঠিকই ভাঙলো। হলো তিন টুকরা। আওয়ামী লীগ (হা) আওয়ামী লীগ (রা) আওয়ামী লীগ (মি)। হা-তে হাসিনা রা-তে রাজ্জাক মি-তে মিজান। লোকে রস করে বলতো আওয়ামী লীগ (হা-রা-মি)! যাই হোক, শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত ভাঙা টুকরাগুলাকে জোরা লাগিয়েছিলেন। ২১ বছর পর ’৯৬-এ সরকার গঠন করে টার্মটা কাটলো মোটামুটি। ২০০৮-এ এসে একেবারে চীরস্থায়ী বন্দোবস্তের ব্যবস্থা। এরপর টানা সাড়ে পনের বছর। ’২৪ সালে ছাত্র-গনআন্দোলনে উৎখাত হয়ে আবার ভারত!
দেখা যাচ্ছে ভারত হচ্ছে আওয়ামী লীগের পছন্দের বা নির্ভরতার জায়গা। শেষ গন্তব্য, শেষ ভরসা। কি লজ্জার কথা, লোকে যখন বলে ‘ভারতের দালাল’, দলের লোকজন কেউ মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকায়, কেউ কানে কম শোনে, বেকুব টাইপের যারা দাঁত কেলিয়ে হাসে! আমি আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোন পর্যায়ের নেতা বা কর্মীকে প্রকাশ্যে বলতে শুনি নি, না আমরা ভারতের দালাল না! কি একটা রাজনীতি! ক্ষমতায় আসতে ভোট লাগে না, সরকার চালাতে পাবলিকের ধার ধারতে হয় না, ভারত ক্ষমতায় আনে ক্ষমতায় রাখে, সব বালা মুসিবত সামাল দেয়! বলা হয় দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিনষ্টকারি। শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকা এবং ক্ষমতায় থেকে অবাধ লুটপাট চালানোর জন্য দেশের স্বার্থ অন্যের হাতে তুলে দিতেও দ্বিধা করে না। তারপরও সামান্যতম লাজ শরমের বালাই নেই!
আসলে শেখ হাসিনা দলকে কোন দলের পর্যায়ে রাখেন নি। সরকার এবং রাষ্ট্রে একক প্রভুত্ব কায়েম করে নিজেকে ইশ্বরের পর্যায়ে নিয়ে গেছিলেন। কুন ফায়াকুনের মত তিনি যা বলতেন তাই হতো। দলে নেতা বলতে তিনি একাই ছিলেন। বাকিরা কর্মচারি চাকরবাকর কাজের লোক। যে যেভাবে পারে টাকা বানানোর ওজিএলপ্রাপ্ত বা সামান্য খুদকুড়ে উচ্ছিষ্টের লোভে এইসব সুবিধাভোগীদের কাজ ছিল নিয়ত: তার বন্দনা করা, মুখনিসৃত: আদেশ হুকুম তামিল করা। তিনি সরকার এবং রাষ্ট্রকে যেমন এক করে ফেলেছিলেন, দলকে কুক্ষিগত করে এর পৃথক সত্ত¡াই মুছে দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ মানেই শেখ হাসিনা। অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়ে যায়, শেখ হাসিনা আছে তো আওয়ামী লীগ আছে, শেখ হাসিনা নাই আওয়ামী লীগও নেই। স্বৈরাচাররা কখনও নিজের সেকেন্ডম্যান রাখে না। শেখ হাসিনাও রাষ্ট্রে সরকারে দলে তার কোন বিকল্প তৈরী করেন নি। কাউকে হতে দেন না। এরশাদকাল পর্যন্ত রাষ্ট্রের একজন উপ রাষ্ট্রপতি ছিলো। তিনটা উপ প্রধানমন্ত্রী থাকতো। সিটি কর্পোরেশনে তিনটা ডেপুটি মেয়র ছিল। ’৯১-এ বেগম খালেদা জিয়া সরকার গঠন করে এই উপ’র পদগুলো বাতিল করে দেন। শেখ হাসিনা এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা কাউকে শেয়ার না করার প্রশ্নে দুই নেত্রীর বেজায় মিল ছিল। শেখ হাসিনা দলেও কখনও কোন উপযুক্ত পরিক্ষীত বা যোগ্য লোককে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসান নি। ওবায়দুল কাদেরের মত বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হাসাও মামুর মত ফালতু লোক, কোথাকার গোলাপ-হানিফ-নানক হয়ে যায় গুরুত্বপূর্ণ নেতা। অথচ তোফায়েল আহমদের মত অভিজ্ঞ রাজনীতিকরা বসে থাকেন সাইডলাইনে। শেখ হাসিনা যেভাবে চেয়েছেন দল সাজিয়েছেন, চালিয়েছেন। আজ শেখ হাসিনা নেই, দলও নেই। শেখ হাসিনা পালিয়েছেন দলও পালিয়েছে!
আজ দুই মাসের বেশী সরকার পতন হয়েছে, এর মধ্যে কোন একজন নেতাকে প্রকাশ্যে এসে দলের হয়ে দুটো কথা বলতে দেখা গেল না। এরশাদ নয় বছর সরকার চালিয়েছিলেন। স্বৈরাচার হয়ে তারও পতন আন্দোলনের মুখে। কিন্তু তিনি দেশ ছেড়ে পালান নি। জেলে গেছেন। দলের নেতারা কেউ জেলে বা পলাতক ছিলেন। কেউ ভারতে বা অন্য কোন দেশে গিয়ে ঠাঁই নেয় নি। পদত্যাগের মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে এই দল প্রকাশ্য তৎপরতা শুরু করেছিল। হাল ধরতে স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছিলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরী। ‘ভুল ত্রæটির জন্য জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনায় অগৌরবের কিছু নেই’- এই বক্তব্য দিয়ে মাঠে নেমেছিল দলটি। মানুষের রাগ ক্ষোভ অনেকটাই প্রশমিত হয়েছিল সেদিন মিজানুর রহমান চৌধুরীর ওই একটামাত্র কথায়। পনের বছর টানা সরকার চালানোর পর আজ আওয়ামী লীগের এমন একজন নেতা পাওয়া গেল না!
এই দলের লোকেরা এখনও বিশ্বাস করে কোন ‘মেকানিজম’ করে শেখ হাসিনা টুপ করে যে কোন মূহুর্তে ক্ষমতায় ফিরে আসবে। সোস্যাল মিডিয়ায় কোন কোন গর্দভ এমন ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করছে সেনাবাহিনী পাল্টা ক্যু করে ইউনুসকে হঠিয়ে দেবে! বা ভারত সৈন্য পাঠিয়ে দেশটা দখল করে শেখ হাসিনাকে গদীতে বসিয়ে দিয়ে যাবে! কেউ কেউ এমন দিবাস্বপ্নে আচ্ছন্ন হয়ে আছে! দিবানিশি ক্ষণ গুনে চলেছে। জেদ আত্বম্ভরীতা অহমিকা কঠোরতা নিষ্ঠুরতা নৃশংসতার কারনে শেখ হাসিনা পশ্চিমাদের ভাষায় বিশ্বে একজন ‘আয়রন লেডি’ হয়ে উঠেছিলেন। তিনি আমেরিকাকে কেয়ার করতেন না, ইউরোপকে পাত্তা দিতেন না, জাতিসংঘের ধার ধারতেন না। তার শাসনকালে আইনের শাসন, নীতি-নৈতিকতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, জনগনের মৌলিক অধিকারের বালাই ছিল না। পনের বছর সমস্ত গণতান্ত্রিক দুনিয়াকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভোটার ছাড়া তিন-তিনটা ভূয়া নির্বাচন করে দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা কারও পরোয়া করে না। এটাকে মনে করতেন বাহাদুরি। কোমড়ে গোজা রাশিয়া আঁচলের গিট্ঠুতে বাধা চায়না আর মাথার ওপর ভারত-ছায়ার শক্তিতে বলীয়ান শেখ হাসিনা এতটাই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন, দলের তাবৎ নেতা-কর্মীরা মনে করতেন তাদের নেত্রী অবিনশ্বর। তার ক্ষয় নেই, লয় নেই, পতন নেই। যে কোন বালা মুসিবত সামাল দিয়ে যে কোন পরিস্থিতিতেই টিকে যাওয়ার ঐশী শক্তিতে বলীয়ান এক ‘মহা নারী’। শেখ হাসিনা কোনদিন সরকার থেকে চলে যেতে পারে এ কথা দলের কেউ কোনদিন স্বপ্নেও ভাবতো না!
ফলে বাচ্চাদের আন্দোলনে পপাত ধরনীতল হওয়ায় সবাই সম্বিৎহারা। সোস্যাল মিডিয়ায় কিছু গুজববাজ ছাড়া দলের কারও মুখে কোন রা’ নেই। যাদের হুঁশ ফিরে আসছে, রাজনীতির কথা চিন্তা না করে, দল গোছানোর পথে না গিয়ে, রাজনৈতিকভাবে দলের পুন:প্রতিষ্ঠার ভাবনা না ভেবে ষড়যন্ত্র চক্রান্তের মাধ্যমে বা ভারত কবে আবার বসিয়ে দেবে সেই অপেক্ষায় দিন গুনে চলেছে। হায়, একটা ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের এইরকম দেউলিয়াত্ব! ’৭৫ এর ক্ষমতায় আসতে একুশ বছর লেগেছিল, এবার কত বছর! (লেখকের ফেসবুক থেকে)

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আ. লীগের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব-

প্রকাশের সময় : ১১:৩৮:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

সাঈদ তারেক: বার বার দলটার সাথে কেন এমন ঘটনা ঘটে! আন্দোলন সংগ্রাম করে সরকারে যায়, গিয়েই বেশুমার লুটপাটে মেতে ওঠে। আবার পতন হলেই সদলবলে ভারতে পালায়! এ কি কপালের দোষ না রক্ত খারাপ! নাকি কোন অভিশাপ বয়ে বেড়াচ্ছে জন্ম থেকে!
আত্মপ্রকাশের পর থেকে আওয়ামী লীগের পথচলা কখনই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পথ বেয়ে ’৭০ এর নির্বাচনের মাধ্যমে যখন পাকিস্তানের সরকার গঠনের দ্বারপ্রান্তে, বাগড়া বাধলো। এলো স্বাধীনতার দাবী। পরিস্থিতি একেবারে অনুকুলে, অথচ ৭ই মার্চ স্বাধীনতা ঘোষনা হলো না। ঐতিহাসিকরা বলেন রেসকোর্স মাঠ থেকে যদি ঘোষনাটা আসতো দেশ স্বাধীন হয়ে যেতো সেদিনই। এত যুদ্ধবিগ্রহ ৩০ লক্ষ ২ লক্ষের কোন ব্যপারই ঘটতো না। নেতা পাকিস্তান ভাঙার দায় নিতে চাইলেন না, এমনকি তাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে যেন অভিযুক্ত না করা হয় সে জন্য শুধু ২৭ তারিখে একটা হরতাল ডাকলেন। হানাদাররা পাকিস্তানে নিয়ে গেলো। দিক নির্দেশনাহীন নেতা-কর্মীরা ভারত গিয়ে উঠলেন। সেটা না হয় উপায় ছিল না, আমরা সবাই গেছিলাম। স্বাধীনতার যুদ্ধ।
’৭৫এর ১৫ই আগষ্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলো। একদল নেতা লাশ মাড়িয়ে গিয়ে মন্ত্রী হলো। কয়েকজন জেলে গেলেন। বাকিরা আবার ভারত! ’৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের বদান্যতায় রাজনীতি শুরু করে এক বছরের মধ্যেই ভাঙন। নেতৃত্ব নিয়ে কামড়াকামড়ি যখন আর এক দফা ভাঙনের উপক্রম ঘটালো ভারত থেকে এসে শেখ হাসিনা কোন রকমে সামাল দিলেন। কিছুদিনের মধ্যে ঠিকই ভাঙলো। হলো তিন টুকরা। আওয়ামী লীগ (হা) আওয়ামী লীগ (রা) আওয়ামী লীগ (মি)। হা-তে হাসিনা রা-তে রাজ্জাক মি-তে মিজান। লোকে রস করে বলতো আওয়ামী লীগ (হা-রা-মি)! যাই হোক, শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত ভাঙা টুকরাগুলাকে জোরা লাগিয়েছিলেন। ২১ বছর পর ’৯৬-এ সরকার গঠন করে টার্মটা কাটলো মোটামুটি। ২০০৮-এ এসে একেবারে চীরস্থায়ী বন্দোবস্তের ব্যবস্থা। এরপর টানা সাড়ে পনের বছর। ’২৪ সালে ছাত্র-গনআন্দোলনে উৎখাত হয়ে আবার ভারত!
দেখা যাচ্ছে ভারত হচ্ছে আওয়ামী লীগের পছন্দের বা নির্ভরতার জায়গা। শেষ গন্তব্য, শেষ ভরসা। কি লজ্জার কথা, লোকে যখন বলে ‘ভারতের দালাল’, দলের লোকজন কেউ মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকায়, কেউ কানে কম শোনে, বেকুব টাইপের যারা দাঁত কেলিয়ে হাসে! আমি আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোন পর্যায়ের নেতা বা কর্মীকে প্রকাশ্যে বলতে শুনি নি, না আমরা ভারতের দালাল না! কি একটা রাজনীতি! ক্ষমতায় আসতে ভোট লাগে না, সরকার চালাতে পাবলিকের ধার ধারতে হয় না, ভারত ক্ষমতায় আনে ক্ষমতায় রাখে, সব বালা মুসিবত সামাল দেয়! বলা হয় দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিনষ্টকারি। শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকা এবং ক্ষমতায় থেকে অবাধ লুটপাট চালানোর জন্য দেশের স্বার্থ অন্যের হাতে তুলে দিতেও দ্বিধা করে না। তারপরও সামান্যতম লাজ শরমের বালাই নেই!
আসলে শেখ হাসিনা দলকে কোন দলের পর্যায়ে রাখেন নি। সরকার এবং রাষ্ট্রে একক প্রভুত্ব কায়েম করে নিজেকে ইশ্বরের পর্যায়ে নিয়ে গেছিলেন। কুন ফায়াকুনের মত তিনি যা বলতেন তাই হতো। দলে নেতা বলতে তিনি একাই ছিলেন। বাকিরা কর্মচারি চাকরবাকর কাজের লোক। যে যেভাবে পারে টাকা বানানোর ওজিএলপ্রাপ্ত বা সামান্য খুদকুড়ে উচ্ছিষ্টের লোভে এইসব সুবিধাভোগীদের কাজ ছিল নিয়ত: তার বন্দনা করা, মুখনিসৃত: আদেশ হুকুম তামিল করা। তিনি সরকার এবং রাষ্ট্রকে যেমন এক করে ফেলেছিলেন, দলকে কুক্ষিগত করে এর পৃথক সত্ত¡াই মুছে দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ মানেই শেখ হাসিনা। অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়ে যায়, শেখ হাসিনা আছে তো আওয়ামী লীগ আছে, শেখ হাসিনা নাই আওয়ামী লীগও নেই। স্বৈরাচাররা কখনও নিজের সেকেন্ডম্যান রাখে না। শেখ হাসিনাও রাষ্ট্রে সরকারে দলে তার কোন বিকল্প তৈরী করেন নি। কাউকে হতে দেন না। এরশাদকাল পর্যন্ত রাষ্ট্রের একজন উপ রাষ্ট্রপতি ছিলো। তিনটা উপ প্রধানমন্ত্রী থাকতো। সিটি কর্পোরেশনে তিনটা ডেপুটি মেয়র ছিল। ’৯১-এ বেগম খালেদা জিয়া সরকার গঠন করে এই উপ’র পদগুলো বাতিল করে দেন। শেখ হাসিনা এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা কাউকে শেয়ার না করার প্রশ্নে দুই নেত্রীর বেজায় মিল ছিল। শেখ হাসিনা দলেও কখনও কোন উপযুক্ত পরিক্ষীত বা যোগ্য লোককে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসান নি। ওবায়দুল কাদেরের মত বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হাসাও মামুর মত ফালতু লোক, কোথাকার গোলাপ-হানিফ-নানক হয়ে যায় গুরুত্বপূর্ণ নেতা। অথচ তোফায়েল আহমদের মত অভিজ্ঞ রাজনীতিকরা বসে থাকেন সাইডলাইনে। শেখ হাসিনা যেভাবে চেয়েছেন দল সাজিয়েছেন, চালিয়েছেন। আজ শেখ হাসিনা নেই, দলও নেই। শেখ হাসিনা পালিয়েছেন দলও পালিয়েছে!
আজ দুই মাসের বেশী সরকার পতন হয়েছে, এর মধ্যে কোন একজন নেতাকে প্রকাশ্যে এসে দলের হয়ে দুটো কথা বলতে দেখা গেল না। এরশাদ নয় বছর সরকার চালিয়েছিলেন। স্বৈরাচার হয়ে তারও পতন আন্দোলনের মুখে। কিন্তু তিনি দেশ ছেড়ে পালান নি। জেলে গেছেন। দলের নেতারা কেউ জেলে বা পলাতক ছিলেন। কেউ ভারতে বা অন্য কোন দেশে গিয়ে ঠাঁই নেয় নি। পদত্যাগের মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে এই দল প্রকাশ্য তৎপরতা শুরু করেছিল। হাল ধরতে স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছিলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরী। ‘ভুল ত্রæটির জন্য জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনায় অগৌরবের কিছু নেই’- এই বক্তব্য দিয়ে মাঠে নেমেছিল দলটি। মানুষের রাগ ক্ষোভ অনেকটাই প্রশমিত হয়েছিল সেদিন মিজানুর রহমান চৌধুরীর ওই একটামাত্র কথায়। পনের বছর টানা সরকার চালানোর পর আজ আওয়ামী লীগের এমন একজন নেতা পাওয়া গেল না!
এই দলের লোকেরা এখনও বিশ্বাস করে কোন ‘মেকানিজম’ করে শেখ হাসিনা টুপ করে যে কোন মূহুর্তে ক্ষমতায় ফিরে আসবে। সোস্যাল মিডিয়ায় কোন কোন গর্দভ এমন ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করছে সেনাবাহিনী পাল্টা ক্যু করে ইউনুসকে হঠিয়ে দেবে! বা ভারত সৈন্য পাঠিয়ে দেশটা দখল করে শেখ হাসিনাকে গদীতে বসিয়ে দিয়ে যাবে! কেউ কেউ এমন দিবাস্বপ্নে আচ্ছন্ন হয়ে আছে! দিবানিশি ক্ষণ গুনে চলেছে। জেদ আত্বম্ভরীতা অহমিকা কঠোরতা নিষ্ঠুরতা নৃশংসতার কারনে শেখ হাসিনা পশ্চিমাদের ভাষায় বিশ্বে একজন ‘আয়রন লেডি’ হয়ে উঠেছিলেন। তিনি আমেরিকাকে কেয়ার করতেন না, ইউরোপকে পাত্তা দিতেন না, জাতিসংঘের ধার ধারতেন না। তার শাসনকালে আইনের শাসন, নীতি-নৈতিকতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, জনগনের মৌলিক অধিকারের বালাই ছিল না। পনের বছর সমস্ত গণতান্ত্রিক দুনিয়াকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভোটার ছাড়া তিন-তিনটা ভূয়া নির্বাচন করে দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা কারও পরোয়া করে না। এটাকে মনে করতেন বাহাদুরি। কোমড়ে গোজা রাশিয়া আঁচলের গিট্ঠুতে বাধা চায়না আর মাথার ওপর ভারত-ছায়ার শক্তিতে বলীয়ান শেখ হাসিনা এতটাই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন, দলের তাবৎ নেতা-কর্মীরা মনে করতেন তাদের নেত্রী অবিনশ্বর। তার ক্ষয় নেই, লয় নেই, পতন নেই। যে কোন বালা মুসিবত সামাল দিয়ে যে কোন পরিস্থিতিতেই টিকে যাওয়ার ঐশী শক্তিতে বলীয়ান এক ‘মহা নারী’। শেখ হাসিনা কোনদিন সরকার থেকে চলে যেতে পারে এ কথা দলের কেউ কোনদিন স্বপ্নেও ভাবতো না!
ফলে বাচ্চাদের আন্দোলনে পপাত ধরনীতল হওয়ায় সবাই সম্বিৎহারা। সোস্যাল মিডিয়ায় কিছু গুজববাজ ছাড়া দলের কারও মুখে কোন রা’ নেই। যাদের হুঁশ ফিরে আসছে, রাজনীতির কথা চিন্তা না করে, দল গোছানোর পথে না গিয়ে, রাজনৈতিকভাবে দলের পুন:প্রতিষ্ঠার ভাবনা না ভেবে ষড়যন্ত্র চক্রান্তের মাধ্যমে বা ভারত কবে আবার বসিয়ে দেবে সেই অপেক্ষায় দিন গুনে চলেছে। হায়, একটা ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের এইরকম দেউলিয়াত্ব! ’৭৫ এর ক্ষমতায় আসতে একুশ বছর লেগেছিল, এবার কত বছর! (লেখকের ফেসবুক থেকে)