নিউইয়র্ক ০৩:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আতঙ্কিত জনতা, রক্তাক্ত বাংলাদেশ

হককথা ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৩:০৩:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০২৪
  • / ৫৩৫ বার পঠিত

চৌধুরী মোহাম্মদ কাজল: বাংলাদেশ যেন এক অবরুদ্ধ দেশ। ঢাকা যেন আতঙ্কের জনপদ। ঠিক এরকম অবস্থাই ছিল ১৯৭১ এ। রাস্তায় আর্মি। প্রায় সময়ই কারফিউ। মানুষ ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপদ ছিল না। তখন আমরা ঠিক করেছিলাম মরতে হয় দেশেই মরবো। ভারতে যাবো না। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আব্বা ফরিরের পুল পানির ট্যাঙ্কের নীচে একটি গলির ভেতর ছোট্ট একটি বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। আমরা চারজনের পরিবার সেখানেই থাকতাম। যে কোন সময় যে কোন দিক থেকে গুলি আসতে পারে। কাঁচের জানালায় সবাই কাগজ কেটে আঠা দিয়ে লাগিয়ে রাখতো। এই কাগজের টুকরোগুলি হঠাৎ ছুটে আসা গুলি কিছুটা প্রতিরোধ করবে বলে মনে করা হতো।
সাইরেন বাজলেই শুরু হয়ে যেত বিমান আক্রমণ। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে চলে আসতো বোমারু বিমান। শুরু হয়ে যেত বোম্বিং। প্রচন্ড শব্দে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়তাম। যেখানে বোমাবর্ষন হতো সেখান থেকে ঘন কালো ধোয়া উড়তো। আমাদের বিল্ডিংটি ছিল তিন তলা। যেহেতু আমরা নীচ তলায় থাকতাম তাই বোমাবর্ষন শুরু হলে বিল্ডিং এর সবাই আমাদের বাসায় চলে আসতো। ছোট বাসাটিতে সবার জায়গা হতো না। অনেকে আবার বিল্ডিং এর ছাদে দাড়িয়ে বিমানযুদ্ধ দেখতো। বিমানে বিমানেও যুদ্ধ হতো। মাঝে মাঝে বিমান বিধ্বংসী কামান দিয়ে বিমান ফেলে দেওয়া হতো। পাইলট প্যারাসুট দিয়ে নেমে আসতো। এইসব দৃশ্য ওরা দেখতো। ওরা বলতো ভয়ের কিছু নেই। বেশীরভাগই ভারতীয় বিমান।
এরপর শুনলাম ঢাকায় এমন আক্রমণ হবে যে মাটির নীচে দুই ইঞ্চি পর্যন্ত ধ্বংস করে দেওয়া হবে। ঢাকা হবে দুইদেশের রনক্ষেত্র। সবাই ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে পরামর্শ দিল। বুড়িগঙ্গার ওপারে জিঞ্জিরায় আমাদের জন্য একটি বাসা ভাড়া নেওয়া হলো। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো না এখানেই থাকবো। জিঞ্জিরাও যাবো না। অবশ্য চেস্টা করলেও পারতাম কিনা জানিনা। শুনতাম নদী পার হওয়ার চেস্টা করলেও নাকি গুলি ছোড়ে।
এখন ঢাকার অবস্থাও যেন সেরকমই। রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। কারফিউ শিথিল হলে লোকজন দৈনন্দিন কাজ করতে বের হয়। সবাই সন্ত্রস্ত। সবাই আন্দোলনের পক্ষে। কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না। টেলিফোনে কথা বলতেও ভয় পায়। শেখ হাসিনা যেন টিক্কা খানের ভূমিকায় নেমেছেন। আল বদর, রাজাকারের জায়গা নিয়েছে ছাত্রলীগ। পুলিশের প্রটেকশন নিয়ে রাস্তায় সন্ত্রাস করছে। একাত্তরের বুড়ো মুক্তিযোদ্ধাগুলো যেন শান্তি কমিটির সদস্য। সরকারকে মৌন সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আর যে তথাকথিত মানবাধিকার কর্মীরা ওরা কোথায় যেন হারিয়ে হয়ে গেছে। সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেই কারো। বাংলাদেশের মানুষ আজ ঘরেও নিরাপদ নয়। নিজের বাসায়, বাড়ীর ছাদে অনেক শিশু কিশোরকে জীবন দিতে হয়েছে।
শেখ মুজিব স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি নিহত হয়েছেন ১৯৭৫-এ। এরপর তার মেয়ে দেশ শাসন করছে ২১ বছর। তারপরও ক্ষমতার লোভ যায়নি। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে হবে। একাত্তরে পাকিস্তানের সামরিক সরকার মানুষ মারতে দ্বিধা করতো না। আওয়ামী লীগ সরকারও করে না। পুলিশ, আর্মি, ছাত্রলীগ সবই মাঠে নামিয়েছে। ইয়াহিয়া খানের মত গণবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন শেখ হাসিনা। নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের বলছেন দুষ্কৃতিকারী। মানুষ মরছে, আরও মরুক। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে হবে তার। স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পর বাংলাদেশের মানুষ দেখছে আরেক রক্তাক্ত বাংলা। সবকিছু যেন সেই একাত্তরের মত। শুধু শাসক দলের পরিবর্তন হয়েছে। ওরা এখন বাংলা বলে।
নিউইয়র্ক।

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আতঙ্কিত জনতা, রক্তাক্ত বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ০৩:০৩:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০২৪

চৌধুরী মোহাম্মদ কাজল: বাংলাদেশ যেন এক অবরুদ্ধ দেশ। ঢাকা যেন আতঙ্কের জনপদ। ঠিক এরকম অবস্থাই ছিল ১৯৭১ এ। রাস্তায় আর্মি। প্রায় সময়ই কারফিউ। মানুষ ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপদ ছিল না। তখন আমরা ঠিক করেছিলাম মরতে হয় দেশেই মরবো। ভারতে যাবো না। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আব্বা ফরিরের পুল পানির ট্যাঙ্কের নীচে একটি গলির ভেতর ছোট্ট একটি বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। আমরা চারজনের পরিবার সেখানেই থাকতাম। যে কোন সময় যে কোন দিক থেকে গুলি আসতে পারে। কাঁচের জানালায় সবাই কাগজ কেটে আঠা দিয়ে লাগিয়ে রাখতো। এই কাগজের টুকরোগুলি হঠাৎ ছুটে আসা গুলি কিছুটা প্রতিরোধ করবে বলে মনে করা হতো।
সাইরেন বাজলেই শুরু হয়ে যেত বিমান আক্রমণ। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে চলে আসতো বোমারু বিমান। শুরু হয়ে যেত বোম্বিং। প্রচন্ড শব্দে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়তাম। যেখানে বোমাবর্ষন হতো সেখান থেকে ঘন কালো ধোয়া উড়তো। আমাদের বিল্ডিংটি ছিল তিন তলা। যেহেতু আমরা নীচ তলায় থাকতাম তাই বোমাবর্ষন শুরু হলে বিল্ডিং এর সবাই আমাদের বাসায় চলে আসতো। ছোট বাসাটিতে সবার জায়গা হতো না। অনেকে আবার বিল্ডিং এর ছাদে দাড়িয়ে বিমানযুদ্ধ দেখতো। বিমানে বিমানেও যুদ্ধ হতো। মাঝে মাঝে বিমান বিধ্বংসী কামান দিয়ে বিমান ফেলে দেওয়া হতো। পাইলট প্যারাসুট দিয়ে নেমে আসতো। এইসব দৃশ্য ওরা দেখতো। ওরা বলতো ভয়ের কিছু নেই। বেশীরভাগই ভারতীয় বিমান।
এরপর শুনলাম ঢাকায় এমন আক্রমণ হবে যে মাটির নীচে দুই ইঞ্চি পর্যন্ত ধ্বংস করে দেওয়া হবে। ঢাকা হবে দুইদেশের রনক্ষেত্র। সবাই ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে পরামর্শ দিল। বুড়িগঙ্গার ওপারে জিঞ্জিরায় আমাদের জন্য একটি বাসা ভাড়া নেওয়া হলো। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো না এখানেই থাকবো। জিঞ্জিরাও যাবো না। অবশ্য চেস্টা করলেও পারতাম কিনা জানিনা। শুনতাম নদী পার হওয়ার চেস্টা করলেও নাকি গুলি ছোড়ে।
এখন ঢাকার অবস্থাও যেন সেরকমই। রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। কারফিউ শিথিল হলে লোকজন দৈনন্দিন কাজ করতে বের হয়। সবাই সন্ত্রস্ত। সবাই আন্দোলনের পক্ষে। কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না। টেলিফোনে কথা বলতেও ভয় পায়। শেখ হাসিনা যেন টিক্কা খানের ভূমিকায় নেমেছেন। আল বদর, রাজাকারের জায়গা নিয়েছে ছাত্রলীগ। পুলিশের প্রটেকশন নিয়ে রাস্তায় সন্ত্রাস করছে। একাত্তরের বুড়ো মুক্তিযোদ্ধাগুলো যেন শান্তি কমিটির সদস্য। সরকারকে মৌন সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আর যে তথাকথিত মানবাধিকার কর্মীরা ওরা কোথায় যেন হারিয়ে হয়ে গেছে। সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেই কারো। বাংলাদেশের মানুষ আজ ঘরেও নিরাপদ নয়। নিজের বাসায়, বাড়ীর ছাদে অনেক শিশু কিশোরকে জীবন দিতে হয়েছে।
শেখ মুজিব স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি নিহত হয়েছেন ১৯৭৫-এ। এরপর তার মেয়ে দেশ শাসন করছে ২১ বছর। তারপরও ক্ষমতার লোভ যায়নি। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে হবে। একাত্তরে পাকিস্তানের সামরিক সরকার মানুষ মারতে দ্বিধা করতো না। আওয়ামী লীগ সরকারও করে না। পুলিশ, আর্মি, ছাত্রলীগ সবই মাঠে নামিয়েছে। ইয়াহিয়া খানের মত গণবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন শেখ হাসিনা। নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের বলছেন দুষ্কৃতিকারী। মানুষ মরছে, আরও মরুক। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে হবে তার। স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পর বাংলাদেশের মানুষ দেখছে আরেক রক্তাক্ত বাংলা। সবকিছু যেন সেই একাত্তরের মত। শুধু শাসক দলের পরিবর্তন হয়েছে। ওরা এখন বাংলা বলে।
নিউইয়র্ক।