অসময়ের কলাম-৩
- প্রকাশের সময় : ০৮:০০:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ মার্চ ২০১৫
- / ৯১২ বার পঠিত
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার আর বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট মুখোমুখী অবস্থান করছে। সরকারের রাজনৈতিক কূট কৌশলে যেখানে বিবৃতি ছাড়া বিএনপির মুখ বন্ধ সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী আর আওয়ামী নেতাদের ‘তীর্যক কথা বা বক্তব্য’ দেশের রাজনৈতিক সঙ্কটকে আরো সঙ্কটময় করে তুলছে। অন্তত আমার কাছে তাই মনে হচ্ছে। বস্তুত ঘরে বসে টিভি দেখে দেশ-বিদেশের খবরা-খবরের উপর চোখ রাখলে সরকার দলীয় বক্তব্য ছাড়া বিরোধীদলের তেমন বক্তব্য দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে দেশের টিভিগুলোর চরিত্র পাল্টে যাচ্ছে। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া প্রায় সকল টিভির খবর পরিবেশন আর ‘টক শো’র আলোচনা একই পথে চলছে। সবার মুখে একই কথা বার বার উঠে আসছে ‘বিএনপি-জামায়াত’ জঙ্গীবাদী দল! হ্যাঁ বিএনপি আর জামায়াতের রাজনীতির কৌশল ভিন্ন। কিন্তু রাজনীতির প্রয়োজনে বিএনপি-জামায়াত আজ জোটবদ্ধ। মনে পড়ছে ৯১-এর পর বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ-জামায়াতের মধ্যে জোট না হলেও রাজনীতির প্রয়োজনে উভয় দলের শীর্ষ নেতা-নেতীরা এক মঞ্চে, এক কাতারে বসে আন্দোলন করার কথা। কথায় বলে না যে ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই’। আজ বিএনপি-জামায়াতের উপর চাপিয়ে দিয়ে যেভাবে দেশে জঙ্গীবাদের আগমন ঘটানো হচ্ছে তা কারো জন্যই সুখকর নয়। ক্ষমতা কারো জন্য চিরস্থায়ী নয়। রাজনৈতিক কারণে বা রাজনৈতিকভাবে বিরোধীতার প্রয়োজনে যারা বলেন ‘ওরা বাংলাদেশকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান’ বানাতে চায় বা ‘ওরা বাংলাদেশকে ভারতের করদ রাজ্যে’ পরিণত করতে চায়- সংশ্লিষ্টদের এমন বক্তব্যে আমি আশ্চর্য না হয়ে পারি না। আমি দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করি ৩০ লাখ শহীদ আর শত-সহ¯্র মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন-সর্বভৌম বাংলাদেশ কখনো ‘পাকিস্তান-আফগানিস্তান’ হতে পারে না। পৃথিবীতে এখন আর কোন দেশ দখলের রাজনীতি নেই, দৃ’একটি দেশ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও সামরিক আগ্রাসন নেই। এখন বিশ্বব্যাপী ‘সামরিক যুদ্ধ’ নয়, ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধ’ বড় যুদ্ধ। যে রাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে যত বেশী শক্তিশালী আজকের বিশ্বের সেই দেশের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশী। হ্যাঁ দেশের স্বাধীনতা বিরোধীতাকারী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি বাংলাদেশে বন্ধের নানা সুযোগ রয়েছে। সরকার বা রাজনীতিকদের উচিৎ হবে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য জামায়াতকে বা জামায়াতের রাজনীতি নামে রাজনৈতিক সুবিধার দিকে না তাকিয়ে দেশে বৈধ পথেই তাদের রাজনীতি বন্ধ করা। আর তা না হলে জামায়াতকে তাদের মতো করেই রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া। দেশের আজকের রাজনৈতিক সঙ্কটের জন্য আমাদের রাজনীতিকদের ‘স্বচ্ছতার রাজনীতি, পারষ্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, সহনশীলতা, দেশপ্রেম, রাজনৈতিক বিশ্বাসের অভাব’ প্রভৃতিই দায়ী। নিজেদের দায় অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে সঙ্কট সমাধান করা যায় না, বরং সঙ্কট বাড়ে। যা একসময় বুমেরাং হয়ে উঠে।
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি আর উদ্ভুত সঙ্কটের প্রেক্ষাপট সচেতন দেশবাসীর সাথে প্রবাসীরাও অবগত, অবহিত। এই পরিস্থিতি একদিনে হয়নি। এজন্য বিএনপি-আওয়ামী লীগসহ দেশের সকল রাজনৈতিক দলই দায়ী। কেননা, রাজনৈতিক দল আর রাষ্ট্র চালান রাজনীতিকরাই। দেশের বড় দুই দলের নেত্রী হিসেবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও এই দায় থেকে মুক্ত নন। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জনগণ মূলত: দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। দেশের একাংশ আওয়ামী লীগের পক্ষে আরেকাংশ বিএনপির পক্ষে। মাঝের কিছু লোক আন্যান্য দলের পাশাপাশি ‘নিরপেক্ষ’। ৭৫ পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলেই এর সত্যতা মিলবে। আজ শেখ হাসিনার জনসভায় যেমন লাখো লোকের সমাবেশ ঘটে, তেমনী বেগম খালেদা জিয়ার জনসভায় লাখো লোকের সমাবেশ ঘটে। তাই দেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা আর বেগম খালেদা জিয়া একে অপরের সমকক্ষ হয়ে উঠেছেন। পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রও পরিচালনা করেছেন এই দুই শীর্ষ নেত্রী। জাতিও নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে তাদের উপর। এমন পরিস্থিতিতে হাসিনা-খালেদার ঐক্যমত ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে না।
দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের লক্ষ্যে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত ১৩ মার্চ ঢাকাস্থ তার গুলশান কার্যালয়ে জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে সরকারের প্রতি তিনটি প্রস্তাব রেখেছেন। পাশাপাশি কাংখিত লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য দলীয় ও ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের প্রতি উদাত্ব আহ্বান জানিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাবগুলো শেখ হাসিনা সরকার বিবেচনা করতে পারেন। সর্বাগ্রে সরকারের কয়েজন মন্ত্রী ও দলীয় নেতার মুখে লাগাম টানা দরকার। সরকারের মন্ত্রী আর দলীয় নেতারা ‘আলতু-ফালতু প্রতিহিংসামূলক অরাজনৈতিক’ কথা না বলে ‘দায়িত্বশীল’ বক্তব্য দিলে দলের পাশাপাশি জাতিই উপকৃত হবে। উপকৃত হবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নিজেও। বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস খুলে দিয়ে তাদের সভা-সমাবেশ করার সুযোগ দিয়ে আলোচনার পথ প্রশস্ত করার পাশাপাশি মধ্যবর্তী নির্বাচন দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারেন। মধ্যবর্তী নির্বাচন তো কোন অবৈধ কিছু নয়। দেশে দেশে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ইতিহাস তো চোখের সামনেই। আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলীয় জোট মানুক আর নাই মানুক আমার পর্যালোচনায় দেশের অধিকাংশ মানুষ নির্বাচনের পক্ষেই। একমাত্র নির্বাচনই গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে পারে। আর সরকারের যদি এতোই জনপ্রিয়তা থাকে তাহলে নির্বাচন দিতে তাদের এতো ভয় কেনো?
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে দেশের অন্যান্য দলগুলোর চেয়ে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেকে অনেক বেশী। আর ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে জনপ্রত্যাশা আরো বেশী। আমরা চাইনা শেখ হাসিনা নেতৃত্তাধীন সরকারের মুখে কোন অগণতন্ত্রের কালিমা পরুক, চাইনা এই সরকার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কয়েক করুক।
২.
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র যুগ্ম-মহাসচিব, সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদকে পাওয়া যাচ্ছে না। তার পরিবারের দাবী সাদা পোশাকধারী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে গেছে। আর আইন-শৃঙ্খলা বাহির কথা হচ্ছে সে নিখোঁজ, তার সম্পর্কে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলছেন, বিএনপি নেত্রীর গুলশান কার্যালয়ে আবরোধকারী ট্রাকের বস্তার সাথে সালাহউদ্দিনকে পাচার করা হয়েছে। কি আশ্চর্যের কথা। যেখানে রাষ্ট্রের নাগরিককে নিরাপত্তা দেয়ার সরকারের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সেখানে এমন কথা কি শোভা পায়! কারো কারো আশংকা বিএনপি নেতা, সাবেক এমপি ইলিয়াস আলীর পথে সালাহউদ্দিন আহমেদ। আজ কয়েক বছর হলো ইলিয়াস আলী নিখোঁজ (মৃত না জীবিত আল্লাহতায়ালাই জানেন)। সালাহউদ্দিন আহমেদকে সশরীরে পেতে তার স্ত্রী সাবেক এমপি হাসিনা আহমেদ হাইকোর্টের স্মরণাপন্ন হয়েছেন। হাইকোর্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহির উপর রুল জারী করারও পরও তার হদিস মেলেনি। শুধু সালাহউদ্দিন আহমেদ নয় এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যাতের খবর পাওয়া যাচ্ছে না। এমন গুম-খুনের ব্যাপারে সরকারের মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু তারপরও বলবো এমনটি েেন নেয়া যায় না। সরকারের দায়িত্ব দলমত নির্বিশেষে দেশের জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দেশবাসীকে সরকার কি সেই নিরাপত্তা দিতে পেরেছেন? এমন সোনার বাংলাদেশ আমরা চাই না।
৩.
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল অসামান্য সাফল্য দেখিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। অভিনন্দন বাংলাদেশ দলের জন্য। সেই সাথে অভিনন্দন পর পর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরী (শতরান) করার জন্য মাহামুদুল্লাহ রিয়াদকে। সাফল্যের যেসন শেষ নেই, মানুষের চাওয়া পাওয়ারও সীমানা নেই। এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথমত আমাদের চাওয়া ছিলো ভালো খেলা উপহার দেয়া। তারপর ছিলো কোয়ার্টার ফাইনানালে খেলা। আর এখন প্রত্যাশা হচ্ছে সেমিফাইনাল নয় ফাইনাল খেলা। আর তা যদি সম্ভব হয় তবে সতিই ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ অসামান্য কৃতিত্ব দেখাবে তাতে কোন ভুল নেই। যেখানে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে সেখানে প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলা দেখার স্বপ্ন এখন আর স্বপ্ন নয়। রাত জেগে ‘বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড’ আর ‘বাংলাদেশ-স্কটল্যান্ড’-এর খেলা দেখে আমার মধ্যে বিশ্বাস জন্মেছে এবারের ফাইনালে খেলা অসম্ভব নয়। এই খেলাগুলোর পাশাপাশি দরকার সুপ্রসন্ন ভাগ্য। বিধাতার কাছে প্রত্যাশা করি তিনি যেনো সেই ভাগ্যই দেন মুশফিক বাহিনীর টাইগারদের। ১৫ মার্চ’২০১৫