অক্সফোর্ড অভিধানের বর্ষসেরা ‘পোস্ট-ট্রুথ’ শব্দের ইতিবৃত্ত
- প্রকাশের সময় : ০৯:৩১:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৬
- / ১১৩০ বার পঠিত
মোহাম্মদ আলী বোখারী: ব্রিটেনের অক্সফোর্ড অভিধান কর্তৃপক্ষ ইংরেজি ‘পোস্ট-ট্রুথ’ শব্দটিকে ২০১৬ সালে বর্ষসেরা শব্দ ঘোষণা দিয়েছে। এটি ইংরেজি অ্যাডজেকটিভ বা বিশেষণ, অর্থাৎ গুণবাচক শব্দ এবং তা ‘জনমত বা জনসচেনতা সৃষ্টিতে লক্ষ্যগত প্রভাবের তুলনায় আবেগ ও কোনো ব্যক্তির বিশ্বাসনির্ভর পরিস্থিতিসংশ্লিষ্ট’ শব্দ। আর এ বর্ষসেরা শব্দচয়ণ বিষয়ে অক্সফোর্ড অভিধানের জন্য পা-ুলেখ্য বা কথিকা লিখেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক ভাষ্যকার ও অতিথি লেখক নীল মিডগ্লে, যা ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার ২০১৬ অক্সফোর্ড ডিকশনারিজ’ টাইটেলে ইউটিউবে রয়েছে এবং আগ্রহীরা তা দেখতে পারেন।
প্রশ্ন জাগতে পারে, এই ‘পোস্ট-ট্রুথ’ শব্দটির যথার্থ বাংলা কী হতে পারে? এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শব্দপ্রণেতাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো অভিমত জানা না গেলেও নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গীতে ধরে নিয়েছি ইংরেজি ‘পোস্টগ্র্যাজুয়েট’ বা বাংলা ‘¯œাতকোত্তর’ শব্দের ভিত্তিতে তা ‘সত্যোত্তর’ হতে পারে।
এ কারণে নীল মিডগ্লে’র কথিকায় প্রকাশ, গত এক দশক ধরে এ ‘পোস্ট-ট্রুথ’ শব্দটির ধারণা যথেষ্ট বিস্তৃতি লাভ করেছে। কিন্তু এ বছর অক্সফোর্ড অভিধান কর্তৃপক্ষ দেখেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ‘ইইউ’ থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছিন্ন হওয়াকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত ‘ব্রেক্সিট’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘পোস্ট-ট্রুথ’ শব্দটি অবিরত ব্যবহার হয়েছে। সেটা রাজনীতিনির্ভর বা ‘পোস্ট-ট্রুথ পলিটিকস’ বিষয়ে ইংরেজি ‘নাউন’ বা বাংলায় ‘বিশেষ্য’ হয়েছে। ফলে প্রধান প্রকাশনাগুলোয় ‘পোস্ট-ট্রুথ’ শব্দটি রাজনীতির ধারাবিবরণীর ক্ষেত্রে কোনো প্রকার সংজ্ঞায়িত ব্যাখ্যা ছাড়াই শিরোনাম হয়েছে বা হচ্ছে।
এ বিষয়ে গত ১৫ নভেম্বর ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকার ‘রেফারেন্স অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজেস’ সেকশনে অ্যালিসন ফ্লাড ‘পোস্ট-ট্রুথ’ নেমড্ ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার বাই অক্সফোর্ড ডিকশনারিজ’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। এটির সূচনায় লেখা হয়েছে- ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ব্রেক্সিটের যুগে অক্সফোর্ড অভিধান ‘পোস্ট-ট্রুথ’ শব্দটিকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ বা আন্তর্জাতিক বর্ষসেরা শব্দ ঘোষণা করেছে। তাতে ওই অভিধানের সম্পাদকরা বলেছেন, গত বছরের তুলনায় ২০১৬ সালে এ শব্দটির ব্যবহার ২০০০ শতাংশ বেড়ে গেছে এবং সেটা ব্রিটেনের ‘ইইউ’ থেকে বিচ্ছিন্নের ‘ব্রেক্সিট’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘটেছে।
তবে গার্ডিয়ান পত্রিকা ওই নিবন্ধে অক্সফোর্ড অভিধানকে উদ্ধৃত করে বলেছে- প্রথমবারের মতো ১৯৯২ সালে নেশন ম্যাগাজিনে সার্বিয়ান-আমেরিকান প্রয়াত রম্যকার স্টিভ টিসিক তার এক রচনায় ‘পোস্ট-ট্রুথ’ শব্দটি ব্যবহার করেন। টিসিকের সে রচনার প্রতিপাদ্য ছিলÑ ‘ইরান-কন্ট্রা দুর্নাম’ ও পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধ। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘পোস্ট-ট্রুথ বা সত্যোত্তর পৃথিবীতে আমরা মুক্ত মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি’। তবে অভিধান কর্তৃপক্ষ বলেছেন, এ শব্দসমষ্টি আপাতদৃষ্টিতে স্বচ্ছতার অর্থে ‘আফটার দ্য ট্রুথ ওয়াজ নাউন’ বা ‘সত্য জানা গেছে’ টিসিকের ওই রচনার আগেই ব্যবহৃত হয়েছে, কিন্তু সত্য যে নিরর্থক হতে পারে বর্তমানের এমন ফলাফল ঘটেনি। তারা আরও বলেছেন, সম্প্রতি ‘অনুপযোগী বা গুরুত্বহীন সময়সংশ্লিষ্ট ধারণা’র পরিবর্তে ‘সুনির্দিষ্ট সময় পরবর্তী পরিস্থিতি বা ঘটনা, যেমন- যুদ্ধোত্তর বা খেলোত্তর প্রেক্ষাপটে পোস্ট বা সময়োত্তর প্রিফিক্স বা পূর্বপদটি অতিমাত্রায় অর্থগত প্রসারতা পেয়েছে’। বাস্তবে সূক্ষ্ম তারতম্য বিবেচনায় বিংশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়, যেমন- ১৯৪৫ সালের ‘পোস্ট ন্যাশনাল’ বা জাতীয়োত্তর এবং ১৯৭১ সালে ‘পোস্ট র্যাসিয়াল’ বা বর্ণোত্তর শব্দদ্বয় ব্যবহৃত হয়েছে। এখন অক্সফোর্ড অভিধান কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েবসাইট ‘অক্সফোর্ড ডিকশনারিজ ডটকম’-এ ‘পোস্ট-ট্রুথ’ শব্দটিকে যুক্ত করেছে এবং পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে ‘অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধান’-এ তা সন্নিবেশ করতে পারে।
পুনশ্চ: এ ‘পোস্ট-ট্রুথ’বিষয়ক বর্ণিত ব্যাখ্যায় যেহেতু ‘পোস্ট-ট্রুথ পলিটিকস’ শব্দসমষ্টিও এসেছে, সেহেতু সেটির ধারণাটিও দরকার। তাই উইকিপিডিয়ার মতে, ‘পোস্ট-ট্রুথ পলিটিকস’ হচ্ছে ‘পোস্ট-ফেকচুয়াল পলিটিক্স’-এর সমার্থক, অর্থাৎ যে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বৃহত্তর অর্থে আবেগের আবেদন পরিপূর্ণ নীতিমালা বিচ্ছিন্ন পরিসরে বিতর্কিত এবং যা পর্যায়ক্রমিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বস্তুনিষ্ঠভাবে বিতর্ক বিবর্জিত। সেটি থেকে ‘পোস্ট-ট্রুথ’ শব্দটি অবশ্যই আলাদা, যা ধারাবাহিক প্রতিযোগিতা ও সত্যের অপলাপকে ‘সেকেন্ডারি’ বা মাধ্যমিক গুরুত্বে তুলে ধরে। (আমাদের অর্থনীতি)
টরন্টো