সাফল্যের ৩১ বছরে ঠিকানা

- প্রকাশের সময় : ০৭:১১:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২০
- / ২১৪ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: দিন যায়, দিন আসে। বছর যায়, বছর আসে। প্রকৃতির নিয়মেই এই চক্র। চক্রের এই রথে চড়েই আসে ষড়ঋতু, আসে দশক, আসে শতাব্দী। আমরা একটি নতুন শতাব্দীতে পা রেখে ইতিমধ্যেই পাড় হয়ে আসলাম দুটি গৌরবের দশক। এই নয়া দশকে ঠিকানা সাফল্যের সঙ্গে তার ৩টি দশক পাড় করে পা রাখছে ৩১ বছরে।
৩১ বছরে পা রাখার এই সালটি নানা কারণে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, যিনি বাঙালির জাতিরাষ্ট্রের জনক, সেই বাঙালি শ্রেষ্ঠ, জগৎশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বর্ষ উপলক্ষে এবার উদযাপিত হচ্ছে ‘মুজিববর্ষ’। মুজিববর্ষকে সর্বাত্মকভাবে সফল করে তুলতে স্বদেশে এবং প্রবাসে সরকার, আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আঞ্চলিক সংগঠন নানা আয়োজনে উদযাপনে নানা কর্মসূচি সফল করার ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের জনক বঙ্গবন্ধুকে ‘মুজিববর্ষে’ ঠিকানার পক্ষ থেকে স্মরণ করি গভীর শ্রদ্ধায়।
এই রকম এক আবহে ঠিকানার ৩০তম বর্ষপূর্তিও গভীর তাৎপর্য বহন করে। ঠিকানার জন্মের পেছনেও রয়েছে বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যকে এই প্রবাস-পরিবেশে লালন করা ও ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়াস। মায়ের মুখের ভাষা বাংলা ভাষাকে ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করে। সৃষ্টি করে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস। এই একুশের বেদিতলে রফিক, জব্বার, বরকত, শফিকরা রক্ত দিয়ে রচনা করে পৃথিবীর ইতিহাসে এক নয়া অধ্যায়। যে একুশ শিক্ষা দেয় বাঙালিকে কোন রক্তচক্ষুকে ভয় না করার। সেই শহীদের রক্তভেজা মহান ইতিহাসের দিনটিকে হৃদয়ে ধারণ করে জন্ম নেয় প্রবাসী বাঙালিদের প্রিয় ঠিকানা, আস্থা ও ভরসার নাম ‘ঠিকানা’।
ঠিকানার আজকের যে সাফল্য, যে অগ্রসরমানতা তার পেছনে অনেকগুলো কারণ বিদ্যমান। অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কর্তৃপক্ষ এবং কর্মরত সাংবাদিক, সংবাদ কর্মীদের কমিটমেন্ট, সেই সঙ্গে প্রবাসী কমিউনিটির আন্তরিক সমর্থন। ঠিকানা একুশের চেতনা ধারণ করে, বিশ্বাস করে এবং সেই পথ ধরে চলার চেষ্টা করে। ঠিকানা প্রবাস-কমিউনিটির সুখ-দুঃখ, স্মৃতিকাতরতা, দেশের মায়া, বাংলাভাষা, সংস্কৃতি, নতুন প্রজন্মকে শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত রাখার আকুলতা খুব করে অনুভব করে। এবং তার সঙ্গে একাত্ম হয়ে, তাদের সব অনুভূতিকে স্পর্শ করার চেষ্টা করে থাকে।
৩০ বছরে ঠিকানা পথ চলতে গিয়ে শত অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ তেমনি অনেক বন্ধুকে যেমন ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার না হওয়ায় বৈরী হতে দেখেছে, ভুল বুঝে বৈরী অনেককে বন্ধু হয়ে ফিরেও পেয়েছে। ঠিকানা সংবাদ পরিবেশনে ট্রেডিশনাল বস্তুনিষ্ঠ নীতি মেনেই শুধু চলে না, সেই সঙ্গে সত্যের মাপকাঠিতে ঠিকানা তার শত্রু-মিত্র নির্ধারণ করে। সে কারণে সবাই হয়তো এটা মানবেন যে, ঠিকানা ব্যক্তিগত রাগ-অনুরাগ, ভালোবাসা-বিদ্বেষকে জায়গা দেয় না। ঠিকানার স্থানীয় ঘটনা প্রবাহকে যেমন গুরুত্ব দেয়, তেমনি দেশ ও বিশ্ব পরিমণ্ডলকে সাংবাদিকতার সীমানা হিসেবে চিহ্নিত করে। স্বস্তি, শান্তি ও সভ্যতা বিনষ্ট করে এমন কোন শক্তিকেও পৃষ্ঠপোষকতা দেয় না।
ঠিকানা মুখোশধারীদের মুখোশ উন্মোচন করে। সত্যকে সত্য এবং কালোকে কালো বলেই বিবেচনা করে। ঠিকানার সঙ্গে কমিউনিটির বোঝাপড়া আজও তাই অটুট। কমিউনিটির এগিয়ে চলা, সমৃদ্ধি অর্জন, মূলধারায় কমিউনিটির সেতুবন্ধ রচনার সকল প্রয়াসের সঙ্গে ঠিকানা অতীতে যেমন থেকেছে, আজও আছে। ভবিষ্যতের দিক-নির্দেশনাতেও ঠিকানা বিশ্বস্ততার সঙ্গে তার অঙ্গীকার রক্ষা করে চলে। কমিউনিটির কল্যাণে ঠিকানার হাত সবসময় উদার। নতুন প্রজন্মের শিক্ষা, ভবিষ্যৎ নির্মাণ এবং অন্ধকারের পথ থেকে রক্ষায় সর্বাত্মকভাবে অবদান রাখতে সচেষ্ট।
যারা প্রবাসে বাংলাভাষা, শিল্প-সাহিত্য-সংগীত চর্চা করে, তাদের সবরকম পৃষ্ঠপোষকতা দেয় ঠিকানা। একজন-দু’জনকে খুশি করা নয়, সবাইকে পথ করে দেয়ার প্রয়াস রাখে। এক কথায় বলতে হয়- ঠিকানা সত্যের পক্ষে, মানুষ, প্রকৃতি, শান্তি-সভ্যতার পক্ষে। তাইতো বর্তমান সময়ের সব ঝড়-ঝাপ্টা মোকাবিলা করে, সব শুভাকাঙ্ক্ষীকে সাথে নিয়ে এগিয়ে চলেছে গৌরববোধ নিয়েই। এবং আগামীদিনেও আজ আমরা যারা আছি, তারা থাকি বা না থাকি, ঠিকানা ঠিকই থাকবে, এগিয়ে যেতে থাকবে। আরো সমৃদ্ধ হবে।
ঠিকানা-কে নিয়ে অনেককে প্রশ্ন করতে শুনি, ‘পত্রিকাগুলো প্রকাশিত হয় নিউইয়র্ক থেকে, তবে নিউজ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেশের নিউজের এতো আধিক্য কেন?’ এসব প্রশ্নের উত্তর প্রশ্নকর্তা নিজেও জানেন। তবু কিছু কিছু মানুষ আছেন, যারা সাংবাদিক দেখলেই জেনে নিতে চান- ‘আচ্ছা বলেন দেখি…,আপনারাতো সাংবাদিক মানুষ, সব খবরই রাখেন, বলেন শুনি দেশের খবরাখবর কী?’
আসলে সবার বুকের মধ্যে যে ‘প্রবাসেও হৃদয়ে বাংলাদেশ’ আমরা সবাই অনুভব করি, বলতে চাই না কেউ-ই। প্রবাসীদের প্রায় সবারই বুকের মাঝে গভীরভাবে লালিত হয় দেশপ্রেম, তবে মুখে কেউই স্বীকার করি বা না করি। এদেশের গুরুত্বপূর্ণ নিউজও কম হয় না। প্রতিদিন বড় বড় নিউজ। কিন্তু শিরোনামে জায়গা পায় না। অর্থাৎ আমরা তেমন গুরুত্বই দিতে চাই না, পাঠকের কাছেও গুরুত্ব পায় না বলে। এই যে এখনকার সময়ে এদেশের প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়ায় রাতদিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি, কথাবার্তা, তর্কবিতর্ক চলছে- সেসব সবাই আগ্রহী হয়ে শুনছে। পক্ষে-বিপক্ষে কথা চালাচালি হচ্ছে, কিন্তু বাংলা সংবাদপত্রের পাতায় সেসব দেখতে খুব কম প্রবাসীই চান।
অথচ দেশে কোন প্রত্যন্ত এলাকায় অচেনা-অজানা কয়জন মারা গেল, কোথায় কোন উন্নয়ন কম হচ্ছে, নির্বাচন ফেয়ার হবে কিনা, ফেয়ার ইলেকশন হলে আওয়ামী লীগ জিতবে, না বিএনপি জিতবে- তা নিয়ে গ্রামের চায়ের দোকানে দোকানে জটলা। দোকানে দোকানে কথাবার্তা, উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়- ঢাকা সিটি করপোরেশনের উত্তর-দক্ষিণে কে জিতবে, ফলাফল আগে থেকেই ঠিক করা আছে কিনা, সরস্বতী পূজার দিনে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ ঠিক হয়েছে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক। দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ক’জন মারা গেল, কোন মন্ত্রী কী বললেন, ধর্ষণ মহামারি রূপ নিলো, শিশু থেকে বৃদ্ধা ধর্ষণ; ধর্ষণ করে হত্যা, কিন্তু প্রশাসন কেনো ধর্ষণ প্রতিরোধে ব্যর্থ হচ্ছে- নানা বিষয় নিয়ে প্রবাসী মানুষ নানা মতামত দিচ্ছে। কোন রোগে কী ওষুধ খাওয়ানো দরকার, বিশেষজ্ঞের সব মতামত। গ্রাম থেকে শহর, ধনি থেকে নির্ধন, জ্ঞানী-গুণি, শিক্ষিত-মুর্খ- কেউ কম যান না। পাল্লা দিয়ে চলে কথাবার্তা, তর্ক-বিতর্ক। পেঁয়াজের দাম কেনো বাড়ে, শীতের সময়েও শাক-সব্জির দামে নাকাল হয় কেন মানুষ, কৃষক কেন দাম পান না, মধ্যস্বত্ত্বভোগী ফরিয়া কেন কৃষক ঠকায়, কোন কোন গডফাদারদের সিন্ডিকেটের কারসাজিতে দাম বাড়ে, হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়, স্টক মার্কেটে বারবার ধস নামে কেন; দু-একজন মানুষ ঠিক করতে পারলেই লাখ লাখ মানুষ পথে বসে না। সরকারের মেগা মেগা উন্নয়ন প্রকল্প, উন্নয়নের রোল মডেলে দেশ, বিরোধী দলের গণতন্ত্র, বাক-স্বাধীনতা, জেল-জুলুম, মামলা-মোকদ্দমা নিয়ে প্রবাস কমিউনিটি সরগরম।
এর বাইরে দু-চার সপ্তাহ পর পর যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সংবাদ শিরোনামে আনা যায়, তবে পাঠকদের বিরক্তি স্পষ্ট অনুভব করা যায়। এ আর কিছু নয়, প্রবাস জীবনে এই দেশ ভাবনা অত্যন্ত স্বাভাবিক। পানিতে থেকে মাছেরা যেমন পানির গুরুত্ব বুঝতে পারে না, তেমনি মানুষ দেশে থেকে দেশকে হয়তো প্রবাসী জীবনের মতো অতো গভীরভাবে অনুভব করতে পারে না। দেশের বাইরে পা রাখলে অনুভব করা যায় দেশকে। একেই বলে দেশপ্রেম। প্রবাসেও হৃদয়ে বাংলাদেশ। বাংলার কচুর লতিও প্রবাসে অমৃতসম।
এ কারণেই প্রতি সংখ্যাতেই ঠিকানার প্রথম পাতায় আমেরিকার সংবাদ যদি ৪টি স্থান পায়, তবে বাংলাদেশের সংবাদ জায়গা পাবে ১২ থেকে ১৫টি। ভেতরেও কয়েকটি পাতা, নিউইয়র্ক পরিক্রমা আর আমেরিকার অন্দরে রেখে আর সবই বরাদ্দ দেশের সংবাদের জন্য। ঠিকানা প্রবাস কমিউনিটিকে এই সেবা দিয়ে আসছে গত ৩০ বছর ধরে। এই সেবা দিয়েই ঠিকানা সবার প্রিয়, সবার শীর্ষে। এই পথ ধরেই ঠিকানার সঙ্গে পাঠকের এবং কমিউনিটির এক গভীর এবং অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
ঠিকানা কোন ভড়ং করে চলে না। পাঠকের সঙ্গে ঠিকানা আদি-অকৃত্রিম সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ। এদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর, যা পাঠকের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে, সেসব খবর থেকে ঠিকানা কখনোই তাদের বঞ্চিত করে না। এই যে এখন যেমন পাঠকের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট, সেন্সাস সম্পর্কিত সংবাদ। ঠিকানাও গুরুত্ব দিয়ে সেসব সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে। এর বাইরে নিয়মিতভাবে গুরুত্ব পায় ইমিগ্রেশন আপগ্রেড, ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত নতুন নতুন খবর, মেডিকেইড সংক্রান্ত সংবাদ।
অর্থাৎ ঠিকানা সবসময় কমিউনিটি, পাঠকের প্রয়োজন এবং চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে চলে। তারা ঠিকানার সুপ্রিম কোর্ট। এই কোর্টের কাঠগড়ায় ঠিকানা প্রতিদিন দাঁড়ায় জবাবদিহি করতে। পাঠকের কাছে ঠিকানার এই জবাবদিহিতা অনাদিকাল চলবে। এবং পাঠকের কাছে এই জবাবদিহিতাই ঠিকানার পাঠকপ্রিয়তা এবং সাফল্য ধরে রাখবে অনাদিকাল। একটি পত্রিকার পাঠকই হচ্ছে প্রাণ। একটি পত্রিকার শ্রীবৃদ্ধি, সুনাম, সাফল্য ততোদিন, যতদিন পাঠক তার সঙ্গে থাকে। পাঠকের দিকে চেয়েই ঠিকানা তার পরিকল্পনায় পাঠকের রুচি-চাহিদা মতে নিজের পথচলা নির্ধারণ করে এবং নিজেকে সেভাবেই সাজিয়ে তোলে। আমাদের নীতি ও স্লোগান- একসঙ্গে এগিয়ে চলা, একসঙ্গে সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হওয়া।
সাফল্যের সঙ্গে ৩০ বছর পূর্ণ করে ঠিকানার ৩১ বছরে পদার্পণের শুভমুহূর্তে সবার সমর্থন, সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা কামনা করে সব পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, লেখক, শুভাকাক্সক্ষী, শুভানুধ্যায়ী সবাইকে ঠিকানার পক্ষ থেকে অতল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।(ঠিকানা)