মাহমুদুর রহমানের উপর হামলার জন্য দায়ীদের অবিলম্বের গ্রেফতার ও বিচার দাবী
- প্রকাশের সময় : ০৬:১৩:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুলাই ২০১৮
- / ৬৬৬ বার পঠিত
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): কুষ্টিয়ার আদালত প্রাঙ্গণে প্রকাশ্য দিবালোকে দৈনিক আমার দেশ-এর ভাপ্রাপ্ত সম্পাদক, বিশিষ্ট লেখক মাহমুদুর রহমানের উপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত, হামলাকালীদের গ্রেফতার করে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার দাবী জানিয়েছেন নিউইয়র্কের বাংলাদেশী সম্পাদক ও সাংবাদিক সমাজ। সেই সাথে বাংলাদেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সম্প্রতি সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও সাংবাদিক দম্পতি ‘সাগর-রুনী’ হত্যারও বিচার দাবী জানানো হয়।
আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাব আয়োজিত সাংবাদিক সমাবেশে উপরোক্ত দাবী জানানো হয়। ২৪ জুলাই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিটির জ্যাকসন হাইটসস্থ প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয়ে (সাপ্তাহিক দেশবাংলা-বাংলা টাইমস মিলনায়তন) আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ক্লাবের সভাপতি ও বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান। সভা পরিচালনা করেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশন-এর বার্তা সম্পাদক শিবলী চৌধুরী কায়েস। খবর ইউএনএ’র।
সমাবেশে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের উপদেষ্টা ও সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক মনজুর আহমেদ, উপদেষ্টা ও ইংরেজী সাপ্তাহিক হলিডে’র যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি মঈনুদ্দীন নাসের, সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশন-এর সিইও এবং প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু তাহের, সাপ্তাহিক জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার, সাপ্তাহিক রানার সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম, বাংলা পত্রিকা’র বিশেষ প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ সিরাজুল ইসলাম, বার্তা সংস্থা ইউএনএ সম্পাদক ও প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ, প্রথম আলো (উত্তর আমেরিকা)’র সিনিয়র রিপোর্র্টার সাহেদ আলম, বিএফইউজে’র সাবেক দপ্তর সম্পাদক ইমরান আনসারী, সাপ্তাহিক দেশবাংলা’র নির্বাহী সম্পাদক ও প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর সরকার, প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দ্য ডেইলী সিটিজেন টাইমস-এর যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি চৌধুরী মোহাম্মদ আলী কাজল, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন দীপু, ইয়র্ক বাংলা সম্পাদক রশীদ আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের অন্যতম সদস্য, সাপ্তাহিক আজকাল-এর সহযোগী সম্পাদক ও সময় টিভি’র যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান সাকী, টাইম টেলিভিশন-এর আনোয়ার হোসেন বাবু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে মনজুর আহমেদ বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে আদালত প্রাঙ্গনে মাহমুদুর রহমানের উপর হামলার ঘটনাই প্রমান করে বাংলাদেশের নাগরিকরা নিরাপদ নেই, দেশে আইনের শাসন নেই, বাক-স্বাধীনতা নেই, মিডিয়ার স্বাধীনতা নেই। যেখানে বাংলাদেশে কথা বলার সুযোগ নেই, সেখানে প্রবাস থেকে জোরালো আওয়াজ তুলতে হবে। তিনি বলেন, দেশে ছাত্র রাজনীতি নেই বলেই ভবিষ্যতে যোগ্য নেতৃত্ব পাওয়া যাবে না। ছাত্রনেতারা মেধা, বিদ্যা-বুদ্ধির চর্চা না করে গুন্ডামী করছে, মূর্খ হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আজ দেশের আদালত কোথায়, সংবিধান কোথায়, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এতো অধিপত্য, উদ্ধ্যত্ত্ব কোথায় পায়? তিনি বলেন, আজ ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলছে, দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। এভাবে স্বাধীন দেশ চলতে পারে না। শেখ হাসিনা বাকশালীয় কায়দায় ‘ছাত্রলীগ’ নামধারী মাসলম্যান বাহিনী দিয়ে দেশ চালাচ্ছেন। হিটলারের মতো নিজস্ব বাহিনী দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। কিন্তু স্বৈরাচারের ক্ষমতা স্থায়ী হয় না।
মঈনুদ্দীন নাসের বলেন, মাহমুদুর রহমানের উপর হামলা একটি ন্যাক্কারজনক হামলা। তবে মজার ব্যাপর হচ্ছে মাহমুদুর রহমান যাদের জন্য হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন সেই বিএনপি কোথায়? দেশের রাজনীতির হিসাব মেলাতে পারছি না। দেশে বিরোধী দল বলতে কিছু নেই। আছে শুধু ডান্ডাবাজ হাসিনা সরকার। বাকী সবাই সরকারের উচ্ছিষ্ট। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, দেশের প্রধান বিচারপতিকে কেন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে হচ্ছে? তিনি প্রবাসের সম্পাদক আর সাংবাদিকদের অভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে এবং আওয়াজ তুলে সরকার বিরোধী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান।
নাজমুল আহসান বলেন, মাহমুদুর রহমানের চিন্তা-চেতনা-বক্তব্যের সাথে মিল না থাকলেও একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে তার উপর যে হামলা হয়েছে তা মেনে নেয়া যায় না। তার উপর হামলা শোভন সমাজের ঘটনা নয়, অসভ্য সমাজের ঘটনা। আমরা দেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে সবার অধিকার আর বিচার পাওয়ার নিশ্চয়তা চাই।
আবু তাহের বলেন, মাহমুদুর রহমানের উপর হামলার প্রতিবাদের ভাষা নেই। ঘটনাটি সবার জন্যই লজ্জাস্কর। একা কোন সভ্য সমাজের সংস্কৃতি হতে পারে না। গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতার জন্যই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সাংবাদিকরা কোন দল বা মতের পক্ষে নই, আমরা মানবতার পক্ষে।
রতন তালুকদার বলেন, মাহমুদুর রহমানের উপর হামলা বা এমন ঘটনা এটাই প্রথম নয়। তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, তিনি একজন সৎ ও সাহসী মানুষ। তিনি বলেন, যেদেশের প্রধান বিচারপতিকে পালিয়ে দেশ ছাড়তে হয়, সেদেশের নাগরিকদের ন্যায় বিচার আশা করা যায়? তিনি বলেন, এসব ঘটনা সরকারের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে।
জয়নাল আবেদীন বলেন, মাহমুদুর রহমানের উপর কেন, কিভাবে, কোথা থেকে হামলা হলো তা খতিয়ে দেখতে হবে। আজ দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নেই, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকীর মুখে। সরকার বাংলাদেশকে ভারতের তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মাহমুদুর রহমানের উপর হামলা মেনে নেয়ার মতো নয়। একটি স্বাধীন দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে না, তা হতে পারে না। তিনি বলেন, আমাদের বড় ভুল আমরা নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছি। তিনি সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ-এর উপর দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার দাবী করেন।
শেখ সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকার ভিন্ন মতাবলম্বীদের সহ্য করতে পারছে না। পরিকল্পিতভাবেই মাহমুদুর রহমানের উপর হামলা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যশোরে ভাতিজার অপরাধের কারণে চাচা ইমামের উপর হামলা হয়েছে। জনগণ আইন নিজর মতো করে নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। এটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সমাজ হতে পারে না। তিনি সাংবাদিক দম্পতি ‘সাগর-রুনী’ হত্যা মামলার বিচার দাবী করেন।
এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে নানাজনের নানা মত থাকলেও একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে তার বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে আদালতে হামলার ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। তিনি বলেন, সাংবাদিকতা আর রাজনীতি এক করে ফেলার জন্যই আজ এই অবস্থা। আমরা মানিক মিয়া, নির্মল সেন-দের মতো সাংবাদিক-রাজনীতিক পাচ্ছিনা। সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী আর শওকত মাহমুদরা একে অন্যের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। এটা সাংবাদিক সমাজের জন্য দু:খজনক।
সাহেদ আলম তার বক্তব্যে মাহমুদুর রহমানের উপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এমন ঘটনা কোনভাইে মেনে নেয়া যায় না। সকল মহল থেকেই এসব ঘটনার প্রতিবাদ হওয়া উচিৎ।
ইমরান আনসারী বলেন, যে রাষ্ট্রে আইনের শাসন নেই, বাক স্বাধীনতা নেই, মিডিয়ার স্বাধীনতা নেই, মানবাধিকার নেই, নাগরিকদের নিরাপত্তা নেই, সে রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হতে পারে না। মানুষর মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যের বিকল্প নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আলমগীর সরকার মাহমুদুর রহমানের উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, আমরা কার কাছে বিচার চাইবো। যে আদলত প্রাঙ্গণে মানুষ হামলার শিকার হয়, সেখানে বিচার চাওয়া যায় না। আমরা এমন বাংলাদেশ চাইনি।
চৌধুরী মোহাম্মদ আলী কাজল মাহমুদুর রহমান একজন সৎ ও সাহসী মানুষ। আমাদের প্রতিবাদ করতেই হবে। তিনি বলেন, নৈতিকতার প্রশ্নে সাংবাদিকদের আপোষ করা চলবে না।
এমদাদ হোসেন দীপু বলেন, মাহমুদুর রহমানের উপর হামলার ঘটনায় অনেকে বিস্মিত, আমি নই। কেননা, এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আগে থেকেই ছিলো। এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। তাছাড়া মাহমুদুর রহমান যেভাবে সাহসিকতার সাথে কথা বলেছেন, প্রতিবাদ করছেন। তার কাছ থেকে আমাদের পথ বেছে নিতে হবে।
রশীদ আহমেদ বলেন, মাহমুদুর রহমান একজন, সৎ, সাহসী, দেশপ্রেমকি মানুষ। আমরা তার উপর হামার নিন্দা জানাই এবং বিচার দাবী করি।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ওয়াজেদ এ খান বলেন, আমরা দল-মত আর বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। কিন্তু দেশের প্রশ্নের, দেশের নাগরিকদের অধিকারের প্রশ্নে, মানবাধিকারের প্রশ্নে, গণতন্ত্রের প্রশ্নে আপোষ করার সুযোগ নেই। তিনি মাহমুদুর রহমানের উপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত পূর্বক দোষীদের অবিলম্বে চিহ্নিত, গ্রেফতার ও বিচার দাবী করেন।
প্রতিবাদ সমাবেশ সফল করায় সাধারণ সম্পাদক শিবলী চৌধুরী কায়েস সকল সম্পাদক ও সাংবাদিকদের প্রতি কুতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমরা সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে সবার সার্বিক সহযোগিতা চাই।