নিউইয়র্ক ০১:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নিউইয়র্কে নঈম নিজাম ও পীর হাবিবুর রহমানকে ঘিরে অন্যরকম আড্ডা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৫৪:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ জুন ২০১৮
  • / ৮৪৬ বার পঠিত

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): ঢাকার শীষস্থানীয় দৈানিক ‘বাংলাদশ প্রতিদিন’-এর সম্পাদক নঈম নিজাম ও পূর্ব-পশ্চিম ডট কম-এর সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমানকে ঘিরে অন্যরকম আর ব্যতিক্রমী আড্ডা হলো নিউইয়র্কে। ‘দুই বন্ধুর সাথে সোমবারের আড্ডা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও প্রবাসের সাংবাদিকতা, সাংবাদিকদেও বিভক্তি আর দলকানা সাংবাদিক ছাড়াও সমকালীন রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রবাসীদের অবদান, করণীয় ও ভূমিকা এবং সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু স্যাটালাইট-১ উৎক্ষেপন বিষয় ছাড়াও বাংলাদেশের গুম-খুন-হত্যার রাজনীতির বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। পাশাপাশি সাংবাদিক নঈম নিজাম আর পীর হাবিবুর রহমান-এর ব্যক্তি বিষয়াদীছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত সিনিয়র সাংবাদিক ও সুধীবৃন্দের ব্যক্তিগত প্রসঙ্গও উঠে আসে যা, আড্ডার আলোচনায় অন্যরকম মাত্র যোগ করে। আলোচনায় আরো উঠে আসে ‘জাতির জনক’ বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘বড় মন ও বড় মাপ’-এর রাজনীতির প্রসঙ্গ সহ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ‘জয় বাংলা’ নাকি ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শ্লোগান সহ আরো নানা বিষয়। অপরদিকে অতিথি আর সুধীদের নানা আলোচনা কখনো কখনো ‘সিরিয়াস’ আবার কখনো ‘হাস্যরস’-এর আলোচনায় রূপ নেয়। সবমিলিয়ে প্রাণবন্ত হয়ে জমে উঠে সোমবারের আড্ডা। খবর ইউএনএ’র।
নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ প্লাজা মিলনায়তনে ১৪ মে সোমবার সন্ধ্যায় এই আড্ডা আয়োজন করা হয়। সোমবারের আড্ডার অন্যতম অতিথি ছিলেন সাপ্তাহিক ঠিকানা’র সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি ও সাবেক এমপি এম এম শাহীন, প্রবীণ সাংবাদিক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক মনজুর আহমেদ, সাপ্তাহিক বাঙালী সম্পাদক কৌশিক আহমদ, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশন-এর সিইও আবু তাহের, প্রবীণ ফটো সাংবাদিক লুৎফর রহমান বেনু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারী আশরাফুল ইসলাম খোকন।
সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকীর বিশেষ উদ্যোগ, ব্যবস্থাপনা আর উপস্থাপনায় সন্ধ্যা ৬টার আড্ডা শুরু হয় সোয়া ৮টার দিকে। আড্ডা জমে উঠে মাঝে, আর শেষ হয় রাত সাড়ে ১০টার দিকে। শুরুতেই প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন পীর হাবিবুর রহমান। এরপর সূচনা বক্তব্য রাখেন নঈম নিজাম। সময়ের কথা বিবেচনা করে বেশ দ্রæত বাংলাদেশের সমসাময়িক প্রসঙ্গ এবং তাদের অবস্থান তুলে ধরেন।
আড্ডায় সাংবাদিক নঈম নিজাম আর পীর হাবিবুর রহমান দৃঢ়তার সাথে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, লালা-সবুজের পতাকা, গণতন্ত্র ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু এসব প্রশ্নে কোন আপোষ নেই, আপোষ হতে পারেনা। এসব সেটেল্ড বিষয়। তারা বলেন, আমরা সত্যকে, সত্য বলার চেষ্টা করছি। দলমতের উর্ধ্বে সাংবাদিকতা পেশাদারিত্ব অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা করছি। তারপরও দেশ-জাতি আর মানুষের স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কখনো কখনো আপোষ করছি। তারা বলেন, ‘দলকানা সাংবাদিকতা’ পেশার পাশাপাশি দেশ-জাতিরও ক্ষতি করছে, সাংবাদিকরা বিভক্ত হচ্ছেন, সাংবাদিকদের ইউনিয়ন বিভক্ত হয়েছে। যা কারো কাম্য নয়।
দুই ঘনিষ্টবন্ধু নঈম নিজাম আর পীর হাবিবুর রহমান বলেন, ইন্টারনেটের যুগে পৃথিবী এখন একটি ভিলেজে পরিণত হয়েছে। ঢাকা তথা বাংলাদেশের সাংবাদিকতা আর প্রবাসের সাংবাদিকতা এক ও অভিন্ন হয়ে পড়েছে। নিউইয়র্ক আমাদের আরেকটি ঘরে পরিণত হয়েছে। নিউইয়র্কের সাংবাদিকদের পাশাপাশি বাংলাদেশী কমিউনিটি আমাদের আপনজন হয়ে উঠেছে। এমন আড্ডায় অনেককেই এক সাথে পেয়ে ভালো লাগছে, প্রাণ খুলে কথা বলতে পারছি। তবে আড্ডায় যা বলা যায়, সভা-সমাবেশে তা বলা যায় না। তারা উত্তর আমেরিকার সকল প্রবাসীকে শুভেচ্ছা জানান।
আড্ডায় পীর হাবিবুর রহমান তার বক্তব্যে বিশিষ্ট রাজনীতিক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আর এম এম শাহীনকে ‘ক্লিন ইমেজ’-এর রাজনীতিক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, মৌলভীবাজার মানুষ বিপদে আছেন। এই দুই রাজনীতিক একই আসনের হওয়ায় এমপি নির্বাচনে মানুষ সমস্যায় পড়েছে। তারা কাকে রেখে কাকে নিবাচিত করবেন- এমন প্রশ্নও উঠেছে। দুইজনের একজন মৌলভীবাজার থেকে আরেকজন সিলেট সদর থেকে রাজনীতি আর এমপি পদে নির্বাচন করতে পারেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পীর হাবিবুর রহমান তার ঘনিষ্ট বন্ধু নঈম নিজামকে বাংলাদেশের অন্যতম ‘মিডিয়া মুঘল’ বসুন্ধরা গ্রæপের রূপকার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আমি সোজা পথে চলি, আর নঈম আঁক-বাঁকা পথে চলে। নঈম যেখানে পিছলে যায়, আমি সেখানে আটকে যাই। তবে তার আর আমার মথ্যে অনেক মিল, আমরা ঘনিষ্ট বন্ধু। তিনি বলেন, দেশ-জাতির উন্নয়নের স্বার্থে কখনো কখনো আপোষ করে চলছি।
নঈম নিজাম বলেন, বাংলাদেশে আইনের শাসন খুবই জরুরী। দেশে সঠিকভাবে আইনের শাসন থাকলে দেশের উন্নয়ন আরো বেশী হতো। আইন কার্যকর থাকলে সঙ্কট সৃষ্টি হয় না। আইনের শাসন আর উন্নয়নকে একসাথে চলতে হবে। তিনি বলেন, মিডিয়া পরিচালনা আর সাংবাদিকতা পেশায় সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ থাকা জরুরী।
নঈম নিজাম বলেন, প্রবাসীদের হৃদয়ে বাংলাদেশ। প্রবাসীদের অর্থে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে। প্রবাসীদের অভিজ্ঞত কাজে লাগিয়ে সরকার দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এম এম শাহীন বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীরা বাংলাদেশ সরকারের অংশ। তিনি ড. আব্দুল মোমেন, ড. শাজাহান মাহমুদ, আশরাফুল আলম খোকওনের নাম তুলে ধরে বলেন, অনেক প্রবাসীই এখন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থান করে দেশের উন্নয়ন-আগ্রগতিতে অবদান রাখছেন। তবে আগেকার সরকারগুলোর চেয়ে বর্তমান সরকারের সময়ে প্রবাসীরা বেশী কদর পাচ্ছেন।পাশাপাশি অনেক প্রবাসী সরকারের নানান সুযোগ সুবিধাও পাচ্ছেন আবার অনেককে এই সুযোগের অপব্যবহার করছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বিশেষ করে ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলাকে যারা ধ্বংস করে দিয়েছেন তাদের চিহ্নিত করা দরকার। তিনি প্রবাস থেকে ৫০০ অভিজ্ঞ প্রবাসীকে দেশে নিয়ে সরকার পরিচালনায় কাজ করার সুযোগ দেয়ার দাবী জানান।
মনজুর আহমেদ বলেন, পেশার প্রতি নিষ্ঠা থাকলে যে সফল হওয়া যায় তার প্রমাণ ‘নঈম নিজাম-পীর হাবিবুর রহমান’। ৯০ দশকের তরুণ-উদীয়মান সাংবাদিক আজ নামকরা সাংবাদিক-সম্পাদক-লেখক। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, আমাদের চোখে চশমা নেই, আমরা ক্ষমতায় নেই। স্বৈরশাসনের মধ্যেও সাংবাদিকরা মিছিল-সমাবেশ, প্রতিবাদ করেছে, কালো ব্যাজ ধারণ করেছে। কিন্তু আজ পারছে না। তিনি বলেন, মওলানা আকরাম খাঁ, তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, জহুর হোসেন চৌধুরী, আব্দুস সালাম, সিরাজ উদ্দিন হোসেন প্রমুখ সম্পাদক-সাংবাদিকদের নিয়ে যেমন গর্ব করতে পারি, তেমনী যেনো নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের নিয়েও গর্ব করতে পারি।
কৌশিক আহমদ তার বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিকতার বিষয় তুলে ধরে বলেন, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়ার্ল্ড স্ট্রীট জার্ণাল সহ অনে মিডিয়া আছে যারা যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের চোখ রাঙানীকে উপক্ষো করে জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে সততার সাথে সাংবাদিকতা করে পেশার মর্যাদা ধরে রাখে। তারা নিজেরা যেমমন সৎ তেমনী তারা তাদেও রিপোর্টারকে বিশ্বাস করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সত্য কথা বলতে হবে।
আবু তাহের বলেন, বাংলাদেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র আছে কি নেই তা আর প্রশ্নের মুখোমুখী। বাংলাদেশের আগামী নেতৃত্ব কে দেবে, কারা দেবে তা নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। নতুন নেতৃত্বকে এগিয়ে নিয়ে তিনি সাংবাদিকদের ভূমিকার কথা স্সরণ করিয়ে দেন।
লুৎফর রহমান বেনু তর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশে ফিরে আসার স্মৃতিচারণ ছাড়াও সংবাদ পত্রিকায় কাজ করার সময়ের নানা অভিজ্ঞতা আর ১৯৭৬ সালে টঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবরের ছবি প্রথম তোলার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মওলানা ভাসানীর মতো নেতা হয় না। তারা সকল দলের রাজনীতিকেরসাথে সুসম্পর্ক রাখাতেন, একজন আরেকজনের সভায় যেতেন। কিন্তু এখন আর সেই সহনশীলতা আর শ্রদ্ধাবোধের রাজনীতি দেখছি না।
আশরাফুল ইসলাম খোকন বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বিষয়ে বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই। এটি সরকারের সম্পত্তি, কোন ব্যক্তির নয়। তিনি বলেন, না জানার কারণেই সরকারের প্রতিনিধি দলেল সদস্য নিউইয়র্কে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভুল তথ্য পরিবেশন করেছেন। তিনি বলেন, সরকার মিডিয়ার স্বাধীনতায় বদ্ধ পরিকর বলেই বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টকশোতে সবাই সকল সমস্যার কথাই তুলে ধরতে পারছেন। সংবাদপত্রেও গুম, খুন, হত্যার খবর প্রকাশিত হচ্ছে।
আড্ডায় কমিউনিটির সর্বস্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থেকে অতিথিদের শুভেচ্ছা জানান। কেউ কেউ সংক্ষেপে বক্তব্য রাখেন বা প্রশ্ন-উত্তর পর্বে অংশ নেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন: দৈনিক মানব জমিন-এর উপ সম্পাদক মনির হায়দার, সাপ্তাহিক বর্ণমালা’র প্রধান সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক মাহমুদ খান তাসের, মূলধারার রাজনীতিক মোর্শেদ আলম, মুক্তিযোদ্ধা মুকিত চৌধুরী, কলামিস্ট শিতাংশু গুহ, বিশিষ্ট নাট্যাভিনেত্রী রেখা আহমদ ও লুৎফুন্নাহার লতা, সাংবাদিক ফাহিম রেজা নূর, আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের একাংশের সভাপতি লাবলু আনসার ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শিবলী চৌধুরী কায়েস ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবিএ সালাহউদ্দিন আহমেদ, রাজনীতিক নূরে আলম জিকো, ফটো সাংবাদিক নিহার সিদ্দিকী, সাংবাদিক জিয়াউল হক সবুজ, নওশাদ হোসেন, হাকিকুল ইসলাম খোকন, কমিউনিটি সুব্রত বিশ্বাস, অ্যাক্টিভিস্ট কামাল হোসেন মিঠু, হেলাল উদ্দিন, অশোক চৌধুরী, গীতিকার ইশতিয়াক রূপু, কবি রওশন হাসান, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জয় চৌধুরী প্রমুখ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

নিউইয়র্কে নঈম নিজাম ও পীর হাবিবুর রহমানকে ঘিরে অন্যরকম আড্ডা

প্রকাশের সময় : ১১:৫৪:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ জুন ২০১৮

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): ঢাকার শীষস্থানীয় দৈানিক ‘বাংলাদশ প্রতিদিন’-এর সম্পাদক নঈম নিজাম ও পূর্ব-পশ্চিম ডট কম-এর সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমানকে ঘিরে অন্যরকম আর ব্যতিক্রমী আড্ডা হলো নিউইয়র্কে। ‘দুই বন্ধুর সাথে সোমবারের আড্ডা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও প্রবাসের সাংবাদিকতা, সাংবাদিকদেও বিভক্তি আর দলকানা সাংবাদিক ছাড়াও সমকালীন রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রবাসীদের অবদান, করণীয় ও ভূমিকা এবং সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু স্যাটালাইট-১ উৎক্ষেপন বিষয় ছাড়াও বাংলাদেশের গুম-খুন-হত্যার রাজনীতির বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। পাশাপাশি সাংবাদিক নঈম নিজাম আর পীর হাবিবুর রহমান-এর ব্যক্তি বিষয়াদীছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত সিনিয়র সাংবাদিক ও সুধীবৃন্দের ব্যক্তিগত প্রসঙ্গও উঠে আসে যা, আড্ডার আলোচনায় অন্যরকম মাত্র যোগ করে। আলোচনায় আরো উঠে আসে ‘জাতির জনক’ বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘বড় মন ও বড় মাপ’-এর রাজনীতির প্রসঙ্গ সহ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ‘জয় বাংলা’ নাকি ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শ্লোগান সহ আরো নানা বিষয়। অপরদিকে অতিথি আর সুধীদের নানা আলোচনা কখনো কখনো ‘সিরিয়াস’ আবার কখনো ‘হাস্যরস’-এর আলোচনায় রূপ নেয়। সবমিলিয়ে প্রাণবন্ত হয়ে জমে উঠে সোমবারের আড্ডা। খবর ইউএনএ’র।
নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ প্লাজা মিলনায়তনে ১৪ মে সোমবার সন্ধ্যায় এই আড্ডা আয়োজন করা হয়। সোমবারের আড্ডার অন্যতম অতিথি ছিলেন সাপ্তাহিক ঠিকানা’র সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি ও সাবেক এমপি এম এম শাহীন, প্রবীণ সাংবাদিক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক মনজুর আহমেদ, সাপ্তাহিক বাঙালী সম্পাদক কৌশিক আহমদ, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশন-এর সিইও আবু তাহের, প্রবীণ ফটো সাংবাদিক লুৎফর রহমান বেনু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারী আশরাফুল ইসলাম খোকন।
সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকীর বিশেষ উদ্যোগ, ব্যবস্থাপনা আর উপস্থাপনায় সন্ধ্যা ৬টার আড্ডা শুরু হয় সোয়া ৮টার দিকে। আড্ডা জমে উঠে মাঝে, আর শেষ হয় রাত সাড়ে ১০টার দিকে। শুরুতেই প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন পীর হাবিবুর রহমান। এরপর সূচনা বক্তব্য রাখেন নঈম নিজাম। সময়ের কথা বিবেচনা করে বেশ দ্রæত বাংলাদেশের সমসাময়িক প্রসঙ্গ এবং তাদের অবস্থান তুলে ধরেন।
আড্ডায় সাংবাদিক নঈম নিজাম আর পীর হাবিবুর রহমান দৃঢ়তার সাথে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, লালা-সবুজের পতাকা, গণতন্ত্র ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু এসব প্রশ্নে কোন আপোষ নেই, আপোষ হতে পারেনা। এসব সেটেল্ড বিষয়। তারা বলেন, আমরা সত্যকে, সত্য বলার চেষ্টা করছি। দলমতের উর্ধ্বে সাংবাদিকতা পেশাদারিত্ব অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা করছি। তারপরও দেশ-জাতি আর মানুষের স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কখনো কখনো আপোষ করছি। তারা বলেন, ‘দলকানা সাংবাদিকতা’ পেশার পাশাপাশি দেশ-জাতিরও ক্ষতি করছে, সাংবাদিকরা বিভক্ত হচ্ছেন, সাংবাদিকদের ইউনিয়ন বিভক্ত হয়েছে। যা কারো কাম্য নয়।
দুই ঘনিষ্টবন্ধু নঈম নিজাম আর পীর হাবিবুর রহমান বলেন, ইন্টারনেটের যুগে পৃথিবী এখন একটি ভিলেজে পরিণত হয়েছে। ঢাকা তথা বাংলাদেশের সাংবাদিকতা আর প্রবাসের সাংবাদিকতা এক ও অভিন্ন হয়ে পড়েছে। নিউইয়র্ক আমাদের আরেকটি ঘরে পরিণত হয়েছে। নিউইয়র্কের সাংবাদিকদের পাশাপাশি বাংলাদেশী কমিউনিটি আমাদের আপনজন হয়ে উঠেছে। এমন আড্ডায় অনেককেই এক সাথে পেয়ে ভালো লাগছে, প্রাণ খুলে কথা বলতে পারছি। তবে আড্ডায় যা বলা যায়, সভা-সমাবেশে তা বলা যায় না। তারা উত্তর আমেরিকার সকল প্রবাসীকে শুভেচ্ছা জানান।
আড্ডায় পীর হাবিবুর রহমান তার বক্তব্যে বিশিষ্ট রাজনীতিক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আর এম এম শাহীনকে ‘ক্লিন ইমেজ’-এর রাজনীতিক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, মৌলভীবাজার মানুষ বিপদে আছেন। এই দুই রাজনীতিক একই আসনের হওয়ায় এমপি নির্বাচনে মানুষ সমস্যায় পড়েছে। তারা কাকে রেখে কাকে নিবাচিত করবেন- এমন প্রশ্নও উঠেছে। দুইজনের একজন মৌলভীবাজার থেকে আরেকজন সিলেট সদর থেকে রাজনীতি আর এমপি পদে নির্বাচন করতে পারেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পীর হাবিবুর রহমান তার ঘনিষ্ট বন্ধু নঈম নিজামকে বাংলাদেশের অন্যতম ‘মিডিয়া মুঘল’ বসুন্ধরা গ্রæপের রূপকার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আমি সোজা পথে চলি, আর নঈম আঁক-বাঁকা পথে চলে। নঈম যেখানে পিছলে যায়, আমি সেখানে আটকে যাই। তবে তার আর আমার মথ্যে অনেক মিল, আমরা ঘনিষ্ট বন্ধু। তিনি বলেন, দেশ-জাতির উন্নয়নের স্বার্থে কখনো কখনো আপোষ করে চলছি।
নঈম নিজাম বলেন, বাংলাদেশে আইনের শাসন খুবই জরুরী। দেশে সঠিকভাবে আইনের শাসন থাকলে দেশের উন্নয়ন আরো বেশী হতো। আইন কার্যকর থাকলে সঙ্কট সৃষ্টি হয় না। আইনের শাসন আর উন্নয়নকে একসাথে চলতে হবে। তিনি বলেন, মিডিয়া পরিচালনা আর সাংবাদিকতা পেশায় সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ থাকা জরুরী।
নঈম নিজাম বলেন, প্রবাসীদের হৃদয়ে বাংলাদেশ। প্রবাসীদের অর্থে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে। প্রবাসীদের অভিজ্ঞত কাজে লাগিয়ে সরকার দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এম এম শাহীন বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীরা বাংলাদেশ সরকারের অংশ। তিনি ড. আব্দুল মোমেন, ড. শাজাহান মাহমুদ, আশরাফুল আলম খোকওনের নাম তুলে ধরে বলেন, অনেক প্রবাসীই এখন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থান করে দেশের উন্নয়ন-আগ্রগতিতে অবদান রাখছেন। তবে আগেকার সরকারগুলোর চেয়ে বর্তমান সরকারের সময়ে প্রবাসীরা বেশী কদর পাচ্ছেন।পাশাপাশি অনেক প্রবাসী সরকারের নানান সুযোগ সুবিধাও পাচ্ছেন আবার অনেককে এই সুযোগের অপব্যবহার করছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বিশেষ করে ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলাকে যারা ধ্বংস করে দিয়েছেন তাদের চিহ্নিত করা দরকার। তিনি প্রবাস থেকে ৫০০ অভিজ্ঞ প্রবাসীকে দেশে নিয়ে সরকার পরিচালনায় কাজ করার সুযোগ দেয়ার দাবী জানান।
মনজুর আহমেদ বলেন, পেশার প্রতি নিষ্ঠা থাকলে যে সফল হওয়া যায় তার প্রমাণ ‘নঈম নিজাম-পীর হাবিবুর রহমান’। ৯০ দশকের তরুণ-উদীয়মান সাংবাদিক আজ নামকরা সাংবাদিক-সম্পাদক-লেখক। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, আমাদের চোখে চশমা নেই, আমরা ক্ষমতায় নেই। স্বৈরশাসনের মধ্যেও সাংবাদিকরা মিছিল-সমাবেশ, প্রতিবাদ করেছে, কালো ব্যাজ ধারণ করেছে। কিন্তু আজ পারছে না। তিনি বলেন, মওলানা আকরাম খাঁ, তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, জহুর হোসেন চৌধুরী, আব্দুস সালাম, সিরাজ উদ্দিন হোসেন প্রমুখ সম্পাদক-সাংবাদিকদের নিয়ে যেমন গর্ব করতে পারি, তেমনী যেনো নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের নিয়েও গর্ব করতে পারি।
কৌশিক আহমদ তার বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিকতার বিষয় তুলে ধরে বলেন, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়ার্ল্ড স্ট্রীট জার্ণাল সহ অনে মিডিয়া আছে যারা যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের চোখ রাঙানীকে উপক্ষো করে জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে সততার সাথে সাংবাদিকতা করে পেশার মর্যাদা ধরে রাখে। তারা নিজেরা যেমমন সৎ তেমনী তারা তাদেও রিপোর্টারকে বিশ্বাস করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সত্য কথা বলতে হবে।
আবু তাহের বলেন, বাংলাদেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র আছে কি নেই তা আর প্রশ্নের মুখোমুখী। বাংলাদেশের আগামী নেতৃত্ব কে দেবে, কারা দেবে তা নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। নতুন নেতৃত্বকে এগিয়ে নিয়ে তিনি সাংবাদিকদের ভূমিকার কথা স্সরণ করিয়ে দেন।
লুৎফর রহমান বেনু তর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশে ফিরে আসার স্মৃতিচারণ ছাড়াও সংবাদ পত্রিকায় কাজ করার সময়ের নানা অভিজ্ঞতা আর ১৯৭৬ সালে টঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবরের ছবি প্রথম তোলার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মওলানা ভাসানীর মতো নেতা হয় না। তারা সকল দলের রাজনীতিকেরসাথে সুসম্পর্ক রাখাতেন, একজন আরেকজনের সভায় যেতেন। কিন্তু এখন আর সেই সহনশীলতা আর শ্রদ্ধাবোধের রাজনীতি দেখছি না।
আশরাফুল ইসলাম খোকন বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বিষয়ে বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই। এটি সরকারের সম্পত্তি, কোন ব্যক্তির নয়। তিনি বলেন, না জানার কারণেই সরকারের প্রতিনিধি দলেল সদস্য নিউইয়র্কে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভুল তথ্য পরিবেশন করেছেন। তিনি বলেন, সরকার মিডিয়ার স্বাধীনতায় বদ্ধ পরিকর বলেই বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টকশোতে সবাই সকল সমস্যার কথাই তুলে ধরতে পারছেন। সংবাদপত্রেও গুম, খুন, হত্যার খবর প্রকাশিত হচ্ছে।
আড্ডায় কমিউনিটির সর্বস্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থেকে অতিথিদের শুভেচ্ছা জানান। কেউ কেউ সংক্ষেপে বক্তব্য রাখেন বা প্রশ্ন-উত্তর পর্বে অংশ নেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন: দৈনিক মানব জমিন-এর উপ সম্পাদক মনির হায়দার, সাপ্তাহিক বর্ণমালা’র প্রধান সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক মাহমুদ খান তাসের, মূলধারার রাজনীতিক মোর্শেদ আলম, মুক্তিযোদ্ধা মুকিত চৌধুরী, কলামিস্ট শিতাংশু গুহ, বিশিষ্ট নাট্যাভিনেত্রী রেখা আহমদ ও লুৎফুন্নাহার লতা, সাংবাদিক ফাহিম রেজা নূর, আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের একাংশের সভাপতি লাবলু আনসার ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শিবলী চৌধুরী কায়েস ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবিএ সালাহউদ্দিন আহমেদ, রাজনীতিক নূরে আলম জিকো, ফটো সাংবাদিক নিহার সিদ্দিকী, সাংবাদিক জিয়াউল হক সবুজ, নওশাদ হোসেন, হাকিকুল ইসলাম খোকন, কমিউনিটি সুব্রত বিশ্বাস, অ্যাক্টিভিস্ট কামাল হোসেন মিঠু, হেলাল উদ্দিন, অশোক চৌধুরী, গীতিকার ইশতিয়াক রূপু, কবি রওশন হাসান, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জয় চৌধুরী প্রমুখ।