তিন দশকের বাংলা মিডিয়ার অবদানকে মুছে ফেলার অশুভ উদ্যোগ রুখে দেয়ার আহ্বান
- প্রকাশের সময় : ০৫:৪৯:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ মে ২০১৮
- / ১১০৭ বার পঠিত
সালাহউদ্দিন আহমেদ (ইউএনএ): নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত প্রথম ৯টি বাংলা সংবাদপত্রের প্রকাশক/সম্পাদকের মতবিনিময় সভায় সম্পাদকগণ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী কমিউনিটি বিনির্মাণে বাংলা মিডিয়ার ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেছেন, প্রায় তিন দশক ধরে প্রকাশিত শীর্ষস্থানীয় বাংলা সংবাদপত্রগুলো আজ সঙ্কটের আর অসম প্রতিযোগিতার মুখোমুখী। কমিউনিটির বিজ্ঞাপন বাজার ছিন্ন-ভিন্ন করার অপচেষ্টা চলছে। একটির পর একটি ইট গেঁথে বাংলাদেশী কমিউনিটি গড়ে তোলার তিন দশকের অবদানকে মুছে দেয়ার উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্থানীয় পাঠক আর বিজ্ঞাপনের বাজার যাচাই-বাছাই না করে নতুন নতুন পত্রিকা প্রকাশের কারণে কমিউনিটিতে অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। মর্যাদা হারাতে চলেছে পেশাদার সাংবাদিকতা। সম্পাদকগণ বাংলা মিডিয়ার অবদানকে মুছে ফেলার অশুভ উদ্যোগ সম্মিলিতভাবে রুখে দেয়ার জন্য কমিউনিটির প্রতি উদাত্ত্ব আহ্বান জানান।
সিটির জ্যাকসন হাইটস্থ দৃষ্টি নন্দন, সুবিশাল বেলোজিনো ব্যাঙ্কুয়েট পার্টি হলে গত ৭ মে সোমবার সন্ধ্যায় এই ব্যতিক্রমী মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় নিউইয়র্কের পুরনো ৯টি পত্রিকার প্রকাশক/সম্পাদক যথাক্রমে সাপ্তাহিক ঠিকানা’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি এম এম শাহীন, সাপ্তাহিক বাঙালী সম্পাদক কৌশিক আহমেদ, সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, সাপ্তহিক বাংলা পত্রিকা সম্পাদক আবু তাহের, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, সাপ্তাহিক দেশ বাংলা সম্পাদক ডা. চৌধুরী সারওয়ারুল হাসান, সাপ্তাহিক জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার, সাপ্তাহিক আজকাল-এর প্রধান সম্পাদক জাকারিয়া মাসুদ ও সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ মঞ্চে উপবিষ্ট থেকে বক্তব্য রাখেন, কমিউনিটির উদ্দেশ্যে নিজেদের কথা তুলে ধরেন এবং বাংলা মিডিয়াগুলো বাঁচিয়ে রাখতে কমিউনিটির করণীয় স্মরণ করেন। পরে সম্পাদকগণ উপস্থিত সুধীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত শীর্ষ ৯টি পত্রিকার সম্পাদকগণ এই প্রথমবারের মতো একত্রে এক মঞ্চে বসে সংবাদপত্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ ও সুধীমহলের সাথে মতবিনিময় করার পাশাপাশি জবাবদিহীতার মুখোমুখী হন। খবর ইউএনএ’র।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সাপ্তহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ মঞ্চে আহ্বান জানান সাপ্তাহিক ঠিকানার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি এম এম শাহীন ও সাপ্তাহিক বাঙালী সম্পাদক কৌশিক আহমেদকে। এরপর কৌশিক আহমেদ একে একে ৯জন সম্পাদককে মঞ্চে আসন গ্রহণের আহ্বান জানান এবং বাংলা ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদগণ সহ গত তিন দশকে বাংলাদেশী কমিউনিটি থেকে যারা চিরতরে বিদায় নিয়েছেন তাদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
পরবর্তীতে ৯জন সম্পাদকের পক্ষে কৌশিক আহমেদ ‘নিউইয়র্কে বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশনার তিন দশকের কথা’ শীর্ষক একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এতে সংবাদপত্রের ইতিহাস, নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটির উত্থান, নিউইয়র্কের বাংলা সংবাদপত্রের ইতিহাস ও কমিউনিটি বিনির্মাণে সংবাদপত্রগুলোর ভূমিকা, সংবাদপত্রের সঙ্কট ও ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয় সংক্ষেপে তুলে ধরেন। অপরদিকে সম্পাদকগণ তাদের নিজ নিজ বক্তব্যে নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকায় বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশনার ইতিহাস তুলে ধরার পাশপাশি নিজেদের চরম ত্যাগ আর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন। তারা বলেন, ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা সহ পারিবারিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সকল কিছু ত্যাগ স্বীকার করেই আমরা প্রবাসে পেশাদারিত্বের সাথে বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশ করে কমিউনিটি বিনির্মাণে অব্যাহতভাবে ভূমিকা রেখে চলেছি। এসময় কোন কোন সম্পাদক আবেগ-আপ্লুত হয়ে বলেন, আমাদের সংবাদপত্র আমার সন্তানতুল্য।
অনুষ্ঠানে এমএম শাহীন বলেন, প্রবাসে বাংলাদেশী কমিউনিটির কথা ভেবেই আজ থেকে ২৯ বছর আগে সাপ্তাহিক ঠিকানা প্রকাশ করি। নিজের দিকে না তাকিয়ে, সকল আরাম-আয়েশ ভুলে সন্তানের মতো লালন-পালন করে ঠিকানার প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছি। কমিউনিটির সেবা দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। প্রবাসের সকল পত্রিকাই প্রবাসীদের বন্ধু। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য ৫০টির মতো দৈনিক পত্রিকা আর নিউইয়র্কের ২/৩ লাখ মানুষের জন্য ১৯টি পত্রিকা। কেন এই অশুভ প্রতিযোগিতা। এতো মিডিয়া কমিউনিটিতে কি ভূমিকা রাখছে। তিনি পেশাগত মর্যাদা রক্ষা করে কমিউনিটি বিনির্মাণে যেসকল সংবাদপত্র ভূমিকা রাখছে সেসব মিডিয়ার প্রকাশনা অব্যাহত রাখতে কমিউনিটির সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, অনেক কষ্টে আমরা ৯জন সম্পাদক ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। তিনি বাংলা সংবাদপত্রগুলোকে অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করতে, গলাটিপে পত্রিকাগুলো মেরে ফেলার আগেই পত্রিকাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে কমিউনিটিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
নাজমুল আহসান তার বক্তব্যে কমিউনিটির পরিচিত মুখ মরহুম ড. মনসুর খান ও সদ্য প্রয়াত ব্যবসায়ী সাঈদ রহমান মান্নানের কথা স্মরণ করে বলেন, ৩৭ বছরের প্রবাস জীবনে কমিউনিটির অনেককেই হারিয়েছি। যারা বাংলা সংবাদপত্রের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি বলেন, কমিউনিটি বিনির্মাণে সংবাদপত্রের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। কমিউনিটির সুখ-দু:খ আর সতর্কতার খবর মিডিয়ায় প্রকাশ করে আমরা প্রায় তিন দশক ধরে কমিউনিটির সেবা করে আসছি। বাংলা মিডিয়াগুলো বিগত ৩০ বছর ধরে কমিউনিটির ‘ওয়াচ ডগ’-এর দায়িত্ব পালন করে চলেছে। তিনি বলেন, আজ বাংলা মিডিয়াগুলো অসম্ভব অশুভ প্রতিযোগিতার স্বীকার হচ্ছে। কমিউনিটির লোকসংখ্যা আর ব্যবসায়িক দিক দিয়ে বিবেচনা করলে বাংলা মিডিয়ার সংখ্যা বেশী। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, নতুন বাংলা সংবাদপত্রগুলো কমিউনিটিতে কি চাহিদা পূরণ করছে, কি ভূমিকা রাখছে তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আসলে নতুন পত্রিকা প্রকাশ করার কোন প্রয়োজন আছে কি? তিনি বলেন, এখন যেসব নতুন পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে সেগুলো কি ‘শ্রেফ বিজ্ঞাপন প্রকাশের জন্য, নাকি কমিউনিটি সাংবাদিকতা’র জন্য প্রকাশিত হচ্ছে, তা বুঝা মুশকিল। তিনি বলেন, আমার সন্তানতুল্য মিডিয়াগুলো আজ সঙ্কটের মুখোমুখী। তিনি কমিউনিটির পুরনো ৯টি মিডিয়ার ভূমিকা মূল্যায়ন করার জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান এবং মিডিয়াগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
আবু তাহের বলেন, সাংবাদিকতা মহান পেশা। এই পেশায় নেশা আর প্যাশন থাকতে হয়। আমরা সেই নেশা আর প্যাশন থেকেই বিগত ২০/৩০ বছর ধরে এই প্রবাস থেকে পত্রিকা প্রকাশ করছি। এজন্য আমাদেরকে ‘গ্রেট গ্রেট স্যাক্রিফাইস’ করতে হয়েছে, করতে হচ্ছে। আমাদের পারিবারিক লাইফ বলতে কিছু নেই। অথচ আমাদের মাঝে অনেকেরই অন্য যোগ্যতা থাকার পড়েও আমরা সাংবাদিকতাকে বেছে নিয়েছি। অর্থ, পতিপত্তি বা বাড়ী-গাড়ীর প্রতি দৃষ্টি দেইনি। তিনি কমিউনিটিতে পুরনো ৯টি পত্রিকার ভূমিকা মূল্যায়ন করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি প্রশ্ন রেখে বলেন, কমিউনিটিতে নতুন পত্রিকাগুলোর ভূমিকা কি? একটি গবেষণা জরিপ রিপোর্টের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ৬০ মিলিয়ন লোক নিউইয়র্ক টাইমস-এর মতো বিশ্বসেরা পত্রিকা পড়েন না, অথচ তারা কমিউনিটি পত্রিকাগুলো পড়েন। নিউইয়র্ক ছাড়াও ফ্লোরিডা, মিশিগান প্রভৃতি অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশীদের জয়জয়কার বাংলা মিডিয়ার জন্যই। তিনি বলেন, আজ কিছু নতুন পত্রিকা আর অপেশাদার সাংবাদিকতার কারণে নিউইয়র্কের বাংলা মিডিয়াগুলো প্রতারণা ও হুমকীর শিকার হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে তিনি কমিউনিটির সহযোগিতা কামনা করে বলেন, আমরা পেশাদারিত্ব আর মর্যাদা নিয়েই সাংবাদিকতা করতে চাই।
ডা. ওয়াজেদ এ খান তার বক্তব্যে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদনা ও প্রকাশ করার কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রবাসের বাংলা মিডিয়াগুলো কমিউনিটির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কমিউনিটির সার্বিক উন্নয়নে সংবাপত্রগুলোর অবদান অপরিসীম। বাংলা পত্রিকাগুলো প্রবাসে বাংলাদেশী অভিবাসী সমাজ, বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও পারিবারিক মূল্যবোধ সমুজ্জ্বল রেখে চলেছে। তিনি বলেন, বাংলা সংবাদপত্রগুলো নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও প্রকাশনা অব্যাহত রেখে চলেছে। আমরা ব্যবসায়িক সাফল্যের চেয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতাকে প্রাধান্য দিয়ে আসছি। তিনি বলেন, নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে পাঠকদের যেমন নিজস্ব চাহিদা রয়েছে, তেমনি বিজ্ঞাপনের বাজারও অত্যন্ত সীমিত। এসব বিবেচনায় না নিয়ে পত্রিকা প্রকাশের প্রতিযোগিতা চলছে, তাতে পাঠক ও বিজ্ঞাপনদাতাগণ বিপাক ও বিভ্রান্তিতে ভুগছেন। এটা কমিউনিটির জন্য শুভ নয়। কমিউনিটি সাংবাদিকতায় আমরা অশুভ প্রতিযোগিতা চাই না। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও নিউইয়র্কে বাংলা প্রকাশনা শিল্প গড়ে উঠেছে। কমিউনিটির স্বার্থে সংবাদপত্রগুলো নিরবে কাজ করে চলেছে। নিউইয়র্কের পুরনো সংবাদপত্রগুলো বাঁচিয়ে রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেন, যেখানে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১৬ লাখ মানুষও পত্রিকা পড়ে না। সেখানে দেশের শীর্ষস্থানীয় মিডিয়াগুলো দেশের অর্থে নিউইয়র্ক থেকে ফ্রি পত্রিকা প্রকাশ করার হেতু কি? তারা তো দেশেই ফ্রি পত্রিকা প্রকাশ করে দেশের মানুষের সেবায় আরো ভূমিকা রাখতে পারেন।
ডা. চৌধুরী সারোয়ারুল হাসান বলেন, নিউইয়র্কে বাংলা মিডিয়া এখন বড় শিল্পে পরিণত হয়েছে। পাঠক আর বিজ্ঞাপনদাতাদের স্বার্থে আমিই প্রথম ফ্রি পত্রিকা চালু করি। তিনি বলেন, বাংলা মিডিয়াগুলো প্রবাসীদের সেবার পাশাপাশি দেশ ও প্রবাসের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডেও অবদান রেখে চলেছে। তিনি ‘প্রচারেই প্রসার’ উল্লেখ করে বলেন, বাংলা মিডিয়াগুলোর কারণেই কমিউনিটির ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রচারিত হয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ছে, ব্যবসা-বাণিজ্য করেই কমিউনিটির মানুষ আর্থিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছেন।
রতন তালুকদার বলেন, মুক্তবাজার অথর্নীতিতে নিউইয়র্ক থেকে যে কেউ পত্রিকা প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু সংশ্লিস্টদের বুঝতে হবে কমিউনিটি নতুন পত্রিকার বোঝা কতটুকু বহন করতে পারবে, বা পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশী কমিউনটির মতো ভারতীয় বা পাকিস্তানী কমিউনিটিতে এতো পত্রিকা প্রকাশের অশুভ প্রতিযোগিতা নেই। বাংলাদেশী কমিউিনিটির মিডিয়া জগতে অশুভ প্রতিযোগিতা চলছে, এই অশুভ প্রতিযোগিতা থেকে আমরা সুস্থ্য পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চাই। তিনি বলেন, মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রদানে বিজ্ঞাপনদাতাদের ক্রাইটেরিয়া মেনে চলা উচিৎ। তিনি অভিযোগ করে বলেন, নতুন পত্রিকাগুলো পেশাদারিত্বের সকল সীমা লঙ্ঘন করে প্রকাশিত হচ্ছে। শুনছি বিজ্ঞাপন না পেয়ে অনেক পত্রিকার লোকজন বিজ্ঞাপনদাতাদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বাংলাদেশের পত্রিকা নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত হচ্ছে কেনো? তারা সাজানো বাগানে হাত দিতে চান। তারা ‘কালো টাকা সাদা’ করতে চান। তিনি বলেন, পাঠকদের সাথে মিডিয়ার সম্পর্ক ‘মাছ আর পানি’র মতো। তিনি নিউইয়র্কের পুরনো মিডিয়াগুলো বাঁচিয়ে রাখতে কমিউনিটিকে পাশে চান, সবার সহযোগিতা চান।
জাকারিয়া মাসুদ বলেন, মিডিয়ায় প্রচারের কারণেই অনেকে নেতা হয়েছেন। ‘ডিজিটাল ওয়ান’-এর মতো অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আজ কমিউনিটির অন্যতম বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কমিউনিটির প্রসারে বাংলা মিডিয়াগুলোর অবদান অপরিসীম। তিনি বলেন, নিউইয়র্কের বাংলা মিডিয়াগুলোর নিউজও দেশের মিডিয়ার মতো গুরুত্ব পাচ্ছে। নিউইয়র্কের মিডিয়ার খবরের কারণে দেশে অনেকে মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন। ইন্টারনেটে দেশ-বিদেশের পত্রিকা পড়ার পরও অনেকেই নিউইয়র্কের বাংলা সংবাদপত্র পড়ার জন্য অপেক্ষা করেন। তিনি বলেন, ২/১টি পত্রিকা ঢাকা থেকে নিউইয়র্কে এসে কমিউনিটি পত্রিকার উপর অনাকাংখিত চাপ সৃষ্টি করছে। যা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে।
মোহাম্মদ সাঈদ প্রবাসের ৯জন সম্পাদকের পক্ষ থেকে সভায় উপস্থিত সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা সবসময় আপনাদের আতিথিয়তা নিয়েছি, আজ আতিথিয়তা দিতে চাই। তিনি বলেন, মিডিয়াই আপনাদের নেতা বানিয়েছে, চেয়ার দিয়েছে। আজ নেই মিডিয়া সঙ্কটের মুখোমুখী। এই পরিস্থিতিতে আমরা কমিউনিটির সার্বিক সহযোগিতা চাই।
সবশেষে কৌশিক আহমেদ বলেন, নিউইয়র্কের বাংলা মিডিয়াগুলো এখন আর কমিউনিটি মিডিয়া নয়, মূলধারার মিডিয়ায় পরিণত হয়েছে। কেননা, মেয়র অফিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিস থেকে আমাদের মিডিয়াগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, বাংলা সংবাদপত্রের খবর সিটি প্রশাসন বিবেচনা করছে। তিনি বলেন, নিউইয়র্ক সিটির শতকরা ৪৪ ভাগ মানুষ কমিউনিটি পত্রিকা নিয়মিত পড়েন। অভিবাসীদের পৃষ্ঠপোষকতায় মিডিয়াগুলো বেঁচে রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই। তাই বিচার-বিবেচনা করে, ভালো-মন্দ দেখে কমিউনিটির সহযোগিতা চাই, পৃষ্ঠপোষকতা চাই।
পড়ে উপস্থিত সুধীবৃন্দের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সম্পাদকগণ। এসময় মঞ্চে উপবিষ্ট একেকজন সম্পাদক একেক প্রশ্নের জবাব দেন। সভায় কমিউনিটির সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। নৈশভোজের মাধ্যমে সভার সমাপ্তি ঘটে।
উল্লেখ্য, মতবিনিময় সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৯জন সম্পাদক ছাড়া অন্য কারো বক্তব্য না দেয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও বিশিষ্ট রাজনীতিক ড. সিদ্দিকুর রহমান স্বেচ্ছা প্রনোদিত হয়ে বক্তব্য রাখতে চাইলে মঞ্চ থেকে তাকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু তার বক্তব্যে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ছবি: নিহার সিদ্দিকী।