নিউইয়র্ক ০৮:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ট্রাম্প-মিডিয়া দ্বন্দ্ব : লাভ হচ্ছে কার?

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৫৬:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
  • / ৬১০ বার পঠিত

ঢাকা: মার্কিন নির্বাচনের প্রচারণা থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও ডোনাল্ড ট্রাম্প মূলধারার গণমাধ্যকে তুলোধুনো করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তার প্রশাসনের সাথে গণমাধ্যমের যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, তা গত বহু বছরে অন্য কোন মার্কিন প্রশাসনের সাথে দেখা যায়নি। যদিও এই বৈরিতার সম্পর্কের কিছু ফায়দা যে গণমাধ্যমের পক্ষে যাচ্ছে না তা নয়, বরং অনেকেই একে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার এক সংবাদ সম্মেলনে মিডিয়ার ওপর চড়াও হয়েছেন, আর এরই মধ্যে সেই সংবাদ সম্মেলন অনেকটা কিংবদন্তির রূপ নিয়েছে। ট্রাম্পের বিপক্ষে যায় এমন সংবাদ প্রচারের জন্য মার্কিন নেটওয়ার্ক সিএনএনকে ‘মিথ্যুক’ বলে আক্রমণ করছেন তিনি, যদিও তার বেশ আগেই স্পষ্ট হয়ে গেছে যে শত্রুদের একহাত দেখে নিতে কতটা ভালবাসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তার সমাবেশে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে সম্মানিত পত্রিকা, নিউইয়র্ক টাইমসকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি। ট্রাম্প বলেছেন নিউইয়র্ক টাইমস-এরও সিএনএন-এর মতো অবস্থা।
‘সুখবর হলো এরা বেশিদিন ব্যবসা করতে পারবে না। দেখেছেন তারা কিভাবে হারছে’- বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রধান নির্বাহী মার্ক থম্পসন বলছেন, ‘হারা তো দূরের কথা, নির্বাচনের পর থেকে নিউইয়র্ক টাইমসের ডিজিটাল গ্রাহকের সংখ্যা এখন আকাশচুম্বী।’
P. Trump at Press Confarence_Feb'2017 Pic-2‘প্রেসিডেন্ট যেভাবে অব্যাহতভাবে মূলধারার গণমাধ্যমকে ব্যর্থ বলে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন এবং আমাদের মিথ্যা সংবাদ বলে আখ্যায়িত করছেন, তাতে বরং লাখ-লাখ মানুষ যারা কিনা আগে পয়সা দিয়ে আমাদের সংবাদ পড়তো না, তারা এখন আমাদের গ্রাহক হচ্ছে। ‘ফলে শুধু রাজনৈতিক দিক থেকে নয়, শুধুমাত্র ব্যবসায়িক দিক থেকে দেখলেও এই ট্রাম্প যুগ মানসম্পন্ন সাংবাদিকতার জন্য খুবই ভালো একটি সময়’ বলছেন নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রধান নির্বাহী মার্ক থম্পসন।
হোয়াইট হাউজের সংবাদ সম্মেলন এখন ট্রাম্প প্রশাসন এবং মূলধারার গণমাধ্যমের মাঝে একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র শন স্পাইসার যুক্তরাষ্ট্রে সরকার এবং গণমাধ্যমের মধ্যে যে সম্পর্ক তাকে সম্পূর্ণ উল্টে দিতে চাইছেন। তিনি বলছেন, গণমাধ্যম যেমন ট্রাম্পের কর্মকান্ডের ব্যখ্যা চাইবে, তেমনি সরকারও গণমাধ্যমের কাছে তাদের কর্মকান্ডের ব্যখ্যা চাইতে ছাড়বে না। যদিও সরকারের এসব হুমকিকেও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ।
যেমন বাজফিড নিউজের বিশেষ প্রতিবেদক জেমস পলের মতে, ‘রেটিংয়ের জন্য ট্রাম্প খুবই ভালো। মানুষ যখন দু:শ্চিন্তায় থাকে তখন তারা সংবাদের দিকে অনেক বেশি লক্ষ্য রাখে।’
‘আমি নিশ্চিত যে, সিএনএনের নাম বারবার আসায় তারা বরং খুশিই হচ্ছে। ট্রাম্পও কিন্তু সংবাদের খুব ভালো একজন ভোক্তা। তিনি একদম নিয়মিত সিএনএন দেখেন, তিনি নিউইয়র্ক টাইমস পড়েন, নিউইয়র্ক পোস্ট পড়েন।’
‘যাদেরকে তিনি শত্রু মনে করেন, তাদের প্রতি তার সবসময় লক্ষ্য থাকে এবং তাদের সাথে কথাও বলেন। পাঠকরাও কিন্তু তার যেকোন বিষয়ে অনেক আগ্রহী’- বলছেন পল।
জেমস পলের মতে ট্রাম্প এবং গণমাধ্যম আগামী চার বছরের জন্য একটি সম্পর্কে বাঁধা পড়েছে। যদিও এটা অনেকটা নির্যাতনমূলক সম্পর্ক এবং বিষয়টি স্বাস্থ্যকর নয়।
ট্রাম্প তার সমর্থকদের প্রতি বারবার আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন মূলধারার পত্রিকা কিংবা টিভি সংবাদমাধ্যমের কোন কথাই বিশ্বাস না করে। কিন্তু যদি একটি দেশের অর্ধেক মানুষ গণমাধ্যমের ওপর আস্থা না রাখে, তাহলে সাংবাদিকদের কী করার আছে?
সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্কের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক জেফ জার্ভিস বলছেন, ‘সাংবাদিকদের এখন তাদের কাজ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।’
‘এই সময়টা একজন সাংবাদিকের জন্য খুবই উত্তেজনাকর একটি সময়, কারণ এখন ভালো সাংবাদিকতা খুবই জরুরি। অন্যদিকে, দেশের অর্ধেক মানুষ আমাদের বিশ্বাস করে না, তারা আমাদের কথা শোনে না।’
‘আমি এটাও বলবো, আমাদের মধ্যে যথেষ্ট আত্মসমালোচনাও নেই। আমাদের এখন মানুষের কাছে সাংবাদিকতা নিয়ে যেতে হবে। তারা যেটা বলছে সেটার সাথে তথ্য যুক্ত করতে হবে, সেই আলোচনার সাথে একটি মূল্য যোগ করতে হবে এবং নতুন উপায়ে তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে’- বলেছেন অধ্যাপক জেফ জার্ভিস।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার সমর্থকেরা গণমাধ্যমের ওপর একটি দানবীয় চরিত্র আরোপ করতে চাইছেন। যদিও এর মাধ্যমে হয়তো তারা যেই শিল্পকে নিষ্ঠুরভাবে আক্রমণ করে যাচ্ছেন, সেই শিল্প এখন নতুন করে প্রাণ পাচ্ছে। সূত্র : বিবিসি

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

ট্রাম্প-মিডিয়া দ্বন্দ্ব : লাভ হচ্ছে কার?

প্রকাশের সময় : ০৮:৫৬:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৭

ঢাকা: মার্কিন নির্বাচনের প্রচারণা থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও ডোনাল্ড ট্রাম্প মূলধারার গণমাধ্যকে তুলোধুনো করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তার প্রশাসনের সাথে গণমাধ্যমের যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, তা গত বহু বছরে অন্য কোন মার্কিন প্রশাসনের সাথে দেখা যায়নি। যদিও এই বৈরিতার সম্পর্কের কিছু ফায়দা যে গণমাধ্যমের পক্ষে যাচ্ছে না তা নয়, বরং অনেকেই একে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার এক সংবাদ সম্মেলনে মিডিয়ার ওপর চড়াও হয়েছেন, আর এরই মধ্যে সেই সংবাদ সম্মেলন অনেকটা কিংবদন্তির রূপ নিয়েছে। ট্রাম্পের বিপক্ষে যায় এমন সংবাদ প্রচারের জন্য মার্কিন নেটওয়ার্ক সিএনএনকে ‘মিথ্যুক’ বলে আক্রমণ করছেন তিনি, যদিও তার বেশ আগেই স্পষ্ট হয়ে গেছে যে শত্রুদের একহাত দেখে নিতে কতটা ভালবাসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তার সমাবেশে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে সম্মানিত পত্রিকা, নিউইয়র্ক টাইমসকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি। ট্রাম্প বলেছেন নিউইয়র্ক টাইমস-এরও সিএনএন-এর মতো অবস্থা।
‘সুখবর হলো এরা বেশিদিন ব্যবসা করতে পারবে না। দেখেছেন তারা কিভাবে হারছে’- বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রধান নির্বাহী মার্ক থম্পসন বলছেন, ‘হারা তো দূরের কথা, নির্বাচনের পর থেকে নিউইয়র্ক টাইমসের ডিজিটাল গ্রাহকের সংখ্যা এখন আকাশচুম্বী।’
P. Trump at Press Confarence_Feb'2017 Pic-2‘প্রেসিডেন্ট যেভাবে অব্যাহতভাবে মূলধারার গণমাধ্যমকে ব্যর্থ বলে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন এবং আমাদের মিথ্যা সংবাদ বলে আখ্যায়িত করছেন, তাতে বরং লাখ-লাখ মানুষ যারা কিনা আগে পয়সা দিয়ে আমাদের সংবাদ পড়তো না, তারা এখন আমাদের গ্রাহক হচ্ছে। ‘ফলে শুধু রাজনৈতিক দিক থেকে নয়, শুধুমাত্র ব্যবসায়িক দিক থেকে দেখলেও এই ট্রাম্প যুগ মানসম্পন্ন সাংবাদিকতার জন্য খুবই ভালো একটি সময়’ বলছেন নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রধান নির্বাহী মার্ক থম্পসন।
হোয়াইট হাউজের সংবাদ সম্মেলন এখন ট্রাম্প প্রশাসন এবং মূলধারার গণমাধ্যমের মাঝে একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র শন স্পাইসার যুক্তরাষ্ট্রে সরকার এবং গণমাধ্যমের মধ্যে যে সম্পর্ক তাকে সম্পূর্ণ উল্টে দিতে চাইছেন। তিনি বলছেন, গণমাধ্যম যেমন ট্রাম্পের কর্মকান্ডের ব্যখ্যা চাইবে, তেমনি সরকারও গণমাধ্যমের কাছে তাদের কর্মকান্ডের ব্যখ্যা চাইতে ছাড়বে না। যদিও সরকারের এসব হুমকিকেও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ।
যেমন বাজফিড নিউজের বিশেষ প্রতিবেদক জেমস পলের মতে, ‘রেটিংয়ের জন্য ট্রাম্প খুবই ভালো। মানুষ যখন দু:শ্চিন্তায় থাকে তখন তারা সংবাদের দিকে অনেক বেশি লক্ষ্য রাখে।’
‘আমি নিশ্চিত যে, সিএনএনের নাম বারবার আসায় তারা বরং খুশিই হচ্ছে। ট্রাম্পও কিন্তু সংবাদের খুব ভালো একজন ভোক্তা। তিনি একদম নিয়মিত সিএনএন দেখেন, তিনি নিউইয়র্ক টাইমস পড়েন, নিউইয়র্ক পোস্ট পড়েন।’
‘যাদেরকে তিনি শত্রু মনে করেন, তাদের প্রতি তার সবসময় লক্ষ্য থাকে এবং তাদের সাথে কথাও বলেন। পাঠকরাও কিন্তু তার যেকোন বিষয়ে অনেক আগ্রহী’- বলছেন পল।
জেমস পলের মতে ট্রাম্প এবং গণমাধ্যম আগামী চার বছরের জন্য একটি সম্পর্কে বাঁধা পড়েছে। যদিও এটা অনেকটা নির্যাতনমূলক সম্পর্ক এবং বিষয়টি স্বাস্থ্যকর নয়।
ট্রাম্প তার সমর্থকদের প্রতি বারবার আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন মূলধারার পত্রিকা কিংবা টিভি সংবাদমাধ্যমের কোন কথাই বিশ্বাস না করে। কিন্তু যদি একটি দেশের অর্ধেক মানুষ গণমাধ্যমের ওপর আস্থা না রাখে, তাহলে সাংবাদিকদের কী করার আছে?
সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্কের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক জেফ জার্ভিস বলছেন, ‘সাংবাদিকদের এখন তাদের কাজ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।’
‘এই সময়টা একজন সাংবাদিকের জন্য খুবই উত্তেজনাকর একটি সময়, কারণ এখন ভালো সাংবাদিকতা খুবই জরুরি। অন্যদিকে, দেশের অর্ধেক মানুষ আমাদের বিশ্বাস করে না, তারা আমাদের কথা শোনে না।’
‘আমি এটাও বলবো, আমাদের মধ্যে যথেষ্ট আত্মসমালোচনাও নেই। আমাদের এখন মানুষের কাছে সাংবাদিকতা নিয়ে যেতে হবে। তারা যেটা বলছে সেটার সাথে তথ্য যুক্ত করতে হবে, সেই আলোচনার সাথে একটি মূল্য যোগ করতে হবে এবং নতুন উপায়ে তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে’- বলেছেন অধ্যাপক জেফ জার্ভিস।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার সমর্থকেরা গণমাধ্যমের ওপর একটি দানবীয় চরিত্র আরোপ করতে চাইছেন। যদিও এর মাধ্যমে হয়তো তারা যেই শিল্পকে নিষ্ঠুরভাবে আক্রমণ করে যাচ্ছেন, সেই শিল্প এখন নতুন করে প্রাণ পাচ্ছে। সূত্র : বিবিসি