‘একটা প্রশ্ন শুনতে চাই’
- প্রকাশের সময় : ০১:৪২:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
- / ৬০৩ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: জাতিসংঘে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রশ্নের পরিবর্তে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপনকালে বাংলাদেশী এক সাংবাদিককে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে, যিনি বিএনপির পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিতে রয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক বুধবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে নিউইয়র্কে সংস্থার সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
প্রশ্নোত্তরের এক পর্যায়ে সাংবাদিক হিসেবে প্রশ্ন করার জন্য কথা বলা শুরু করেন বিএনপির পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য মুশফিকুল ফজল আনসারী। তিনি বলেন, ‘জ্বি, ধন্যবাদ জনাব স্টেফানে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৪০ থেকে ৫০ দিনের মতো তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ আছেন। এবং সম্প্রতি সরকার তার বিররুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেছে, যখন জাতিসংঘ এবং সব উন্নয়ন অংশীদার তাদের সমর্থন অব্যাহত রেখেছেন এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে সংলাপে বসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী–’
এ সময় তাকে থামিয়ে দেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র।
“আমি এখানেই আপনাকে থামিয়ে দেব। আমি বাংলাদেশের পরিস্থিতির ব্যাপারে সজাগ রয়েছি। আমি শুধু একটি প্রশ্ন শুনতে পেলেই খুশি হব,” তার উদ্দেশ্যে বলেন স্টেফানে ডুজারিক।
গত দুই সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্ন করেন মুশফিকুল।
প্রশ্নালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য উপস্থাপনের পাশাপাশি বিএনপির এজেন্ডা অনুযায়ী জবাব আদায়ের চেষ্টা চালান বলে নিউইয়র্কের কয়েক সাংবাদিক এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
ডুজারিক ওই কথা বলার পর প্রশ্ন করেন মুশফিকুল, “তারা বলছে, পশ্চিমা দেশ বা জাতিসংঘের কোনো হস্তক্ষেপ তারা মেনে নেবে না। এখন জাতিসংঘের অবস্থান কী?”
এর জবাবে মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, “বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে যে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি হয়েছে সে বিষয়ে আমরা অবগত আছি। মহাসচিব এখনো খুব উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি উৎকণ্ঠা বাড়তে থাকায় দেশের স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের স্বার্থে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছাতে সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতি আবারো আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।”
এরপর জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করতে গিয়ে বলা হয়, “বাংলাদেশ নিয়ে বক্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। তবে আমি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা নিয়ে বক্তব্য জানতে চেয়েছিলাম। এছাড়া সেনাবাহিনীকে নাড়া দেওয়ার চেষ্টা অভিযোগে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করেছে বলে বলা হচ্ছে।
“আমি এজন্য বলছি-খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে, র্যাবের একজন সদস্যের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে নথি গেছে, যিনি শান্তিরক্ষা মিশনে ছিলেন। আমি এ বিষয়ে অনেকবার আপনার কাছে জানতে চেয়েছি। আপনি বলেছেন, সব কিছু জাতিসংঘের নজরে আছে। তবে বাংলাদেশে যে সহিংসতা তার বড় অংশ প্রকৃতপক্ষে সেনাবাহিনী থেকে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে, যে সেনাবাহিনী থেকে শান্তিরক্ষা মিশনে সৈন্য পাঠানো হচ্ছে। ডিপিকেও (ডিপার্টমেন্ট অফ পিসকিপিং অপারেশনস) কি লোক আনার বিষয়টি পর্যালোচনা করবে?”
এর জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, “আমি বুঝেছি। আমি আপনার প্রশ্ন শুনেছি। গতকাল আপনি যখন প্রশ্ন করেছিলেন তখন আমি সামর্থ্য অনুযায়ী উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আপনি জানেন, আপনি যে ঘটনা বা যে ব্যক্তির কথা বললেন সে বিষয়ে আমার কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। শান্তিরক্ষায় কাজ করতে যে সব শর্ত পূরণের কথা রয়েছে সেগুলো নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া আমাদের আছে এবং সেখানে মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলোও দেখা হয়। এসব বিষয়ে যদি কোনো তথ্য পাই আমি আপনাকে জানাবো।”
এরপর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের’ কথা উঠে আসার বিষয়টি তুলে ধরে সে ব্যাপারে জাতিসংঘের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়।
জবাবে মুখপাত্র বলেন, “আমি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন দেখিনি। আমি শুধু বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছাতে মহাসচিবের আহ্বানের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি, যাতে চলমান সহিংসতা এবং বর্তমানের উৎকণ্ঠা থেকে বেরিয়ে আসা যায়।”