নিউইয়র্ক ১২:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ইউএনএ’র অনুসন্ধানী প্রতিবেদন : নিউইয়র্কে বাংলা মিডিয়ায় ছয়লাব কমিউনিটি ॥ বিপাকে বিজ্ঞাপনদাতারা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:২০:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ মার্চ ২০১৬
  • / ১০৮৪ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটি প্রসারের পাশাপাশি বাংলা মিডিয়ার প্রসারও ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে। স্থানীয় প্রিন্ট আর ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ছয়লাব হয়ে গেছে পুরো কমিউনিটি। সেই সাথে যোগ হয়েছে ঢাকার একাধিক প্রিন্ট আর ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া। ফলে বিপাকে পড়েছেন মিডিয়াগুলোর বিজ্ঞাপনদাতা সহ পৃষ্টপোষকগণ। অপরদিকে ব্যাঙের ‘ছাতার মতো গজিয়ে উঠা’ বিজ্ঞাপন সর্বস্ব প্রিন্ট মিডিয়াগুলোর কারণে পেশাদার সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের টিকে থাকার স্বার্থে চরম পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে বলে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বাংলা মিডিয়াগুলোর অনুসন্ধানে এসব জানা গেছে।
Hakkatha Ist Issue'2006বার্তা সংস্থা ইউএনএ (ইউনাইডেট নিউজ অব আমেরিকা)-এর অনুসন্ধানে জানা যায়, আশির দশকে নিউইয়র্কে বাংলা ভাষায় পত্রিকা প্রকাশের গোড়া পত্তন ঘটে। সেই সময় প্রবাসীর পর ঠিকানা, পরিচয়, বাঙালী, বাংলা পত্রিকা, বাংলাদেশ, এখন সময় প্রভৃতি পত্রিকার সাপ্তাহিক প্রকাশনা নিয়মিত থাকায় প্রবাসে তথা উত্তর আমেরিকায় বাংলা সংবাদপত্র আর সাংবাদিকতার নতুন দিগন্ত উন্মেচিত হয়। পরবর্তীতে ৯০ দশকে ফ্রি পত্রিকার আবির্ভাবের ঘটনায় ধীরে ধীরে নিউইয়র্কে বাংলা সাংবাদপত্রগুলো সঙ্কটের মুখোমুখি হওয়ার পাশাপাশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠে প্রবাসের সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্ব। যা আজো বিদ্যমান। কোন কোন মিডিয়ার ‘বিজ্ঞাপন কালেক্টর কাম রিপোর্টার’-এর পরবর্তীতে পত্রিকা প্রকাশ এই সঙ্কটকে আরো ঘনিভূত করেছে। সম্প্রতি সাপ্তাহিক মুক্তকন্ঠ-এর ‘বিজ্ঞাপন কারেক্টর কাম রিপোর্টার’-এর দায়িত্ব পালনকারী মোহাম্মদ আলম-এর সাথে মুক্তকন্ঠ কর্তৃপক্ষের বনিবনা না হওয়ায় মোহাম্মদ আলম (তার ভাষায়) মুক্তকন্ঠ ত্যাগ করে (মুক্তকন্ঠ কর্র্তৃপক্ষের মতে পত্রিকাটি থেকে তাকে অব্যহতি দেওয়া হয়) ‘নয়া মুক্তকন্ঠ’ নামে সাপ্তাহিক মুক্তকন্ঠ-এর আদলে প্রায় হুবহু আরেকটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। যা প্রবাসের বাংলা মিডিয়া জগত ছাড়াও কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এর আগে আরো একাধিক সাপ্তাহিকের ‘বিজ্ঞাপন ব্যস্থাপক কাম রিপোর্টার’ নিজেই ভিন্ন নামে পত্রিকাগুলো প্রকাশ করেন। আর এসব ফ্রি পত্রিকা পেইড পত্রিকাগুলোকে বিপাকে ফেলে দেয়। নিউইয়র্কে বাংলা ভাষায় প্রথম ফ্রি পত্রিকা প্রকাশ করেন সাপ্তাহিক দেশবাংলা ও বাংলা টাইমস-এর প্রকাশ ডা. চৌধুরী সারোয়ারুল হাসান। আর প্রথম ফ্রি পত্রিকার সম্পাদক হচ্ছেন বর্তমানে সাপ্তাহিক বর্ণমালা’র প্রকাশ ও প্রধান সম্পাদক মাহফুজুর রহমান। সাপ্তাহিক দেশবাংলা’র সম্পাদক হিসেবে মাহফুজুর রহমান প্রথম ফ্রি পত্রিকার প্রকাশনা চালু করেন। বর্তমানে কমিউনিটিতে দুটি পেইড পত্রিকা ছাড়া প্রায় দুই ডজনের মতো ফ্রি পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। আবার বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গেছে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত প্রায় এক ডজন সাপ্তাহিক। বন্ধ হয়ে যাওয়া পত্রিকার মধ্যে আবার কোন কোনটি নিয়মিত ‘ওয়েব পোর্টাল’ প্রকাশ করছে।
Samsul Alam add to Muktokanthoনয়া মুক্তকন্ঠ প্রকাশের পর এর প্রকাশক/সম্পাদক মোহাম্মদ আলম কর্তৃক পত্রিকার স্বার্থ বিরোধী কার্যকলাপের জন্য তাকে অব্যহতি দেয়া কথা তুলে ধরে আলমের ছবি সহ সাপ্তাহিক মুক্তকন্ঠ কর্তৃপক্ষ তাদের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘বিশেষ বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ করেছে। এনিয়েও কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। মোহাম্মদ আলম নয়া মুক্তকন্ঠ নামে ২/৩টি সংখ্যা প্রকাশের পর সাপ্তাহিক ‘জনতার কন্ঠ’ নামে নতুন পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই জনতার কন্ঠের ২/৩টি সংখ্যাও প্রকাশিত হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিউইয়র্ক থেকে বর্তমানে প্রকাশিত বাংলা প্রিন্ট মিডিয়াগুলোর মধ্যে সাপ্তাহিক ঠিকানা, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা, সাপ্তাহিক পরিচয়, সাপ্তাহিক বাঙালী, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ, সাপ্তাহিক আজকাল ও সাপ্তাহিক প্রবাস ব্যাপক পাঠক প্রিয়তা অর্জন করেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত প্রায় দুই ডজন পত্রিকার পাশাপাশি ৪/৫টি টিভি চ্যানেল সহ ঢাকার আরো প্রায় দুই ডজন টিভি’র বিজ্ঞাপনের চাহিদার কারণে বিপাকে পড়েছেন বিজ্ঞাপনদাতাগণ। তারা কোনটি রেখে কোন মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেবেন তা নিয়ে চিন্তিত। কেননা, একটি পত্রিকা বা মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিলে অন্যগুলো সেই বিজ্ঞাপন দাবী করলে বিল পরিশোধে চরম সমস্যা দেখা দেয়। আবার কোন কোন মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন না দিলে তারা নানাভাবে হুমকী-ধমুকীও দেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। অনুসন্ধানে এমনও অভিযোগ পাওয়া গেছে যে, কোন কোন মিডিয়া কর্তৃপক্ষ কোন পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপন দেখে বিজ্ঞাপনদাতার অনুমতি ছাড়াই তা প্রকাশ করে পরবর্তীতে বিল দাবী করেন। এমনকি ‘বিল হিসেবে যা পারেন তাই দেন’ এমনটি দাবী করার ঘটনাও ঘটছে কমিউনিটিতে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, কোন কোন বিজ্ঞাপনদাতা বা সংগঠনের কর্মকর্তা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রদানের পরিবর্তে ‘নিউজ প্রকাশ’ করতে অর্থ প্রদানের কৌশল নিচ্ছেন। তাদের মতে বিজ্ঞাপন দিলে অনেক মিডিয়াকেই (মিডিয়ারটির প্রচার বা পাঠক থাকুক আর নাই থাকুক) দিতে হয়। এজন্য তারা তাদের পছন্দের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দিয়ে নিউজের জন্য অর্থ দেয়াও প্রস্তাব দিচ্ছেন। সূত্র মতে, কোন কোন মিডিয়া ‘নিউজ আকার হিসেবে’ পত্রিকার স্থানও বরাদ্ধ করছেন। কোন কোন প্রেস বিজ্ঞপ্তি বিজ্ঞাপন আকারেও প্রকাশিত হচ্ছে- এমনও তথ্য পাওয়া গেছে অনুসন্ধানে।
নিউইয়র্কের শীর্ষস্থানীয় একটি সাপ্তাহিকের সম্পাদক ৪ মার্চ শুক্রবার ইউএএন প্রতিনিধিকে জানান, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সামসুদ্দীন আজাদ বলেছেন, একটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলে সবগুলোতেই দিতে হয়। তাই আপাতত: তিনি কোন মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন না।
নিউইয়র্কের অপর এক সম্পাদক ইউএনএ প্রতিনিধিকে বলেন, হাজার হাজার ডলার খরচ করে বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন ও দিবস পালন করলেও মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের কোন মাথাব্যাথা না থাকলেও প্রচারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন। অথচ তা ভাবেন না মিডিয়াগুলো বিজ্ঞাপন না পেলে টিকে থাকবে কি করে। বিষয়গুলো ভাববার অবকাশ রয়েছে।
সিটির জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউস্থ একটি বাংলাদেশী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফাতেমা গ্রোসারীর অন্যতম কর্ণধার ও কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার ক্ষোভের সাথে বলেন, কোন কোন মিডিয়া অনুমতি ছাড়াই আমাদের প্রতিষ্ঠান এমন কি আমার ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে পরবর্তীতে বিল দাবী করছেন। যা রীতিমত অন্যায়, অবিচার।
অপরদিকে ফ্রি পত্রিকার (হাতেগোনা ২/৩টি ছাড়া) ফলে পেশাদার সাংবাদিক ও মিডিয়া হাউজগুলো পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে বিপাকে পড়ছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরে মতে ফ্রি পত্রিকার ফলে একদিকে যেমন ‘ক্রিয়েটিভ পেশা’ হিসেবে সাংবাদিকতা ও প্রকাশনা তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে অপরদিকে বিজ্ঞাপনের মুল্যও আশংকাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। অভিজ্ঞমহলের মতে সংবাদপত্র কখনোই ফ্রি হওয়া উচিৎ নয়। কেননা, এটি ‘ক্রিয়েটিভ ও মর্যাদা সম্পন্ন’ প্রকাশনা। এদিকে নিউইয়র্ক থেকে ফ্রি পত্রিকাগুলোর মান বিচারে এর অধিকাংশই সংবাদপত্র হিসেবে তাদের পরিচয় হারাচ্ছে বলে অভিজ্ঞমহল মনে করছেন। তারা বলছেন এগুলো সংবাদপত্র নয় লিফলেট-এ পরিণত হচ্ছে। কোন কোন মিডিয়ায় খবরের চেয়ে বিজ্ঞাপন-ই বেশী। আবার যেসব খবর প্রকাশিত হয় তা ঢাকার পত্রিকার ‘কাট এন্ড পেস্ট’ বললেই চলে।
মিডিয়া সাথে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞমহলের মতে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ব্যবসার ধরণ যার যার মতো হলেও নিউইয়র্কে বাংলা মিডিয়াগুলো বাঁচিয়ে রাখতে পেশাদার সম্পাদক/প্রকাশক/সাংবাদিকদের ঐক্য জরুরী। সেই সাথে বিজ্ঞাপন নীতিমালাও জরুরী বলে তারা অভিমত প্রকাশ করেছেন। তা না হলে ‘অদূর ভবিষ্যতে বাংলা মিডিয়ার অস্তিতই হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়তে পারে’ এমন মন্তব্য অনেকেরই।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

ইউএনএ’র অনুসন্ধানী প্রতিবেদন : নিউইয়র্কে বাংলা মিডিয়ায় ছয়লাব কমিউনিটি ॥ বিপাকে বিজ্ঞাপনদাতারা

প্রকাশের সময় : ১০:২০:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ মার্চ ২০১৬

নিউইয়র্ক: নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটি প্রসারের পাশাপাশি বাংলা মিডিয়ার প্রসারও ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে। স্থানীয় প্রিন্ট আর ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ছয়লাব হয়ে গেছে পুরো কমিউনিটি। সেই সাথে যোগ হয়েছে ঢাকার একাধিক প্রিন্ট আর ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া। ফলে বিপাকে পড়েছেন মিডিয়াগুলোর বিজ্ঞাপনদাতা সহ পৃষ্টপোষকগণ। অপরদিকে ব্যাঙের ‘ছাতার মতো গজিয়ে উঠা’ বিজ্ঞাপন সর্বস্ব প্রিন্ট মিডিয়াগুলোর কারণে পেশাদার সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের টিকে থাকার স্বার্থে চরম পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে বলে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বাংলা মিডিয়াগুলোর অনুসন্ধানে এসব জানা গেছে।
Hakkatha Ist Issue'2006বার্তা সংস্থা ইউএনএ (ইউনাইডেট নিউজ অব আমেরিকা)-এর অনুসন্ধানে জানা যায়, আশির দশকে নিউইয়র্কে বাংলা ভাষায় পত্রিকা প্রকাশের গোড়া পত্তন ঘটে। সেই সময় প্রবাসীর পর ঠিকানা, পরিচয়, বাঙালী, বাংলা পত্রিকা, বাংলাদেশ, এখন সময় প্রভৃতি পত্রিকার সাপ্তাহিক প্রকাশনা নিয়মিত থাকায় প্রবাসে তথা উত্তর আমেরিকায় বাংলা সংবাদপত্র আর সাংবাদিকতার নতুন দিগন্ত উন্মেচিত হয়। পরবর্তীতে ৯০ দশকে ফ্রি পত্রিকার আবির্ভাবের ঘটনায় ধীরে ধীরে নিউইয়র্কে বাংলা সাংবাদপত্রগুলো সঙ্কটের মুখোমুখি হওয়ার পাশাপাশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠে প্রবাসের সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্ব। যা আজো বিদ্যমান। কোন কোন মিডিয়ার ‘বিজ্ঞাপন কালেক্টর কাম রিপোর্টার’-এর পরবর্তীতে পত্রিকা প্রকাশ এই সঙ্কটকে আরো ঘনিভূত করেছে। সম্প্রতি সাপ্তাহিক মুক্তকন্ঠ-এর ‘বিজ্ঞাপন কারেক্টর কাম রিপোর্টার’-এর দায়িত্ব পালনকারী মোহাম্মদ আলম-এর সাথে মুক্তকন্ঠ কর্তৃপক্ষের বনিবনা না হওয়ায় মোহাম্মদ আলম (তার ভাষায়) মুক্তকন্ঠ ত্যাগ করে (মুক্তকন্ঠ কর্র্তৃপক্ষের মতে পত্রিকাটি থেকে তাকে অব্যহতি দেওয়া হয়) ‘নয়া মুক্তকন্ঠ’ নামে সাপ্তাহিক মুক্তকন্ঠ-এর আদলে প্রায় হুবহু আরেকটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। যা প্রবাসের বাংলা মিডিয়া জগত ছাড়াও কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এর আগে আরো একাধিক সাপ্তাহিকের ‘বিজ্ঞাপন ব্যস্থাপক কাম রিপোর্টার’ নিজেই ভিন্ন নামে পত্রিকাগুলো প্রকাশ করেন। আর এসব ফ্রি পত্রিকা পেইড পত্রিকাগুলোকে বিপাকে ফেলে দেয়। নিউইয়র্কে বাংলা ভাষায় প্রথম ফ্রি পত্রিকা প্রকাশ করেন সাপ্তাহিক দেশবাংলা ও বাংলা টাইমস-এর প্রকাশ ডা. চৌধুরী সারোয়ারুল হাসান। আর প্রথম ফ্রি পত্রিকার সম্পাদক হচ্ছেন বর্তমানে সাপ্তাহিক বর্ণমালা’র প্রকাশ ও প্রধান সম্পাদক মাহফুজুর রহমান। সাপ্তাহিক দেশবাংলা’র সম্পাদক হিসেবে মাহফুজুর রহমান প্রথম ফ্রি পত্রিকার প্রকাশনা চালু করেন। বর্তমানে কমিউনিটিতে দুটি পেইড পত্রিকা ছাড়া প্রায় দুই ডজনের মতো ফ্রি পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। আবার বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গেছে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত প্রায় এক ডজন সাপ্তাহিক। বন্ধ হয়ে যাওয়া পত্রিকার মধ্যে আবার কোন কোনটি নিয়মিত ‘ওয়েব পোর্টাল’ প্রকাশ করছে।
Samsul Alam add to Muktokanthoনয়া মুক্তকন্ঠ প্রকাশের পর এর প্রকাশক/সম্পাদক মোহাম্মদ আলম কর্তৃক পত্রিকার স্বার্থ বিরোধী কার্যকলাপের জন্য তাকে অব্যহতি দেয়া কথা তুলে ধরে আলমের ছবি সহ সাপ্তাহিক মুক্তকন্ঠ কর্তৃপক্ষ তাদের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘বিশেষ বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ করেছে। এনিয়েও কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। মোহাম্মদ আলম নয়া মুক্তকন্ঠ নামে ২/৩টি সংখ্যা প্রকাশের পর সাপ্তাহিক ‘জনতার কন্ঠ’ নামে নতুন পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই জনতার কন্ঠের ২/৩টি সংখ্যাও প্রকাশিত হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিউইয়র্ক থেকে বর্তমানে প্রকাশিত বাংলা প্রিন্ট মিডিয়াগুলোর মধ্যে সাপ্তাহিক ঠিকানা, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা, সাপ্তাহিক পরিচয়, সাপ্তাহিক বাঙালী, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ, সাপ্তাহিক আজকাল ও সাপ্তাহিক প্রবাস ব্যাপক পাঠক প্রিয়তা অর্জন করেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত প্রায় দুই ডজন পত্রিকার পাশাপাশি ৪/৫টি টিভি চ্যানেল সহ ঢাকার আরো প্রায় দুই ডজন টিভি’র বিজ্ঞাপনের চাহিদার কারণে বিপাকে পড়েছেন বিজ্ঞাপনদাতাগণ। তারা কোনটি রেখে কোন মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেবেন তা নিয়ে চিন্তিত। কেননা, একটি পত্রিকা বা মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিলে অন্যগুলো সেই বিজ্ঞাপন দাবী করলে বিল পরিশোধে চরম সমস্যা দেখা দেয়। আবার কোন কোন মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন না দিলে তারা নানাভাবে হুমকী-ধমুকীও দেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। অনুসন্ধানে এমনও অভিযোগ পাওয়া গেছে যে, কোন কোন মিডিয়া কর্তৃপক্ষ কোন পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপন দেখে বিজ্ঞাপনদাতার অনুমতি ছাড়াই তা প্রকাশ করে পরবর্তীতে বিল দাবী করেন। এমনকি ‘বিল হিসেবে যা পারেন তাই দেন’ এমনটি দাবী করার ঘটনাও ঘটছে কমিউনিটিতে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, কোন কোন বিজ্ঞাপনদাতা বা সংগঠনের কর্মকর্তা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রদানের পরিবর্তে ‘নিউজ প্রকাশ’ করতে অর্থ প্রদানের কৌশল নিচ্ছেন। তাদের মতে বিজ্ঞাপন দিলে অনেক মিডিয়াকেই (মিডিয়ারটির প্রচার বা পাঠক থাকুক আর নাই থাকুক) দিতে হয়। এজন্য তারা তাদের পছন্দের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দিয়ে নিউজের জন্য অর্থ দেয়াও প্রস্তাব দিচ্ছেন। সূত্র মতে, কোন কোন মিডিয়া ‘নিউজ আকার হিসেবে’ পত্রিকার স্থানও বরাদ্ধ করছেন। কোন কোন প্রেস বিজ্ঞপ্তি বিজ্ঞাপন আকারেও প্রকাশিত হচ্ছে- এমনও তথ্য পাওয়া গেছে অনুসন্ধানে।
নিউইয়র্কের শীর্ষস্থানীয় একটি সাপ্তাহিকের সম্পাদক ৪ মার্চ শুক্রবার ইউএএন প্রতিনিধিকে জানান, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সামসুদ্দীন আজাদ বলেছেন, একটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলে সবগুলোতেই দিতে হয়। তাই আপাতত: তিনি কোন মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন না।
নিউইয়র্কের অপর এক সম্পাদক ইউএনএ প্রতিনিধিকে বলেন, হাজার হাজার ডলার খরচ করে বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন ও দিবস পালন করলেও মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের কোন মাথাব্যাথা না থাকলেও প্রচারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন। অথচ তা ভাবেন না মিডিয়াগুলো বিজ্ঞাপন না পেলে টিকে থাকবে কি করে। বিষয়গুলো ভাববার অবকাশ রয়েছে।
সিটির জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউস্থ একটি বাংলাদেশী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফাতেমা গ্রোসারীর অন্যতম কর্ণধার ও কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার ক্ষোভের সাথে বলেন, কোন কোন মিডিয়া অনুমতি ছাড়াই আমাদের প্রতিষ্ঠান এমন কি আমার ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে পরবর্তীতে বিল দাবী করছেন। যা রীতিমত অন্যায়, অবিচার।
অপরদিকে ফ্রি পত্রিকার (হাতেগোনা ২/৩টি ছাড়া) ফলে পেশাদার সাংবাদিক ও মিডিয়া হাউজগুলো পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে বিপাকে পড়ছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরে মতে ফ্রি পত্রিকার ফলে একদিকে যেমন ‘ক্রিয়েটিভ পেশা’ হিসেবে সাংবাদিকতা ও প্রকাশনা তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে অপরদিকে বিজ্ঞাপনের মুল্যও আশংকাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। অভিজ্ঞমহলের মতে সংবাদপত্র কখনোই ফ্রি হওয়া উচিৎ নয়। কেননা, এটি ‘ক্রিয়েটিভ ও মর্যাদা সম্পন্ন’ প্রকাশনা। এদিকে নিউইয়র্ক থেকে ফ্রি পত্রিকাগুলোর মান বিচারে এর অধিকাংশই সংবাদপত্র হিসেবে তাদের পরিচয় হারাচ্ছে বলে অভিজ্ঞমহল মনে করছেন। তারা বলছেন এগুলো সংবাদপত্র নয় লিফলেট-এ পরিণত হচ্ছে। কোন কোন মিডিয়ায় খবরের চেয়ে বিজ্ঞাপন-ই বেশী। আবার যেসব খবর প্রকাশিত হয় তা ঢাকার পত্রিকার ‘কাট এন্ড পেস্ট’ বললেই চলে।
মিডিয়া সাথে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞমহলের মতে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ব্যবসার ধরণ যার যার মতো হলেও নিউইয়র্কে বাংলা মিডিয়াগুলো বাঁচিয়ে রাখতে পেশাদার সম্পাদক/প্রকাশক/সাংবাদিকদের ঐক্য জরুরী। সেই সাথে বিজ্ঞাপন নীতিমালাও জরুরী বলে তারা অভিমত প্রকাশ করেছেন। তা না হলে ‘অদূর ভবিষ্যতে বাংলা মিডিয়ার অস্তিতই হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়তে পারে’ এমন মন্তব্য অনেকেরই।