`আলতাফ মাহমুদ সাচ্চা নীতিবান-আদর্শিক সাংবাদিক ছিলেন’
- প্রকাশের সময় : ০৭:০৭:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
- / ৮০৫ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: বিশিষ্ট সাংবাদিক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর একাংশের সভাপতি আলতাফ মাহমুদের আকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে নিউইয়র্কের সাংবাদিকরা বলেছেন, আলতাফ মাহমুদ আপাদমস্তক শুধু সাচ্চা নীতিবান-আদর্শিক সাংবাদিক ছাড়াও আদর্শবান নেতাও ছিলেন। তিনি ছিলেন বহু গুণের অধিকারী একজন নির্লোভ সাদা মনের মানুষ। তিনি হালুয়া-রুটি ভাগাভাগীর নীতিতে বিশ্বাস করতেন না। সাংবাদিকদের দাবি-দাওয়া আদায়ের ব্যাপারে তার অবদান দেশের সাংবাদিক সমাজ ভুলবেন না।
সাংবাদিক আলতাফ মাহমুদ স্মরণে নিউইয়র্কে আয়োজিত শোক সভায় বক্তারা উপরোক্ত কথা বলেন। নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশী সাংবাদিক সমাজ-এর ব্যানারে সিটির জ্যাকসন হাইটস্থ খাবার বাড়ীর পালকী পার্টি সেন্টারে গত ২৭ জানুয়ারী বুধবার সন্ধ্যায় এই সভার আয়োজন করা হয়। বিএফইউজে’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক মনজুর আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা পরিচালনা করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিটি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম। সভার শুরুতে মরহুম আলতাফ মাহমুদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। খবর ইউএনএ’র।
সভায় নিউইয়র্কের সিনিয়র সাংবাদিকদের মধ্যে অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক প্রবাসী সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, এখন সময় সম্পাদক কাজী শামছুল হক, সাপ্তাহিক ঠিকানা’র প্রধান সম্পাদক ফজলুর রহমান, বিএফইউজে’র সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন নাসের, সাংবাদিক দাউদ ভূইয়া, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টিভি’র সিইও আবু তাহের, সময় টিভি’র যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি শিহাব উদ্দিন কিসলু, অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম, সাংবাদিক মনির হায়দার ও মুজাহিদ আনসারী। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)-এর সাবেক সহ সভাপতি এনামুর রেজা দিপু, হককথা ও বার্তা সংস্থা ইউএনএ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএফইউজে’র সাবেক দপ্তর সম্পাদক ইমরান আনসারী, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, সাপ্তাহিক বাংলা টাইমস সম্পাদক সঞ্জীবন কুমার, সাপ্তাহিক আজকাল-এর নির্বাহী সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, চ্যানেল আই-এর প্রতিনিধি রাশেদ আহমেদ, সাংবাদিক আব্দুল হাই স্বপন, শওকত ওসমান রচি, শাহাব উদ্দিন সাগর, সোহেল মাহমুদ, ফটো সাংবাদিক নিহার মাহমুদ প্রমুখ।
সভায় বক্তারা সাংবাদিক আলতাফ মাহমুদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতিচারণ করে বলেন, সাংবাদিকরা কে কোন ইউনিয়নের মেম্বার আলতাফ মাহমুদের কাছে তা মুখ্য ছিল না। তার কাছে বিবেচ্য ছিল ব্যক্তি পরিচয় বা পেশাদারিত্বপূর্ণ সাংবাদিকতা। বক্তারা বলেন, আলতাফ মাহমুদ নেই, কিন্তু তার নীতি আদর্শ আমাদের সামনে রয়েছে। বক্তারা সাংবাদিক নেতা হিসেবে আলতাফ মাহমুদের দেখানো পথে সাংবাদিক সমাজকে কাজ করার পাশাপাশি নিজেদের মধ্যকার বিভক্তি দূর করে ঐক্যের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভায় সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, আলতাফ মাহমুদ একজন স্বজ্জন পরোপকারী মানুষ ছিলেন। তিনি আজীবন সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিলেন। তার মৃত্যুতে সাংবাদিক সমাজের যে ক্ষতি হলো তা পূরণ হবার নয়।
কাজী শামসুল হক বলেন, তাকে স্মরণ করার চেয়ে তার জন্য দোয়া করাই উত্তম কাজ। পাশাপাশি পেশাগত মর্যাদা রক্ষায় তার মতো সাংবাদিকের আদর্শ মেনে চলা উচিৎ।
মুহাম্মদ ফজলুর রহমান তার বক্তব্যে সাংবাদিক আলতাফ মাহমুদের সাথে দীর্ঘদিনের পরিচয় আর পেশাগত সম্পর্কের স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, তাকে স্মরণ করার চেয়ে তার আদর্শ অনুসরণ করাই আমাদের জন্য উত্তম কাজ হবে। তিনি ছিলেন সাদা মনের সহজ-সরল মানুষ। মানুষকে ভালবাসা আর মানুষের প্রতি সমব্যাথি হওয়ার গুণ ছিলো তার মধ্যে। তিনি তার রাজনৈতিক আদর্শ থাকলেও সেই আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করেননি। কখনো নীতি বিসর্জন দেননি। তিনি এমন নেতা ছিলেন যে, কোন সাংবাদিক বিপদে পড়ার খবর পরই তার পাশে দাঁড়িয়ে যেতেন। তিনি সাংবাদিকদের ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমারা যখন ইউনিয়ন করতার তখনও আমাদের মধ্যে রাজণৈতিক বিভেদ ছিলো, কিন্তু এখনকার মতো টেবিল ভাগাভাগি ছিলো না।
মঈনুদ্দীন নাসের বলেন, সাংবাদিক আলতাফ মাহমুদ নেতা হিসেবে হালুয়া-রুটি ভাগাভাগীর নীতিতে বিশ্বাস করতেন না। সাংবাদিক নেতা হিসেবে ক্ষমতাকে সুযোগ-সুবিধার আদায়ে ব্যবহার করেননি। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক হয়েও অন্য নেতাদের মতো রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা নেননি। সাংবাদিকদের যে কোন দাবী আদায়ের সংগ্রামে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়তেন। তার চিকিৎসার জন্য আমরা কিছুই করতে পারলাম না।
দাউদ ভূইয়া বলেন, আকস্মিকভাবে আলতাফ মাহমুদের মুত্য সংবাদে আমি ভীষণ ব্যথিত। কেননা, তার সাথে ছিলো আমার ব্যক্তিগত আর পারিবারিক সম্পর্ক। তার চিকিৎসা চলছে, অপারেশন সফল হয়েছে এমন খবর জানান পরপরই তার মৃত্যু সংবাদ মেনে নেয়া যায় না।
আবু তাহের বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আলতাফ মাহমুদকে চিনি-জানি। রাজনৈতিক আদর্শের চেয়ে সাংবাদিক নেতা হিসেবেই তিনি তার দায়িত্ব পালনে ছিলেন একনিষ্ঠ। যা অনেক নেতার মাঝেই দেখা যায় না।
শিহাব উদ্দিন কিসলু বলেন, আলতাফ মাহমুদ ছিলেন একজন আদর্শবান সাংবাদিক নেতা। যাকে অনুসরণ, অনুকরণ করা যায়। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, দেশের সাংবাদিকতায় দুবৃত্তার ঢুকে পড়েছে। দেশে সাংবাদিকতা পেশায় যেভাবে অনৈতিকতা, অবক্ষয়ের চর্চা চলছে তা নিউইয়র্কের সাংবাদিকতায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এব্যাপারে আমাদের সতর্ক হওয়া দরকার।
অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম আবেগ-আপ্লুত কন্ঠে বলেন, সাংবাদিক আলতাফ মাহমুদকে খুব কাছে থেকে দেখেছি। তার জীবন-যাপন ছিলো খুব স্বাভাবিক। তার মৃত্যুতে প্রবাসী সাংবাদিক সমাজ শোক সভার আয়োজন করে নিউইয়র্কের সাংবাদিকরাই সম্মানিত হলেন।
মনির হায়দার বলেন, সাংবাদিক আলতাফ মাহমুদ আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল থাকলেও নীতি-নৈতিকতার দিক দিয়ে উচু মনের মানুষ ছিলেন, বড় মানুষ ছিলেন। তিনি গরীব ছিলেন না।
মুজাহিদ আনসারী বলেন, দেশের সাংবাদিক নেতাদের গাড়ী-বাড়ি, অর্থ থাকলেও আলতাফ মাহমুদের তেমন কিছুই ছিলো না। বাংলাদেশ সরকার তাকে ঢাকায় জমি দিলেও সেই জমিতে বাড়ী করার অর্থ তার ছিলো না। এখানেই অন্য নেতাদের সাথে সাংবাদিক নেতা আলতাফ মাহমুদের পার্থক্য।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মরহুম সাংবাদিক নেতা আলতাফ মাহমুদের মতো আমরা বিভিন্ন শোক সভায় নানা আদর্শের কথা বলি, কিন্তু সেই আদর্শ আমরা নিজেরাই মানি না। এটা আতœপ্রতারণার শামিল। তিনি বলেন, আমাদের কথায় ও কাজে মিল থাকতে হবে। আলতাফ মাহমুদের আদর্শ অনুসরণ করতে পারলেই তাকে স্মরণ করা স্বার্থক হবে, তার বিদেহী আতœা শান্তি পাবে।
ইমরান আনসারী বলেন, আলতাফ মাহমুদ এমন সাংবাদিক নেতা ছিলেন যার মুত্যর সময় তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মাত্র ১০ হাজার টাকা ছিলো। তিনি ন্যায়ের প্রশ্নের কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি। ইমরান বলেন, বিএফইউজে আমি তার পাল্টা গ্রুপ করলেও বিভিন্ন সময়ে তিনি আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি ছোট-বড় সবাইকে আপনি বলে সম্বোধন করছেন। তার আচার-ব্যবহার ছিলো খুবই স্বাভাবিক, কখনো বুঝা যাইনি তিনি সাংবাদিক নেতা।