আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত
- প্রকাশের সময় : ০৫:৩৭:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ নভেম্বর ২০১৭
- / ৯২১ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: নিখোঁজ সাংবাদিক উৎপল দাসের উদ্ধারে প্রশাসনের রহস্যজনক ঢিলেমি এবং বিভিন্ন ঘটনায় সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব এক প্রতিবাদ সভা করেছে গত ১৯ নভেম্বর রোববার। এদিন বিকেল ৫টায় এই প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয় জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ প্লাজা মিলনায়তনে। অনুষ্ঠানে আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইনক-এর সদস্যসহ নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সাপ্তাহিকের সম্পাদক এবং কর্মরত সাংবাদিকরঅ অংশগ্রহণ করেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি দর্পণ কবীর এবং সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শওকত ওসমান রচি। সভায় বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক পরিচয় পত্রিকার সম্পাদক ও আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ও নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের আহবায়ক কমিটির আহবায়ক ডা. ওয়াজেড এ খান, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক এবং টাইম টিভি’র সিইও আবু তাহের, সাপ্তাহিক জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার, সাপ্তাহিক বর্ণমালা সম্পাদক ও একাত্তর টিভির ইউএস ব্যুরো প্রধান মাহফুজুর রহমান এবং সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ।
প্রতিবাদ সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন কলামিষ্ট আবু জাফর মাহমুদ, সাপ্তাহিক বর্তমান বাংলা’র সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি শাহ নেওয়াজ, নিউইয়র্ক-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ, প্রেসক্লাবের আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব শিবলী চৌধুরী কায়েস, টাইম টিভির পরিচালক সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, সাপ্তাহিক আজকাল-এর নির্বাহী সম্পাদক শাহাব উদ্দিন সাগর ও ফটো সাংবাদিক এ হাই স্বপন, ভোরের কাগজ-এর প্রতিনিধি শামীম আহমেদ, সাংবাদিক আশরাফুল হাসান বুলবুল, হাকিকুল ইসলাম খোকন, আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মনজুরুল হক মঞ্জু, সাপ্তাহিক দেশকণ্ঠ’র বিশেষ প্রতিনিধি শামসুল আলম লিটন, কমিউনিটি এক্টিভিষ্ট খন্দকার ফরহাদ, হাসানুজ্জামান হাসান, হেলাল মাহমুদ সহ আরো অনেকে।
সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে ‘গুম’ সংস্কৃতিতে প্রবাসের সাংবাদিক সমাজ উদ্বিগ্ন। কোন একটা প্রতিবেদন লেখার কারণে উৎপল দাস এক মাসের অধিক সময় ধরে নিখোঁজ। দেশের সাংবাদিকরা আন্দোলন করছেন। অথচ প্রশাসনের টনক নড়ছে না। তাহলে অবাধ-স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ কোথায়? তারা আরো বলেন, দেশের উন্নয়ন হলেই শেষ কথা নয়। নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারলে সরকারের সাফল্যগাঁথা কোন কাজে আসবে না। তারা বলেন-দেশে এখন মিডিয়া জগতে সেলফ সেন্সরশিপ চলছে। এতে কথা বলার মৌলিক অধিকার বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে নিখোঁজ সাংবাদিক উৎপল দাসকে উদ্ধারে তড়িৎ ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সভায় নাজমুল আহসান বলেন, বাংলাদেশে এখন কেবল অপহরণ ও গুমের খবর শুনি। যা উদ্বেগ বাড়ায়। তিনি বলেন, দেশে সাংবাদিকরা দু’ভাগে বিভক্ত। সরকারের সমর্থক সাংবাদিক আছেন, বিরোধীও আছেন। তারা উৎপল দাসের উদ্ধারের জন্য প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন। কিন্তু সরকার তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এখনও এ ব্যাপারে কোন বিবৃতি দেয়া হয়নি। এতে বুঝা যায়, এ ব্যাপারে সরকারও উদাসীন। তিনি বলেন, শুধু উন্নয়নের কথা বললেই হবে না, সরকারকে সকলের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে হবে।
ডা. ওয়াজেদ এ খান বলেন, একটি রাষ্ট্রে যখন আইনের শাসন থাকে না, তখন সমাজের ভারসাম্যও থাকে না। যখন সাধারণ মানুষ ন্যায় বিচার পায় না, সেখানে কারো নিরাপত্তা আশা করা যায় না। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কথা বলতে দিতে হবে। মিডিয়া এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি উৎপল দাসকে উদ্ধারে প্রশাসনের ঢিলেমিকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, অগ্রসর হচ্ছে, কিন্তু মানুষের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না সরকার। তিনি বলেন, প্রাইভেটলি এবং সরকারির মদদে দেশে গুম অপহরণ হচ্ছে। এ সবের সমাপ্তি ঘটুক। গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক।
আবু তাহের বলেন, উৎপল দাস কোথায় আছে কেউ জানে না। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ‘গুম’ কালচার ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। এটা বর্তমান সরকারের কালো তিলক। এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবার গণতন্ত্রের জন্য জীবনভর লড়াই করেছেন, তাদের শাসনামলে সাংবাদি গুম বা নির্যাতনের ঘটনা আশা করা যায় না। তিনি সম্প্রতি ঢাকা সফরকালে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, দেশে মিডিয়া জগতে দমবন্ধ পরিবেশ বিরাজ করছে। যা গণতান্ত্রিক সমাজের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তিনি অবিলম্বে উৎপল দাসকে উদ্ধার করে তাঁর মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান।
রতন তালুকদার বলেন, দেশে গণতন্ত্রের আবরণে যে পরিমাণ অপহরণ-গুম হচ্ছে, তা ভীষণ উদ্বেগজনক। সাংবাদিকরা পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছেন না। এতে আমরা শংকিত। এখন দেশে যেতে ভয় পাচ্ছি। আমার প্রশ্ন, দেশে কি সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র আছে? সরকারের নিয়ন্ত্রণ কি প্রধানমন্ত্রীর হাতে আছে? তিনি বলেন-দেশে যেন ডান্ডাতন্ত্র চলছে। যেখানে তাকাই নির্যাতনের ছবি। নির্যাতিতদের কান্না দেখি। হিন্দু-মুসলিম-বিরোধী মতামতের মানুষ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। প্রবাস থেকে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
মাহফুজুর রহমান বলেন, অপহরণ-গুম ১৯৭৮ সালে হয়েছে। এখনও হচ্ছে। সকল অপহরণ ও গুমের তদন্ত হওয়া উচিত। আমাদের এটাও দেখতে হবে। যারা দেশের স্বাধীনতার বিরোধী, তারা এসব কাজ করছে কিনা। কারণ, উৎপল দাস ও মোবাশ্বের সিজার প্রগতিশীল সাংবাদিক-শিক্ষক। তিনি বলেন-এ ধরনের গুমের ঘটনার দায়ভার সরকারকে বহন করতে হবে। সমাজ তথা রাষ্ট্রকে সভ্য করতে হলে প্রতিটি গুমের রহস্য উদঘাটন জরুরি। গুম ও অপহরণের বিরুদ্ধে মিডিয়াকেও বেশি বেশি রিপোর্ট করতে হবে।
মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। আমরা দেশে মুক্ত সাংবাকিতা দেখতে চাই। অপহরণ-গুমের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। তিনি মিডিয়া বিরোধী ৫৭ ধারা বাতিলের দাবিও জানান তাঁর বক্তব্যে। অনুষ্ঠানে সদ্য প্রয়াত বাংলা একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ড. মাহফুজুর রহমানের প্রয়াণে তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানটি সফল করতে বিশেষ সহযোগিতা করে বাংলাদেশ প্লাজা কর্তৃপক্ষ। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি।