নিউইয়র্ক ১০:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ভ্রমণ : ক্যাঙ্গারুর দেশে কয়েকদিন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৩:৪৯:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ নভেম্বর ২০২০
  • / ১১৬ বার পঠিত

হাবিব রহমান: প্রতিদিনের মতই কাঁটায় কাঁটায় সকাল আটটায় গাইড এসে হোটেল থেকে তুলে নিলো আমাদের।বাসে পুরনো মুখ কিছু কমেছে তবে নতুন মুখ বেড়েছে অনেক। বাসের মাঝেই পরিচয় পর্ব অনুষ্ঠিত হলো। দেখা গেলো সবচেয়ে বেশী পর্যটক আমেরিকার। পরের স্থান জার্মানীর। গল্পে গল্পে বেশ কিছু সময় কেটে গেলো। প্রথমে যেখানে বাস এসে থামলো তার নাম সেন্ট্রাল পার্ক। তবে আমাদের দ্রস্টব্য সেন্ট্রাল পার্ক ছিলো না।ছিলো পার্ক সংলগ্ন একটি ৫১তম তলা বিশিষ্ট অফিস ভবন। ভবনটির ছাদের উচ্চতা ২২৬ মিটার (৭৪১ ফুট) এবং এর যোগাযোগের মাস্তুল ডগা থেকে ২৪৯ মিটার (৮১৭ ফুট)। ১৯৯২ সালে নির্মাণ সমাপ্তির পরে ভবনটি পার্থের সবচেয়ে উচ্চতম ভবনের মর্যাদা লাভ করে। এটি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার নবম উচ্চতম ভবন।
হাবিব রহমান

এরপর আমরা এলাম একটি ফেরী ঘাটে। গাইড জানাল পয়তাল্লিশ মিনিট ফেরী জার্নি করে সে আমাদের নিয়ে যাবে একটি দ্বীপে-যার নাম রটনেস্ট আইল্যান্ড। যেখানে আছে একটি কিউট প্রাণীর বাসস্থান যার নাম কিউক্কা। যে প্রাণীটি বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায়না। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এই দ্বীপে আছে সাদা বালির বীচ-যা সারা বিশ্বের সার্ফারদের কাছে টানে।
দ্বীপে নেমে একটু হাঁটতেই দেখা মিল্লো তুলতুলে ইঁদুরের মতো দেখতে নরম লোমে ঢাকা চঞ্চল প্রাণী কিউক্কার। নিশাচর এ প্রাণীটির সঙ্গে ক্যাঙ্গারুর মিল রয়েছে। শরীরের আকৃতি বা গঠনের জন্য নয়, মুখের আদলের জন্যই বিশ্বে পরিচিত হয়ে উঠেছে কিউক্কা। হঠাৎ করে কেউ দেখলে মনে হবে প্রাণীটি ফিকফিক করে হাসছে! কিউক্কার সঙ্গে পর্যটকদের সেলফি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ সারা ফেলেছে এ কারণে। অস্ট্রেলিয়ার রটনেস্ট আইল্যান্ডে এটাই একমাত্র স্থল স্তন্যপায়ী প্রাণী। কিউক্কার কথা প্রথম বর্ণনা করেন ডাচ সামুদ্রিক ক্যাপ্টেন উইলেম ডি ভ্লামিং। তিনি একে বলেন ইঁদুরের মতো দেখতে বড় বিড়াল। ভ্লামিং এই দ্বীপের নামও দেন রটেস নেস্ট বা ইঁদুরের বাসা। কিউক্কা সাধারণত জলাভূমির ঝোপ-ঝাড়ে টানেলের মতো করে বাসা খুঁড়ে থাকতে পছন্দ করে। ভুবনভোলানো মিষ্টি হাসির কিউক্কা কিন্তু ক্ষেপে গেলে একেবারে জাঁদরেল। গাইড জানালো ছোট্ট থাবার আড়ালে থাকা ছুরির চেয়ে মারাত্মক ধারাল নখে একেবারে চিড়ে ফেলতে পারে যা কিছু। আর ওর মুখের ভেতরে থাকা ছোট্ট চিরল দাঁতও কিন্তু ভয়ানক অস্ত্র! তবে বেশিরভাগ সময়ই কিউক্কা বেশ নিরীহ প্রজাতির এবং আদুরে স্বভাবের।
গাউড আরো জানায়, কিউক্কাদের পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী প্রাণী বলা হয়। আর এরাই রটনেস্ট আইল্যান্ডের আদিবাসী। এরা এতটাই বন্ধুসুলভ যে তাদের আচরণের কারণেই এটি সুখী প্রাণীর তকমা পেয়েছে। এই দ্বীপে তাদের কোনো প্রাকৃতিক শত্রæও নেই। অর্থাৎ, কেউ তাদের শিকার করে খায় না। তবে মানুষের কাছে আসতে তারা কিছুটা ভয় পায়।
আধাঘন্টা দ্বীপ ভ্রমন শেষে আমরা আবার এসে বসলাম ফেরীতে। আর অল্পক্ষনেই আমরা পৌছে গেলাম মেইন লান্ডে।
ফেরী থেকে নেমে বাসে উঠলাম। বাস ছুটে চললো আমাদের নতুন গন্তব্য মার্গারেট রিভারে। গাইড জানালো জায়গাটা তিনঘন্টার ড্রাইভীং দূরত্বে।এটা সার্ফারদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষনীয়। এখানে আছে ৪০ টি সার্ফিং স্পট। শহর থেকে একটু দুরে এই ছিমছাম এলাকায় মানুষ ছুটি কাটাতে পছন্দ করে।
আমরা যে রাস্তা ধরে যাচ্ছি এর নাম কুইনানা হাইওয়ে। রাস্তার দুপাশে কোথাও ঘোড়া বা ভেড়ার খামার। কখনো বা পাইন বনের ভেতর দিয়ে রাস্তা। কোথাও আঙ্গুর বাগান।
বাস এসে থামলো মার্গারেট রিভারের তীরে। চমতকার শান্ত সুন্দর নদী বয়ে চলেছে কুলু রবে। টলটলে জলের প্রবাহ দেখে চোখ আটকে যায়। নদীর দুই ধারে গাছপালা, কোথাও বেঞ্চ পাতা, বলা যায় চমৎকার একটা নান্দনিক পরিবেশ।
নদীর পাড় ঘেঁষে চমৎকার রাস্তা দিয়ে অনেকটা পথ হেঁটে বেড়ালাম।
পিনাকলস মরুভূমি

নদীর পাশে রাস্তার ধারে নানান রকম খাবারের দোকান, কফি শপ ইত্যাদি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। গাইড আমাদের নিয়ে এসে একটা দোকানের সামনে থামলো। “ফিস এন্ড চিপস” এর দোকান। ইউরোপ আমেরিকার সর্বত্র এই দোকানটি দেখতে পাওয়া যায়। প্লেট ভর্তি পটেটো চিপসের সাথে ভাজা সামুদ্রিক মাছের কম্বিনেশন। অনেকেই খায়। আমার কাছেও এটি প্রিয় খাবারের একটি। গরম গরম ভেজে পরিবেশন করে। সাথে যে কোন ড্রিঙ্কস। নদীর শোভা দর্শন আর ক্ষুধা নিবারণ দুটোই একসাথে চলছিলো। নদী তীরের বৃক্ষ থেকে ভেসে আসছিলো পাখীর ডাক। তীর ঘেষে কিছু পাখী হেঁটে বেড়াচ্ছিলো নির্ভয়ে। নদীর ঢেউ, পাখীর কলতান, প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে পেট পুরে খাওয়া শেষ করে আবার পথে নামলাম। এবার গাড়ীতে উঠতে হবে। গাড়ী ছুটবে অন্য ঠিকানায়।
আমাদের এবারের গন্তব্য পিনাকলস মরুভূমি। এখানে আছে চুনাপাথর সমৃদ্ধ বালি। আর এই বালির উপর দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার চুনা পাথরের স্তম্ভ। স্তম্ভগুলোর মাথা পাহাড়ের চুড়ার মত। আর এজন্যই এর নামকরণ করা হয়েছে পিনাকলস।
গাড়ীতে বসে গাইডের লেকচার শুনছিলাম। পিনাকলস মরুভূমিতে ৬ হাজার বছর আগে অস্ট্রেলিয় জাতিগোষ্ঠীর বসবাস ছিলো। ইউরোপীয়রা এখানে এসেছিলো ১৬৫৮ সালে। তবে এই মরুভূমিটি সাধারণ অস্ট্রেলিয়ানদের নজরে আসে ১৯৬০ সালের দিকে। এখন প্রতিবছর প্রায় আড়াই লক্ষ পর্যটক আসে এখানে।
রটনেস্টদ্বীপের অধিবাসী কিউক্কা

গাইডের লেকচার শুনতে শুনতে এসে পৌঁছালাম পিনাকলস এলাকায়। এই মরুভূমিটি ঘিরে এখন গড়ে উঠেছে একটি পার্ক। নাম নামবাং ন্যাশনাল পার্ক। পার্কের দুই ধারে ক্যাকটাস আর ঝোপঝাড় জাতীয় গাছ। একটু এগোতেই চোখে পড়লো হলুদ বালির উপর দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার চুনা পাথরের স্তম্ভ । স্তম্ভগুলোর আকৃতি এবং রং ভিন্ন ভিন্ন। কোনটি সাদা, কোনটি ধূসর কোনটিবা হলুদাভ।
গাড়ী থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে স্তম্ভগুলি দেখছিলাম। গাইড জানালো চুনা পাথরের এই স্তম্ভগুলো ৩০ হাজার বছর ধরে এভাবে দাঁড়িয়ে আছে প্রকৃতির বিস্ময় হিসাবে।
পিনাকলস দেখা শেষ করে গাড়ীতে গিয়ে বসলাম। ফিরে যাচ্ছি পার্থ শহরে। শহরে ঢোকার আগে গাড়ী এসে থামলো সোয়ান ভ্যালিতে। রাস্তার পাশে সারি সারি আংগুরের বাগান। এই আংগুর থেকে তৈরি হয় ওয়াইন। একটু পর পর আছে ওয়াইনারি। একটা ওয়াইনারীতে গিয়ে গাড়ী থামলো। গাইড আমাদের নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখালো কিভাবে ওয়াইন তৈরি হয়। তৈরির পর ব্যারেলে ভর্তি করে সেলারে রাখা হয়। শোরুম আছে যেখানে বিক্রি হয় ওয়াইন। ওখানে ফ্রিতে টেস্ট করতে দেয়া হয় আগ্রহীদের। আমাদের গ্রæপের অনেকেই নানা ব্রান্ডের ওয়াইন কিনে বাসে এসে বসলো। এবার ফেরার পালা। হোটেলে হোটেলে ঘুরে টুরিস্টদের নামিয়ে দেবে গাইড। তারপর তার ছুটি।
আমাদেরও আজই শেষ রাত পার্থে। আগামী কাল সকালের ফ্লাইটে ওড়াল দেবো অস্ট্রেলিয়ার অন্য ঠিকানায়।
লেখক: সাংবাদিক, সিইও বাংলা ট্যুর

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

ভ্রমণ : ক্যাঙ্গারুর দেশে কয়েকদিন

প্রকাশের সময় : ০৩:৪৯:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ নভেম্বর ২০২০

হাবিব রহমান: প্রতিদিনের মতই কাঁটায় কাঁটায় সকাল আটটায় গাইড এসে হোটেল থেকে তুলে নিলো আমাদের।বাসে পুরনো মুখ কিছু কমেছে তবে নতুন মুখ বেড়েছে অনেক। বাসের মাঝেই পরিচয় পর্ব অনুষ্ঠিত হলো। দেখা গেলো সবচেয়ে বেশী পর্যটক আমেরিকার। পরের স্থান জার্মানীর। গল্পে গল্পে বেশ কিছু সময় কেটে গেলো। প্রথমে যেখানে বাস এসে থামলো তার নাম সেন্ট্রাল পার্ক। তবে আমাদের দ্রস্টব্য সেন্ট্রাল পার্ক ছিলো না।ছিলো পার্ক সংলগ্ন একটি ৫১তম তলা বিশিষ্ট অফিস ভবন। ভবনটির ছাদের উচ্চতা ২২৬ মিটার (৭৪১ ফুট) এবং এর যোগাযোগের মাস্তুল ডগা থেকে ২৪৯ মিটার (৮১৭ ফুট)। ১৯৯২ সালে নির্মাণ সমাপ্তির পরে ভবনটি পার্থের সবচেয়ে উচ্চতম ভবনের মর্যাদা লাভ করে। এটি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার নবম উচ্চতম ভবন।
হাবিব রহমান

এরপর আমরা এলাম একটি ফেরী ঘাটে। গাইড জানাল পয়তাল্লিশ মিনিট ফেরী জার্নি করে সে আমাদের নিয়ে যাবে একটি দ্বীপে-যার নাম রটনেস্ট আইল্যান্ড। যেখানে আছে একটি কিউট প্রাণীর বাসস্থান যার নাম কিউক্কা। যে প্রাণীটি বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায়না। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এই দ্বীপে আছে সাদা বালির বীচ-যা সারা বিশ্বের সার্ফারদের কাছে টানে।
দ্বীপে নেমে একটু হাঁটতেই দেখা মিল্লো তুলতুলে ইঁদুরের মতো দেখতে নরম লোমে ঢাকা চঞ্চল প্রাণী কিউক্কার। নিশাচর এ প্রাণীটির সঙ্গে ক্যাঙ্গারুর মিল রয়েছে। শরীরের আকৃতি বা গঠনের জন্য নয়, মুখের আদলের জন্যই বিশ্বে পরিচিত হয়ে উঠেছে কিউক্কা। হঠাৎ করে কেউ দেখলে মনে হবে প্রাণীটি ফিকফিক করে হাসছে! কিউক্কার সঙ্গে পর্যটকদের সেলফি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ সারা ফেলেছে এ কারণে। অস্ট্রেলিয়ার রটনেস্ট আইল্যান্ডে এটাই একমাত্র স্থল স্তন্যপায়ী প্রাণী। কিউক্কার কথা প্রথম বর্ণনা করেন ডাচ সামুদ্রিক ক্যাপ্টেন উইলেম ডি ভ্লামিং। তিনি একে বলেন ইঁদুরের মতো দেখতে বড় বিড়াল। ভ্লামিং এই দ্বীপের নামও দেন রটেস নেস্ট বা ইঁদুরের বাসা। কিউক্কা সাধারণত জলাভূমির ঝোপ-ঝাড়ে টানেলের মতো করে বাসা খুঁড়ে থাকতে পছন্দ করে। ভুবনভোলানো মিষ্টি হাসির কিউক্কা কিন্তু ক্ষেপে গেলে একেবারে জাঁদরেল। গাইড জানালো ছোট্ট থাবার আড়ালে থাকা ছুরির চেয়ে মারাত্মক ধারাল নখে একেবারে চিড়ে ফেলতে পারে যা কিছু। আর ওর মুখের ভেতরে থাকা ছোট্ট চিরল দাঁতও কিন্তু ভয়ানক অস্ত্র! তবে বেশিরভাগ সময়ই কিউক্কা বেশ নিরীহ প্রজাতির এবং আদুরে স্বভাবের।
গাউড আরো জানায়, কিউক্কাদের পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী প্রাণী বলা হয়। আর এরাই রটনেস্ট আইল্যান্ডের আদিবাসী। এরা এতটাই বন্ধুসুলভ যে তাদের আচরণের কারণেই এটি সুখী প্রাণীর তকমা পেয়েছে। এই দ্বীপে তাদের কোনো প্রাকৃতিক শত্রæও নেই। অর্থাৎ, কেউ তাদের শিকার করে খায় না। তবে মানুষের কাছে আসতে তারা কিছুটা ভয় পায়।
আধাঘন্টা দ্বীপ ভ্রমন শেষে আমরা আবার এসে বসলাম ফেরীতে। আর অল্পক্ষনেই আমরা পৌছে গেলাম মেইন লান্ডে।
ফেরী থেকে নেমে বাসে উঠলাম। বাস ছুটে চললো আমাদের নতুন গন্তব্য মার্গারেট রিভারে। গাইড জানালো জায়গাটা তিনঘন্টার ড্রাইভীং দূরত্বে।এটা সার্ফারদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষনীয়। এখানে আছে ৪০ টি সার্ফিং স্পট। শহর থেকে একটু দুরে এই ছিমছাম এলাকায় মানুষ ছুটি কাটাতে পছন্দ করে।
আমরা যে রাস্তা ধরে যাচ্ছি এর নাম কুইনানা হাইওয়ে। রাস্তার দুপাশে কোথাও ঘোড়া বা ভেড়ার খামার। কখনো বা পাইন বনের ভেতর দিয়ে রাস্তা। কোথাও আঙ্গুর বাগান।
বাস এসে থামলো মার্গারেট রিভারের তীরে। চমতকার শান্ত সুন্দর নদী বয়ে চলেছে কুলু রবে। টলটলে জলের প্রবাহ দেখে চোখ আটকে যায়। নদীর দুই ধারে গাছপালা, কোথাও বেঞ্চ পাতা, বলা যায় চমৎকার একটা নান্দনিক পরিবেশ।
নদীর পাড় ঘেঁষে চমৎকার রাস্তা দিয়ে অনেকটা পথ হেঁটে বেড়ালাম।
পিনাকলস মরুভূমি

নদীর পাশে রাস্তার ধারে নানান রকম খাবারের দোকান, কফি শপ ইত্যাদি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। গাইড আমাদের নিয়ে এসে একটা দোকানের সামনে থামলো। “ফিস এন্ড চিপস” এর দোকান। ইউরোপ আমেরিকার সর্বত্র এই দোকানটি দেখতে পাওয়া যায়। প্লেট ভর্তি পটেটো চিপসের সাথে ভাজা সামুদ্রিক মাছের কম্বিনেশন। অনেকেই খায়। আমার কাছেও এটি প্রিয় খাবারের একটি। গরম গরম ভেজে পরিবেশন করে। সাথে যে কোন ড্রিঙ্কস। নদীর শোভা দর্শন আর ক্ষুধা নিবারণ দুটোই একসাথে চলছিলো। নদী তীরের বৃক্ষ থেকে ভেসে আসছিলো পাখীর ডাক। তীর ঘেষে কিছু পাখী হেঁটে বেড়াচ্ছিলো নির্ভয়ে। নদীর ঢেউ, পাখীর কলতান, প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে পেট পুরে খাওয়া শেষ করে আবার পথে নামলাম। এবার গাড়ীতে উঠতে হবে। গাড়ী ছুটবে অন্য ঠিকানায়।
আমাদের এবারের গন্তব্য পিনাকলস মরুভূমি। এখানে আছে চুনাপাথর সমৃদ্ধ বালি। আর এই বালির উপর দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার চুনা পাথরের স্তম্ভ। স্তম্ভগুলোর মাথা পাহাড়ের চুড়ার মত। আর এজন্যই এর নামকরণ করা হয়েছে পিনাকলস।
গাড়ীতে বসে গাইডের লেকচার শুনছিলাম। পিনাকলস মরুভূমিতে ৬ হাজার বছর আগে অস্ট্রেলিয় জাতিগোষ্ঠীর বসবাস ছিলো। ইউরোপীয়রা এখানে এসেছিলো ১৬৫৮ সালে। তবে এই মরুভূমিটি সাধারণ অস্ট্রেলিয়ানদের নজরে আসে ১৯৬০ সালের দিকে। এখন প্রতিবছর প্রায় আড়াই লক্ষ পর্যটক আসে এখানে।
রটনেস্টদ্বীপের অধিবাসী কিউক্কা

গাইডের লেকচার শুনতে শুনতে এসে পৌঁছালাম পিনাকলস এলাকায়। এই মরুভূমিটি ঘিরে এখন গড়ে উঠেছে একটি পার্ক। নাম নামবাং ন্যাশনাল পার্ক। পার্কের দুই ধারে ক্যাকটাস আর ঝোপঝাড় জাতীয় গাছ। একটু এগোতেই চোখে পড়লো হলুদ বালির উপর দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার চুনা পাথরের স্তম্ভ । স্তম্ভগুলোর আকৃতি এবং রং ভিন্ন ভিন্ন। কোনটি সাদা, কোনটি ধূসর কোনটিবা হলুদাভ।
গাড়ী থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে স্তম্ভগুলি দেখছিলাম। গাইড জানালো চুনা পাথরের এই স্তম্ভগুলো ৩০ হাজার বছর ধরে এভাবে দাঁড়িয়ে আছে প্রকৃতির বিস্ময় হিসাবে।
পিনাকলস দেখা শেষ করে গাড়ীতে গিয়ে বসলাম। ফিরে যাচ্ছি পার্থ শহরে। শহরে ঢোকার আগে গাড়ী এসে থামলো সোয়ান ভ্যালিতে। রাস্তার পাশে সারি সারি আংগুরের বাগান। এই আংগুর থেকে তৈরি হয় ওয়াইন। একটু পর পর আছে ওয়াইনারি। একটা ওয়াইনারীতে গিয়ে গাড়ী থামলো। গাইড আমাদের নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখালো কিভাবে ওয়াইন তৈরি হয়। তৈরির পর ব্যারেলে ভর্তি করে সেলারে রাখা হয়। শোরুম আছে যেখানে বিক্রি হয় ওয়াইন। ওখানে ফ্রিতে টেস্ট করতে দেয়া হয় আগ্রহীদের। আমাদের গ্রæপের অনেকেই নানা ব্রান্ডের ওয়াইন কিনে বাসে এসে বসলো। এবার ফেরার পালা। হোটেলে হোটেলে ঘুরে টুরিস্টদের নামিয়ে দেবে গাইড। তারপর তার ছুটি।
আমাদেরও আজই শেষ রাত পার্থে। আগামী কাল সকালের ফ্লাইটে ওড়াল দেবো অস্ট্রেলিয়ার অন্য ঠিকানায়।
লেখক: সাংবাদিক, সিইও বাংলা ট্যুর