‘মাঝে মাঝে ক্লান্ত হই’
- প্রকাশের সময় : ১১:২৬:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪
- / ৯৭ বার পঠিত
নাটকের বরপুত্র বলা হয় মোশাররফ করিমকে। এই বিশেষণের পক্ষে-বিপক্ষে অনেকেই থাকতে পারেন। কিন্তু তাঁর অভিনয় ক্ষমতা নিয়ে পক্ষ একটাই– তিনি ভালো অভিনেতা। এই ভালো অভিনেতা অভিনীত ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’ নামে একটি ধারাবাহিক নাটক প্রচার শুরু হয়েছে। সাজিন আহমেদ বাবু পরিচালিত এই নাটকের সূত্র ধরেই যোগাযোগ করা হয় মোশাররফ করিমের সঙ্গে। ধারাবাহিকটি নিয়ে কথা হবে, কথা হবে তাঁর সাম্প্রতিক ব্যস্ততা নিয়েও।
উত্তরার ‘আপনঘর ২’ শুটিংবাড়িতে যেতে বলেন। সেখানে তিনি আছেন, শুটিং করছেন খণ্ড একটি নাটকে। টানা কয়েক দিনের গরমে পুরো দেশ তখন অতিষ্ঠ। তাপমাত্রা ঠেকেছে ৪২ ডিগ্রিতে; যা দেশে রেকর্ড। এমন গরমেও থেমে নেই শুটিং। সামনে ঈদুল আজহা। তাই শুটিং থেমে থাকার কথাও নয়। যথা সময়ে ঈদের নাটকগুলো জমা দিতে হবে। শিডিউল অনুযায়ী তাই কাজ করছেন দেশীয় নাটকের এই বরপুত্র। পরনে ছিমছাম লাল টি-শার্ট আর কালো জিন্স। আপন ঘর ২-এর বাইরে কিছুটা জটলা। সেই জটলার মধ্যমণি হয়ে শুটিং করছিলেন তিনি। সূর্য তখন ডুবে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর আগেই দৃশ্যের শুটিং শেষ করতে হবে। না হলেই বিপদ। যথা সময়ে দৃশ্য ধারণ শেষ করেই মোশাররফ করিম এসে বসলেন শুটিং বাড়িতে।
পুরোনো বাড়ি। উত্তরায় যে ধরনের আভিজাত্য নিয়ে নতুন ভবনগুলো মাথা তুলে আছে, এটা সে রকম নয়। ডিজাইনে কিছুটা পুরোনো ধাঁচ। তবে ভেতরে পরিপাটি। সম্ভবত শুটিংয়ের জন্যই এমন পরিপাটি করে রাখা। উত্তরার বেশ প্রসিদ্ধ শুটিংবাড়ি এটি। বরাবরের মতো কুশল বিনিময় করে কথা শুরু করলেন মোশাররফ করিম। জানালেন, কেবল নতুন ধারাবাহিক নিয়েই কথা বলবেন। অন্য বিষয়গুলো আজ থাক। সব বিষয় নিয়ে আরেক দিন কথা হবে। যে কয় মিনিট কথা বলার সুযোগ পাওয়া, তাতে খুব বেশি আলাপ জমানো সম্ভবও নয়। এর পরও শুরু হলো কথা।
অভিনেতা জানালেন, ঘরের শত্রু বিভীষণ ধারাবাহিকটির গল্প ও এর নির্মাতার সততা দুটোই তাঁকে টেনেছে। আর টেনেছে বলেই এতে তাঁর অভিনয় করা। এমন গল্প ও চরিত্রে আগে কখনও করা হয়নি।
এ অভিনেতা ১৯৯৯ সালে এক পর্বের নাটক ‘অতিথি’তে অভিনয়ের মাধ্যমে ছোট পর্দায় কাজ শুরু করেন। ফেরদৌস হাসানের পরিচালনায় এ নাটকের মাধ্যমে অভিষেক হলেও কয়েক বছর পর ২০০৪ সালে নিয়মিত পথচলা শুরু হয় তাঁর। এরপর বিখ্যাত টেলিফিল্ম ‘ক্যারাম’-এ তিশার বিপরীতে অভিনয় করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এখন পর্যন্ত কত নাটকে অভিনয় করছেন, সে সংখ্যা হয়তো তাঁর নিজেরও জানা নেই। কত বহুমাত্রিক চরিত্রে নিজেকে রূপায়ণ করেছেন, এর হিসাবও হয়তো নেই তাঁর কাছে।
সেই অভিনেতা বললেন, ‘ধারাবাহিকটির গল্প ও চরিত্র একেবারে ব্যতিক্রম। সেটা যে ব্যতিক্রম হবে, তা বলাই বাহুল্য। অভিনেতার ভাষ্য, ঘরের শত্রু বিভীষণে মূলত বিভীষণই নায়ক; যে নাটকে বিভীষণকে দেখানো হয় শত্রু হিসেবে। কিন্তু দর্শকরা এই বিভীষণকে নায়ক রূপেই দেখতে পাবেন গল্পে। বেশ আলাদা গল্প, এমন গল্পের চরিত্রে আগে কখনও অভিনয় করা হয়নি।’
ধারাবাহিকটি নিয়ে গল্প শুনতে শুনতেই কথা ছুটে যায় ভিন্ন দিকে। মঞ্চ হয়ে টিভিতে কাজ করার যুগে চলেন যান মোশাররফ করিম। চোখ তাঁর কিছুটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বোঝা যায়, অতীত রোমন্থন করতে করতে নিজেও ফিরে যাচ্ছিলেন অতীতের সেই সময়ে– যে সময়টা স্ট্রাগলের ছিল, ছিল নিজেকে যোগ্য করে তোলার পাঠ। যদিও মোশাররফ করিম সময়টাকে স্ট্রাগল বলতে নারাজ। তাঁর ভাষ্য, সময়টা ছিল আনন্দের। পাঠের। কথায় কথায় জানতে চাওয়া হয়, এই যে এত এত অভিনয় করছেন, ক্লান্ত লাগে না? মোশাররফ করিমের সাফ উত্তর– ‘লাগে। তবুও দিন শেষে আমি এটা উপভোগ করি। অনেকবার ভেবে দেখেছি এটা ছেড়ে দেব এবং অন্য কিছু করব। কিন্তু অন্য কী করব, সেটা ভাবতে গিয়ে আবার ক্লান্ত হয়ে অভিনয়েই ফিরি।’
মোশাররফ করিম অভিনীত ‘বিলডাকিনি’ ও ‘চক্কর’ সিনেমা মুক্তির জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। তবে কবে মুক্তি পাবে তা তিনি জানেন না। অমিতাভ রেজার পরিচালনায় ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’ নামে হইচইয়ের জন্য একটি প্রজেক্টও শুরুর অপেক্ষায়। আরও কত কত নাটকের শুটিং তো বাকিই রয়েছে। তাই অভিনয় নিয়েই তাঁকে রাতদিন একাকার করতে হচ্ছে। এর ফাঁকেও পড়তে ভোলেন না তিনি।
মোশাররফ করিম বললেন, ‘কখনোই প্রচুর পড়াশোনা করিনি। আমি বরাবরই পড়ায় ফাঁকিবাজ। তবে আমার পড়ায় একটু-আধটু আনন্দ হয়। তাই রেগুলার এক পাতা-আধ পাতা পড়ি। এটাকে প্রচুর বলা যাবে না। আর এই পড়াকে বিশেষায়িত করে তোলারও কিছু নেই। একেকজনকে একেক জিনিস আনন্দ দেয়। কেউ গান গেয়ে আনন্দ পায়, কেউ খেলাধুলা করে আনন্দ পায়। আমি হয় তো এক-দুই পাতা পড়ে আনন্দ পাই।’ সূত্র : সমকাল