নিউইয়র্ক ০৭:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

টরন্টো স্টারে বিচারপতি সিনহার আশ্রয় প্রার্থনা উন্মোচিত

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:৪১:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০১৯
  • / ৪৫৫ বার পঠিত

মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে: প্রিন্ট ও অনলাইনে কানাডার সর্বাধিক প্রচারিত অন্যতম জাতীয় দৈনিক টরন্টো স্টার বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার ইতিবৃত্ত তুলে ধরেছে। দ্বিতীয় শীর্ষ সংবাদ হিসেবে রিক মেডোনিকের তোলা ছবিতে গত ২৬ জুলাই তা বিবৃত করেছেন অভিবাসন বিষয়ক পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক নিকোলাস কিয়ং। আর সিনহাকে উদ্ধৃত করে সূচনাভাগেই লিখেছেন যে, ‘অত্যুৎসাহী বিচারক’ হওয়ায় তিনি ২০১৭ সাল থেকে নির্বাসিত।

ওই নির্বাসনের ব্যাখ্যায় সিনহার ভাষ্য হচ্ছে- আমার প্রদানকৃত রায়ে আমলা, প্রশাসন, রাজনীতিক, এমনকী সন্ত্রাসীরা ক্ষুব্ধ হতে থাকে। তাতে নিজেকে ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ হিসেবে দেশের শত্রু বলে প্রতিপন্ন করেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে বিচারক অপসারণে সংসদীয় ক্ষমতা প্রত্যাখান করায় তিনি এই পরিণতিতে পর্যবসিত।
এতে কানাডায় তার রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার প্রেক্ষাপটে সর্বশেষ তিনি দিনাতিপাত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। তার অভিযোগ, সংবিধানে সংশোধনী প্রবর্তনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধ তিনি রাখেননি।
ফলশশ্রুতিতে টরন্টো স্টার তিনিসহ ১০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক সাম্প্রতিক উত্থাপিত ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার সংক্রান্ত অভিযোগটি প্রতিবেদনে স্থান দেয়; তথাপি ওই দুর্নীতি দমন কমিশনকে পত্রিকাটি যোগাযোগ করলে কোনো প্রত্যুত্তর পায়নি বলে জানায়। অথচ কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিজানুর রহমান রাজধানী অটোয়া থেকে ফোনে জানিয়েছেন, ‘তার বাংলাদেশ ত্যাগের পর বলতে পারি, তিনি সরকারের বিরুদ্ধে অসংলগ্ন বক্তব্য রাখছেন। দেশে ফেরার ক্ষেত্রে তার কোনো ঝুঁকি নেই। তিনি কেবলই তার আশ্রয় প্রার্থনার বিষয়কে জোরালো করতে এমন বক্তব্য রাখছেন।’
এরই ধারাবাহিকতায় টরন্টো স্টার সবিস্তর বর্ণনায় তার আশ্রয় প্রার্থনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে। যেখানে তার অভিযোগে বলা হয়েছে যে, ২০১৭ সালের ২ জুলাই একটি আমন্ত্রিত সভায় প্রধানমন্ত্রী তাকে সহজতর উপায়ে বিচারক অপসারণে সংবিধানে সংসদীয় পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিতে বলেন। কিন্তু ওই সভার পর থেকে সিনহার ভাষ্য, বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক হেনস্থার শিকার হন তিনি, যারা তাকে জোরপূর্বক বিচারিক দায়িত্ব থেকে অসুস্থতার ছুটি নিতে বাধ্য ও গৃহবন্দি করে।
সিনহার দাবি, তিনি ও তার স্ত্রী কোনো দর্শণার্থীর সঙ্গে সাক্ষাতের ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে ছিলেন। তাতে সিনহা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ‘ছুটিতে’ দেশত্যাগে রাজি হন, যারা তাকে দ্রুত অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ভিসা যোগাড় করে দেয়; যে দেশটিতে তার দুই কন্যার একজন থাকেন। পরে দেশে ফেরার পথে সিঙ্গাপুরে বিরতি নিলে, গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা তাকে দেশে না ফেরার হুমকি দেয় এবং পদত্যাগে বাধ্য করে। তাতে সিনহা ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া ও নিউজার্সিতে তার ভাইয়ের সঙ্গে বসবাসের আগে ম্যানিটোবায় তার অধ্যায়নরত অপর কন্যাকে দেখার উদ্দেশ্যে কানাডার পথে পাড়ি দেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রার্থনা করেন এবং তা প্রক্রিয়াধীন সময়ে জীবনচরিতভিত্তিক ‘অ্যা ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল’, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ নামের বইটি রচনা করেন, যাতে বিচারক অপসারণে সরকারের বিরুদ্ধে যাওয়ার অভিযোগগুলো উত্থাপিত হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর নাগাদ কানাডায় আশ্রয় গ্রহণের কোনোই ভাবনা ছিল না সিনহার, যতক্ষণ পর্যন্ত না নিউজার্সীতে তার ছোটো ভাইয়ের বাড়ীর ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। একই সঙ্গে নিউইয়র্কের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানরত প্রধানমন্ত্রী হাসিনা তার প্রকাশিত বই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তাতে তিনি সম্প্রতি তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ায় কানাডায় যাওয়ার মনস্থির করে ফেলেন, যাতে সেখানে বসবাসরত মেয়েকে কাছে পান।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

টরন্টো স্টারে বিচারপতি সিনহার আশ্রয় প্রার্থনা উন্মোচিত

প্রকাশের সময় : ১২:৪১:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০১৯

মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে: প্রিন্ট ও অনলাইনে কানাডার সর্বাধিক প্রচারিত অন্যতম জাতীয় দৈনিক টরন্টো স্টার বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার ইতিবৃত্ত তুলে ধরেছে। দ্বিতীয় শীর্ষ সংবাদ হিসেবে রিক মেডোনিকের তোলা ছবিতে গত ২৬ জুলাই তা বিবৃত করেছেন অভিবাসন বিষয়ক পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক নিকোলাস কিয়ং। আর সিনহাকে উদ্ধৃত করে সূচনাভাগেই লিখেছেন যে, ‘অত্যুৎসাহী বিচারক’ হওয়ায় তিনি ২০১৭ সাল থেকে নির্বাসিত।

ওই নির্বাসনের ব্যাখ্যায় সিনহার ভাষ্য হচ্ছে- আমার প্রদানকৃত রায়ে আমলা, প্রশাসন, রাজনীতিক, এমনকী সন্ত্রাসীরা ক্ষুব্ধ হতে থাকে। তাতে নিজেকে ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ হিসেবে দেশের শত্রু বলে প্রতিপন্ন করেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে বিচারক অপসারণে সংসদীয় ক্ষমতা প্রত্যাখান করায় তিনি এই পরিণতিতে পর্যবসিত।
এতে কানাডায় তার রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার প্রেক্ষাপটে সর্বশেষ তিনি দিনাতিপাত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। তার অভিযোগ, সংবিধানে সংশোধনী প্রবর্তনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধ তিনি রাখেননি।
ফলশশ্রুতিতে টরন্টো স্টার তিনিসহ ১০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক সাম্প্রতিক উত্থাপিত ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার সংক্রান্ত অভিযোগটি প্রতিবেদনে স্থান দেয়; তথাপি ওই দুর্নীতি দমন কমিশনকে পত্রিকাটি যোগাযোগ করলে কোনো প্রত্যুত্তর পায়নি বলে জানায়। অথচ কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিজানুর রহমান রাজধানী অটোয়া থেকে ফোনে জানিয়েছেন, ‘তার বাংলাদেশ ত্যাগের পর বলতে পারি, তিনি সরকারের বিরুদ্ধে অসংলগ্ন বক্তব্য রাখছেন। দেশে ফেরার ক্ষেত্রে তার কোনো ঝুঁকি নেই। তিনি কেবলই তার আশ্রয় প্রার্থনার বিষয়কে জোরালো করতে এমন বক্তব্য রাখছেন।’
এরই ধারাবাহিকতায় টরন্টো স্টার সবিস্তর বর্ণনায় তার আশ্রয় প্রার্থনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে। যেখানে তার অভিযোগে বলা হয়েছে যে, ২০১৭ সালের ২ জুলাই একটি আমন্ত্রিত সভায় প্রধানমন্ত্রী তাকে সহজতর উপায়ে বিচারক অপসারণে সংবিধানে সংসদীয় পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিতে বলেন। কিন্তু ওই সভার পর থেকে সিনহার ভাষ্য, বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক হেনস্থার শিকার হন তিনি, যারা তাকে জোরপূর্বক বিচারিক দায়িত্ব থেকে অসুস্থতার ছুটি নিতে বাধ্য ও গৃহবন্দি করে।
সিনহার দাবি, তিনি ও তার স্ত্রী কোনো দর্শণার্থীর সঙ্গে সাক্ষাতের ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে ছিলেন। তাতে সিনহা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ‘ছুটিতে’ দেশত্যাগে রাজি হন, যারা তাকে দ্রুত অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ভিসা যোগাড় করে দেয়; যে দেশটিতে তার দুই কন্যার একজন থাকেন। পরে দেশে ফেরার পথে সিঙ্গাপুরে বিরতি নিলে, গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা তাকে দেশে না ফেরার হুমকি দেয় এবং পদত্যাগে বাধ্য করে। তাতে সিনহা ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া ও নিউজার্সিতে তার ভাইয়ের সঙ্গে বসবাসের আগে ম্যানিটোবায় তার অধ্যায়নরত অপর কন্যাকে দেখার উদ্দেশ্যে কানাডার পথে পাড়ি দেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রার্থনা করেন এবং তা প্রক্রিয়াধীন সময়ে জীবনচরিতভিত্তিক ‘অ্যা ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল’, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ নামের বইটি রচনা করেন, যাতে বিচারক অপসারণে সরকারের বিরুদ্ধে যাওয়ার অভিযোগগুলো উত্থাপিত হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর নাগাদ কানাডায় আশ্রয় গ্রহণের কোনোই ভাবনা ছিল না সিনহার, যতক্ষণ পর্যন্ত না নিউজার্সীতে তার ছোটো ভাইয়ের বাড়ীর ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। একই সঙ্গে নিউইয়র্কের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানরত প্রধানমন্ত্রী হাসিনা তার প্রকাশিত বই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তাতে তিনি সম্প্রতি তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ায় কানাডায় যাওয়ার মনস্থির করে ফেলেন, যাতে সেখানে বসবাসরত মেয়েকে কাছে পান।