ওয়াশিংটনে পিঠা উৎসব : মঞ্চ মাতালেন শিল্পী হৃদয় খান ও সায়েরা
- প্রকাশের সময় : ০৩:৪৬:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জানুয়ারী ২০১৯
- / ৮৮২ বার পঠিত
জাহিদ রহমান, ওয়াশিংটন ডিসিঃ বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী হৃদয় খানের সঙ্গে ওয়াশিংটনে পিঠা উৎসবের মঞ্চ মাতালেন বাউল শিল্পী সায়েরা রেজার। প্রবাসী বাংলাদেশীদের আনন্দোচ্ছল অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হল বৃহত্তর ওয়াশিংটন ডিসি, মেরিল্যান্ড ও ভার্জিনিয়ার জনপ্রিয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামেলীর’ পিঠা উৎসব-২০১৯। গত ১৯ জানুয়ারী, শনিবার ভার্জিনিয়ার লরেলহীল এলিমেন্টারী স্কুল অডিটরিয়ামে হলে সহ¯্রধিক প্রবাসীদের উপচেপড়া ভিড়ের মধ্যে দিয়ে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। হলের বাইরে আবার দেড়শর মত গাড়ী প্রবেশ করতে না পেরে ফিরে যায়।
বিকাল পাঁচটায় অনুষ্ঠানের উপস্থাপক শতরূপা বড়ুয়া ও শিব্বীর আহমেদের উপস্থাপনার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় পিঠা উৎসবের আয়োজন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শিল্পী রাতিব রহমান বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
দলীয় সঙ্গীতের পরপরই শুরু হয় একক সঙ্গীত পরিবেশনা। এই পর্বে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন বৃহত্তর ওয়াশিংটনের জনপ্রিয় শিল্পী উৎপল বড়ুয়া, ক্লেমন্ট গোমেজ, রুমানা চৌধুরী সুমি, কালাচাঁদ সরকার ও ড. সীমা খান। নৃত্য পরিবেশনায় একক নৃত্য পরিবেশন করেন রোকেয়া হাসি। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত শিল্পীদের মধ্যে নাজিয়া লীনা ও কামারুজ্জামান বকুল গান পরিবেশন করেন। এরপর মঞ্চ মাতান বাংলাদেশের জনপ্রিয় বাউলশিল্পী সায়েরা রেজা ও বর্তমান প্রজন্মের হাটথ্রব সঙ্গীত শিল্পী হৃদয় খান। সায়েরা রেজা ও হৃদয় খান পরপর প্রায় পৌনে দুইঘন্টা ধরে তাদের জনপ্রিয় গানগুলো পরিবেশন করে দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন। মধ্যরাত পর্যন্ত ওয়াশিংটন প্রবাসী বাংলাদেশীরা নেচে-গেয়ে আনন্দ উদ্দীপনায় মেতে থাকেন।
অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কের জনপ্রিয় মাটি ব্যান্ড অংশগ্রহণ করেন। মাটি ব্যান্ডের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন: কি-বোর্ডে পার্থ, লীড গিটারে জোহান, বেইজ কেডি এবং ড্রামে ছিলেন রিচার্ড।
শিল্পী হৃদয় খানের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা শেষে রাত প্রায় বারোটায় অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক আকতার হোসেন তার সমাপনী বক্তব্যে ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামেলী আয়োজিত পিঠা উৎসবকে সফল করবার জন্য যারা স্পন্সর ও সহযোগীতা করেছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
এর আগে শেখ মাওলা মিলনের পরিচালনায় শুরু হয় পিঠা প্রতিযোগীতার বিচারকার্য। এই পর্বে বিচারক হিসাবে অংশগ্রহন করেন ওয়াহিদ হোসাইনী, শামীম চৌধুরী, মাসুদ আহমেদ ও নাসিমা খান পপি। অনুষ্ঠানে রকমারি পিঠাঘর, ঝালটক মিষ্টি পিঠাঘর, লীজবার্গ পিঠাঘর, সাতক্ষীরা পিঠাঘর, সখী পিঠাঘর, নোয়াখালী পিঠাঘর, নিলাচল পিঠাঘর, ঢাকা পিঠাঘর, রংধনু পিঠাঘর সহ মোট দশটি পিঠা ষ্টল অংশগ্রহন করে। পিঠা উৎসবের বিভিন্ন ষ্টলে ষ্টলে ষ্টলে শোভা পাচ্ছিল শাড়ি, চুড়ি, নানা গহনা, ফতুয়া, পায়জামা, পাঞ্জাবি, সালোয়ার কামিজ সহ নানা খেলনা। পিঠার ষ্টলগুলোতে ছিল বাংলার ঐতহ্যিবাহী নানা প্রকারের নানা স্বাধের পিঠার সমাহার। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা প্রথমস্থান অধিকার করে জিতে নেয় স্বর্নের চেইন, দ্বিতীয় হয়ে আইপ্যাড এবং তৃতীয় হয়ে ল্যাপটপ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ওয়াশিংটন বিসিসিডিআই বাংলা স্কুলের কর্মকর্তা ও অভিভাবকবৃন্দ সুস্বাধু বিরিয়ানী সহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীর ষ্টল নিয়ে অংশগ্রহন করেন। অনুষ্ঠানে দশটি পিঠা ষ্টল সহ প্রায় ৪০টি ষ্টলের পশরা বসে। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ষ্টলগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভীড় ছিল লক্ষনীয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ফেয়াফ্যাক্স কাউন্টির কমনওয়েলথ অ্যাটার্নি জেনারেল রেমোরহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডেমোক্রেট দলীয় নেতা ড্যান হেলমার, হিউম্যান রাইটস অ্যাটার্নি ও ডেমোক্রেট নেতা ইয়াসমিন তায়েব, সাপ্তাহিক বর্ণমালা’র প্রধান সম্পাদক মাহফুজ আহমেদ, ফোবানা এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি জাকারিয়া চৌধুরী, ফোবানা-২০১৯ সম্মেলনের সদস্য সচিব আবীর আলমগীর।
অনুষ্ঠানে অতিথিদের শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর প্রধান অতিথি রে মোরহ লালফিতা কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষনা করেন। এ সময় আয়োজক এবং আয়োজক সহযোগী আকতার হোসাইন, বোরহান আহমেদ, রেদওয়ান চৌধুরী, আরিফুর রহমান স্বপন, মনির হোসাইন ও শেখ মাওলা মিলন সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অতিথিদের কাছ থেকে ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামেলী অ্যাওয়ার্ড গ্রহন করে একাত্তর ফাউন্ডেশন-এর কবির পাটোয়ারী ও পারভীন পাটোয়ারী, প্যানঅ্যাম গ্রুপ-এর জিআই রাসেল ও জেবা বানু, গোলাম মোস্তফা ও রোখসানা পারভীন, পিপল এন টেকের ফারহানা হানিপ, ডাটা গ্রুপের জাকির হোসাইন ও ভার্জিনিয়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মগবুল হোসাইন। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ সহযোগীতার জন্য অ্যাওয়ার্ড গ্রহন করেন রেদওয়ান চৌধুরী ও উৎপল সাহা।
অনুষ্ঠানে উত্তর আমেরিকার দুটি সংঠনকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। ফোবানার পক্ষ থেকে অ্যাওয়ার্ড গ্রহন করেন জাকারিয়া চৌধুরী। ফোবানা সম্মেলন-২০১৯ এর স্বাগতিক সংগঠন ড্রামা সার্কেলের পক্ষে অ্যাওয়ার্ড গ্রহন করেন আবীর আলমগীর।
পিঠা উৎসবের সর্বশেষে আকতার হোসাইন আগামী ১৩ এপ্রিল শনিবার ওয়াশিংটনে বৈশাখী মেলা উদযাপনের ঘোষনা দিয়ে পিঠা উৎসবের সফল সমাপ্তি ঘোষনা করেন।