নিউইয়র্ক ০৫:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

‘আমেরিকান নাগরিক’ দাবি করে পাসপোর্টের আবেদন : বাংলাদেশী গ্রেফতার

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:০৮:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুন ২০১৯
  • / ৪৮৭ বার পঠিত
আবু নাসের হোসেন। ছবি সংগ্রহ
লাবলু আনসার: শিক্ষার্থীর ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসা চাঁদপুরের সন্তান আবু নাসের হোসেন নিজেকে আমেরিকান নাগরিক হিসেবে দাবি করে পাসপোর্টের আবেদন করেছিলেন। এমন প্রতারণার অভিযোগে গত মে মাসে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিউইয়র্কের বাফেলো ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির পর ২০০১ সাল পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। ২০০৭ সালের জানুয়ারীতে আবু নাসের ডিসিতে ১৩২৫ জি স্ট্রিট, নর্থ-ওয়েস্ট # ৫০০ ঠিকানায় ‘প্রফাউন্ড র‌্যাডিয়েন্স ইনক’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। ট্যাক্স এ্যান্ড একাউন্টিং সার্ভিসের এই প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন। ভিসা সংগ্রহের সময় প্রদত্ত বাংলাদেশী পাসপোর্ট নম্বর ছিল এল০৭৯৪***। ২০১০ সালের ২৩ নভেম্বর ওয়াশিংটন ডিসি থেকে তিনি একটি পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন। সে সময় জমাকৃত আবেদনে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন বলে উল্লেখ করেন।
একই বছরের ২৮ এপ্রিল তিনি উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী হিসেবে আই-৫২৬ ফরমে আবেদন করেন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টে। সেখানেও নিজেকে বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী হিসেবে উল্লেখ করেন। সেখানে আবু নাসের বিবৃত করেন যে, ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর ২০০৩ সালের মে মাসে ইউনিভার্সিটি ত্যাগ করেন। এরপর একটি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। তার জন্য ওই কোম্পানি দু’বার তার জন্যে ‘পারমানেন্ট লেবার সার্টিফিকেশন’র আবেদন করে। কিন্তু দু’বারই তা নাকচ হয়। এরপরই তিনি নিজেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট তার আই-৫২৬ আবেদনও অগ্রাহ্য করেছে।
ফেডারেল কোর্টে দায়েরকৃত মামলায় নাসেরের প্রসঙ্গে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০১২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যাবার অনুমতি চেয়েছিলেন আই-১৩১ ফরম পূরণের মাধ্যমে। এই ট্র্যাভেল ডক্যুমেন্ট চাওয়ার সময়ে নিজেকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করেন। পরের মাসে বিদেশ সফরের পর পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার আগ্রহ দেখান। সে আবেদনও নাকচ হয়।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর আবু নাসের হোসেন ডিসিতে ইউএস পাসপোর্টের জন্যে আবেদন করেন। সে সময় তিনি নিজেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে জন্মগ্রহণকারী নাগরিক হিসেবে দাবি করেন। এর প্রায় দু’বছর পর আবু নাসের ডিসি অথরিটির কাছে বিবৃতি দেন যে, তিনি সেখানকার জন্মগত নাগরিক। ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর পুনরায় একই দাবি করেন তিনি। ২০১৭ সালের ১২ জুনেও আবু নাসের একই তথ্যের দিয়েছেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারিসহ ফেডারেল গোয়েন্দাদের কাছে।
গোয়েন্দারা তার কাছে নিশ্চিত হতে চান যে, এর আগে স্টুডেন্ট ভিসা ও ট্যুরিস্ট ভিসার জন্যে ঢাকায় আমেরিকান দূতাবাসে কয়েকবার আবেদন, এক পর্যায়ে স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসা এবং ডিসি থেকে আইডি লাভ করতে বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে তথ্য-প্রমাণ জমা দেয়ার পরও কীভাবে নিজেকে জন্মগত আমেরিকান হিসেবে দাবি করছেন। আবু নাসের নিজের এ তথ্য স্বীকার করেননি। তার মা কখনই যুক্তরাষ্ট্রে না থাকা সত্বেও তাকে সশরীরে উপস্থিতি দেখিয়ে নোটারি পাবলিকের স্বাক্ষর নিয়ে তা পাসপোর্ট দফতরে সাবমিটের ঘটনাও ঘটিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমানে আবু নাসেরের জামিনের চেষ্টা চলছে। তবে অভিবাসনের মর্যাদা না থাকায় ফেডারেল কোর্ট থেকে জামিন লাভের পর আইস (ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) তাকে ডিটেনশন সেন্টারে নিতে পারে বলে ইমিগ্রেশন এটর্নিরা মনে করছেন।
আবু নাসেরকে কোর্টে হাজির করার পর বাংলাদেশ থেকে স্কাইপে তার ভাই সাক্ষী দিয়েছেন যে তার মা-বাবা ১৯৭৫ সালে ভারত হয়ে জাহাজে করে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। ৩ বছর বসবাস করেছেন তারা। সে সময়েই আবু নাসেরের জন্ম হয়। তবে কোন হাসপাতাল অথবা ক্লিনিকে নয়, ধাত্রীর কাছে। এরপর তারা অনিশ্চিত জীবন ছেড়ে নবজাতক সন্তানসহ আবার জাহাজে করে অবৈধ পথেই বাংলাদেশে ফিরেছেন। সে দাবি আদায়ের জন্যেই স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন আবু নাসের। আদালতে উপস্থিত তার শ্বশুরও একই ধরনের সাক্ষ্য দেন। সামনের মাসে এ মামলার পরবর্তী শুনানি বলে জানা গেছে। সে পর্যন্ত তাকে কারাগারেই কাটাতে হবে।
আবু নাসেরের বিরুদ্ধে ডিসি ফেডারেল কোর্টে চলমান ক্রিমিনাল মামলার নম্বর-১৯-সিআর-০০১৪২। এ বিষয়ে আবু নাসেরের আইনজীবী ও তার স্বজনের বক্তব্য জানতে চেয়েও পাওয়া হয়নি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

‘আমেরিকান নাগরিক’ দাবি করে পাসপোর্টের আবেদন : বাংলাদেশী গ্রেফতার

প্রকাশের সময় : ০৪:০৮:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুন ২০১৯
আবু নাসের হোসেন। ছবি সংগ্রহ
লাবলু আনসার: শিক্ষার্থীর ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসা চাঁদপুরের সন্তান আবু নাসের হোসেন নিজেকে আমেরিকান নাগরিক হিসেবে দাবি করে পাসপোর্টের আবেদন করেছিলেন। এমন প্রতারণার অভিযোগে গত মে মাসে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিউইয়র্কের বাফেলো ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির পর ২০০১ সাল পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। ২০০৭ সালের জানুয়ারীতে আবু নাসের ডিসিতে ১৩২৫ জি স্ট্রিট, নর্থ-ওয়েস্ট # ৫০০ ঠিকানায় ‘প্রফাউন্ড র‌্যাডিয়েন্স ইনক’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। ট্যাক্স এ্যান্ড একাউন্টিং সার্ভিসের এই প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন। ভিসা সংগ্রহের সময় প্রদত্ত বাংলাদেশী পাসপোর্ট নম্বর ছিল এল০৭৯৪***। ২০১০ সালের ২৩ নভেম্বর ওয়াশিংটন ডিসি থেকে তিনি একটি পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন। সে সময় জমাকৃত আবেদনে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন বলে উল্লেখ করেন।
একই বছরের ২৮ এপ্রিল তিনি উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী হিসেবে আই-৫২৬ ফরমে আবেদন করেন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টে। সেখানেও নিজেকে বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী হিসেবে উল্লেখ করেন। সেখানে আবু নাসের বিবৃত করেন যে, ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর ২০০৩ সালের মে মাসে ইউনিভার্সিটি ত্যাগ করেন। এরপর একটি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। তার জন্য ওই কোম্পানি দু’বার তার জন্যে ‘পারমানেন্ট লেবার সার্টিফিকেশন’র আবেদন করে। কিন্তু দু’বারই তা নাকচ হয়। এরপরই তিনি নিজেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট তার আই-৫২৬ আবেদনও অগ্রাহ্য করেছে।
ফেডারেল কোর্টে দায়েরকৃত মামলায় নাসেরের প্রসঙ্গে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০১২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যাবার অনুমতি চেয়েছিলেন আই-১৩১ ফরম পূরণের মাধ্যমে। এই ট্র্যাভেল ডক্যুমেন্ট চাওয়ার সময়ে নিজেকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করেন। পরের মাসে বিদেশ সফরের পর পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার আগ্রহ দেখান। সে আবেদনও নাকচ হয়।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর আবু নাসের হোসেন ডিসিতে ইউএস পাসপোর্টের জন্যে আবেদন করেন। সে সময় তিনি নিজেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে জন্মগ্রহণকারী নাগরিক হিসেবে দাবি করেন। এর প্রায় দু’বছর পর আবু নাসের ডিসি অথরিটির কাছে বিবৃতি দেন যে, তিনি সেখানকার জন্মগত নাগরিক। ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর পুনরায় একই দাবি করেন তিনি। ২০১৭ সালের ১২ জুনেও আবু নাসের একই তথ্যের দিয়েছেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারিসহ ফেডারেল গোয়েন্দাদের কাছে।
গোয়েন্দারা তার কাছে নিশ্চিত হতে চান যে, এর আগে স্টুডেন্ট ভিসা ও ট্যুরিস্ট ভিসার জন্যে ঢাকায় আমেরিকান দূতাবাসে কয়েকবার আবেদন, এক পর্যায়ে স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসা এবং ডিসি থেকে আইডি লাভ করতে বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে তথ্য-প্রমাণ জমা দেয়ার পরও কীভাবে নিজেকে জন্মগত আমেরিকান হিসেবে দাবি করছেন। আবু নাসের নিজের এ তথ্য স্বীকার করেননি। তার মা কখনই যুক্তরাষ্ট্রে না থাকা সত্বেও তাকে সশরীরে উপস্থিতি দেখিয়ে নোটারি পাবলিকের স্বাক্ষর নিয়ে তা পাসপোর্ট দফতরে সাবমিটের ঘটনাও ঘটিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমানে আবু নাসেরের জামিনের চেষ্টা চলছে। তবে অভিবাসনের মর্যাদা না থাকায় ফেডারেল কোর্ট থেকে জামিন লাভের পর আইস (ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) তাকে ডিটেনশন সেন্টারে নিতে পারে বলে ইমিগ্রেশন এটর্নিরা মনে করছেন।
আবু নাসেরকে কোর্টে হাজির করার পর বাংলাদেশ থেকে স্কাইপে তার ভাই সাক্ষী দিয়েছেন যে তার মা-বাবা ১৯৭৫ সালে ভারত হয়ে জাহাজে করে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। ৩ বছর বসবাস করেছেন তারা। সে সময়েই আবু নাসেরের জন্ম হয়। তবে কোন হাসপাতাল অথবা ক্লিনিকে নয়, ধাত্রীর কাছে। এরপর তারা অনিশ্চিত জীবন ছেড়ে নবজাতক সন্তানসহ আবার জাহাজে করে অবৈধ পথেই বাংলাদেশে ফিরেছেন। সে দাবি আদায়ের জন্যেই স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন আবু নাসের। আদালতে উপস্থিত তার শ্বশুরও একই ধরনের সাক্ষ্য দেন। সামনের মাসে এ মামলার পরবর্তী শুনানি বলে জানা গেছে। সে পর্যন্ত তাকে কারাগারেই কাটাতে হবে।
আবু নাসেরের বিরুদ্ধে ডিসি ফেডারেল কোর্টে চলমান ক্রিমিনাল মামলার নম্বর-১৯-সিআর-০০১৪২। এ বিষয়ে আবু নাসেরের আইনজীবী ও তার স্বজনের বক্তব্য জানতে চেয়েও পাওয়া হয়নি।