এআই যেভাবে আমাদের চারপাশের জগত বদলে দিচ্ছে
- প্রকাশের সময় : ০৫:৩৬:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৭৮ বার পঠিত
এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ধীরে ধীরে আমাদের জীবনযাত্রার অংশ হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক কালে একাধিক পরিষেবা মানুষের অনেক কাজ সহজ করে তুলেছে। অন্যদিকে সেই প্রযুক্তির অপব্যবহারের দৃষ্টান্তেরও অভাব নেই।
২০২৩ সালে এআই বড় আকারে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রবেশ করেছে। চ্যাটজিপিটিথেকে শুরু করে মিডজার্নির মতো অনেক প্রয়োজনীয় অ্যাপ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ভুয়া খবর ও নিয়ন্ত্রণের অভাব সম্পর্কে ভয়ভীতিও বেড়ে চলেছে। ২০২৩ সালে এআই-এর ক্ষেত্রে উত্থানপতনের দিকে একবার নজর দেওয়া যাক। ড্যাল-ই ও মিডজার্নির মতো ছবি সৃষ্টির পরিষেবার কল্যাণে ২০২২ সালের শেষের দিকেই এআই-কে ঘিরে উত্তেজনা শুরু হয়েছিলো। আচমকা শুধু বর্ণনার মাধ্যমেই যে কোনো ছবি সৃষ্টির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল।
২০২৩ সালে এআই-এর মাধ্যমে সৃষ্টি করা ছবি দিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়েছে। এমনকি এক প্রতিযোগিতায় বিচারকমণ্ডলী না বুঝেই এমন এক ছবিকে পুরস্কৃত করেছেন। সেলফি ছবিকে চাকুরির আবেদনের সিভির উপযুক্ত করে তুলতে ‘রেমিনি’-র মতো এআই পোর্ট্রেট অ্যাপ ভাইরাল হয়েছে। তবে লিঙ্গ বৈষম্য ও ইউরোপ-কেন্দ্রিক ছবি সৃষ্টির কারণে এমন সব অ্যাপ বিতর্কও সৃষ্টি করেছে।
যেমন লেন্সা নামের অ্যাপ মহাকাশচারী, রক তারকা বা সুপারহিরো হিসেবে যে কোনো মানুষের পোর্ট্রেট ছবি সৃষ্টি করতে পারে। তবে ডিডাব্লিউ সহকর্মী রজার ও আদ্রিয়ানার উপর পরীক্ষা চালিয়ে একেবারে ভিন্ন ফল পাওয়া গেল। রজার নিজের একাধিক পুরুষালি সংস্করণ পেলেও কলম্বিয়া থেকে আসা আদ্রিয়ানার ছবিতে ত্বকের রং অনেক বেশি ফরসা দেখাচ্ছে। তার চোখের রং নীল এবং অনেক ছবিতে তাকে স্বল্প পোশাকে দেখা যাচ্ছে। অথচ সে যে সব সেলফি আপলোড করেছিল, তাতে তার পোশাক মোটেই সে রকম ছিল না।
এছাড়া ‘ডিপফেক ইমেজ’ বা ভুয়া ছবির কারণে এআই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। ডনাল্ড ট্রাম্পকে পুলিশ গ্রেফতার করছে, এমন ডিপফেক ছবির কথা মনে আছে? এমন ছবি ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের আবেগ নিয়ে খেলে রাজনৈতিক শিবিরে আলোড়ন তোলা যায়। তাছাড়া অনেক শিল্পীও এমন ইমেজ জেনারেটর নিয়ে খুশি নন। তাঁরা নিজেদের সৃষ্টিকর্ম অনলাইনে দেওয়ার পর তাদের সম্মতি ছাড়াই এআই মডেল ট্রেনিংয়ের কাজে সেগুলি ব্যবহার করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত এআই ইমেজের কপিরাইট সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।
২০২২ সালের নভেম্বর মাসে চ্যাটজিপিটি প্রকাশ করা হয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে এই পরিষেবার ব্যবহারকারীদের সংখ্যা দশ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। কিছু সময়ের জন্য কনজিউমার অ্যাপ হিসেবে সেটি সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধির রেকর্ড দখল করেছিল। মাইক্রোসফট চ্যাটজিপিটি সৃষ্টিকারী ওপেনএআই কোম্পানিতে বিশাল বিনিয়োগ করেছে। বিং নামের নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিনের সঙ্গে সেই চ্যাটবট জুড়ে এই কোম্পানি বিং চ্যাট সৃষ্টি করে।
বর্তমানে অনেক মানুষ ইমেল, কোডিং ও গবেষণার জন্য নিয়মিত বিং এবং অন্যন্য চ্যাটবট ব্যবহার করেন। ব্রাজিলে এমনকি চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে লেখা একটি আইনও কার্যকর করা হয়েছে। কিন্তু কখনো ভুল উত্তরের কারণে এআই চ্যাটবটগুলির সমালোচনা করা হয়েছে। সেই অবস্থাকে ‘হ্যালুসিনেশন’ মা মতিভ্রম বলা হয়। এভাবে এমন পরিষেবা কার্যত ‘ফেক নিউজ’ বা ভুয়া খবর ছড়িয়ে দেয়। তাছাড়া অনেক মানুষ এআই মডেলে নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য ভরার বিষয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ফলে ইটালিতে কিছু সময়ের জন্য চ্যাটজিপিটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
২০২৩ সালে আরেকটি ‘গেম চেঞ্জার’ এসেছে। কৃত্রিম অডিও, কণ্ঠের নকল ও সৃজনশীল ভাবনার ফসল হিসেবে কিছু মজাদার ভিডিও আমাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। তাছাড়া স্পটিফাইয়ের ‘ভয়েস ক্লোনিং’-এর মতো টুল পডকাস্টারদের ক্ষমতা বাড়াতে চায়। বিভিন্ন ভাষায় তাদের কণ্ঠের নকল করে পডকাস্টাররা এমন মানুষের নাগাল পাচ্ছেন, যাদের কাছে অন্যভাবে পৌঁছানো সম্ভব হতো না।
কিন্তু কণ্ঠ ক্লোন করার প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিপফেকও সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন ড্রেক ও দ্য উইকেন্ড নামের গায়কদের কণ্ঠ নকল করে ‘হার্ট অন মাই স্লিভস’ নামের গান সৃষ্টি করা হয়েছে। তাঁদের রেকর্ড কোম্পানি ‘ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপ’ সে বিষয়ে মোটেই খুশি হয় নি। কপিরাইট লঙ্ঘনের দায়ে মামলার জের ধরে শেষ পর্যন্ত সেই ট্র্যাক সরিয়ে নিতে হয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক নেতাদের ভুয়া এআই অডিও ব্যবহার করে বিশ্বজুড়ে নির্বাচনি প্রচার চালানো হচ্ছে। সূত্র: ডয়চে ভেলে। মৃমৃ।সূত্র:ইনকিলাব