নিউইয়র্ক ০১:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ব্যস্ত সময় অতিবাহিত

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:৩৮:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  • / ৯৬৬ বার পঠিত

সালাহউদ্দিন আহমেদ: জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক পৌছার পর থেকেই ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। প্রধানমন্ত্রী গত ২৩ সেপ্টেম্বর রোববার তিনি যুক্তরাজ্য (লন্ডন) থেকে নিউজার্সী হয়ে নিউইয়র্কে পৌছার পর ম্যানহাটানের বিলাসবহুল হোটেল গ্র্যান্ড হায়াত-এ উঠেছেন। ছোট বোন শেখ রেহানা ও পুত্র (প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা) সজীব ওয়াজেদ জয় সহ তাঁর সফর সঙ্গী প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই এলাহী, অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম এমপি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মহিউদ্দিন সহ দেড় শতাধিক প্রতিনিধিদলও উঠেছেন এই হোটেলে। এদের মধ্যে এমপি, আমলা, ব্যবসায়ী, সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, অভিনেতা সব বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি রয়েছেন। হোটেলটি প্রধানমন্ত্রীর ‘আবাসস্থল’ হিসেবে গণ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌছলেন ভিআইপি লাউঞ্চে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে আসার দিন থেকেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। নিউজার্সীর লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সড়ক পথে তিনি সরাসরি নিউইয়র্ক সিটিতে আসেন এবং জাতিসংঘ ভবনের অদূরেই গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে উঠেন। হেটেলে বিশ্রাম নিয়ে নিউইয়র্ক সফরের প্রথম দিনই তিনি রোববার সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির হোটেল হিলটনের বলরেুমে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর নিউইয়র্ক সফরের দ্বিতীয় দিন সোমবারও খুব সকাল থেকেই নিউইয়র্কে ব্যস্ত সময় কাটান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভ্যর্থনাসহ জাতিসংঘের ৬টি গুরুত্বপূণ কর্মসূচিতে যোগ দেন বলে জানা গেছে। এসব কর্মসূচিতে উপস্থিত বিশ্বনেতাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয়দানের ঘটনায় বিশ্বনেতারা শেখ হাসিনার মহানুভবতার ব্যাপক প্রশংসা করেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় সময় সোমবার সকালে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী মিশন অয়োজিত ‘গ্লোবাল কল টু অ্যাকশন অন ওয়ার্ল্ড ড্রাগ প্রবলেম’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের সভাপতিত্বে ‘গ্লোবাল কম্প্যাক্ট অন রিফ্যুজেস : এ মডেল ফর গ্রেটার সলিডারিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে যোগ দেন। জাতিসংঘের সদর দপ্তরের ‘ইসিওএসওসি চেম্পারে’ এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে তিন দফা সুপারিশ তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা উল্লেখ করেন, যা বিশ্বনেতাদের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয় এবং বিশ্বনেতৃবন্দ ব্যাপক করতালির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন জানান।
পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ১১টার দিকে নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটি’র সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। জাতিসংঘের সদর দপ্তরের বিলাটেরাল মিটিং বুথে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
দুপুরে প্রধানমন্ত্রী ইউএস চেম্বার অফ কমার্স আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজ ও গোলটেবিল বৈঠকে অংশ গ্রহণ করেন। স্থানীয় গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার অপরাহ্নে প্রাধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সদর দপ্তরের জেনারেল অ্যাসেম্বলী হলে অনুষ্ঠিত ‘নেলসন ম্যান্ডেলা শান্তি সম্মেলন’-এ ভাষণ দেন। সম্মেলনে তিনি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ সময় তিনি আফ্রিকার মহান নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে স্মরণ করে বলেন, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘বিশ্বশান্তি’ প্রতিষ্ঠার আদর্শ অনুস্মরণের কথা জানান।
এরপর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দপ্তরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইনভেস্টমেন্ট ফর এডুকেশন অব উইমেন অ্যান্ড গার্ল’ শীর্ষক এক আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের সদর দপ্তরের কনফারেন্স রুমে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এই আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান এবকং সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে তিনটি প্রস্তাব দেন।
এছাড়াও সোমবার রাতে জাতিসংঘের জাতিসংঘের সদর দপ্তরের কনফারেন্স রুমে বিশ্ব শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূত আয়োজিত শিক্ষা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের অপর আলোচনা সভায় যোগ দেন।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শেষ কর্মসূচী ছিলো বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সম্মানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রদত্ত অভ্যর্থনায় যোগ দেন। নিউইয়র্কের অভিজাত প্যালেস হোটেলে এই অভ্যর্থনার আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বৃটিশ পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ বিষয়ক মন্ত্রী জেরেমি হান্ট সোমবার নিউইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাতেও রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি গুরুত্ব পায় বলে সরকারী সূত্রে জানায়। এসময় বৃটিশ মন্ত্রী রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকারের মানবিক ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন রোহিঙ্গাদের নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান বিষয়ে কথা বলেন।
অপরদিকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের সূত্র জানায়, অন্যবারের চেয়ে এ বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়টি এবারের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম মূল আলোচ্য বিষয়। যদিও বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা যে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন তার প্রশংসা করে বাংলাদেশকে সবরকম সহায়তার আশ্বাস দিচ্ছেন বলে সূত্র জানায়।
সূত্র জানায়, ২৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ দেয়ার কথা। বরাবরের মতো তিনি এবারও বাংলায় ভাষণ দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান এবং রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে দিতে বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা ছাড়াও তার সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতির সাফল্য স্থান পাবে। উল্লেখ্য, গত বছর জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশনেও প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকটের কথা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তুলে এবং এব্যাপাারে বিশ্বনেতাদের সহযোগিতা কামনা করেছিলেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ব্যস্ত সময় অতিবাহিত

প্রকাশের সময় : ১০:৩৮:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সালাহউদ্দিন আহমেদ: জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক পৌছার পর থেকেই ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। প্রধানমন্ত্রী গত ২৩ সেপ্টেম্বর রোববার তিনি যুক্তরাজ্য (লন্ডন) থেকে নিউজার্সী হয়ে নিউইয়র্কে পৌছার পর ম্যানহাটানের বিলাসবহুল হোটেল গ্র্যান্ড হায়াত-এ উঠেছেন। ছোট বোন শেখ রেহানা ও পুত্র (প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা) সজীব ওয়াজেদ জয় সহ তাঁর সফর সঙ্গী প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই এলাহী, অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম এমপি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মহিউদ্দিন সহ দেড় শতাধিক প্রতিনিধিদলও উঠেছেন এই হোটেলে। এদের মধ্যে এমপি, আমলা, ব্যবসায়ী, সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, অভিনেতা সব বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি রয়েছেন। হোটেলটি প্রধানমন্ত্রীর ‘আবাসস্থল’ হিসেবে গণ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌছলেন ভিআইপি লাউঞ্চে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে আসার দিন থেকেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। নিউজার্সীর লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সড়ক পথে তিনি সরাসরি নিউইয়র্ক সিটিতে আসেন এবং জাতিসংঘ ভবনের অদূরেই গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে উঠেন। হেটেলে বিশ্রাম নিয়ে নিউইয়র্ক সফরের প্রথম দিনই তিনি রোববার সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির হোটেল হিলটনের বলরেুমে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর নিউইয়র্ক সফরের দ্বিতীয় দিন সোমবারও খুব সকাল থেকেই নিউইয়র্কে ব্যস্ত সময় কাটান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভ্যর্থনাসহ জাতিসংঘের ৬টি গুরুত্বপূণ কর্মসূচিতে যোগ দেন বলে জানা গেছে। এসব কর্মসূচিতে উপস্থিত বিশ্বনেতাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয়দানের ঘটনায় বিশ্বনেতারা শেখ হাসিনার মহানুভবতার ব্যাপক প্রশংসা করেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় সময় সোমবার সকালে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী মিশন অয়োজিত ‘গ্লোবাল কল টু অ্যাকশন অন ওয়ার্ল্ড ড্রাগ প্রবলেম’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের সভাপতিত্বে ‘গ্লোবাল কম্প্যাক্ট অন রিফ্যুজেস : এ মডেল ফর গ্রেটার সলিডারিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে যোগ দেন। জাতিসংঘের সদর দপ্তরের ‘ইসিওএসওসি চেম্পারে’ এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে তিন দফা সুপারিশ তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা উল্লেখ করেন, যা বিশ্বনেতাদের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয় এবং বিশ্বনেতৃবন্দ ব্যাপক করতালির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন জানান।
পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ১১টার দিকে নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটি’র সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। জাতিসংঘের সদর দপ্তরের বিলাটেরাল মিটিং বুথে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
দুপুরে প্রধানমন্ত্রী ইউএস চেম্বার অফ কমার্স আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজ ও গোলটেবিল বৈঠকে অংশ গ্রহণ করেন। স্থানীয় গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার অপরাহ্নে প্রাধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সদর দপ্তরের জেনারেল অ্যাসেম্বলী হলে অনুষ্ঠিত ‘নেলসন ম্যান্ডেলা শান্তি সম্মেলন’-এ ভাষণ দেন। সম্মেলনে তিনি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ সময় তিনি আফ্রিকার মহান নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে স্মরণ করে বলেন, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘বিশ্বশান্তি’ প্রতিষ্ঠার আদর্শ অনুস্মরণের কথা জানান।
এরপর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দপ্তরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইনভেস্টমেন্ট ফর এডুকেশন অব উইমেন অ্যান্ড গার্ল’ শীর্ষক এক আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের সদর দপ্তরের কনফারেন্স রুমে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এই আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান এবকং সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে তিনটি প্রস্তাব দেন।
এছাড়াও সোমবার রাতে জাতিসংঘের জাতিসংঘের সদর দপ্তরের কনফারেন্স রুমে বিশ্ব শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূত আয়োজিত শিক্ষা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের অপর আলোচনা সভায় যোগ দেন।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শেষ কর্মসূচী ছিলো বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সম্মানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রদত্ত অভ্যর্থনায় যোগ দেন। নিউইয়র্কের অভিজাত প্যালেস হোটেলে এই অভ্যর্থনার আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বৃটিশ পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ বিষয়ক মন্ত্রী জেরেমি হান্ট সোমবার নিউইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাতেও রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি গুরুত্ব পায় বলে সরকারী সূত্রে জানায়। এসময় বৃটিশ মন্ত্রী রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকারের মানবিক ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন রোহিঙ্গাদের নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান বিষয়ে কথা বলেন।
অপরদিকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের সূত্র জানায়, অন্যবারের চেয়ে এ বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়টি এবারের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম মূল আলোচ্য বিষয়। যদিও বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা যে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন তার প্রশংসা করে বাংলাদেশকে সবরকম সহায়তার আশ্বাস দিচ্ছেন বলে সূত্র জানায়।
সূত্র জানায়, ২৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ দেয়ার কথা। বরাবরের মতো তিনি এবারও বাংলায় ভাষণ দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান এবং রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে দিতে বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা ছাড়াও তার সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতির সাফল্য স্থান পাবে। উল্লেখ্য, গত বছর জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশনেও প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকটের কথা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তুলে এবং এব্যাপাারে বিশ্বনেতাদের সহযোগিতা কামনা করেছিলেন।