বাংলাদেশ কনস্যুলেটের পর এবার জাতিসংঘে কর্মরত বাংলাদেশী কূটনীতিক গ্রেফতার
- প্রকাশের সময় : ১১:৪৩:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুন ২০১৭
- / ১২০৫ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: গৃহকর্মীর নানা অভিযোগে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের ভাইস কনসাল শাহেদুল ইসলাম আটকের পর এবার প্রায় একই অভিযোগে জাতিসংঘে কর্মরত একজন বাংলাদেশী কূটনীতিককে গ্রেফতার হয়েছেন। জাতিসংঘের ইউএনডিপির কর্মকর্তা হামিদুর রশীদকে মঙ্গলবার (২০ জুন) গ্রেফতারের পর তাকে আদালতে নেয়ার পর এবং দীর্ঘ শুনানি শেষে তিনি জামিন পেয়েছেন।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস-এর ওয়েব সাইটে দেয়া তথ্যে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়াা গৃহকর্মীর সাথে ভিসা জালিয়াতি, কর্মী নিয়োগ চুক্তি জালিয়াতি এবং সেই কর্মীর পরিচয় জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে হামিদুর রশীদ নামে ইউএনডিপির এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তবে, বিষয়েটি নিয়ে এখনো রশীদ কিংবা ইউএনডিপির প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। এর আগে গত সপ্তাহে গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগে নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটের ভাইস কনসাল জেনারেলকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং তিনি জামিনে মুক্তি আছেন।
বিবিসি’র খবরে বলা হয়: জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির ডেভেলপমেন্ট পলিসি অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ডিভিশনের প্রধান হিসেবে কর্মরত হামিদুর রশিদকে গ্রেপ্তার করা হয় নিউইয়র্কের সময় মঙ্গলবার সকালে। গ্রেফতারের পর ম্যানহাটন ফেডারেল আদালতে তোলা হয় তাকে এবং দীর্ঘ শুনানি শেষে জামিন পান তিনি। মাত্র এক সপ্তাহ আগেই গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগে নিউইয়র্কের বাংলাদেশের ডেপুটি কনসাল জেনারেলকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অল্প সময়ের ব্যবধানে দুই বাংলাদেশী কূটনীতিক গ্রেফতার ঘটনা দেশটির গণমাধ্যমে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস-এর ওয়েব সাইটে দেয়া তথ্যে জানা যাচ্ছে যে, রশিদ বাংলাদেশ থেকে আনা গৃহকর্মীর জন্যে প্রযোজ্য জি-৫ ভিসার নিয়ম অনুযায়ী যে মজুরি দেবার অঙ্গীকার করেছিলেন তা পরে মানা হয়নি। সাপ্তাহিক ৪২০ ডলার মজুরিতে গৃহকর্মী নিয়োগের চুক্তিপত্র পররাষ্ট্র দপ্তরে দাখিল করা হলেও ২০১৩ সালের জানুয়ারীতে গৃহকর্মী যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছালে নতুন একটি চুক্তিপত্রে সই নেন।
যেখানে সাপ্তাহিক মজুরি দেখানো হয় ২৯০ ডলার। এছাড়া চুক্তি অনুযায়ী গৃহকর্মীকে সাপ্তাহিক ৪০ ঘণ্টার বেশি সময় কাজ করানোর অভিযোগও আনা হয়। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়ে হামিদুর রশীদের সর্বোচ্চ ২৯ বছরের কারাদন্ড হতে পারে। তবে ঐ গৃহকর্মী চার বছর আগেই রশীদের কাজ ছেড়ে দেন বলে জানা যাচ্ছে।
এদিকে মঙ্গলবার রাত ১০ টায় প্রচারিত টাইম টেলিভিশনের খবরে বলা হয়: গৃহকর্মী নির্যাতনে নিউইয়র্কে এক বাংলাদেশী কূটনীতিক গ্রেপ্তার হওয়ার পর সপ্তাহ না যেতেই একই ধরনের অভিযোগে এবার গ্রেফতার হয়েছেন জাতিসংঘে কর্মরত একজন বাংলাদেশী। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির একটি প্রকল্পের পরিচালক হামিদুর রশীদকে মঙ্গলবার (২০ জুন) সকালে নিউইয়র্ক থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ভিসা জালিয়াতি, বিদেশি কর্মী নিয়োগ চুক্তিতে জালিয়াতি এবং পরিচয় জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। সপ্তাহে ৪২০ ডলার মজুরিতে গৃহকর্মী নিয়োগের চুক্তি করে তার ভিসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে চুক্তিপত্র দাখিল করেন। ২০১৩ সালের জানুয়ারীতে গৃহকর্মী যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছালে হামিদ নতুন একটি চুক্তিতে তার সই নেন, যেখানে সাপ্তাহিক মজুরি ২৯০ ডলার লেখা হয়। হামিদুর রশীদ ওই গৃহকর্মীর পাসপোর্ট নিয়ে নেন এবং অন্য কোথাও কাজ করলে তাকে প্রথমে কারাগারে ও পরে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে বিভিন্ন সময় হুমকি দেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। মামলায় বলা হয়েছে, হামিদুর রশীদ প্রথম দিকে ওই গৃহকর্মীর হাতে কোনো টাকা দেননি। ২০১৩ সালের জানুয়ারী থেকে জুলাই পর্যন্ত কাজের জন্য বাংলাদেশে তার স্বামীকে মাসে ৬০০ ডলারের সমপরিমাণ টাকা পাঠান। ওই বছর অক্টোবরে সরাসরি তার হাতে ৬০০ ডলার দেন। ইউনডিপির এই বাংলাদেশী কর্মকর্তা কখনোই তার গৃহকর্মী বা তার স্বামীকে মূল চুক্তি অনুযায়ী সপ্তাহে ৪২০ ডলার করে দেননি বলে অভিযোগে বলা হয়। এছাড়া গৃহকর্মীকে যথাযথ বেতন দিচ্ছেন বলে জাতিসংঘে প্রমাণ দিতে তার নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুললেও তা হামিদ ও তার স্ত্রী নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে মামলায় বলা হয়েছে। এর আগে গত ১২ জুন সোমবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশের ডেপুটি কনসাল জেনারেল শাহেদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয় গৃহকর্মীকে নির্যাতন এবং মজুরি চাওয়ায় হত্যার হুমকির অভিযোগে। ৩৬ ঘণ্টা পর ৫০ হাজার ডলার বন্ডে জামিনে মুক্তি পান তিনি।
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গৃহকর্মী আনার ক্ষেত্রে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন ও কনসুলেট অফিসের কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুজন বাংলাদেশী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোাগকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন তিনি। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। তাদের সন্দেহ, অভিযোগকারীরা গ্রীন কার্ড পাওয়ার আশায় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষন্ন করছে।