নিউইয়র্ক ১২:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

পর্তুগালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আন্তেনিউ গুতেরাস জাতিসংঘের নতুন মহাসচিব

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:৪২:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর ২০১৬
  • / ১৮১০ বার পঠিত

জাতিসংঘ: বিশ্ব রাজনীতির টালমাটাল অবস্থায় দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন প্রথমবারের মতো কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করা রাজনীতিবিদ আন্তেনিউ গুতেরাস। তিনি ১৯৯৫ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। একইসাথে তিনি জাতিসঙ্ঘেও দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন। ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতিসঙ্ঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এই রাজনীতিবিদ। সর্বশেষ তিনি সোসালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল-এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ৫ অক্টোবর বুধবার নানা নির্বাচনী-প্রক্রিয়া শেষে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের সর্বোচ্চ মতনৈক্যের ভিত্তিতে আন্তেনিউ গুতেরাসকে জাতিসঙ্ঘের পরবর্তী মহাসচিব হিসেবে ঘোষণা করেন নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে থাকা রাশিয়ান ফেডারেশনের ভিটালি চারকিন। উল্লেখ্য নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৩টি সদস্য রাষ্ট্রই তার পক্ষে ভোট দেয়। আর দু’টি রাষ্ট্র ভোটদান থেকে বিরত থাকে। এই দেশ দুটির নাম জানা যায়নি।
বুধবার সকাল থেকেই গুঞ্জন চলছিল নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের একটিও যদি তাদের ভেটো পাওয়ার ব্যবহার করে তাহলে নির্বাচনী-প্রক্রিয়া জটিলতার দিকে চলে যাবে। অবশেষে এই উৎকণ্ঠার অবসান ঘটল বেলা ২টার পর। অবশ্য বৃহস্পতিবার সকালে গুতেরাসকে কাউন্সিলের একটি আনুষ্ঠানিক ভোটাভুটির মুখোমুখি হতে হয়। এর পর ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের সাধারণ পরিষদে অনুমোদনের জন্য তার নাম পাঠানো হবে। আশা করা যায়, আগামী সপ্তাহের যেকোনো দিন আনুষ্ঠানিকভাবে তার নাম জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব হিসেবে ঘোষিত হবে। তিনি বর্তমান মহাসচিব বান কি মুনের স্থলাভিষিক্ত হবেন। ৩১ ডিসেম্বর মুন তার দ্বিতীয় মেয়াদের দায়িত্ব শেষ করবেন। সাথে সাথে জাতিসঙ্ঘের পতাকা হাতে নিবেন ৬৭ বছর বয়স্ক গুতেরাস ।
গুতেরাসের নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে কূটনৈতিক ও নাগরিক সমাজ জাতিসঙ্ঘের ৭১ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো নারীকে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব হিসেবে দেখবার যে স্বপ্ন দেখছিল তা অন্তত এবারের মতো শেষ হয়ে গেল।
উল্লেখ্য, জাতিঙ্ঘ মহাসচিব পদে ১৩ জন পদপ্রার্থীর মধ্যে চারজন ছিলেন নারী প্রার্থী। তাদের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক ছিলেন। শুরুতে তাকেই সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রার্থী বলে মনে করা হচ্ছিল। পরে অবশ্য তিনি ছিটকে পড়েন। তবে শেষ পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় টিকে ছিলেন ইউনেস্কোর চলতি মহাপরিচালক বুলগেরিয়ার ইরিনা বুকোভা।
১৯৪৫ সালে জাতিসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত আটজন মহাসচিব দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপীয় অঞ্চলের অধিবাসী। গোটা বিশ্বকে পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ করে জাতিসঙ্ঘের কর্মকান্ড পরিচালনার রীতি প্রচলিত আছে। অঞ্চলগুলো হলো এশিয়া, আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকা। এশিয়া থেকে দুই দফায় (বর্তমান মহাসচিব বান কি মুন ও উ থান্ট), আফ্রিকা থেকে দুই দফায় (বুট্রোস বুট্রোস ঘালি ও কফি আনান) পশ্চিম ইউরোপ থেকে তিন দফায় (ট্রাগভি লি, দাগ হ্যামারশোল্ড ও কুর্ট ওয়েল্ডহেইম) এবং লাতিন আমেরিকা থেকে একবার দুই মেয়াদে (হ্যাভিয়ার পেরেজ দ্য কুয়েলার) মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ পূর্ব ইউরোপীয় অঞ্চল থেকে এখন পর্যন্ত কেউই নির্বাচিত হননি।
এত দিন পর্যন্ত শুধু নিরাপত্তা পরিষদই মহাসচিব নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় অংশ নিত। সে অর্থে মহাসচিব নির্বাচনের সাধারণ পরিষদের তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না। এ প্রক্রিয়া নিয়ে বহু দিন ধরে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা ছিল। এবার জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয় এপ্রিলে। সংস্থাটির ৭০ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম মহাসচিব হতে আগ্রহী প্রার্থীদের সংস্থার ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মুখোমুখি সাক্ষাতকারের জন্য উপস্থিত হতে হয়েছে। মহাসচিব নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় আরো স্বচ্ছতা আনার জন্যই এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। গত বছর মহাসচিব পদে নিয়োগ পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আনার জন্য সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটিও হয়। অধিকাংশ রাষ্ট্রের সম্মতিতে নতুন এ প্রক্রিয়ায় মহাসচিব পদের প্রার্থীদের আবেদন ও জীবন-বৃত্তান্ত জমা দিতে হয়। পরে সাধারণ পরিষদের সদস্যদের সামনে পেশ করতে হয় বক্তব্য। তবে নতুন মহাসচিব বড় ধরণের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জকে সামনে নিয়ে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। (দৈনিক নয়া দিগন্ত)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

পর্তুগালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আন্তেনিউ গুতেরাস জাতিসংঘের নতুন মহাসচিব

প্রকাশের সময় : ০৯:৪২:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর ২০১৬

জাতিসংঘ: বিশ্ব রাজনীতির টালমাটাল অবস্থায় দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন প্রথমবারের মতো কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করা রাজনীতিবিদ আন্তেনিউ গুতেরাস। তিনি ১৯৯৫ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। একইসাথে তিনি জাতিসঙ্ঘেও দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন। ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতিসঙ্ঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এই রাজনীতিবিদ। সর্বশেষ তিনি সোসালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল-এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ৫ অক্টোবর বুধবার নানা নির্বাচনী-প্রক্রিয়া শেষে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের সর্বোচ্চ মতনৈক্যের ভিত্তিতে আন্তেনিউ গুতেরাসকে জাতিসঙ্ঘের পরবর্তী মহাসচিব হিসেবে ঘোষণা করেন নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে থাকা রাশিয়ান ফেডারেশনের ভিটালি চারকিন। উল্লেখ্য নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৩টি সদস্য রাষ্ট্রই তার পক্ষে ভোট দেয়। আর দু’টি রাষ্ট্র ভোটদান থেকে বিরত থাকে। এই দেশ দুটির নাম জানা যায়নি।
বুধবার সকাল থেকেই গুঞ্জন চলছিল নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের একটিও যদি তাদের ভেটো পাওয়ার ব্যবহার করে তাহলে নির্বাচনী-প্রক্রিয়া জটিলতার দিকে চলে যাবে। অবশেষে এই উৎকণ্ঠার অবসান ঘটল বেলা ২টার পর। অবশ্য বৃহস্পতিবার সকালে গুতেরাসকে কাউন্সিলের একটি আনুষ্ঠানিক ভোটাভুটির মুখোমুখি হতে হয়। এর পর ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের সাধারণ পরিষদে অনুমোদনের জন্য তার নাম পাঠানো হবে। আশা করা যায়, আগামী সপ্তাহের যেকোনো দিন আনুষ্ঠানিকভাবে তার নাম জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব হিসেবে ঘোষিত হবে। তিনি বর্তমান মহাসচিব বান কি মুনের স্থলাভিষিক্ত হবেন। ৩১ ডিসেম্বর মুন তার দ্বিতীয় মেয়াদের দায়িত্ব শেষ করবেন। সাথে সাথে জাতিসঙ্ঘের পতাকা হাতে নিবেন ৬৭ বছর বয়স্ক গুতেরাস ।
গুতেরাসের নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে কূটনৈতিক ও নাগরিক সমাজ জাতিসঙ্ঘের ৭১ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো নারীকে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব হিসেবে দেখবার যে স্বপ্ন দেখছিল তা অন্তত এবারের মতো শেষ হয়ে গেল।
উল্লেখ্য, জাতিঙ্ঘ মহাসচিব পদে ১৩ জন পদপ্রার্থীর মধ্যে চারজন ছিলেন নারী প্রার্থী। তাদের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক ছিলেন। শুরুতে তাকেই সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রার্থী বলে মনে করা হচ্ছিল। পরে অবশ্য তিনি ছিটকে পড়েন। তবে শেষ পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় টিকে ছিলেন ইউনেস্কোর চলতি মহাপরিচালক বুলগেরিয়ার ইরিনা বুকোভা।
১৯৪৫ সালে জাতিসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত আটজন মহাসচিব দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপীয় অঞ্চলের অধিবাসী। গোটা বিশ্বকে পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ করে জাতিসঙ্ঘের কর্মকান্ড পরিচালনার রীতি প্রচলিত আছে। অঞ্চলগুলো হলো এশিয়া, আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকা। এশিয়া থেকে দুই দফায় (বর্তমান মহাসচিব বান কি মুন ও উ থান্ট), আফ্রিকা থেকে দুই দফায় (বুট্রোস বুট্রোস ঘালি ও কফি আনান) পশ্চিম ইউরোপ থেকে তিন দফায় (ট্রাগভি লি, দাগ হ্যামারশোল্ড ও কুর্ট ওয়েল্ডহেইম) এবং লাতিন আমেরিকা থেকে একবার দুই মেয়াদে (হ্যাভিয়ার পেরেজ দ্য কুয়েলার) মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ পূর্ব ইউরোপীয় অঞ্চল থেকে এখন পর্যন্ত কেউই নির্বাচিত হননি।
এত দিন পর্যন্ত শুধু নিরাপত্তা পরিষদই মহাসচিব নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় অংশ নিত। সে অর্থে মহাসচিব নির্বাচনের সাধারণ পরিষদের তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না। এ প্রক্রিয়া নিয়ে বহু দিন ধরে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা ছিল। এবার জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয় এপ্রিলে। সংস্থাটির ৭০ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম মহাসচিব হতে আগ্রহী প্রার্থীদের সংস্থার ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মুখোমুখি সাক্ষাতকারের জন্য উপস্থিত হতে হয়েছে। মহাসচিব নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় আরো স্বচ্ছতা আনার জন্যই এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। গত বছর মহাসচিব পদে নিয়োগ পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আনার জন্য সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটিও হয়। অধিকাংশ রাষ্ট্রের সম্মতিতে নতুন এ প্রক্রিয়ায় মহাসচিব পদের প্রার্থীদের আবেদন ও জীবন-বৃত্তান্ত জমা দিতে হয়। পরে সাধারণ পরিষদের সদস্যদের সামনে পেশ করতে হয় বক্তব্য। তবে নতুন মহাসচিব বড় ধরণের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জকে সামনে নিয়ে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। (দৈনিক নয়া দিগন্ত)