মিরপুর টেক্কা দিচ্ছে মেলবোর্নকে
- প্রকাশের সময় : ১১:২৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
- / ৬৯৫ বার পঠিত
মেলবোর্ন (অষ্ট্রেলিয়া): নীল সমুদ্রের গর্জন শুনতে শুনতে বাইশ ফেব্রুয়ারী রাতে মেলবোর্ন ছেড়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। ২৬ তারিখ রাত আসার আগেই আরেকজন থাকছেন এমজিসিতে। নীল-হলুদ কিংবা লাল-সবুজের ঢেউ এমসিজি-তে ছড়িয়ে পড়ার আগে তার সুর ছড়িয়ে পড়বে গোটা স্টেডিয়ামে। একটু ভুল বলা হলো! স্যাটেলাইটের জমনায় সেটা ছড়িয়ে পড়বে আসলে বিশ্বজুড়ে। ক্রিকেট মাঠেও থাকছেন রবীন্দ্রনাথ। এবং তার অশরীরী উপস্থিতি ১৯ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার মেলবোর্নে বাংলাদেশ, শ্রীলংকা দুটো দলেরই আনুপ্রেরণা।
২২ ফেব্রুয়ারীতেও রবীন্দ্রনাথ ছিলেন। তবে শুধু ভারতীয়দের জন্য। কিন্তু ২৬ তারিখ তিনি থাকবেন দুটো দলের জন্য। বলা যেতে পারে একেবারে থার্ড কান্ট্রির আম্পায়ারের মতো! কারণ বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকা দুটো দেশেরই জাতীয় সঙ্গীতের ¯্রষ্টা তিনি। স্যার ডনের দেশে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি দুটো গান বাজবে বিশ্বকাপে! রং ছড়ানো মেলবোর্নে সব রং-কে ছাপিয়ে এটাই বোধহয় সবচেয়ে উজ্জ্বলতম দৃশ্য হবে; রবীন্দ্রনাথের সুরে একদিকে সুর মেলাছেন মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিকরা। অন্যদিকে, মাহেলা-সাঙ্গাকারা-তিলকারতেœ, মালিঙ্গরা!
এমসিজি এই সুরের মায়াবী দৃশ্য আদৌ কখনো দেখেছে কি? গুগলে সার্চ দিয়ে কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে বলতেই পারি এমসিজি মানে যে একটা ব্লকবাস্টার ব্যাপার-স্যাপার, যেখানে মাইকেল জ্যাকসন শো করে গেছেন সেখানে রাবীন্দ্রিক ছাপ পড়ছে বৃহস্পতিবার, ম্যাচ শুরুর আগে।
লডর্স যেমন ক্রিকেটের আভিজাত্য বুকে ধারণ করে বসে আছে, বাঙালীর সাংস্কৃতিক আভিজাত্যের ধারকও সেই রবীন্দ্রনাথ। বিশ্বকাপ হোক আর যাই হোক ক্রিকেটের অভিজাতের ব্যাপারটা আসলে এখনো সাদা-পোশাকের সেই টেস্ট ক্রিকেট। যেখানে রং-টং এর এই বাড়াবাড়ি নেই। আছে শুধু ক্রিকেটের পরিশুদ্ধ রূপটা।
শেন ওয়ার্নের শহরে ক্রিকেটের সেই পরিশুদ্ধ রূপটাকে অনেক মর্যাদার বলে মনে করে বসে আছেন আরেক জন। ক্রিস রজার্স। টেস্ট ক্রিকেটে যিনি ডেভিড ওয়ার্নের ওপেনিং পার্টনার। এই বিশ্বকাপ নিয়ে যার খুব বেশি আগ্রহ নেই। ভদ্রলোক অবশ্য সাংবাদিকতায় ¯œাতক। কিন্তু খবরা খবরের ব্যাপারে কেন যেন নিরুৎসাহী। এমন কি এই শহরের ব্লকবাস্টার ব্যাপারটা যে ক্রিকেটারদের মানসিকতার উপর প্রভাব ফেলে, সেটা অস্ট্রেলিয়ান দলের ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটিং দেখলেই বোঝা যায়। বোঝা যায় শেন ওয়ার্নের জীবনযাত্রা-কথাবার্তার ধরন-ধারণ দেখলেও।
যদিও মেলবোর্নবাসীসহ ভিক্টোরিয়ানরা মনে করেন; ঔ ইমেজের কারণেই অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পেলেন না শেন। যদিও একই সঙ্গে তাদের দাবি, শেন ক্রিকেটের মধ্যে দিয়ে তাদের যে আনন্দ দিয়েছেন, তা পৃথিবীর কম ক্রিকেটার দিতে পেরেছেন কিংবা পারবেন।
আধুনিক ক্রিকেট আসলে ব্লকবাস্টারদের জন্য। ম্যাক্সওয়েলের মতো ক্রিকেটারই তাই অনেক বেশি জনপ্রিয়। মেলবোর্নেও তিনি অসম্ভব জনপ্রিয়। ওয়াসিম আক্রামের মতো লোক তাই এখনো বলছেন, ‘গেইল ঝড় দেখলো মানুকা ওভাল। আগামীতে হয়তো ম্যাক্সওয়েল ঝড়ও দেখা যেতে পারে।’
এক ম্যাচেই তিনটা রেকর্ডের মালিক বনে গেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করলেন গেইল। তিনি-ই প্রথম অ-ভারতীয় হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরী করলেন। এবং দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরীরও মালিক তিনি। সেই সঙ্গে আরো একটা রেকর্ডের মালিকানা তার আর স্যামুয়েলসের। ওয়ানডে ক্রিকেটে সবোর্চ্চ রানের পার্টনারশিপ গড়লেন তারা। যে রেকর্ডের মালিকানা এতোদিন ছিল দুই ভারতীয় গ্রেট শচীন রমেশ টেন্ডুলকার আর রাহুল দ্রাবিড়ের।
’৯৯ সালে হায়দ্রবাদে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তারা দুজনে দ্বিতীয় উইকেটে করেছিলেন ৩৩১ রান। ওটাই এতোদিন ছিল ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রানের পার্টনারশিপ। যেটা মানুকা ওভালে ভেঙে পড়তে দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব গেইল ঝড়ে! গেইল-স্যামুয়েলস করলেন ৩৭২ রান!
ব্লকবাস্টারদের এই রমরমা জমনায় হয়তো রাবীন্দ্রিক ঢঙে ক্রিকেট চলবে না। কিন্তু ক্রিকেট মাঠও কি পারছে রবীন্দ্রনাথকে উপেক্ষা করতে ? সেটা সম্ভব? না। রবীন্দ্র নাথ তো সর্বকালের। সব জায়গার। সেটা লর্ডস-মেলবোর্ন-ইডেন যেখানেই হোক না কেন রবীন্দ্রনাথের সুরে দুটো দেশের জাতীয় সঙ্গীত বেজে উড়লে সেখানে তাতে নতুন একটা আবেদন তৈরি হবেই। তারপর ক্রিকেট নামক খেলাটায় যতোই ব্লকবাস্টাররা দাপাদাপি করুক কেন?
ফুটনোট: বিশ্বকাপে মিরপুরেও কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে এক ম্যাচে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। ২০১১-র বিশ্বকাপে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে। মিরপুরের পর মেলবোর্ন। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে মিরপুর টেক্কা দিলো মেলবোর্নকে! (বাংলানিউজটেয়েন্টিফোর.কম)