নিউইয়র্ক ০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ মাশরাফি বিন মর্তুজা হবার গল্প

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:০৪:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ মার্চ ২০১৫
  • / ৪০৩৮ বার পঠিত

এডিলেড: বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) নেলসনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্কটল্যান্ড ৩১৮ করার পর উত্তেজনায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মাশরাফির বাবা গোলাম মর্তুজা। সেই রানের পাহাড় ডিঙ্গিয়েও যে বাংলাদেশ জিতেছে এটিকে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বদলে যাবার দৃষ্টান্ত হিসাবে দেখেন। দলের সমর্থনে ক্যাপ্টেন ছেলের সমর্থনে এই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড চষে বেড়াচ্ছেন এই বাবা। শনিবার (০৭ মার্চ) ভার্জিন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে সিডনি থেকে এডিলেড উড়ে আসার পথে বিমানে বসে সাক্ষাৎকারে এই বাবা বলেছেন তার ছেলে কৌশিকের আজ দেশ-বিদেশে খ্যাতিমান ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ তথা মাশরাফি বিন মর্তুজা হবার গল্প।
নানাবাড়িতে জন্ম মাশরাফির। বড়ও হয়েছেন নানাবাড়িতে। কারণ তার নানীর ধারনা-বিশ্বাস ছিল মাশরাফির মা বাচ্চা লালন-পালনের উপযুক্ত না! মায়েদের কাছে এমন সব মেয়ে মায়েরাই ছোট থাকে। তবে নানাবাড়ির লাগোয়া প্রাইমারি স্কুলে পড়লেও এসএসসি-এইচএসসি পাশ করেছেন নড়াইল সরকারি স্কুল ও কলেজ থেকে। বাবা’র কথা পড়াশুনাও খুব মেধাবী ছিলেন মাশরাফি। তার এসএসসি-এইচএসসির রেজাল্টও ছিল খুবই ভালো। এইচএসসির পর দর্শন শাস্ত্রে অনার্স কোর্সে ভর্তি হন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটের দর্শন আর কামিয়াবি শাস্ত্র নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়াতে তার একাডেমিক পড়াশুনা শেষ করা হয়নি।
মাশরাফির ক্রিকেট আসক্তি কী করে শুরু হলো? তার বাবা গোলাম মর্তুজা ছিলেন এথোলেট। হাইজাম্প, লং জাম্পে বাংলাদেশ অলিম্পিকেও অংশ নিয়েছেন। তবে তার ক্রিকেট ভালো লাগতো না। কলেজ জীবনের হোস্টেলের রুমমেট ক্রিকেট খেলতেন। ক্রিকেটের বল-ব্যাট এসব বাক্স বন্দি করে রাখতেন রুমে। কিন্তু গোলাম মর্তুজার যেহেতু ক্রিকেট পছন্দ ছিলোনা, ক্রিকেটের বল-ব্যাটের বাক্সটি মজা করে মাঝে মাঝে রুমের বাইরে ফেলে দিতেন! সেই বাবা’র ছেলে মাশরাফি কী করে শৈশব থেকে হয়ে উঠলেন ক্রিকেটের পোকা! যিনি কিনা আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক!
গোলাম মর্তুজা বলেন, ছেলেবেলায় স্কুলের মাঠে বড়দের ক্রিকেট খেলা দেখে দেখে মাশরাফির ক্রিকেটের প্রতি আকর্ষন তৈরি হয়। প্রথমে সে উইকেট কিপার হতে চায়। উইকেট কিপারের হাতে গ্ল্যাভস থাকে। তার হাতেতো গ্ল্যাভস নেই। দু’হাতে দুটি স্যান্ডেল গ্ল্যাভসের মতো লেপটে ধরে সে উইকেট কিপারের পাশে দাঁড়িয়ে যেতে চায়। বড়রা সেখান থেকে তাকে সরিয়ে দিলে তার মন খারাপ হয়। কিন্তু যার ক্রিকেট নিয়ে এত আগ্রহ তাকেতো কেউ আটকে রাখতে পারেনা। মাশরাফিকেও পারেনি। স্কুলের ক্রিকেট, নড়াইলের ক্রিকেট ধরে সে পৌঁছে যায় অনুর্ধ ১৯ দলে। সে সময় এন্ড্রু নামের এক বোলিং কোচের হাতে পড়ে পাল্টে যায় মাশরাফি। অনুর্ধ ১৯ দলে থাকতে হৈচৈ ফেলে দেয়ায় জিম্বাবুয়ে দলের বিরুদ্ধে খেলায় মাশরাফির ডাক পড়লে এ নিয়ে সমালোচনা হয়। কারণ মাশরাফি ঢাকার কোন সিনিয়র ডিভিশন লীগেও খেলেননি! তখন এসব সমালোচনার জবাবে মিডিয়া মোকাবেলায় অনভ্যস্ত মাশরাফি নড়াইলের ভাষাতেই ছাচাছোলা বলে ফেলেছিলেন, এমন বল করমুনা, জিম্বাবুয়ের এন্ড্রু-গ্রান্ড ফ্লাওয়ার দুই ভাই সহ পাঁচ উইকেট নিমুনে। সেই সিরিজে মাশরাফি এক ম্যাচে পাঁচ উইকেটই নিয়েছিলেন! কিন্তু গ্রান্ড ভ্রাতৃদ্বয়ের শুধু এন্ড্রুর উইকেট নিতে পেরেছিলেন। এরপর নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে তার নাম হয়ে যায় ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। এরপর আর ইনজুরি ছাড়া আর কেউ মাশরাফি বিন মর্তুজাকে আটকাতে পারেনি।
নড়াইলে এক সময় নেপাল দাশ নামের সবার প্রিয় একজন মানুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন সৌখিন একজন গনকও। নেপাল দাশ একবার মাশরাফির হাত দেখে তার বাবাকে বলেছিলেন, তোমার এই ছেলে হয় দেশের নামকরা কেউ হবে অথবা চূড়ান্ত খারাপ কেউ হবে। মাশরাফি কী হয়েছেন? বাবা’র কাছে তার কৌশিক তথা মাশরাফি সাদা মনের আমুদে ছেলে একজন। নানা বিষয়ে বাবা’র সাথে প্রায় প্রতিদিন কথা হয় ছেলের। ক্রিকেট নিয়ে কম কথা হয়। তার বাবা এমনিতে একটু ঘরকুনে স্বভাবের। সে কারনে ছেলে এত বছর ধরে ক্রিকেট খেললেও এর আগে কোন দিন ছেলের খেলা দেখতে কখনো দেশের বাইরে যাননি। এবারেও প্রথম দেশের বাইরে এলেন অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে। এই সফরে তার চার লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। এই টাকার কিছু তার নিজের, কিছু মাশরাফির দেয়া। কী আশা নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছেন? জানতে চাইলে বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেনের জনক বলেন, আফগানিস্তান-স্কটল্যান্ডের পাশাপাশি আশা ছিল দল শ্রীলংকা-ইংল্যান্ডকে হারাবে। এরমাঝে আমরা শ্রীলংকার কাছে হেরে গেছি। বাকি আছে ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলা। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশনের প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচ নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে খেলা দেখতে হ্যামিলটন যাবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, এটা তিনি ঠিক করবেন সোমবার (৯ মার্চ) এডিলেডে ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলার পর। মাশরাফির বাবার মতোই বাংলাদেশ অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে এডিলেডের সোমবারের ম্যাচের দিকে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ মাশরাফি বিন মর্তুজা হবার গল্প

প্রকাশের সময় : ০৪:০৪:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ মার্চ ২০১৫

এডিলেড: বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) নেলসনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্কটল্যান্ড ৩১৮ করার পর উত্তেজনায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মাশরাফির বাবা গোলাম মর্তুজা। সেই রানের পাহাড় ডিঙ্গিয়েও যে বাংলাদেশ জিতেছে এটিকে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বদলে যাবার দৃষ্টান্ত হিসাবে দেখেন। দলের সমর্থনে ক্যাপ্টেন ছেলের সমর্থনে এই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড চষে বেড়াচ্ছেন এই বাবা। শনিবার (০৭ মার্চ) ভার্জিন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে সিডনি থেকে এডিলেড উড়ে আসার পথে বিমানে বসে সাক্ষাৎকারে এই বাবা বলেছেন তার ছেলে কৌশিকের আজ দেশ-বিদেশে খ্যাতিমান ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ তথা মাশরাফি বিন মর্তুজা হবার গল্প।
নানাবাড়িতে জন্ম মাশরাফির। বড়ও হয়েছেন নানাবাড়িতে। কারণ তার নানীর ধারনা-বিশ্বাস ছিল মাশরাফির মা বাচ্চা লালন-পালনের উপযুক্ত না! মায়েদের কাছে এমন সব মেয়ে মায়েরাই ছোট থাকে। তবে নানাবাড়ির লাগোয়া প্রাইমারি স্কুলে পড়লেও এসএসসি-এইচএসসি পাশ করেছেন নড়াইল সরকারি স্কুল ও কলেজ থেকে। বাবা’র কথা পড়াশুনাও খুব মেধাবী ছিলেন মাশরাফি। তার এসএসসি-এইচএসসির রেজাল্টও ছিল খুবই ভালো। এইচএসসির পর দর্শন শাস্ত্রে অনার্স কোর্সে ভর্তি হন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটের দর্শন আর কামিয়াবি শাস্ত্র নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়াতে তার একাডেমিক পড়াশুনা শেষ করা হয়নি।
মাশরাফির ক্রিকেট আসক্তি কী করে শুরু হলো? তার বাবা গোলাম মর্তুজা ছিলেন এথোলেট। হাইজাম্প, লং জাম্পে বাংলাদেশ অলিম্পিকেও অংশ নিয়েছেন। তবে তার ক্রিকেট ভালো লাগতো না। কলেজ জীবনের হোস্টেলের রুমমেট ক্রিকেট খেলতেন। ক্রিকেটের বল-ব্যাট এসব বাক্স বন্দি করে রাখতেন রুমে। কিন্তু গোলাম মর্তুজার যেহেতু ক্রিকেট পছন্দ ছিলোনা, ক্রিকেটের বল-ব্যাটের বাক্সটি মজা করে মাঝে মাঝে রুমের বাইরে ফেলে দিতেন! সেই বাবা’র ছেলে মাশরাফি কী করে শৈশব থেকে হয়ে উঠলেন ক্রিকেটের পোকা! যিনি কিনা আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক!
গোলাম মর্তুজা বলেন, ছেলেবেলায় স্কুলের মাঠে বড়দের ক্রিকেট খেলা দেখে দেখে মাশরাফির ক্রিকেটের প্রতি আকর্ষন তৈরি হয়। প্রথমে সে উইকেট কিপার হতে চায়। উইকেট কিপারের হাতে গ্ল্যাভস থাকে। তার হাতেতো গ্ল্যাভস নেই। দু’হাতে দুটি স্যান্ডেল গ্ল্যাভসের মতো লেপটে ধরে সে উইকেট কিপারের পাশে দাঁড়িয়ে যেতে চায়। বড়রা সেখান থেকে তাকে সরিয়ে দিলে তার মন খারাপ হয়। কিন্তু যার ক্রিকেট নিয়ে এত আগ্রহ তাকেতো কেউ আটকে রাখতে পারেনা। মাশরাফিকেও পারেনি। স্কুলের ক্রিকেট, নড়াইলের ক্রিকেট ধরে সে পৌঁছে যায় অনুর্ধ ১৯ দলে। সে সময় এন্ড্রু নামের এক বোলিং কোচের হাতে পড়ে পাল্টে যায় মাশরাফি। অনুর্ধ ১৯ দলে থাকতে হৈচৈ ফেলে দেয়ায় জিম্বাবুয়ে দলের বিরুদ্ধে খেলায় মাশরাফির ডাক পড়লে এ নিয়ে সমালোচনা হয়। কারণ মাশরাফি ঢাকার কোন সিনিয়র ডিভিশন লীগেও খেলেননি! তখন এসব সমালোচনার জবাবে মিডিয়া মোকাবেলায় অনভ্যস্ত মাশরাফি নড়াইলের ভাষাতেই ছাচাছোলা বলে ফেলেছিলেন, এমন বল করমুনা, জিম্বাবুয়ের এন্ড্রু-গ্রান্ড ফ্লাওয়ার দুই ভাই সহ পাঁচ উইকেট নিমুনে। সেই সিরিজে মাশরাফি এক ম্যাচে পাঁচ উইকেটই নিয়েছিলেন! কিন্তু গ্রান্ড ভ্রাতৃদ্বয়ের শুধু এন্ড্রুর উইকেট নিতে পেরেছিলেন। এরপর নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে তার নাম হয়ে যায় ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। এরপর আর ইনজুরি ছাড়া আর কেউ মাশরাফি বিন মর্তুজাকে আটকাতে পারেনি।
নড়াইলে এক সময় নেপাল দাশ নামের সবার প্রিয় একজন মানুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন সৌখিন একজন গনকও। নেপাল দাশ একবার মাশরাফির হাত দেখে তার বাবাকে বলেছিলেন, তোমার এই ছেলে হয় দেশের নামকরা কেউ হবে অথবা চূড়ান্ত খারাপ কেউ হবে। মাশরাফি কী হয়েছেন? বাবা’র কাছে তার কৌশিক তথা মাশরাফি সাদা মনের আমুদে ছেলে একজন। নানা বিষয়ে বাবা’র সাথে প্রায় প্রতিদিন কথা হয় ছেলের। ক্রিকেট নিয়ে কম কথা হয়। তার বাবা এমনিতে একটু ঘরকুনে স্বভাবের। সে কারনে ছেলে এত বছর ধরে ক্রিকেট খেললেও এর আগে কোন দিন ছেলের খেলা দেখতে কখনো দেশের বাইরে যাননি। এবারেও প্রথম দেশের বাইরে এলেন অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে। এই সফরে তার চার লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। এই টাকার কিছু তার নিজের, কিছু মাশরাফির দেয়া। কী আশা নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছেন? জানতে চাইলে বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেনের জনক বলেন, আফগানিস্তান-স্কটল্যান্ডের পাশাপাশি আশা ছিল দল শ্রীলংকা-ইংল্যান্ডকে হারাবে। এরমাঝে আমরা শ্রীলংকার কাছে হেরে গেছি। বাকি আছে ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলা। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশনের প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচ নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে খেলা দেখতে হ্যামিলটন যাবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, এটা তিনি ঠিক করবেন সোমবার (৯ মার্চ) এডিলেডে ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলার পর। মাশরাফির বাবার মতোই বাংলাদেশ অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে এডিলেডের সোমবারের ম্যাচের দিকে।