নিউইয়র্ক ০৬:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

একজন ভাইকে হারালাম

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:৪৭:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
  • / ১১৬ বার পঠিত

আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু: বাদল নেই, খবরটা শোনা মাত্রই একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছি। ও (বাদল) আমার চেয়ে বয়সে বছর পাঁচেকের ছোট। ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেছে আমার চার বছর পরে। আমি খেলেছি আবাহনীতে, সে মোহামেডানে।
কিন্তু আমাদের হৃদ্যতা ছিল অনেক অনেক বেশি। ফুটবলার হিসেবে বাদল ছিল খুবই স্টাইলিশ ও কার্যকরী। আমাদের আবাহনীর বিরুদ্ধে মাঠে ওর পারফরম্যান্স ছিল বরাবরই দুর্দান্ত। আমার সঙ্গে ওর একটি মিলও রয়েছে। আমি যেমন আজীবন ক্লাবকে ভালোবেসে আবাহনীতেই ছিলাম, বাদলও তেমনি মোহামেডানে। জাতীয় দল ও মোহামেডানকে আরও বেশি সার্ভিস দেয়ার সামর্থ্য ও আকাক্সক্ষা ছিল ওর। সেই পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ইনজুরি।
খেলা ছাড়ার পর সংগঠক বাদল যেন ফুটবলার বাদলকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। ক্লাব, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে), অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সর্বত্রই ছিল ওর সরব উপস্থিতি। ফুটবলের বাদল থেকে ধীরে ধীরে পুরো ক্রীড়াঙ্গনের বাদল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কুমিল্লা থেকে উঠে আসা ছেলেটি ধীরে ধীরে নিজেকে ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। সততা ও দৃঢ়তা বাদলের চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সেই বৈশিষ্ট্যের জোরেই বাদল ক্রীড়াঙ্গন, রাজনীতি ও ব্যবসায়ী অঙ্গনে ছিল সফল। খেলোয়াড় হিসেবে আমরা দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবে থাকলেও রাজনৈতিক দর্শন ও বাফুফে ইস্যুতে আমরা ছিলাম এক ও অভিন্ন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে মনোনয়ন দেন।
আপাকে আমি বাদলের কথা বলি। আপা বাদলকে কুমিল্লার দাউনকান্দি থেকে মনোনয়ন দেন। বাদল সব সময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শে চলা একজন মানুষ। ফুটবলার ও সংগঠক বাদল যেমন অসাধারণ, ব্যক্তি বাদল তার চেয়েও আরও বেশি কিছু ছিল। ফুটবল তো বটেই, ক্রীড়াঙ্গনের যে কেউ বিপদে পড়লে বাদলের কাছে ছুটে যেত। সাধ্যমতো চেষ্টা করত সে। ছাত্রজীবন থেকেই সে ছিল জনমানুষের। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা বাড়ে বহুগুণে।
২০১৭ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পর মানুষের ভালোবাসা, দোয়া ও প্রধানমন্ত্রীর সাহায্যে অনেকটা সুস্থ হয়েই দেশে ফিরেছিল বাদল। অসুস্থ শরীর নিয়েও ফুটবল ফেডারেশন, মোহামেডান ক্লাবের জন্য অনেক কিছু করেছে। আমার সঙ্গে ওর সর্বশেষ দেখা মাস দেড়েক আগে ওর বাসায়। কে জানত, সেই দেখাই শেষ দেখা হবে। বাদলের মুখে আদর ঝরা ডাক ‘চুন্নু ভাই’ আর কখনও শুনব না। আমি একজন ভাইকে হারালাম। ওপারে ভালো থেকো বাদল। (দৈনিক যুগান্তর)

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

একজন ভাইকে হারালাম

প্রকাশের সময় : ০২:৪৭:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০

আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু: বাদল নেই, খবরটা শোনা মাত্রই একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছি। ও (বাদল) আমার চেয়ে বয়সে বছর পাঁচেকের ছোট। ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেছে আমার চার বছর পরে। আমি খেলেছি আবাহনীতে, সে মোহামেডানে।
কিন্তু আমাদের হৃদ্যতা ছিল অনেক অনেক বেশি। ফুটবলার হিসেবে বাদল ছিল খুবই স্টাইলিশ ও কার্যকরী। আমাদের আবাহনীর বিরুদ্ধে মাঠে ওর পারফরম্যান্স ছিল বরাবরই দুর্দান্ত। আমার সঙ্গে ওর একটি মিলও রয়েছে। আমি যেমন আজীবন ক্লাবকে ভালোবেসে আবাহনীতেই ছিলাম, বাদলও তেমনি মোহামেডানে। জাতীয় দল ও মোহামেডানকে আরও বেশি সার্ভিস দেয়ার সামর্থ্য ও আকাক্সক্ষা ছিল ওর। সেই পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ইনজুরি।
খেলা ছাড়ার পর সংগঠক বাদল যেন ফুটবলার বাদলকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। ক্লাব, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে), অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সর্বত্রই ছিল ওর সরব উপস্থিতি। ফুটবলের বাদল থেকে ধীরে ধীরে পুরো ক্রীড়াঙ্গনের বাদল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কুমিল্লা থেকে উঠে আসা ছেলেটি ধীরে ধীরে নিজেকে ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। সততা ও দৃঢ়তা বাদলের চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সেই বৈশিষ্ট্যের জোরেই বাদল ক্রীড়াঙ্গন, রাজনীতি ও ব্যবসায়ী অঙ্গনে ছিল সফল। খেলোয়াড় হিসেবে আমরা দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবে থাকলেও রাজনৈতিক দর্শন ও বাফুফে ইস্যুতে আমরা ছিলাম এক ও অভিন্ন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে মনোনয়ন দেন।
আপাকে আমি বাদলের কথা বলি। আপা বাদলকে কুমিল্লার দাউনকান্দি থেকে মনোনয়ন দেন। বাদল সব সময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শে চলা একজন মানুষ। ফুটবলার ও সংগঠক বাদল যেমন অসাধারণ, ব্যক্তি বাদল তার চেয়েও আরও বেশি কিছু ছিল। ফুটবল তো বটেই, ক্রীড়াঙ্গনের যে কেউ বিপদে পড়লে বাদলের কাছে ছুটে যেত। সাধ্যমতো চেষ্টা করত সে। ছাত্রজীবন থেকেই সে ছিল জনমানুষের। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা বাড়ে বহুগুণে।
২০১৭ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পর মানুষের ভালোবাসা, দোয়া ও প্রধানমন্ত্রীর সাহায্যে অনেকটা সুস্থ হয়েই দেশে ফিরেছিল বাদল। অসুস্থ শরীর নিয়েও ফুটবল ফেডারেশন, মোহামেডান ক্লাবের জন্য অনেক কিছু করেছে। আমার সঙ্গে ওর সর্বশেষ দেখা মাস দেড়েক আগে ওর বাসায়। কে জানত, সেই দেখাই শেষ দেখা হবে। বাদলের মুখে আদর ঝরা ডাক ‘চুন্নু ভাই’ আর কখনও শুনব না। আমি একজন ভাইকে হারালাম। ওপারে ভালো থেকো বাদল। (দৈনিক যুগান্তর)