নিউইয়র্ক ১২:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আমি আরেকবার নির্বাচন করব : কাজী সালাউদ্দিন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:১৪:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৪০ বার পঠিত

স্পোর্টস ডেস্ক: ঘরোয়া ফুটবলের কিংবদন্তি থেকে হয়েছেন সংগঠক। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে চার মেয়াদ পার করছেন কাজী সালাউদ্দিন। তাঁর সময়ে গত বছর নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। এই বছর পুরুষ এবং নারী ফুটবলের রেজাল্টও ভালো হয়েছে। সমালোচনাও আছে তাকে নিয়ে। নিষিদ্ধ সাবেক সাধারণ সম্পাদককে প্রশ্রয় দেওয়া, বাফুফের নির্বাহী কমিটি ছাড়াই একক সিদ্ধান্ত নেওয়া, বিসিবি সভাপতির সঙ্গে বাকযুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়াসহ আরও অনেক বিষয়ে বিতর্কের জন্ম দেওয়া। এসব নিয়ে গত ৬ ডিসেম্বর) বুধবার দৈনিক সমকালের সঙ্গে ফেডারেশনের নিজ কার্যালয়ে কথা বলেছেন কাজী সালাউদ্দিন। শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়।
প্রশ্ন: খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন কিংবদন্তি। সংগঠক হওয়ার পর আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ফুটবলকে কোথায় দেখতে চান?
কাজী সালাউদ্দিন: আমার লক্ষ্য, মেয়েরা যেন সাউথ এশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এটা দু-তিন বছর নিয়ন্ত্রণ করার পরের টার্গেট হলো আসিয়ান। এটাই আমাদের বড় টার্গেট। ছেলেদের ক্ষেত্রেও টার্গেট অনেকটা এ রকম। ভবিষ্যতে যে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ হবে, আর যদি বিদেশি দল না আসে, তাহলে ফাইনাল অবশ্যই বাংলাদেশ-ভারতই হবে এবং যে কেউই জিততে পারে। এখন আমরা মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে খেলি এবং লড়াই করি। আফগানিস্তান, লেবাননের সঙ্গে আমরা লড়াই করি।
প্রশ্ন: ফুটবলে ইতিবাচক খবরের মধ্যে বড় নেতিবাচক ছিল দুর্নীতির কারণে সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফিফা কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়া।
কাজী সালাউদ্দিন: এটা তো আমাদের ফাইন্যান্স কমিটির বিষয়। এই প্রশ্নের উত্তরটা ভালোভাবে দিতে পারবে ফাইন্যান্স কমিটি। তবে আমরা সব কিছুতেই অতিরিক্ত করে ফেলেছিলাম। আপনি যদি পুরো বইটা পড়েন, ওখানে লেখা আছে বাফুফে কোনো মালপত্র খরিদ করেনি, যেটা মার্কেটের থেকে বেশি দাম। বাফুফের কোনো ফাইন্যান্সিয়াল ক্ষতি হয়নি এবং লিখেছে সবকিছুই তারা সঠিকভাবে পেয়েছে। কিন্তু সিস্টেমটাই ভুল হয়েছে। সিস্টেমের সমস্যা হলো, অফিসের নির্বাহীরা দায়সারা কাজ করেছেন। সে জন্য তারা সাসপেন্ড হয়েছেন এবং প্রতিটি বিভাগই পরিবর্তন হয়েছে।
প্রশ্ন: তার পরও অনেকে বলছেনÑআপনার সায় পেয়েই সাবেক সাধারণ সম্পাদক অনিয়মগুলো করেছেন।
কাজী সালাউদ্দিন: এসব মিডিয়ার নাকি অন্যকিছু হচ্ছে, সেটা আপনি আমার চেয়ে ভালো জানেন।
প্রশ্ন: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে অনেকেরই ধারণা আপনি সরে গেলে ফুটবলের মঙ্গল হবে?
কাজী সালাউদ্দিন: এই প্রশ্ন আপনাদের কাছে। আপনারাই মাপবেন। আমার সবচেয়ে সুবিধা আছে, আমি ওয়েবসাইট দেখি না। আমার টেলিভিশনও নাই। আমি আমার কাজ করতেই থাকি। আমি তো একসময় এখানে থাকব না। দেখা যাক। আমি যখন ছিলাম না, তখন কী ছিল? একটু চিন্তা করে দেখেন। খেলাই তো হয়নি। ওইটা তো বলেন না। খেলার জন্য এখানে প্লেয়াররা স্ট্রাইক করত। আমার কথা বিশ্বাস না হলে দু-তিনজনের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন। আপনি তো রাস্তার ১০ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, প্লেয়ারদের তো নেননি। সেদিন জিকো (গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো) এসে বলে গেছে, প্রেসিডেন্ট সাহেব আপনি থাকাতে আমরা গাড়ি চালাই। কারণ, লিগ ধারাবাহিক হয় এবং প্রতি বছরই ফুটবলাররা পয়সা পায়। যাই হচ্ছে, সেটা আসলে আপনাদের (মিডিয়ার) তৈরি করা। আমি যদি এতই খারাপ হতাম, তাহলে সাউথ এশিয়ায় টানা চারবার সভাপতি হতে পারতাম না।
প্রশ্ন: টানা চারবার নির্বাচিত হয়েছেন। সামনে (সম্ভবত ২০২৪ সালের অক্টোবর) আরেকটি নির্বাচন। আপনি কি আবারও নির্বাচনে লড়বেন?
কাজী সালাউদ্দিন: হ্যাঁ, আমি আরেকবার নির্বাচন করব। ফুটবলে আরও কিছু কাজ করার আছে আমার। আমরা সাউথ এশিয়ায় আধিপত্য করতে চাই। এর সঙ্গে মধ্য এশিয়াতে নিজেদের শক্তির জানান দিতে চাই। এটা করার জন্য আমি আরেকটা টার্ম নির্বাচন করব। আর এটাই হবে আমার শেষ নির্বাচন।
প্রশ্ন: এর আগে ভিশন-২০২২ এর কথা বলেছিলেন। আগামীতে নির্বাচিত হলে নতুন কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন কিনা?
কাজী সালাউদ্দিন: তখন আমি যেটা বলেছিলাম, সেটা আপনারা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছিলেন। আমি বলেছিলাম, আমাদের একটা ভিশন থাকতে হবে। আমরা চেষ্টা করব, যে কোনোভাবে ২০২২ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা যায় কিনা। সেটা যে অসম্ভব, সেই কথাটিও বলেছিলাম। আসলে আপনাকে তো একটা ভিশন নিয়ে নামতে হবে। আমি ক্লাস টুতে পড়ি, ম্যাট্রিক দেব, ইন্টার দেব, ফাইনাল দেব, মাস্টার্স করব। আমার যদি কোনো ভিশনই না থাকে, তাহলে আমি কীভাবে এগুলো করব। এই কথাটিই বলেছিলাম। কিন্তু সেটাকে আপনারা বিকৃত করে বহুরকমভাবে নিয়ে গেছেন। আপনাদের কলম আছে, বন্দুক আছে তাই পারেন।
প্রশ্ন: আপনি বলেছেন ছেলেদের ফুটবলে ক্লাবগুলোর অনেক অবদান। অনেক সময় ক্লাবগুলোর অভিযোগ থাকে, তারা অংশগ্রহণ মানি পায় না।
কাজী সালাউদ্দিন: ক্লাবের অভিযোগ ঠিক। আমার তো সরকারের কোনো ফান্ড নাই যে, আমি তাকে দেব। স্পন্সর যদি টাকা দেয়, সেটা আমি সবাইকে দিই। ফিফার টাকা থেকে আমি ১০ ডলার কাউকে দিতে পারব না। আমরা সিস্টেমে যে সমস্যায় পড়েছিলাম, সেটা হলো ফিফার অর্থ আমরা জেলা ও ক্লাবকে দিয়েছিলাম।
প্রশ্ন: কিন্তু জেলা পর্যায়ে লীগ তো ওইভাবে হয় না।
কাজী সালাউদ্দিন: জেলা পর্যায়ে আমার লীগ তো ফিফা করবে না। আপনি তো প্রেসিডেন্ট (জেলার সভাপতি) সেখানকার, জেলা লীগ করতে ৪-৫ লাখ টাকা লাগে, আপনি করেন। ফেডারেশন না পারলে ব্যক্তিগতভাবে আমি দুই থেকে তিনটি জেলাকে সাপোর্ট দিতে পারি; কিন্তু আমি তো ৬০-৭০ জেলাকে দিতে পারব না। আপনি জেলার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, আপনি যদি চার-পাঁচ লাখ টাকা উঠিয়ে লীগ করতে না পারেন, তাহলে টাকা দিলেও করতে পারবেন না।
প্রশ্ন: তাহলে আপনারা জেলাগুলোর বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশনে যাচ্ছেন না কেন?
কাজী সালাউদ্দিন: আমার পাওয়ার নেই অ্যাকশন নেওয়ার। আপনারাই তো তাদের বিরুদ্ধে লিখতে পারেন। আমি যদি লীগ চালু না রাখতে পারতাম, আপনারা আমাকে কী করতেন? আমি যে অর্থের জন্য মেয়েদের টিমকে বিদেশে পাঠাতে পারিনি, আমাকে তো ভোরবেলা থেকে সমালোচনা করেছিলেন। তাহলে ওদেরটা কেন ধরছেন না। কারণ, ওরা তো সালাউদ্দিন না।
প্রশ্ন: ফুটবলে জাতীয় দলের দারুণ একটা বছর কাটল। বাফুফে সভাপতি হিসেবে আপনার কেমন লাগছে?
কাজী সালাউদ্দিন: অবশ্যই বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য এটা দারুণ একটা বছর। এটা তো এক বছরে হয়নি, ধারাবাহিক কাজের ফসল। সিঙ্গাপুরের কাছে ২০১৭তে ৩ গোলে হেরেছিল মেয়েরা। তার পর মেয়েরা ট্রেনিং করে সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সিঙ্গাপুরকে ৮ গোল দিয়েছে। সবকিছুই কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় হয়েছে। সঠিক ট্রেনিং, সঠিক কোচিং ম্যানেজমেন্ট, সঠিক পরিকল্পনা– সবকিছুই সুন্দরভাবে হওয়াতেই কিন্তু মেয়েদের ফুটবল ভালো করেছে। ছেলেদেরটাতেও অনেক দিন ধরে মিক্সড রেজাল্ট হচ্ছিল। এখন ছেলেদের দল একটা পর্যায়ে চলে এসেছে।
প্রশ্ন: ঘরোয়া ফুটবলে সব সময় রেফারিং নিয়ে সমালোচনা হয়ে আসছে। যে কারণে আপনি ভিএআর আনার কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেটা তো বাস্তবায়ন করেননি।
কাজী সালাউদ্দিন: ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) তো আমি আজকেই আনতে চায়। কিন্তু আমাকে দুই মিলিয়ন ডলার কে দেবে? অর্থের জোগাড় না হলে ইচ্ছা করলেই তো সবকিছু করা যায় না। তবে আমি এটুকু বলতে পারি, খুব শিগগির বাংলাদেশে ভিএআর আসবে। আজকাল কিংবা পরশু আসবেই। তবে নতুন মৌসুমে আসবে কিনা, সেটার নিশ্চয়তা আমি দিতে পারব না। কারণ, আমার ওই রকম ফান্ড নেই।
প্রশ্ন: সাম্প্রতিক সময়ে বিসিবি সভাপতির সঙ্গে আপনার একটা মনস্তাত্তি¡ক লড়াই হয়েছিল। এটা নিয়ে কী বলবেন?
কাজী সালাউদ্দিন: আমি বলব, যা হয়েছে এগুলো মিডিয়ার সৃষ্টি। আমি তো কিছুই বলিনি। আপনারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আপনি কথা বলেন না কেন? আমি তো প্রাইম মিনিস্টারকে আপনাদের সামনে দেখিয়ে কথা বলব না। এটাই আমি বলেছিলাম। আমি তো কাউকে ছোট করার জন্য বলিনি। তার পরও তো তারা অনেক কথা বলেছিলেন। আমি তো উত্তর দিইনি। স্পটে আপনারা আমাকে খোঁচা দিয়ে দুইটা কথা বলাই দিয়েছেন। আর মন্ত্রী তো না বুঝে, না জেনে অনেক কথা বলেছেন।
প্রশ্ন: নির্বাহী কমিটির অনেকেরই অভিযোগ- আপনি নাকি সবার অগোচরে একাই অনেক সিদ্ধান্ত নেন।
কাজী সালাউদ্দিন: আমি যে ইমরুল হাসানকে লিগ কমিটির চেয়ারম্যান করেছি, সেটা তো বোর্ড মিটিং ছাড়াই করেছি। আমাকে বোর্ড ম্যান্ডেড দিয়েছে। আমি বলি, বোর্ডে যখন আমি একেকটা কমিটি বানাই, চেয়ারম্যান বানাইও আমি। আমাকে বোর্ড ম্যান্ডেড দিয়েছে- আপনি বানাই দেন। ইমরুলের কথা উঠেছে; কিন্তু সালাম মুর্শেদীকে যখন বানাইছি, সেটা তো একইভাবে। কাজী নাবিল আহমেদ আজকে যে জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান, সেগুলো একইভাবে। তাহলে এখানে কেন সমস্যা হবে?
প্রশ্ন: তাহলে বোর্ডের সদস্যরা কেন বাইরে গিয়ে সমালোচনা করে?
কাজী সালাউদ্দিন: এখানে নিয়মটা হলো বানানোর পরই ইসি সদস্যরা জানবে। নির্বাহী সদস্যদের আপনারা খোঁচাই করাইছেন। আমি তো নিয়মের বাইরে কাজ করিনি। আজকে যিনি যে পোস্টে আছেন, সবাই তো এভাবেই হয়েছেন।
প্রশ্ন: বিসিএল থেকে প্রিমিয়ার লিগে উঠেও খেলছে না গোপালগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব।
কাজী সালাউদ্দিন: তাদেরই জিজ্ঞেস করেন। অর্থ নাই বলে সাইফ পাওয়ার তো চলে গেছে। খালি গোপালগঞ্জ বলেন কেন? সাইফ পাওয়ার তো একই কাজ করেছে। যারা এসে চলে যায়, তাদের অবশ্যই ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করা উচিত। সাইফ পাওয়ার একসময় ফুটবলে অনেক প্রেম দেখাইছে। লিগের মধ্য থেকেই চলে গেছে। এসে চলে যাওয়ার মানেই হলো ফুটবলের প্রতি আবেগ আর ভালোবাসা নাই। আমি এখানে বসে রয়েছি কেন। আমি স্বাধীনতা যুদ্ধ করে আসছি। ইতিহাসের পৃষ্ঠাগুলোতে আমার নাম এসেছে। আমি জাতীয় দলে খেলে আসছি, কোচিং করিয়েছি। বাংলাদেশের এমন কোনো ট্রফি নেই, যেটা আমি জিতিনি। আপনারা আমাকে গালাগাল করেন। অথচ আমি ১৫-১৬ বছর ধরে সাউথ এশিয়ার সভাপতি হিসেবে আছি। নির্বাচনের আগে ভারত প্রস্তাব দেয়, তার পর পাকিস্তান দেয়। আপনাদের কাছে পেপার আর টেলিভিশনে আমি খারাপ। তাহলে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপের মানুষের কাছে আমি কেন এতটা জনপ্রিয়? আমার মধ্যে কিছু আছে বলেই তো তারা বারবার চায়। (দৈনক সমকাল)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আমি আরেকবার নির্বাচন করব : কাজী সালাউদ্দিন

প্রকাশের সময় : ০১:১৪:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩

স্পোর্টস ডেস্ক: ঘরোয়া ফুটবলের কিংবদন্তি থেকে হয়েছেন সংগঠক। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে চার মেয়াদ পার করছেন কাজী সালাউদ্দিন। তাঁর সময়ে গত বছর নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। এই বছর পুরুষ এবং নারী ফুটবলের রেজাল্টও ভালো হয়েছে। সমালোচনাও আছে তাকে নিয়ে। নিষিদ্ধ সাবেক সাধারণ সম্পাদককে প্রশ্রয় দেওয়া, বাফুফের নির্বাহী কমিটি ছাড়াই একক সিদ্ধান্ত নেওয়া, বিসিবি সভাপতির সঙ্গে বাকযুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়াসহ আরও অনেক বিষয়ে বিতর্কের জন্ম দেওয়া। এসব নিয়ে গত ৬ ডিসেম্বর) বুধবার দৈনিক সমকালের সঙ্গে ফেডারেশনের নিজ কার্যালয়ে কথা বলেছেন কাজী সালাউদ্দিন। শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়।
প্রশ্ন: খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন কিংবদন্তি। সংগঠক হওয়ার পর আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ফুটবলকে কোথায় দেখতে চান?
কাজী সালাউদ্দিন: আমার লক্ষ্য, মেয়েরা যেন সাউথ এশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এটা দু-তিন বছর নিয়ন্ত্রণ করার পরের টার্গেট হলো আসিয়ান। এটাই আমাদের বড় টার্গেট। ছেলেদের ক্ষেত্রেও টার্গেট অনেকটা এ রকম। ভবিষ্যতে যে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ হবে, আর যদি বিদেশি দল না আসে, তাহলে ফাইনাল অবশ্যই বাংলাদেশ-ভারতই হবে এবং যে কেউই জিততে পারে। এখন আমরা মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে খেলি এবং লড়াই করি। আফগানিস্তান, লেবাননের সঙ্গে আমরা লড়াই করি।
প্রশ্ন: ফুটবলে ইতিবাচক খবরের মধ্যে বড় নেতিবাচক ছিল দুর্নীতির কারণে সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফিফা কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়া।
কাজী সালাউদ্দিন: এটা তো আমাদের ফাইন্যান্স কমিটির বিষয়। এই প্রশ্নের উত্তরটা ভালোভাবে দিতে পারবে ফাইন্যান্স কমিটি। তবে আমরা সব কিছুতেই অতিরিক্ত করে ফেলেছিলাম। আপনি যদি পুরো বইটা পড়েন, ওখানে লেখা আছে বাফুফে কোনো মালপত্র খরিদ করেনি, যেটা মার্কেটের থেকে বেশি দাম। বাফুফের কোনো ফাইন্যান্সিয়াল ক্ষতি হয়নি এবং লিখেছে সবকিছুই তারা সঠিকভাবে পেয়েছে। কিন্তু সিস্টেমটাই ভুল হয়েছে। সিস্টেমের সমস্যা হলো, অফিসের নির্বাহীরা দায়সারা কাজ করেছেন। সে জন্য তারা সাসপেন্ড হয়েছেন এবং প্রতিটি বিভাগই পরিবর্তন হয়েছে।
প্রশ্ন: তার পরও অনেকে বলছেনÑআপনার সায় পেয়েই সাবেক সাধারণ সম্পাদক অনিয়মগুলো করেছেন।
কাজী সালাউদ্দিন: এসব মিডিয়ার নাকি অন্যকিছু হচ্ছে, সেটা আপনি আমার চেয়ে ভালো জানেন।
প্রশ্ন: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে অনেকেরই ধারণা আপনি সরে গেলে ফুটবলের মঙ্গল হবে?
কাজী সালাউদ্দিন: এই প্রশ্ন আপনাদের কাছে। আপনারাই মাপবেন। আমার সবচেয়ে সুবিধা আছে, আমি ওয়েবসাইট দেখি না। আমার টেলিভিশনও নাই। আমি আমার কাজ করতেই থাকি। আমি তো একসময় এখানে থাকব না। দেখা যাক। আমি যখন ছিলাম না, তখন কী ছিল? একটু চিন্তা করে দেখেন। খেলাই তো হয়নি। ওইটা তো বলেন না। খেলার জন্য এখানে প্লেয়াররা স্ট্রাইক করত। আমার কথা বিশ্বাস না হলে দু-তিনজনের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন। আপনি তো রাস্তার ১০ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, প্লেয়ারদের তো নেননি। সেদিন জিকো (গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো) এসে বলে গেছে, প্রেসিডেন্ট সাহেব আপনি থাকাতে আমরা গাড়ি চালাই। কারণ, লিগ ধারাবাহিক হয় এবং প্রতি বছরই ফুটবলাররা পয়সা পায়। যাই হচ্ছে, সেটা আসলে আপনাদের (মিডিয়ার) তৈরি করা। আমি যদি এতই খারাপ হতাম, তাহলে সাউথ এশিয়ায় টানা চারবার সভাপতি হতে পারতাম না।
প্রশ্ন: টানা চারবার নির্বাচিত হয়েছেন। সামনে (সম্ভবত ২০২৪ সালের অক্টোবর) আরেকটি নির্বাচন। আপনি কি আবারও নির্বাচনে লড়বেন?
কাজী সালাউদ্দিন: হ্যাঁ, আমি আরেকবার নির্বাচন করব। ফুটবলে আরও কিছু কাজ করার আছে আমার। আমরা সাউথ এশিয়ায় আধিপত্য করতে চাই। এর সঙ্গে মধ্য এশিয়াতে নিজেদের শক্তির জানান দিতে চাই। এটা করার জন্য আমি আরেকটা টার্ম নির্বাচন করব। আর এটাই হবে আমার শেষ নির্বাচন।
প্রশ্ন: এর আগে ভিশন-২০২২ এর কথা বলেছিলেন। আগামীতে নির্বাচিত হলে নতুন কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন কিনা?
কাজী সালাউদ্দিন: তখন আমি যেটা বলেছিলাম, সেটা আপনারা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছিলেন। আমি বলেছিলাম, আমাদের একটা ভিশন থাকতে হবে। আমরা চেষ্টা করব, যে কোনোভাবে ২০২২ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা যায় কিনা। সেটা যে অসম্ভব, সেই কথাটিও বলেছিলাম। আসলে আপনাকে তো একটা ভিশন নিয়ে নামতে হবে। আমি ক্লাস টুতে পড়ি, ম্যাট্রিক দেব, ইন্টার দেব, ফাইনাল দেব, মাস্টার্স করব। আমার যদি কোনো ভিশনই না থাকে, তাহলে আমি কীভাবে এগুলো করব। এই কথাটিই বলেছিলাম। কিন্তু সেটাকে আপনারা বিকৃত করে বহুরকমভাবে নিয়ে গেছেন। আপনাদের কলম আছে, বন্দুক আছে তাই পারেন।
প্রশ্ন: আপনি বলেছেন ছেলেদের ফুটবলে ক্লাবগুলোর অনেক অবদান। অনেক সময় ক্লাবগুলোর অভিযোগ থাকে, তারা অংশগ্রহণ মানি পায় না।
কাজী সালাউদ্দিন: ক্লাবের অভিযোগ ঠিক। আমার তো সরকারের কোনো ফান্ড নাই যে, আমি তাকে দেব। স্পন্সর যদি টাকা দেয়, সেটা আমি সবাইকে দিই। ফিফার টাকা থেকে আমি ১০ ডলার কাউকে দিতে পারব না। আমরা সিস্টেমে যে সমস্যায় পড়েছিলাম, সেটা হলো ফিফার অর্থ আমরা জেলা ও ক্লাবকে দিয়েছিলাম।
প্রশ্ন: কিন্তু জেলা পর্যায়ে লীগ তো ওইভাবে হয় না।
কাজী সালাউদ্দিন: জেলা পর্যায়ে আমার লীগ তো ফিফা করবে না। আপনি তো প্রেসিডেন্ট (জেলার সভাপতি) সেখানকার, জেলা লীগ করতে ৪-৫ লাখ টাকা লাগে, আপনি করেন। ফেডারেশন না পারলে ব্যক্তিগতভাবে আমি দুই থেকে তিনটি জেলাকে সাপোর্ট দিতে পারি; কিন্তু আমি তো ৬০-৭০ জেলাকে দিতে পারব না। আপনি জেলার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, আপনি যদি চার-পাঁচ লাখ টাকা উঠিয়ে লীগ করতে না পারেন, তাহলে টাকা দিলেও করতে পারবেন না।
প্রশ্ন: তাহলে আপনারা জেলাগুলোর বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশনে যাচ্ছেন না কেন?
কাজী সালাউদ্দিন: আমার পাওয়ার নেই অ্যাকশন নেওয়ার। আপনারাই তো তাদের বিরুদ্ধে লিখতে পারেন। আমি যদি লীগ চালু না রাখতে পারতাম, আপনারা আমাকে কী করতেন? আমি যে অর্থের জন্য মেয়েদের টিমকে বিদেশে পাঠাতে পারিনি, আমাকে তো ভোরবেলা থেকে সমালোচনা করেছিলেন। তাহলে ওদেরটা কেন ধরছেন না। কারণ, ওরা তো সালাউদ্দিন না।
প্রশ্ন: ফুটবলে জাতীয় দলের দারুণ একটা বছর কাটল। বাফুফে সভাপতি হিসেবে আপনার কেমন লাগছে?
কাজী সালাউদ্দিন: অবশ্যই বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য এটা দারুণ একটা বছর। এটা তো এক বছরে হয়নি, ধারাবাহিক কাজের ফসল। সিঙ্গাপুরের কাছে ২০১৭তে ৩ গোলে হেরেছিল মেয়েরা। তার পর মেয়েরা ট্রেনিং করে সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সিঙ্গাপুরকে ৮ গোল দিয়েছে। সবকিছুই কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় হয়েছে। সঠিক ট্রেনিং, সঠিক কোচিং ম্যানেজমেন্ট, সঠিক পরিকল্পনা– সবকিছুই সুন্দরভাবে হওয়াতেই কিন্তু মেয়েদের ফুটবল ভালো করেছে। ছেলেদেরটাতেও অনেক দিন ধরে মিক্সড রেজাল্ট হচ্ছিল। এখন ছেলেদের দল একটা পর্যায়ে চলে এসেছে।
প্রশ্ন: ঘরোয়া ফুটবলে সব সময় রেফারিং নিয়ে সমালোচনা হয়ে আসছে। যে কারণে আপনি ভিএআর আনার কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেটা তো বাস্তবায়ন করেননি।
কাজী সালাউদ্দিন: ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) তো আমি আজকেই আনতে চায়। কিন্তু আমাকে দুই মিলিয়ন ডলার কে দেবে? অর্থের জোগাড় না হলে ইচ্ছা করলেই তো সবকিছু করা যায় না। তবে আমি এটুকু বলতে পারি, খুব শিগগির বাংলাদেশে ভিএআর আসবে। আজকাল কিংবা পরশু আসবেই। তবে নতুন মৌসুমে আসবে কিনা, সেটার নিশ্চয়তা আমি দিতে পারব না। কারণ, আমার ওই রকম ফান্ড নেই।
প্রশ্ন: সাম্প্রতিক সময়ে বিসিবি সভাপতির সঙ্গে আপনার একটা মনস্তাত্তি¡ক লড়াই হয়েছিল। এটা নিয়ে কী বলবেন?
কাজী সালাউদ্দিন: আমি বলব, যা হয়েছে এগুলো মিডিয়ার সৃষ্টি। আমি তো কিছুই বলিনি। আপনারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আপনি কথা বলেন না কেন? আমি তো প্রাইম মিনিস্টারকে আপনাদের সামনে দেখিয়ে কথা বলব না। এটাই আমি বলেছিলাম। আমি তো কাউকে ছোট করার জন্য বলিনি। তার পরও তো তারা অনেক কথা বলেছিলেন। আমি তো উত্তর দিইনি। স্পটে আপনারা আমাকে খোঁচা দিয়ে দুইটা কথা বলাই দিয়েছেন। আর মন্ত্রী তো না বুঝে, না জেনে অনেক কথা বলেছেন।
প্রশ্ন: নির্বাহী কমিটির অনেকেরই অভিযোগ- আপনি নাকি সবার অগোচরে একাই অনেক সিদ্ধান্ত নেন।
কাজী সালাউদ্দিন: আমি যে ইমরুল হাসানকে লিগ কমিটির চেয়ারম্যান করেছি, সেটা তো বোর্ড মিটিং ছাড়াই করেছি। আমাকে বোর্ড ম্যান্ডেড দিয়েছে। আমি বলি, বোর্ডে যখন আমি একেকটা কমিটি বানাই, চেয়ারম্যান বানাইও আমি। আমাকে বোর্ড ম্যান্ডেড দিয়েছে- আপনি বানাই দেন। ইমরুলের কথা উঠেছে; কিন্তু সালাম মুর্শেদীকে যখন বানাইছি, সেটা তো একইভাবে। কাজী নাবিল আহমেদ আজকে যে জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান, সেগুলো একইভাবে। তাহলে এখানে কেন সমস্যা হবে?
প্রশ্ন: তাহলে বোর্ডের সদস্যরা কেন বাইরে গিয়ে সমালোচনা করে?
কাজী সালাউদ্দিন: এখানে নিয়মটা হলো বানানোর পরই ইসি সদস্যরা জানবে। নির্বাহী সদস্যদের আপনারা খোঁচাই করাইছেন। আমি তো নিয়মের বাইরে কাজ করিনি। আজকে যিনি যে পোস্টে আছেন, সবাই তো এভাবেই হয়েছেন।
প্রশ্ন: বিসিএল থেকে প্রিমিয়ার লিগে উঠেও খেলছে না গোপালগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব।
কাজী সালাউদ্দিন: তাদেরই জিজ্ঞেস করেন। অর্থ নাই বলে সাইফ পাওয়ার তো চলে গেছে। খালি গোপালগঞ্জ বলেন কেন? সাইফ পাওয়ার তো একই কাজ করেছে। যারা এসে চলে যায়, তাদের অবশ্যই ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করা উচিত। সাইফ পাওয়ার একসময় ফুটবলে অনেক প্রেম দেখাইছে। লিগের মধ্য থেকেই চলে গেছে। এসে চলে যাওয়ার মানেই হলো ফুটবলের প্রতি আবেগ আর ভালোবাসা নাই। আমি এখানে বসে রয়েছি কেন। আমি স্বাধীনতা যুদ্ধ করে আসছি। ইতিহাসের পৃষ্ঠাগুলোতে আমার নাম এসেছে। আমি জাতীয় দলে খেলে আসছি, কোচিং করিয়েছি। বাংলাদেশের এমন কোনো ট্রফি নেই, যেটা আমি জিতিনি। আপনারা আমাকে গালাগাল করেন। অথচ আমি ১৫-১৬ বছর ধরে সাউথ এশিয়ার সভাপতি হিসেবে আছি। নির্বাচনের আগে ভারত প্রস্তাব দেয়, তার পর পাকিস্তান দেয়। আপনাদের কাছে পেপার আর টেলিভিশনে আমি খারাপ। তাহলে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপের মানুষের কাছে আমি কেন এতটা জনপ্রিয়? আমার মধ্যে কিছু আছে বলেই তো তারা বারবার চায়। (দৈনক সমকাল)