নিউইয়র্ক ০১:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

এই প্রথমবার বছরজুড়ে তাপ দেড় ডিগ্রি ছাড়াল

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:১৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ১১৭ বার পঠিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এই প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা সারা বছর ধরেই ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পরিষেবা কর্তৃপক্ষ এই তথ্য দিয়েছে। বিশ্বনেতারা ২০১৫ সালে দীর্ঘমেয়াদি তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখতে চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। উষ্ণায়নের সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব এড়ানোর জন্য এ লক্ষ্যটি পূরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়।

ইইউয়ের ‘কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস’-এর তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়কালের উষ্ণায়ন ১.৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে।

প্রথমবারের মতো ঘটা তাপমাত্রার এই বছরব্যাপী সীমা লঙ্ঘনে ২০১৫ সালের গুরুত্বপূর্ণ প্যারিস চুক্তি ভেঙে যাচ্ছে না। তবে এটি দীর্ঘ মেয়াদে তা ভঙ্গ করার আরেক ধাপ কাছেই নিয়ে গেল বিশ্বকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কার্বন নিঃসরণ কমাতে জরুরি পদক্ষেপ এখনো উষ্ণায়নের গতিকে ধীর করতে পারে।

জাতিসংঘের জলবায়ু সংস্থার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক স্যার বব ওয়াটসন বিবিসি রেডিও ৪-এর টুডে অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে বলেন, ‘এটি গ্রহণযোগ্যতার মাত্রা ব্যাপকভাবে ছাড়িয়ে গেছে।’

‘দেখুন, এই বছর মাত্র দেড় ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতেই কী ঘটেছে? আমরা বন্যা দেখেছি, খরা দেখেছি, দেখেছি সারা বিশ্বে তাপপ্রবাহ ও দাবানল। আমরা কম কৃষি উৎপাদনশীলতা এবং পানির গুণ ও পরিমাণগত কিছু সমস্যাও দেখতে শুরু করেছি’, বলেন বব ওয়াটসন।

বিশ্বের সমুদ্রপৃষ্ঠও সর্বোচ্চ রেকর্ড গড় তাপমাত্রায় পৌঁছেছে, যা জলবায়ুসংক্রান্ত রেকর্ডের বিস্তৃত ধরনেরই আরেকটি প্রমাণ।

বৈশ্বিক তাপমাত্রা কতটা বেড়েছে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে কিছু মতভেদ আছে। তবে সবাই এ বিষয়ে একমত যে আধুনিককালে রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে পৃথিবী এখন পর্যন্ত তার সবচেয়ে উষ্ণ কালের মধ্যে রয়েছে। সম্ভবত আরো দীর্ঘ সময় তা থাকবে।

২০১৮ সালে জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনে বলা হয়, তীব্র তাপপ্রবাহ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বন্য প্রাণী হারিয়ে যাওয়ার মতো জলবায়ুু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি দেড় ডিগ্রির তুলনায় ২ ডিগ্রি উষ্ণতায় অনেক বেশি হবে।দীর্ঘমেয়াদি উষ্ণায়নের প্রবণতার পেছনে নিঃসন্দেহে মানুষের কার্যকলাপই বড় ভূমিকা রাখছে।

মানুষ প্রধানত তেল, কয়লা ও গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি জ্বালিয়ে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি করছে। জীবাশ্ম জ্বালানির দহন থেকে যে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নিঃসৃত হয় তা বায়ুমণ্ডলে আটকে থেকে পৃথিবীকে উষ্ণ করে তোলে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ‘এল নিনো’ নামে পরিচিত একটি প্রাকৃতিক ঘটনাও বায়ুর তাপমাত্রাকে আরেকটু বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে এল নিনোর জন্য সাধারণত তাপমাত্রা মাত্র ০.২ সেলসিয়াস বাড়ার কথা

এল নিনো শুরু হওয়ার সময়, ২০২৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বৈশ্বিক গড় বায়ুর তাপমাত্রা প্রায় দৈনিক ভিত্তিতে দেড় ডিগ্রি ছাড়িয়ে যেতে শুরু করে। এটি ২০২৪ সালেও অব্যাহত রয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে এল নিনো অবস্থার অবসান ঘটতে পারে। সেটা হলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রথমে সাময়িকভাবে স্থিতিশীল হয়ে পরে সামান্য হ্রাস পেতে পারে। এতে তাপমাত্রা সম্ভবত আগের মতো দেড় ডিগ্রির নিচে চলে যাবে। কিন্তু মানুষের কার্যকলাপ গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা এভাবে বাড়িয়ে যেতে থাকলে সামনের দশকগুলোতে তাপমাত্রা বাড়তেই থাকবে।

কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেনের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের বর্তমান হার চলতে থাকলে দীর্ঘ মেয়াদে গড় উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রিতে সীমিত করার লক্ষ্য পরবর্তী দশকের মধ্যেই পেরিয়ে যেতে পারে। এটি একটি বিশাল প্রতীকী মাইলফলক হবে। তবে এমন কোনো বড় পতন হবে না, যাতে জলবায়ু পরিবর্তন একেবারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তবে উষ্ণায়নের প্রতি দফা ছোট ছোট বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো ত্বরান্বিত হতে থাকবে। সেটা কেমন হবে গত ১২ মাসের চরম তাপপ্রবাহ, খরা, দাবানল ও বন্যা থেকে তার কিছু নমুনা আমরা পেয়েছি। বাড়তি অর্ধেক ডিগ্রি উষ্ণতা বৃদ্ধি (দেড় থেকে বেড়ে দুই ডিগ্রি হওয়া) ‘টিপিং পয়েন্ট’ অতিক্রম করার ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেবে। ‘টিপিং পয়েন্ট’ হচ্ছে জলবায়ুব্যবস্থার মধ্যে একটি সীমা। এটি অতিক্রম করলে দ্রুত এমন সব পরিবর্তন হতে পারে, যা আর পাল্টানো যাবে না। উদাহরণস্বরূপ—এমনটি হলে গ্রিনল্যান্ড ও পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার বরফের স্তর নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গলে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বিপর্যয়করভাবে বেড়ে যেতে পারে।

গবেষকরা অবশ্য জোর দিয়ে বলছেন, মানুষ এখনো বিশ্বের উষ্ণায়নের গতিপথ বদলাতে সক্ষম। বিশ্বের অনেক অঞ্চলে সৌরবিদ্যুতের প্রচলন ও বৈদ্যুতিক যানবাহনের মতো পরিবেশ অনুকূল প্রযুক্তির প্রসারে কিছু অগ্রগতিও হচ্ছে। সূত্র : বিবিসি।

হককথা/নাছরিন

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

এই প্রথমবার বছরজুড়ে তাপ দেড় ডিগ্রি ছাড়াল

প্রকাশের সময় : ০৪:১৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এই প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা সারা বছর ধরেই ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পরিষেবা কর্তৃপক্ষ এই তথ্য দিয়েছে। বিশ্বনেতারা ২০১৫ সালে দীর্ঘমেয়াদি তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখতে চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। উষ্ণায়নের সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব এড়ানোর জন্য এ লক্ষ্যটি পূরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়।

ইইউয়ের ‘কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস’-এর তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়কালের উষ্ণায়ন ১.৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে।

প্রথমবারের মতো ঘটা তাপমাত্রার এই বছরব্যাপী সীমা লঙ্ঘনে ২০১৫ সালের গুরুত্বপূর্ণ প্যারিস চুক্তি ভেঙে যাচ্ছে না। তবে এটি দীর্ঘ মেয়াদে তা ভঙ্গ করার আরেক ধাপ কাছেই নিয়ে গেল বিশ্বকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কার্বন নিঃসরণ কমাতে জরুরি পদক্ষেপ এখনো উষ্ণায়নের গতিকে ধীর করতে পারে।

জাতিসংঘের জলবায়ু সংস্থার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক স্যার বব ওয়াটসন বিবিসি রেডিও ৪-এর টুডে অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে বলেন, ‘এটি গ্রহণযোগ্যতার মাত্রা ব্যাপকভাবে ছাড়িয়ে গেছে।’

‘দেখুন, এই বছর মাত্র দেড় ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতেই কী ঘটেছে? আমরা বন্যা দেখেছি, খরা দেখেছি, দেখেছি সারা বিশ্বে তাপপ্রবাহ ও দাবানল। আমরা কম কৃষি উৎপাদনশীলতা এবং পানির গুণ ও পরিমাণগত কিছু সমস্যাও দেখতে শুরু করেছি’, বলেন বব ওয়াটসন।

বিশ্বের সমুদ্রপৃষ্ঠও সর্বোচ্চ রেকর্ড গড় তাপমাত্রায় পৌঁছেছে, যা জলবায়ুসংক্রান্ত রেকর্ডের বিস্তৃত ধরনেরই আরেকটি প্রমাণ।

বৈশ্বিক তাপমাত্রা কতটা বেড়েছে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে কিছু মতভেদ আছে। তবে সবাই এ বিষয়ে একমত যে আধুনিককালে রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে পৃথিবী এখন পর্যন্ত তার সবচেয়ে উষ্ণ কালের মধ্যে রয়েছে। সম্ভবত আরো দীর্ঘ সময় তা থাকবে।

২০১৮ সালে জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনে বলা হয়, তীব্র তাপপ্রবাহ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বন্য প্রাণী হারিয়ে যাওয়ার মতো জলবায়ুু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি দেড় ডিগ্রির তুলনায় ২ ডিগ্রি উষ্ণতায় অনেক বেশি হবে।দীর্ঘমেয়াদি উষ্ণায়নের প্রবণতার পেছনে নিঃসন্দেহে মানুষের কার্যকলাপই বড় ভূমিকা রাখছে।

মানুষ প্রধানত তেল, কয়লা ও গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি জ্বালিয়ে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি করছে। জীবাশ্ম জ্বালানির দহন থেকে যে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নিঃসৃত হয় তা বায়ুমণ্ডলে আটকে থেকে পৃথিবীকে উষ্ণ করে তোলে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ‘এল নিনো’ নামে পরিচিত একটি প্রাকৃতিক ঘটনাও বায়ুর তাপমাত্রাকে আরেকটু বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে এল নিনোর জন্য সাধারণত তাপমাত্রা মাত্র ০.২ সেলসিয়াস বাড়ার কথা

এল নিনো শুরু হওয়ার সময়, ২০২৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বৈশ্বিক গড় বায়ুর তাপমাত্রা প্রায় দৈনিক ভিত্তিতে দেড় ডিগ্রি ছাড়িয়ে যেতে শুরু করে। এটি ২০২৪ সালেও অব্যাহত রয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে এল নিনো অবস্থার অবসান ঘটতে পারে। সেটা হলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রথমে সাময়িকভাবে স্থিতিশীল হয়ে পরে সামান্য হ্রাস পেতে পারে। এতে তাপমাত্রা সম্ভবত আগের মতো দেড় ডিগ্রির নিচে চলে যাবে। কিন্তু মানুষের কার্যকলাপ গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা এভাবে বাড়িয়ে যেতে থাকলে সামনের দশকগুলোতে তাপমাত্রা বাড়তেই থাকবে।

কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেনের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের বর্তমান হার চলতে থাকলে দীর্ঘ মেয়াদে গড় উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রিতে সীমিত করার লক্ষ্য পরবর্তী দশকের মধ্যেই পেরিয়ে যেতে পারে। এটি একটি বিশাল প্রতীকী মাইলফলক হবে। তবে এমন কোনো বড় পতন হবে না, যাতে জলবায়ু পরিবর্তন একেবারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তবে উষ্ণায়নের প্রতি দফা ছোট ছোট বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো ত্বরান্বিত হতে থাকবে। সেটা কেমন হবে গত ১২ মাসের চরম তাপপ্রবাহ, খরা, দাবানল ও বন্যা থেকে তার কিছু নমুনা আমরা পেয়েছি। বাড়তি অর্ধেক ডিগ্রি উষ্ণতা বৃদ্ধি (দেড় থেকে বেড়ে দুই ডিগ্রি হওয়া) ‘টিপিং পয়েন্ট’ অতিক্রম করার ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেবে। ‘টিপিং পয়েন্ট’ হচ্ছে জলবায়ুব্যবস্থার মধ্যে একটি সীমা। এটি অতিক্রম করলে দ্রুত এমন সব পরিবর্তন হতে পারে, যা আর পাল্টানো যাবে না। উদাহরণস্বরূপ—এমনটি হলে গ্রিনল্যান্ড ও পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার বরফের স্তর নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গলে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বিপর্যয়করভাবে বেড়ে যেতে পারে।

গবেষকরা অবশ্য জোর দিয়ে বলছেন, মানুষ এখনো বিশ্বের উষ্ণায়নের গতিপথ বদলাতে সক্ষম। বিশ্বের অনেক অঞ্চলে সৌরবিদ্যুতের প্রচলন ও বৈদ্যুতিক যানবাহনের মতো পরিবেশ অনুকূল প্রযুক্তির প্রসারে কিছু অগ্রগতিও হচ্ছে। সূত্র : বিবিসি।

হককথা/নাছরিন