যেসব শর্তে পদত্যাগের হুমকি দিলেন ইসরায়েলি মন্ত্রী
- প্রকাশের সময় : ০৬:২৪:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
- / ৬৭ বার পঠিত
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা উপত্যকার জন্য যুদ্ধ-পরবর্তী কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন দেশটির যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ। তিনি এ ধরনের একটি পরিকল্পনার মাধ্যমে ‘কৌশলগত লক্ষ্য’ অর্জনের জন্য ৮ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন। এ লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে গাজায় হামাসের শাসনের অবসান এবং সেখানে একটি বহুজাতিক বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা।
বেনি গ্যান্টজ বলেছেন, ‘আপনি যদি ব্যক্তির ওপর জাতীয় স্বার্থকে রাখেন, তাহলে সংগ্রামে আমাদের অংশীদার হিসেবে পাবেন।
কিন্তু আপনি যদি ধর্মান্ধতার পথ বেছে নেন এবং জাতিকে রসাতলে নিয়ে যান, তাহলে আমরা সরকার থেকে চলে যেতে বাধ্য হব।’
এদিকে নেতানিয়াহু এ মন্তব্যকে বাতিল করে দিয়ে যে শব্দ উল্লেখ করেছেন তার অর্থ হলো- ‘ইসরায়েলের জন্য পরাজয়।’
গাজা উপত্যকার উভয় প্রান্তে লড়াই যখন বাড়ছে, তখন যুদ্ধের নির্দেশনা নিয়ে বা কিভাবে পরিচালিত হবে তা নিয়ে ইসরায়েলে রাজনৈতিক বিবাদ বেড়েই চলেছে। ইসরায়েলি বাহিনী গাজা শহরের কাছে জাবালিয়ার ভেতরের দিকে যাচ্ছে।
সেখানেই গাজার ঐতিহাসিক শরণার্থীশিবিরগুলোর একটি। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী আগেই বলেছে, এলাকাটি থেকে হামাস যোদ্ধাদের সরিয়ে দিয়েছে তারা।
এর আগে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট নেতানিয়াহুর কাছে অনুরোধ করেছেন, তিনি যেন প্রকাশ্যেই ঘোষণা দেন যে গাজার সামরিক-বেসামরিক শাসনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা ইসরায়েলের নেই। গ্যালান্ট বলেছেন, তিনি কয়েক মাস ধরে এটি বলে যাচ্ছেন।
কিন্তু কোনো প্রত্যুত্তর পাচ্ছেন না।
গ্যালান্ট ও গ্যান্টজ বলেছেন, গাজায় সামরিক নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখাটা ইসরায়েলের জন্য নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি করবে। নেতানিয়াহুর জোট সরকারের ডানপন্থী সদস্যরা অবশ্য বিশ্বাস করেন, হামাসকে পরাজিত করতে গাজার ওপর নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখা দরকার।
শনিবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে গ্যান্টজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উদ্দেশে বলেছেন, ‘ইসরায়েলের মানুষ আপনাকে দেখছে। আপনাকে অবশ্যই ইহুদিবাদ ও অবিশ্বাস, ঐক্য ও বিভক্তি, দায়িত্ব ও অরাজকতা, বিজয় কিংবা বিপর্যয়ের মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হবে।
গ্যান্টজের ছয়টি কৌশলগত লক্ষ্যের মধ্যে আরো আছে—এখনো হামাসের হাতে থাকা সব ইসরায়েলি ও বিদেশি জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা এবং ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের উত্তর গাজায় ফিরিয়ে আনা। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ইসরায়েলের সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা অব্যাহত রাখা উচিত। তার মতে, এটি করতে হবে ইরান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মুক্ত বিশ্ব ও পশ্চিমাদের নিয়ে একটি জোট গড়ার সমন্বিত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে।
এ বক্তব্যের জবাবে নেতানিয়াহু বলেছেন, গ্যান্টজের দাবি যুদ্ধের অবসান ঘটাবে এবং ইসরায়েলের পরাজয় নিয়ে আসবে, জিম্মিদের পরিত্যক্ত করে ফেলবে, হামাসকে অক্ষত রাখবে এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে নিয়ে যাবে।
গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ঢুকে হামলা চালালে প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়। পাশাপাশি জিম্মি করা হয় অনেককে। এরপর ইসরায়েলের এই যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছিল। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলার পর থেকে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক অভিযানে গাজায় ৩৫ হাজার ৩৮৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রধান হারজি হালেভিও একটি কৌশল প্রণয়নের জন্য নেতানিয়াহুর ওপর চাপ তৈরি করেছেন বলে দেশটির সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, ইসরায়েলি সেনারা আবারও গাজার উত্তরাঞ্চলীয় এলাকায় প্রবেশ করছে। এলাকাটিকে আগেই হামাসমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল।
গ্যান্টজ প্রস্তাব করেছেন, মার্কিন, ইউরোপীয়, আরব ও ফিলিস্তিনিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রশাসন গাজার বেসামরিক বিষয়গুলোর ব্যবস্থাপনা করতে পারবে। এর মধ্যেই সেখানে ভবিষ্যতের বিকল্প সরকারের ভিত্তি আছে বলে মনে করেন তিনি। একই সঙ্গে ইসরায়েল সেখানকার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে বলেও মত দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে জাবালিয়াতে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সাথে তাদের লড়াই চলছে। ইসরায়েলি হামলায় সেখানে অনেক মানুষ নিহত হয়েছে বলে ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছে।
এদিকে শনিবার গাজার উত্তর অংশের কিছু এলাকা থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ইসরায়েল। সেখান থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট ছোড়া হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। একই সঙ্গে শনিবারই পূর্ব রাফা ও গাজার দক্ষিণে বিমান হামলা চালানো হয়। এর আগে গত সপ্তাহে গাজার দক্ষিণে অভিযান চালিয়েছিল ইসরায়েল। হামাসের শেষ ঘাঁটি উৎখাতের জন্য গাজায় প্রবেশের প্রয়োজনের কথা বলা হয়েছিল তখন।
জাতিসংঘের ত্রাণ ও সাহায্য সংস্থা বিষয়ক প্রধান ফিলিপ্পি লাজ্জারিনি জানিয়েছেন, রাফা শহর ছেড়ে প্রায় আট লাখ ফিলিস্তিনি খান ইউনিস কিংবা উপকূলীয় এলাকায় আশ্রয় খুঁজছে। তিনি বলেন, ‘লোকজন যখন যাচ্ছে তখন তাদের সুরক্ষা বা নিরাপদ প্যাসেজ না থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রত্যেকবার তাদের দরকারি জিনিসপত্র ফেলে চলে যেতে হচ্ছে। গাজায় মানুষ নিরাপদে চলাচল করতে পারছে কিংবা মানবিক জোনের যে কথা বলা হচ্ছে তা মিথ্যা। প্রতিবার এ বিষয়টি বেসামরিক নাগরিকদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে।’ সূত্র : বিবিসি