শোকস্তব্ধ রাশিয়া, উদ্ধারকাজ সমাপ্ত, চলছে তদন্ত
- প্রকাশের সময় : ০৪:১৬:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪
- / ৩৫ বার পঠিত
মস্কোতে ক্রোকাস সিটি হল কনসার্ট ভেন্যুর বাইরে নিহতের জন্য তৈরি একটি অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে একটি মোমবাতি জ্বালাচ্ছেন। ছবি: রয়টার্স
কনসার্ট হলে হামলার পর শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাশিয়া জুড়ে। নিহতদের স্মরণে জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে। ইসলামিক স্টেটের খোরাসান প্রদেশের শাখা (আইএসআইএস-কে) হামলার দায় স্বীকার করেছে। এদিকে কিয়েভের দৃঢ় প্রত্যাখ্যান সত্ত্বেও এ ঘটনার ইউক্রেনীয় সংযোগ খোঁজার চেষ্টা করছে রাশিয়া। প্রায় দুই দশক পর রাশিয়ায় এমন মারাত্মক হামলার ঘটনা ঘটেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আনাতোলি আন্তোনভ গতকাল রবিবার রুশ বার্তা সংস্থা আরআইএ নভোস্তিকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে আগে থেকে হামলার বিষয়ে কোনো সতর্কবার্তা বা গোয়েন্দা তথ্য রাশিয়াকে দেয়নি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে হোয়াইট হাউজ কিংবা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি তার। রাষ্ট্রদূত বলেন, সন্ত্রাসী হামলা এবং পশ্চিমাদের হাইব্রিড যুদ্ধ রাশিয়ার চলার পথ ও বৈদেশিক নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে না। আন্তোনভ বলেন, তারা (কিয়েভে) যা কিছু সরবরাহ করছে, সবই ধ্বংস করে দেওয়া হবে। এদিকে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭ জনে পৌঁছেছে বলে তদন্ত কমিটি জানিয়েছে। এর মধ্যে তিনজন শিশু।
রাশিয়া জুড়ে শোক, প্রতিশোধের আকাঙ্ক্ষা
হামলায় নিহতদের স্মরণে গতকাল রবিবার রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করেছে রাশিয়া। শনিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট পুতিন ২৪ মার্চ এক দিনের এই রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী, রবিবার দেশটিতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। কেবল রাশিয়ায় নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রুশ দূতাবাসের সামনে রাশিয়ার নাগরিকরা ফুল দিয়ে শুক্রবার নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। প্রেসিডেন্ট পুতিনও মোমবাতি প্রজ্জ্বালন করে নিহতের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
বিশ্বের উচ্চতম ভবন আরব আমিরাতে দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় আলোকিত হয় রাশিয়ার পতাকার রঙে। মস্কোর ক্রোকাস সিটি কনসার্ট হলে সন্ত্রসী হামলায় হতাহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বুর্জ খলিফার সম্মুখভাগে আরবি ও ইংরেজি অক্ষরে লেখা ছিল ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত রাশিয়াকে সমর্থন করে’। দুবাই কর্তৃপক্ষ এবং ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি ইমার এই আলোকসজ্জা করার পদক্ষেপ নিয়েছিল। কয়েক মিনিট ধরে চলে এই শ্রদ্ধা প্রদর্শন। বুর্জ খলিফার পাশাপাশি খলিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন, তেল কোম্পানি ‘আবুধাবি ন্যাশনাল ওয়েল কোম্পানি (এডিএনওসি), প্রদর্শনী সংস্থা আবুধাবি ন্যাশনাল এক্সিবিশন সেন্টারসহ (এডিএনইসি) আরো কিছু ভবন রাশিয়ার পতাকার রঙে আলোকিত করা হয়।
মৃত্যুর বদলা মৃত্যুতেই হোক, কনসার্ট হলে সন্ত্রাসী হামলার পরই আওয়াজ উঠতে শুরু করেছে রাশিয়ায়। এই হামলার নিন্দা করেছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। তার হুঁশিয়ারি, যেভাবে কনসার্ট হলে জঙ্গিরা নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে, ঠিক সেই ভাবেই যেন কোনো বাছবিচার না করে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি
উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি টানা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ‘তাস’। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত সর্বমোট ১৩৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে তিনজন শিশু। নিহতদের মধ্যে ৬২ জনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাকিদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলে জানানো হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান শেষ হলেও আশপাশের এলাকায় অভিযান অব্যাহত রাখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশিত এক বার্তায় গভর্নর বলেন, ‘দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে, তবে বাইরের এলাকায় অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে।’
রাশিয়ার তদন্ত কমিটি বলেছে, সন্ত্রাসীরা কনসার্ট হল প্রাঙ্গণে আগুন দিতে দাহ্য জাতীয় তরল পদার্থ ব্যবহার করেছে। পরে হেলিকপ্টার এনে ১৬০ টন পানি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তারপরেও আগুন পুরোপুরি নেভাতে ১০ ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে। এর মধ্যে সন্দেহভাজনরা সরে পড়ে। পুরো হামলার ঘটনাটি ছিল ২০ মিনিটের মতো। অনেকেই নিহত হন গুলিতে। আর কিছু নিহত হন ধোঁয়ায় শ্বাসরোধ হয়ে। তবে পিকনিক ব্যান্ডের সদস্যরা অক্ষত রয়েছেন।
সাড়ে পাঁচ হাজার ডলার দেওয়া হয়
কনসার্ট হলে হামলায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার এক ব্যক্তি জানিয়েছেন যে, হামলা চালানোর জন্য তাকে ৫ লাখ রুবল বা ৫ হাজার ৪০০ ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। রুশ সংবাদ মাধ্যম আরটির এডিটর-ইন-চিফ মার্গারিটা সিমোনিয়ানের একটি টেলিগ্রাম পোস্টের বরাত দিয়ে গতকাল এই তথ্য জানিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস। ‘টাকার জন্য আমি ক্রোকাসে মানুষের ওপর গুলি ছুড়েছি। আমাকে প্রায় ৫ লাখ রুবল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন সন্দোহভাজন ঐ ব্যক্তি। হামলার আগেই ঐ ব্যক্তিকে কার্ডে প্রতিশ্রুত অর্থের অর্ধেক অগ্রিম পরিশোধ করা হয়েছিল। এছাড়া কাজ শেষ হওয়ার পর বাকি টাকা দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছিল। যদিও গ্রেফতারের আগে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের হাত থেকে পালাতে গিয়ে ঐ ব্যক্তি কার্ডটি হারিয়ে ফেলেছেন। —বিবিসি, তাস ও আলজাজিরা
হককথা/নাছরিন