পাকিস্তানের নির্বাচন : বিপরীত ভূমিকায় ইমরান ও নওয়াজ
- প্রকাশের সময় : ০৩:২৫:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ১০৬ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ব্যাপক বিতর্কের সূত্রপাত করে পাকিস্তানে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। বরাবর সামরিক হস্তক্ষেপের কারণে দেশটির কোনো প্রধানমন্ত্রী মেয়াদকাল পূর্ণ করতে পারেননি। এবারের নির্বাচনেও সামরিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে।
সেনাবাহিনীর এককালের পছন্দের মানুষ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের এক দিনের ব্যবধানে দুটি মামলায় মোট ২৪ বছরের সাজা হয়েছে।
অন্যদিকে আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ নির্বাসন থেকে ফিরে একের পর এক মামলা থেকে খালাস পেয়ে গেছেন। স্বাধীনতার পর থেকে বরাবর সামরিক বাহিনীর প্রভাবের ছায়ায় থাকা পাকিস্তানে এযাবৎকালের কোনো নির্বাচনই বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। তবে এবারের নির্বাচন দৃশ্যত সব বিতর্ককে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
এবারের নির্বাচন কেন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ
প্রতিবেশী ইরান ও আফগানিস্তানের সীমান্তেও অস্থিরতা চলছে। পুরনো মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক সাম্প্রতিককালে অম্ল-মধুর। উঠতি বৈশ্বিক শক্তি চীনেরও পাকিস্তানের সঙ্গে রয়েছে পুরনো সম্পর্ক ও স্বার্থ। পারমাণবিক শক্তিধর দেশটিতে কারা ক্ষমতায় আসবে প্রতিবেশী ও মিত্রদের কাছে তার গুরুত্ব তাই অপরিসীম।
কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানের ক্ষমতায় বসা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নানা তৎপরতা চলছে। সর্বশেষ নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ২০২২ সালে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয় মুসলিম লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। গত আগস্টে সেই সরকারের পরিবর্তে ক্ষমতায় বসে অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সম্প্রতি প্রতিবেশী ইরানের সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় পাকিস্তানের।
এটি ছাড়াও বৈদেশিক আর্থিক সহায়তা ও বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে এই মুহূর্তে দেশটিতে একটি স্থিতিশীল সরকার প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকেই।
নওয়াজ শরিফের ‘শাপমোচন’
লন্ডনে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটসংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় সরকারি পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) নেতা নওয়াজ শরিফ। দেশত্যাগের পর লন্ডনে ছয় বছর স্বেচ্ছা নির্বাসন কাটিয়ে গত বছর পাকিস্তানে ফেরেন তিনি। ২০২২ সালে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নওয়াজের ভাই শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বে তাঁর দল পিএমএল-এন দেশের নেতৃত্বে আসে। এমন প্রেক্ষাপটে গত দুই মাসে সব ধরনের ফৌজদারি অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন নওয়াজ। অনেকের দাবি, ইমরান খানের সঙ্গে বিবাদের পর সামরিক বাহিনী ও বিচার বিভাগ থেকে যে সহায়তা নওয়াজ পেয়েছেন, তা-ই চতুর্থ মেয়াদে তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ প্রশস্ত করেছে। তবে নওয়াজ বেশ ভালো করেই জানেন, সেনাবাহিনী যেকোনো মুহূর্তে অবস্থান বদলাতে পারে।
ইমরান খানের কঠিন দুঃসময়
এদিকে তিন বছরের সাজা মাথায় নিয়ে কারাগারে বন্দি ইমরান খান এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে এক দিনের ব্যবধানে প্রথমে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ফাঁসের মামলায় ১০ বছর এবং পরে তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় ১৪ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তাঁর। ইমরানের সমর্থকরা এই রায়কে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এবং ‘ষড়যন্ত্র’ আখ্যা দিয়েছেন।
ইমরান খানের উত্থান ও পতন—দুইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সেনাবাহিনীর নাম। ইমরানের আমলে পাকিস্তানের অর্থনীতি ধসে পড়ে, জীবনযাত্রার ব্যয় হয় আকাশচুম্বী। এর পেছনে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ছাড়াও ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রভাব ছিল। পিটিআই শাসনামলে রাজনীতিকদের পোরা হয় জেলে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হয় ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়ে যায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইমরানের সমর্থন এতটাই কমে গেছে যে ২০২৩ সালে নির্বাচন হলে পরাজিত হতেন তিনি। তা সত্ত্বেও বেশ কয়েকটি জরিপে দেখা গেছে, এখনো দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক সাবেক এই ক্রিকেট তারকা।
ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে প্রচারণা চালানোর সমান সুযোগ না দেওয়া নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। দলটির অনেক নেতাই কারাগারে। অন্যরা পলাতক রয়েছেন অথবা দলত্যাগ করেছেন। বাধ্য হয়ে অনেককে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে হচ্ছে। এমনকি আদালতের সিদ্ধান্তে দলটির নির্বাচনী প্রতীক ক্রিকেট ব্যাটও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সূত্র : বিবিসি
হককথা/নাছরিন