নিউইয়র্ক ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

হ্যাপি কানাডা ডে, ইনডিড!

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:৫০:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন ২০১৭
  • / ১১৮৫ বার পঠিত

টরন্টো (কানাডা): পহেলা জুলাই, কানাডার শার্ধশততম জন্মবার্ষিকী! এ নিয়ে তিন কোটি ঊনষাট লাখ জনগোষ্ঠির শীত প্রধান এবং বহুজাতিক ও বন্ধুপ্রতিম কানাডার আটলান্টিক উপকূলের নিউফাউন্ডল্যান্ড ও লাব্রাডোর প্রদেশের বোনাভিস্তা থেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় পশ্চিম উপকূলের ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের ভ্যাঙ্কুভার নগরী এবং উত্তরে আর্টিক সাগর থেকে দক্ষিনের গ্রেট লেকস পর্যন্ত দিগন্ত প্রসারী আয়োজনের সবটাই মাতোয়ারা। যেন সব প্রান গ্রীষ্মকালীন এ আনন্দে মেতে উঠেছে একত্রে। সেই সঙ্গে এই সুবিশাল ‘১-৫-০’ আয়োজন উপলক্ষে সকল জাতীয় উদ্যান, ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান ও জলজ সংরক্ষণ, এমনকী রাজধানী অটোয়ার ঐতিহাসিক রিডো খালসহ সকল খাল থাকবে সবার প্রবেশাধিকারের জন্য উন্মুক্ত। তাই রাজধানীতে যেমন ঘটবে মহামান্য অতিথিদের উপস্থিতিতে শোভাযাত্রা, প্যারেড ও আগামী শতাব্দীর অভিলাষপূর্ণ অভিযাত্রায় জাতীয় নেতাদের বলিষ্ঠ স্বগতোক্তি ও আকাশে আতশবাজির সমারোহ, তেমনি দশটি প্রদেশ ও তিনটি অঞ্চলের রাজধানীতে অনুরূপ বিষয়াবলীর কোনো কিছুতেই কমতি ঘটবে না। এ কারণে প্রতিবারের জন্মবার্ষিকী উদযাপনের চেয়ে তা হবে অধিকতর আকর্ষনীয়, ভিন্নতর ও মনোমুগ্ধকর এবং বছর শুরুতেই সে জন্য সরকারি, বেসরকারি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সমূহের সব কিছুই রয়েছে ঠিকঠাক। এক কথায়, সব বয়সের মানুষের মিলন আনন্দে তা হবে পারিবারিক হৃদ্যতাপূর্ণ এক সৌহার্দ্যরে দিন!
তথাপি এই শার্ধশততম বার্ষিকীতেই কানাডার ইতিহাস সীমাবদ্ধ নয়। এখানে মানুষের প্রথম পদাপর্ণ ঘটে এশিয়া মহাদেশের ‘বেরিং’ উপকূল ধরে। উত্তরের আদিম ইনুয়িটরা শুরুতে জীবন নির্বাহে যেমন বল্গা-হরিণ, সিল, তিমি ও সিন্ধুঘোটক শিকার করে, তেমনি পশ্চিমের অধিবাসীরা মাছ, হরিণ, ভালুক ও জাতীয় প্রাণী বিভার, পূর্বের অধিবাসীরা শাক-সবজি, কুমড়া, ভুট্টা ও সুর্যমুখি চাষাবাদ এবং সমতল ভূমির মানুষেরা মহিষ জাতীয় ‘বাইসন’ শিকার করেছে। এরপর ৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রবল ঝড়ে জনৈক বেজারনি হারজল্ফসনের পদার্পণের মাধ্যমে ইউরোপ থেকে ‘ভাইকিংস’দের পদচারণা সূচিত হলেও ১০০১ থেকে ১৫ শতাব্দী পর্যন্ত কানাডা ছিল স্মৃতিবিস্মৃত। ১৪৯৭ সালে ইংল্যান্ডের রাজা সপ্তম হেনরি ইটালিয়ান অভিযাত্রী জঁ ক্যাবটকে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে নিউফাউন্ডল্যান্ডে পাঠান। পরবর্তীতে ১৫৩৪-৩৬ সালে ফরাসি জ্যাক কার্টিয়ারের আগমনে সেন্ট লরেন্স ডে’র সূত্রপাত ঘটে। কিন্তু ১৭ শতাব্দী পর্যন্ত কোনো স্থায়ী ইউরোপীয় বসতি স্থাপনের ইতিহাস নেই। ওই শতাব্দীর শুরুতে ফ্রান্সের মিশনারিরা এসে আদিমদের খ্রিষ্ট্রীয় ধর্মে দিক্ষীত করতে সচেষ্ট হয় ও ফরাসিরা লোমশ চামড়ার বাণিজ্য শুরু করে। একই সঙ্গে তারা অপ্রতিরোধ্য গুটি বসন্ত রোগেরও প্রাদুর্ভাব ঘটায়। ১৬১০ থেকে ১৬৩১ সালে ইংরেজ হেনরি হাডসন ও থমাস জেমস যথাক্রমে হাডসন ও জেমস বে’র গোড়াপত্তন ঘটান। ফলে ১৬৭০ থেকে ইংরেজ ও ফরাসিরা পরস্পরের সঙ্গে নানা দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং ১৭৫৬-১৭৫৩ সালে কানাডা ভূখন্ডে তাদের আধিপত্যের বিস্তৃতি দেখা দেয়। ১৭৭৫ সালে আমেরিকান বিপ্লব পরবর্তীকালে ৪০,০০০ মার্কিন সেনা ব্রিটিশ আনুগত্যে কানাডায় থিতু হয়। অতঃপর ১৮১২ সালে আমেরিকানদের আক্রমনের মুখে প্রতিশোধ পরায়ন কানাডিয়ানরা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি’র কৃষ্ণকায় প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস পুড়িয়ে দেয়, যা পরবর্তীতে রং করে ‘হোয়াইট হাউজ’ করা হয়। এরপর ১৮৬৭ সালে অন্টারিও, ক্যুইবেক, নোভা স্কশিয়া ও নিউ ব্রন্সউইক প্রদেশ নিয়ে গঠিত স্বাধীন কানাডা অর্থাৎ ‘ডোমিনিয়ন অব কানাডা’র প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন স্যার জন ম্যাকডোনাল্ড। সেই থেকে ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে অভাবনীয়ভাবে ইউরোপীয়দের আগমনে কানাডার জনসংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং চাষাবাদ ও শিল্প-করাখানার প্রভূত উন্নতি ঘটে, এমনকী ১৮৯৬ সালে ইউকোন অঞ্চলের ক্লোনডাইকে স্বর্নের সন্ধান ঘটায় জনবসতি ক্রমান্বয়ে ১৯৫১-১৯৬১ সালে ১ কোটি ৮০ লাখে উন্নীত হয়। এতে এশীয়রাও যুক্ত হয়। তা সত্ত্বেও প্রথম মহাযুদ্ধে কানাডার ৬০ হাজার সৈন্যের প্রানহানি বিশ্বে এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায় রচনা করে। ষাটের দশকে দেশটির অর্থনীতি সমৃদ্ধ হলেও আশি ও নব্বই ও ২০০৯ সালের পর্যায়ক্রমিক মন্দায় বেকারত্ব ১১ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায় এবং তা দ্রুতই দূরীভূত হয়।
আজকের কানাডা এখন অনেক বেশি সমৃদ্ধ এবং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সাতটি দেশের অন্যতম। জনসংখ্যার বিন্যাসে রয়েছে কানাডিয়ান: ১৮%, ইংলিশ: ১৯.৮%, ফ্রেঞ্চ: ১৫.৫%, স্কটিশ: ১৪.৪%, আইরিশ: ১৩.৮%, জার্মান: ৯.৮, ইটালিয়ান: ৪.৫%, চাইনিজ: ৪.৫% এবং নেটিভ ইন্ডিয়ান: ৪.২%।
জাতীয় ভাষা: ইংরেজি ও ফরাসি। ধর্মীয় জনগোষ্ঠিতে ক্যাথলিক: ৩৯%, প্রোটেস্টাইন: ২০.৩, মুসলিম: ৩.২, ধর্মহীন: ২৩.৯% ও অন্যান্য: ১৩.৬%।
সরকার কাঠামো: সংসদীয় গণতন্ত্র তবে সাংবিধানিকভাবে ব্রিটিশ রাজকীয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী: ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির নেতা জাস্টিন পিয়ের জেমস ট্রুডো।
প্রধান অর্থনীতি: গাড়ী নির্মাণ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, কেমিক্যাল, খনিজ, খাদ্যসামগ্রী, কাঠ, কাগজ ও মৎস্য। শষ্য: গম, বার্লি, তৈলবীজ, তামাক, ফলমূল ও শাক-সবজি। খনিজ সম্পদ: লৌহ, নিকেল, জিঙ্ক, শিশা, পটাশ, স্বর্ন, হীরা, রূপা, কয়লা, পেট্রোল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও হাইড্রোপাওয়ার। রেলপথ: ৮,৪২৫ মাইল। নিজস্ব গাড়ী: প্রায় ৬৬ ভাগ মানুষের রয়েছে। শিক্ষার হার: ৯৯%। বাধ্যতামূলক শিক্ষা: ৫-১৫ বছর। বেকারত্ব: ৬.৮%।
বাংলাদেশের সঙ্গে কানাডার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সূচনা ১৯৭২ সাল থেকে, তাতে ওই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারী স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতিদানের মাধ্যমে জেমস কার্ল বার্টলম্যান প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে রাজধানী ঢাকায় দায়িত্ব পালন করেন। বেসরকারিভাবে ধারণা করা হয়, কানাডায় বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা প্রায় এক লাখের কাছাকাছি এবং তাদের বসবাস টরন্টো, ভ্যাঙ্কুভার, মন্ট্রিয়ল, ক্যালগারি, এডমন্টন ও রাজধানী অটোয়ায়। তবে পরিসংখ্যান কানাডার হিসেবে ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল নাগাদ ৩১,৩২৭ জন বাংলাদেশী অভিবাসন গ্রহণ করেন। ফলে গত পয়তাল্লিশ বছরে কানাডার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, উন্নয়ন সহযোগিতা ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য রচিত হয়েছে। এতে প্রতি বছর বাংলাদেশ কানাডা থেকে প্রায় ১০ কোটি ডলারের অর্থনৈতিক সহযোগিতা পায়। ২০০৩ থেকে ২০১২ সালে কানাডা-বাংলাদেশের মধ্যকার বাণিজ্যের পরিধি তিনগুণ ছাড়িয়ে ১০৭ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। কানাডা বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে নিট অ্যাপারেল, ওভেন অ্যাপারেল, টেক্সটাইল পণ্য, হেডগিয়ার, মাছ, সামদ্রিক মাছ ও জুতা। তেমনি বাংলাদেশ কানাডা থেকে আমদানি করে সেরিয়াল, ভেজিটেবল, লৌহ, স্টিল, তৈলবীজ, সার, মেশিনারি ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ। তবে উল্লেখযোগ্যভাবে ভাষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ভ্যাঙ্কুভার প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালামের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের একুশে ফেব্রুয়ারী ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পায়, যা এখনও একাগ্রভাবে পালনে নিয়োজিত রয়েছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী নির্মল পাল ও ভ্যাঙ্কুভার প্রবাসী আমিনুল ইসলাম মওলাসহ অপরাপরা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

হ্যাপি কানাডা ডে, ইনডিড!

প্রকাশের সময় : ০৯:৫০:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন ২০১৭

টরন্টো (কানাডা): পহেলা জুলাই, কানাডার শার্ধশততম জন্মবার্ষিকী! এ নিয়ে তিন কোটি ঊনষাট লাখ জনগোষ্ঠির শীত প্রধান এবং বহুজাতিক ও বন্ধুপ্রতিম কানাডার আটলান্টিক উপকূলের নিউফাউন্ডল্যান্ড ও লাব্রাডোর প্রদেশের বোনাভিস্তা থেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় পশ্চিম উপকূলের ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের ভ্যাঙ্কুভার নগরী এবং উত্তরে আর্টিক সাগর থেকে দক্ষিনের গ্রেট লেকস পর্যন্ত দিগন্ত প্রসারী আয়োজনের সবটাই মাতোয়ারা। যেন সব প্রান গ্রীষ্মকালীন এ আনন্দে মেতে উঠেছে একত্রে। সেই সঙ্গে এই সুবিশাল ‘১-৫-০’ আয়োজন উপলক্ষে সকল জাতীয় উদ্যান, ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান ও জলজ সংরক্ষণ, এমনকী রাজধানী অটোয়ার ঐতিহাসিক রিডো খালসহ সকল খাল থাকবে সবার প্রবেশাধিকারের জন্য উন্মুক্ত। তাই রাজধানীতে যেমন ঘটবে মহামান্য অতিথিদের উপস্থিতিতে শোভাযাত্রা, প্যারেড ও আগামী শতাব্দীর অভিলাষপূর্ণ অভিযাত্রায় জাতীয় নেতাদের বলিষ্ঠ স্বগতোক্তি ও আকাশে আতশবাজির সমারোহ, তেমনি দশটি প্রদেশ ও তিনটি অঞ্চলের রাজধানীতে অনুরূপ বিষয়াবলীর কোনো কিছুতেই কমতি ঘটবে না। এ কারণে প্রতিবারের জন্মবার্ষিকী উদযাপনের চেয়ে তা হবে অধিকতর আকর্ষনীয়, ভিন্নতর ও মনোমুগ্ধকর এবং বছর শুরুতেই সে জন্য সরকারি, বেসরকারি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সমূহের সব কিছুই রয়েছে ঠিকঠাক। এক কথায়, সব বয়সের মানুষের মিলন আনন্দে তা হবে পারিবারিক হৃদ্যতাপূর্ণ এক সৌহার্দ্যরে দিন!
তথাপি এই শার্ধশততম বার্ষিকীতেই কানাডার ইতিহাস সীমাবদ্ধ নয়। এখানে মানুষের প্রথম পদাপর্ণ ঘটে এশিয়া মহাদেশের ‘বেরিং’ উপকূল ধরে। উত্তরের আদিম ইনুয়িটরা শুরুতে জীবন নির্বাহে যেমন বল্গা-হরিণ, সিল, তিমি ও সিন্ধুঘোটক শিকার করে, তেমনি পশ্চিমের অধিবাসীরা মাছ, হরিণ, ভালুক ও জাতীয় প্রাণী বিভার, পূর্বের অধিবাসীরা শাক-সবজি, কুমড়া, ভুট্টা ও সুর্যমুখি চাষাবাদ এবং সমতল ভূমির মানুষেরা মহিষ জাতীয় ‘বাইসন’ শিকার করেছে। এরপর ৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রবল ঝড়ে জনৈক বেজারনি হারজল্ফসনের পদার্পণের মাধ্যমে ইউরোপ থেকে ‘ভাইকিংস’দের পদচারণা সূচিত হলেও ১০০১ থেকে ১৫ শতাব্দী পর্যন্ত কানাডা ছিল স্মৃতিবিস্মৃত। ১৪৯৭ সালে ইংল্যান্ডের রাজা সপ্তম হেনরি ইটালিয়ান অভিযাত্রী জঁ ক্যাবটকে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে নিউফাউন্ডল্যান্ডে পাঠান। পরবর্তীতে ১৫৩৪-৩৬ সালে ফরাসি জ্যাক কার্টিয়ারের আগমনে সেন্ট লরেন্স ডে’র সূত্রপাত ঘটে। কিন্তু ১৭ শতাব্দী পর্যন্ত কোনো স্থায়ী ইউরোপীয় বসতি স্থাপনের ইতিহাস নেই। ওই শতাব্দীর শুরুতে ফ্রান্সের মিশনারিরা এসে আদিমদের খ্রিষ্ট্রীয় ধর্মে দিক্ষীত করতে সচেষ্ট হয় ও ফরাসিরা লোমশ চামড়ার বাণিজ্য শুরু করে। একই সঙ্গে তারা অপ্রতিরোধ্য গুটি বসন্ত রোগেরও প্রাদুর্ভাব ঘটায়। ১৬১০ থেকে ১৬৩১ সালে ইংরেজ হেনরি হাডসন ও থমাস জেমস যথাক্রমে হাডসন ও জেমস বে’র গোড়াপত্তন ঘটান। ফলে ১৬৭০ থেকে ইংরেজ ও ফরাসিরা পরস্পরের সঙ্গে নানা দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং ১৭৫৬-১৭৫৩ সালে কানাডা ভূখন্ডে তাদের আধিপত্যের বিস্তৃতি দেখা দেয়। ১৭৭৫ সালে আমেরিকান বিপ্লব পরবর্তীকালে ৪০,০০০ মার্কিন সেনা ব্রিটিশ আনুগত্যে কানাডায় থিতু হয়। অতঃপর ১৮১২ সালে আমেরিকানদের আক্রমনের মুখে প্রতিশোধ পরায়ন কানাডিয়ানরা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি’র কৃষ্ণকায় প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস পুড়িয়ে দেয়, যা পরবর্তীতে রং করে ‘হোয়াইট হাউজ’ করা হয়। এরপর ১৮৬৭ সালে অন্টারিও, ক্যুইবেক, নোভা স্কশিয়া ও নিউ ব্রন্সউইক প্রদেশ নিয়ে গঠিত স্বাধীন কানাডা অর্থাৎ ‘ডোমিনিয়ন অব কানাডা’র প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন স্যার জন ম্যাকডোনাল্ড। সেই থেকে ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে অভাবনীয়ভাবে ইউরোপীয়দের আগমনে কানাডার জনসংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং চাষাবাদ ও শিল্প-করাখানার প্রভূত উন্নতি ঘটে, এমনকী ১৮৯৬ সালে ইউকোন অঞ্চলের ক্লোনডাইকে স্বর্নের সন্ধান ঘটায় জনবসতি ক্রমান্বয়ে ১৯৫১-১৯৬১ সালে ১ কোটি ৮০ লাখে উন্নীত হয়। এতে এশীয়রাও যুক্ত হয়। তা সত্ত্বেও প্রথম মহাযুদ্ধে কানাডার ৬০ হাজার সৈন্যের প্রানহানি বিশ্বে এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায় রচনা করে। ষাটের দশকে দেশটির অর্থনীতি সমৃদ্ধ হলেও আশি ও নব্বই ও ২০০৯ সালের পর্যায়ক্রমিক মন্দায় বেকারত্ব ১১ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায় এবং তা দ্রুতই দূরীভূত হয়।
আজকের কানাডা এখন অনেক বেশি সমৃদ্ধ এবং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সাতটি দেশের অন্যতম। জনসংখ্যার বিন্যাসে রয়েছে কানাডিয়ান: ১৮%, ইংলিশ: ১৯.৮%, ফ্রেঞ্চ: ১৫.৫%, স্কটিশ: ১৪.৪%, আইরিশ: ১৩.৮%, জার্মান: ৯.৮, ইটালিয়ান: ৪.৫%, চাইনিজ: ৪.৫% এবং নেটিভ ইন্ডিয়ান: ৪.২%।
জাতীয় ভাষা: ইংরেজি ও ফরাসি। ধর্মীয় জনগোষ্ঠিতে ক্যাথলিক: ৩৯%, প্রোটেস্টাইন: ২০.৩, মুসলিম: ৩.২, ধর্মহীন: ২৩.৯% ও অন্যান্য: ১৩.৬%।
সরকার কাঠামো: সংসদীয় গণতন্ত্র তবে সাংবিধানিকভাবে ব্রিটিশ রাজকীয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী: ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির নেতা জাস্টিন পিয়ের জেমস ট্রুডো।
প্রধান অর্থনীতি: গাড়ী নির্মাণ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, কেমিক্যাল, খনিজ, খাদ্যসামগ্রী, কাঠ, কাগজ ও মৎস্য। শষ্য: গম, বার্লি, তৈলবীজ, তামাক, ফলমূল ও শাক-সবজি। খনিজ সম্পদ: লৌহ, নিকেল, জিঙ্ক, শিশা, পটাশ, স্বর্ন, হীরা, রূপা, কয়লা, পেট্রোল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও হাইড্রোপাওয়ার। রেলপথ: ৮,৪২৫ মাইল। নিজস্ব গাড়ী: প্রায় ৬৬ ভাগ মানুষের রয়েছে। শিক্ষার হার: ৯৯%। বাধ্যতামূলক শিক্ষা: ৫-১৫ বছর। বেকারত্ব: ৬.৮%।
বাংলাদেশের সঙ্গে কানাডার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সূচনা ১৯৭২ সাল থেকে, তাতে ওই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারী স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতিদানের মাধ্যমে জেমস কার্ল বার্টলম্যান প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে রাজধানী ঢাকায় দায়িত্ব পালন করেন। বেসরকারিভাবে ধারণা করা হয়, কানাডায় বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা প্রায় এক লাখের কাছাকাছি এবং তাদের বসবাস টরন্টো, ভ্যাঙ্কুভার, মন্ট্রিয়ল, ক্যালগারি, এডমন্টন ও রাজধানী অটোয়ায়। তবে পরিসংখ্যান কানাডার হিসেবে ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল নাগাদ ৩১,৩২৭ জন বাংলাদেশী অভিবাসন গ্রহণ করেন। ফলে গত পয়তাল্লিশ বছরে কানাডার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, উন্নয়ন সহযোগিতা ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য রচিত হয়েছে। এতে প্রতি বছর বাংলাদেশ কানাডা থেকে প্রায় ১০ কোটি ডলারের অর্থনৈতিক সহযোগিতা পায়। ২০০৩ থেকে ২০১২ সালে কানাডা-বাংলাদেশের মধ্যকার বাণিজ্যের পরিধি তিনগুণ ছাড়িয়ে ১০৭ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। কানাডা বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে নিট অ্যাপারেল, ওভেন অ্যাপারেল, টেক্সটাইল পণ্য, হেডগিয়ার, মাছ, সামদ্রিক মাছ ও জুতা। তেমনি বাংলাদেশ কানাডা থেকে আমদানি করে সেরিয়াল, ভেজিটেবল, লৌহ, স্টিল, তৈলবীজ, সার, মেশিনারি ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ। তবে উল্লেখযোগ্যভাবে ভাষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ভ্যাঙ্কুভার প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালামের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের একুশে ফেব্রুয়ারী ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পায়, যা এখনও একাগ্রভাবে পালনে নিয়োজিত রয়েছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী নির্মল পাল ও ভ্যাঙ্কুভার প্রবাসী আমিনুল ইসলাম মওলাসহ অপরাপরা।