মঙ্গলবার মহান মে দিবস
- প্রকাশের সময় : ০৯:৫৭:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মে ২০১৮
- / ১০১০ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: মঙ্গলবার মহান মে দিবস । দেশে প্রতি মাসে প্রায় ৭৮ জন শ্রমিক পেশাগত দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে। আর আহত হচ্ছে ১৪৩ জনের বেশি শ্রমিক। শ্রমজীবী মানুষদের কর্মপরিবেশ ও অধিকার নিয়ে এমন একটি বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ অক্যুপেশনাল সেইফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশন (ওশি) ২০১২ সালের জানুয়ারী থেকে চলতি ২০১৭ সালের বছরের মার্চ পর্যন্ত এই ৬৩ মাসের উপাত্ত দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে। এতে বুঝা যায়, সরকার ও শিল্প মালিকরা শ্রমিক স্বার্থের কথা যেভাবে বলে থাকে, বাস্তব চিত্র তার চেয়ে খুবই হতাশাব্যঞ্জক।
ওশি’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে ২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে পেশাগত দুর্ঘটনায় পতিত হয় ৮ হাজার ৯৫৩ জন। এর মধ্যে নিহত হয়েছে ৪ হাজার ৬১৬ জন। হতভাগ্য ও আহত শ্রমিকের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৭৩ জন। এছাড়া চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে পেশাগত দুর্ঘটনায় ২৯৪ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে ১০১ জন। নিহতদের মধ্যে ৬৮ জন প্রাতিষ্ঠানিক এবং ২২৬ জন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত ছিলেন। আহতদের ৪৫ জন প্রাতিষ্ঠানিক এবং ৫৬ জন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করতেন।
শ্রমিক শ্রেণির এমন দুরবস্থার মধ্যেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মঙ্গলবার মহান মে দিবস পালন করা হচ্ছে। এ দিনটি ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ হিসেবেও সমধিক পরিচিত। এবার দিবসটির ১৩২তম বার্ষিকী পালন হচ্ছে। এ দিনটি মাঠে-ঘাটে, কলকারখানায় খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে রক্তঝরা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টির দিন। শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার শপথের দিন আজ। দিনটি পালন উপলক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিস্তারিত কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
ইতিহাস বলে: দীর্ঘ বঞ্চনা আর শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৮৮৬ সালের এদিন বুকের রক্ত ঝরিয়েছিলেন শ্রমিকরা। এদিন শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। সে ডাকে শিকাগো শহরের তিন লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ বন্ধ রাখেন। শ্রমিক সমাবেশকে ঘিরে শিকাগো শহরের হে মার্কেট রূপ নেয় লাখো শ্রমিকের বিক্ষোভে। এক লাখ পঁচাশি হাজার নির্মাণ শ্রমিকের সঙ্গে আরও অসংখ্য বিক্ষুব্ধ শ্রমিক লাল ঝান্ডা হাতে সমবেত হন সেখানে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে ১০ শ্রমিক প্রাণ হারান। অন্যদিকে হে মার্কেটের ওই শ্রমিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। অবশেষে তীব্র আন্দোলনের মুখে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
পরে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে ১ মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করতে শুরু করে। এ দেশে নারায়ণগঞ্জে প্রথম মে দিবস পালিত হয় ১৯৩৮ সালে। তখন বৃটিশ শাসনামল। তারপর পাকিস্তান আমলেও মে দিবস যথাযথ উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে পালিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের শাসন থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে বিপুল উদ্দীপনা নিয়ে মে দিবস পালিত হয়। ঐ বছর সদ্য স্বাধীন দেশে পয়লা মে সরকারি ছুটি ঘোষিত হয়।