মঙ্গলবার মধ্যবর্তী নির্বাচন, সংখ্যাগরিষ্টতার আশায় রিপাবলিকানরা
- প্রকাশের সময় : ০৯:৪৩:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৪
- / ৯৩৯ বার পঠিত
আগামী ৪ নভেম্বর, মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ। ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পড়তি জনপ্রিয়তার কারণে প্রতি দুবছর পরপর অনুষ্ঠেয় এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচন অনেকটাই রিপাবলিকানদের অনুকূলে। প্রতিনিধি পরিষদে বর্তমানে সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানরা। আগামী সপ্তাহের নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের আসন আরও বাড়বে। ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে ব্যবধানটা কম রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচার চালানো হচ্ছে। কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে, বর্তমান ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা নিয়েও শঙ্কা বিরাজ করছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসনে জিততে পারলেই সিনেটেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন রিপাবলিকানরা। ৩৬টি সিনেটের মধ্যে ২১টি ডেমোক্র্যাট এবং ১৫টি রিপাবলিকানদের। এবারের ফলে মেয়াদের শেষ দুটি বছর বারাক ওবামাকে শাসন পরিচালনায় আরও বেশি বৈরিতায় পড়তে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রতিষ্ঠা করতে পারলেও ২০১৬ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকানদের জয় নিয়ে সন্দিহান খোদ রক্ষণশীলরা। নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক বার্তা নেই মধ্যবর্তী নির্বাচনে কোনো দলের পক্ষ থেকেই কোনো রাজনৈতিক বার্তা নেই। রিপাবলিকানদের মূল প্রচারণা প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ঘিরেই। তুমুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্ট ওবামার এখন ক্রান্তিকাল চলছে। অর্ধেকেরও বেশি জনমত এখন ওবামার বিপক্ষে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির সাম্প্রতিক সাফল্যের বার্তাটি সাধারণ জনগণের কাছে এখনো পৌঁছেনি। ফিরে আসেনি আবাসন শিল্পের চাঞ্চল্য। মধ্যবিত্তের জীবনমানের উন্নতির কথা বলা হলেও মধ্যবিত্তরা মনে করেন, তারা ভালো নেই। শিক্ষা খাতে ব্যয় বেড়েছে। উচ্চশিক্ষার জন্য গ্রহণ করা ঋণের ওপর সুদও বেড়েছে। ওবামা কেয়ারের মতো সর্বজনীন বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্যবিমা নিয়েও এখনো চলছে নানা বিতর্ক। বিদেশনীতির প্রশ্নেও সবকিছু ঘটেনি প্রেসিডেন্ট ওবামার অনুকূলে। মধ্যপ্রাচ্যের নতুন জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের উত্থানসহ জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ লোকজনও এখন উদ্বিগ্ন। প্রচারণায় ওবামা বিরোধিতা রক্ষণশীলদের অবিরাম প্রচারণায় বিভ্রান্ত নাগরিকেরা। সবকিছুর জন্য বারাক ওবামার ভ্রান্ত নীতিকেই দায়ী করা হচ্ছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাঠে প্রেসিডেন্ট ওবামার নাম নিয়ে সুবিধা করতে পারছেন না ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থীরা। পিউ সেন্টারের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, রক্ষণশীলদের ৬১ শতাংশই ওবামা বিরোধিতার জন্য প্রার্থীদের ভোট প্রদান করবেন। রিপাবলিকান প্রার্থীদের পক্ষ থেকে সরকারি ব্যয় হ্রাস, স্বল্প রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ, ওবামা কেয়ারের পরিবর্তন, সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়গুলোকেও নির্বাচনী প্রচারণায় আনা হয়েছে। যদিও পুরো প্রচারণায় ওবামা বিরোধিতাই এখন চরমে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাত্র এক সপ্তাহ আগে রিপাবলিকানদের বিবৃতিতেও কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য নেই। প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ব্যর্থ প্রেসিডেন্টের সমর্থক এবং অনুসারী বলে রিপাবলিকান দলের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বক্তব্য ছাড়া মধ্যবর্তী নির্বাচনে জয়ী হলেও রিপাবলিকানদের অতি আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ নেই। অভিবাসন সংস্কার আইন এবং অবৈধদের বৈধতা প্রদানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় অভিবাসী গ্রুপগুলো অনেকটাই উদ্দীপনাহীন। যদিও অভিবাসী গ্রুপগুলো রিপাবলিকান-বান্ধব হয়ে উঠবে, এমন ভাবারও কোনো কারণ নেই। মধ্যবর্তী নির্বাচনের পরই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিতর্কের আয়োজন করে রিপাবলিকান দল। ২০১৬ সালের জন্য রিপাবলিকান দলে এখন পর্যন্ত কোনো সর্বমতের গ্রহণযোগ্য প্রার্থী নেই। চলমান রাজনৈতিক বিতর্কের সঙ্গে এবং প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে প্রস্তুত হচ্ছেন সাবেক ফার্স্ট লেডি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। ২০১৬ সালের জন্য ডেমোক্র্যাট দলের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে হিলারি ক্লিনটনের অবস্থান এখন অনেকটাই সংহত। ডেমোক্র্যাটদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ মঙ্গলবারের নির্বাচনে রিপাবলিকানদের সম্ভাব্য জয় ডেমোক্র্যাটদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ নির্বাচনে জয়ের সুখবোধ নিয়ে রিপাবলিকান দল শিগগিরই নিজেদের মধ্যে বিতর্কে জড়িয়ে পড়বে। শুধু ‘রিপাবলিকানরা ভালো নয়’—এমন প্রচারণার পরিবর্তে ডেমোক্র্যাটরা পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য কার্যকর রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে মাঠে নামবে, এমন প্রত্যাশা দলের একান্ত সমর্থকদের মধ্যে।
সূত্র: প্রথম আলো