করোনা পরিস্থিতি : আমেরিকাজুড়ে লক্ষাধিক লোকের প্রাণহাণীর আশঙ্কা : মুসলমানদের লাশ না পুড়ানোর প্রচেস্টা অব্যাহত

- প্রকাশের সময় : ১২:১৬:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ এপ্রিল ২০২০
- / ১২২ বার পঠিত
এমদাদ চৌধুরী দীপু: করোনাভাইরাসে গত ২৩ মার্চ আমেরিকায় আক্রান্ত ছিল ৪২ হাজারের উপরে। গত ৩০ মার্চ সেটি দাঁড়ায় ১ লাখ, ৬৪ হাজারের উপরে। বর্তমান সংখ্যা ৪ লাখ ৬৮ হাজার, এক সপ্তাহেই বেড়েছে তিনলাখ। মাত্র দু সপ্তাহে আমেরিকার করোনা চিত্র ভয়ংকর রুপ নিয়েছে। এই সপ্তাহ এবং আগামী সপ্তাহে আকস্মিক কিছু যদি না হয়, কোন প্রতিষেধক আবিস্কার কিংবা যদি অবস্থার অবনতি আটকাতে না পারে তবে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহাণী হতে পারে আমেরিকায়- বিভিন্ন মহল থেকে এমন আশঙ্কাই করা হচ্ছে।
এদিকে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রানহাণীর কারনে লাশ পুড়িয়ে ফেলার সিদ্বান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। ইতিমধ্যে পেন্টাগনের কাছে লাশ পুড়ানোর একলাখ ব্যাগ সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
পরিসংখ্যান বলছে- মাত্র ৫১৭জনের মৃত্যু ছিল গত মার্চ মাসের ২৩ তারিখ অর্থাৎ ২৩ মার্চ, সপ্তাহ শেষে সেটি দাঁড়ায় ৩,১৬৫ জনে গত ৩০ মার্চ। ৯ এপ্রিল আমেরিকায় মৃতের সংখ্যা ১৬ হাজার ৬৯১ জন। দুই সপ্তাহে মৃত্যুই বেড়েছে ১৬ হাজার। এসবের বিপরীতে আরোগ্য হয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার। ৩০টি রাজ্যে নেই আরোগ্য হওয়ার সুখবর। নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন সংখ্যায় সুস্থ হচ্ছেন এমন রাজ্য হচ্ছে ২৩টি। সামগ্রিক বিবেচনায় চরম নাজুক এক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে আমেরিকার করোনা পরিস্থিতি।
এমন বাস্তবতায় মুসলমানদের লাশ না পুড়ানোর আবেদন জানানো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে। এটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ৫০ হাজার নাগরিকের স্বাক্ষর। বাংলাদেশী-আমেরিকান এটর্নী ইসরাত সামী সবাইকে স্বাক্ষর সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় সহযোগীতার আহŸান জানিয়েছেন।
প্রায় মাসখানেক সময় থেকে সৃষ্ট করোনা পরিস্থিতিতে এ পর্যন্ত ৮১জনের উপরে বাংলাদেশী মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রতিদিন মারা যাওয়ার খবর আসছে। এদের মধ্যে আছেন চিকিৎসক, কমিউিনিটি নেতা, রাজনৈতিক নেতা সহ নানা শ্রেনী ও পেশার মানুষ। গত ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে ইমিগ্রেশনের সব কর্মকান্ড। তবে এটর্নী ইসরাত সামী টাইম টেলিভিশন-এর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত যাদের এপয়েনমেন্ট ছিল তারা নতুন তারিখ পাবেন।
অপরদিকে পাল্টে গেছে নিউইয়র্কসহ আমেরিকার ৫০টি অঙ্গরাজ্যের জীবন যাত্রার দৃশ্যপট। এক দুই সপ্তাহে এখানে আক্রান্ত রোগী বেড়েছে প্রায় চার লাখ ২০ হাজার, আর মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ১৬ হাজারের উপরে। গত সপ্তাহেই আক্রান্ত রোগী বিবেচনায় বিশ্বের সব দেশকে টপকে শীর্ষ করোনা আক্রান্ত দেশের আখ্যা পেয়েছে আমেরিকা। আমেরিকায় আগামী সপ্তাহে মৃত্যুর সংখা আরো বাড়ার আশংকা থাকলেও আক্রান্ত বিবেচনায় শীর্ষে থাকা রাজ্যে কমে আসবে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা, তবে অন্যান্য রাজ্যে বাড়বে আক্রান্ত এবং মৃত্যু। এমনটাই আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া আরোগ্য হওয়ার হার বাড়তে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিস্ট বিভিন্ন মহল।
এদিকে চিকিৎসক এবং নার্সসহ স্বাস্থ্য সেবার লোক কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতির প্রত্যাশিত উন্নতি হচ্ছেনা বলে মনে করেন অনেক বাংলাদেশী চিকিৎসক। ইতিমধ্যে জেবিট কনভেনশন সেন্টারে ৩হাজার বেডের হাসপাতাল করোনা সেবা শুরু করেছে।
গত দুই সপ্তাহে ৮১ জন এর বেশী বাংলাদেশীর মৃত্যুতে দেশ এবং সারা বিশ্বে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মাঝে বিরাজ করছে শোক আর সমবেদনা। বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন, ইসলামিক সেন্টার, ইমামদের সংগঠন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে মৃতদের জানাজা এবং দাফন-কাফন।
এর মধ্যে মুসলিম উম্মাহ নর্থ আমেরিকা মুনা হটলাইন চালু করেছে। ইউনাটেড উলামা পরিষদ জানাজা এবং দাফনে সহায়তা করছে। রোজা পালন, নফল নামাজ, কোরআন খতম, বড়তসবিহ সহ নানাভাবে এবাদত বন্দেগীর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশীসহ বিশ্বের সকল মানুষের করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করছেন বাংলাদেশীরা। আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশীদের প্রতিটি বাড়ি-ঘর এখন একেকটি এবাদতখানায় পরিণত হয়েছে। সবার একটাই আকুতি করোনা মহামারী থেকে মুক্তি। তবে অনেক হতাশার মাঝে আশার কথা হচ্ছে রোগ থেকে মুক্তির সংখ্যাও বাড়ছে। গত দুই সপ্তাহে ২৬ হাজার রোগী করোনা থেকে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এছাড়াও গত দই সপ্তাহে অস্বাভাবিক রোগী বৃদ্বি এবং মৃত্যুর ঘটনা সব অঙ্গাজ্যে ছড়িয়েছে। রাজ্যে রাজ্যে মৃত্যুর মিছিল কোনভাবেই থামানো যাচ্ছেনা। পুরো আমেরিকাজুড়ে এমন নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে যা অতীতে কেউ দেখেনি কিংবা শুনেনি। ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে যে সব অঙ্গরাজ্যে মৃত্যু এবং আক্রান্ত রোগী বেশী সে তালিকায় রয়েছে- নিউইয়র্ক, নিউজার্সী, ওয়াশিংটন, ক্যালিফোর্নিয়া, ম্যাসাজুসেট, ইলিনইস, পেনসেলভেনিয়া, ইন্ডিয়ানা, মিশিগান, ফ্লোরিডা, লুসিয়ানা, জর্জিয়া, টেক্সাস, কানেকটিকা। এছাড়া অন্যান্য অঙ্গরাজ্যগুলো আক্রান্ত এবং মৃত্যু সবই উদ্বেগ এবং আতংক সৃষ্টিকারী সকল দেশ, সকল মহল, সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষের জন্য।
নিউইয়র্কঃ
গত ২৩ মার্চ পর্যৗল্প নিউইয়র্কে করোনা আক্রান্ত রোগী ছিল ২০ হাজার ৮৭৫ জন। গত সপ্তাহে ৫৯ হাজার ৫১৩ জন। ৯ এপ্রিল পর্যন্ত এই সংখ্যা ১,৬১,০০০ এর উপওে এবং মৃতের সংখ্যা ৭০৬৭ এর উপরে, গত সপ্তাহে মৃতের সংখ্যা ১৩৪২জন যা ২৩ মার্চ ছিল ১৫৭জন। দু’সপ্তাহ যাবত নিউইয়র্কে লকডাউন ছিল এবং সেটি ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
নিউজার্সীঃ
নিউজার্সীতে এখন আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭,৪৩৭ এর উপরে। গতসপ্তাহে ১৩ হাজার ৩৮৬ জন, যা ২৩ মার্চ ছিল ২ হাজার ৮৪৪ জন। মৃতের সংখ্যা ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫০৪জন। গত সপ্তাহে ছিল ১৯৮জন, দুই সপ্তাহ আগে ছিল ২৭জন।
ওয়াশিংটনঃ
৯ এপ্রিল পর্যন্ত চিত্র আক্রান্ত ৯০৯৭জন, মৃত ৪২১জন। যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৩৯২জন, মারা গেছেন ২০২জন। দুই সপ্তাহে আগে সে চিত্র ছিল আক্রান্ত ১৯৯৬ জন, মৃত্যু ৯৫ জন।
মিশিগানঃ
মিশিগান অঙ্গরাজ্যে এ যাবত করোনা আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছে ২১ হাজার ৫০৪জনের উপরে, মারা গেছেন ১০৭৬জন। এক সপ্তাহ আগে এটি ছিল আক্রান্ত ৬৪৯৮জন, আর মারা গেছেন ১৮৪জন। মাত্র দুই সপ্তাহে নাজুক মিশিগান অঙ্গরাজ্যে করোনা ভাইরাস চিত্র। গত ২৩ মার্চ ছিল মাত্র ১৫জন মারা যাওয়ার খবর। আক্রান্ত ছিল ১৩২৮জন। আক্রান্ত রোগী বেড়েছে ২০ হাজার।
ক্যালিফোর্নিয়াঃ
ক্যালিফোর্নিয়ায় মারা গেছেন ৫০৩জন, এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৪৫ জন, এখন আক্রান্ত ১৯হাজারের উপরে, এক সপ্তাহ আগে ছিল আক্রান্ত রোগী ৫৮৪৬জন। যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল মৃত্যু ৩৮জন, আক্রান্ত রোগী ১৯৪৬জন।
ম্যাসাজুসেটঃ
ম্যাসাজুসেট অঙ্গরাজ্য আলোচনায় আক্রান্ত প্রায় ১৭হাজার রোগীর কারনে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৯৫৫জন রোগীর কারনে, এই অঙ্গরাজ্যে মারা গেছেন, ৪৩৩জন, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৬জন। মাত্র দুই সপ্তাহে পরিবর্তন অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের মত বিস্ময়কর। গত২৩ মার্চ রোগী ছিল ৭৭৭জন,আর মৃত্যু ছিল মাত্র ৭জন।
ইলিনয়সঃ
এই অঙ্গরাজ্যে এখন রোগী ১৬হাজারের উপরে, মারা গেছেন ৫২৮জন। এক সপ্তাহ আগে আক্রান্ত ছিল ৫০৫৭জন করোনা রোগীর যন্ত্রনায় কাতর, মারা গেছেন ১৯৮জন। অথচ দুই সপ্তাহ আগে ১২৮৫জন রোগী সনাক্ত হয়েছিল, মারা গিয়েছির ২৭জন।
পেনসেলভেনিয়াঃ
পেনসেলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যে রোগী ১৬ হাজারের উপরে, মারা গেছেন ৩০৯জন। এক সপ্তাহ আগে ৪১৫৪জন করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে, মারা গেছেন ৫১জন। যা দুই সপ্তাহ আগের রেকর্ডে আছে আক্রান্ত ৮৫১জন, মৃত্যু ৭জন।
ইন্ডিয়ানাঃ
ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে এখন আক্রান্ত রোগী ৬ হাজারের উপরে, মারা গেছেন ২৪৫জন। এক সপ্তাহ আগে আক্রান্ত ছিল ১৭৮৬জন, মারা গেছেন ৩৫জন। তিনগুণ বৃদ্বি পেয়েছে মৃত্যু। দুই সপ্তাহ আগে যা ছিল আক্রান্ত ৩৬৫জন মৃত্যু ১২জন।
ফ্লোরিডাঃ
ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে এখন আক্রান্ত ১৬ হাজারের উপরে, মারা গেছেন ৩৫৪জন। এক সপ্তাহ আগে আক্রান্ত ৫৭০৪জন, ২৩মার্চ যা ছিল ১১৭১জন। দুই সপ্তাহ আগে মারা গেছেন ১৪জন, গত সপ্তাহে সেটি দাঁড়ায় ৭১জন।
নিউইয়র্ক, ০৯ এপ্রিল, ২০২০