এবার প্যারাডাইজ পেপারস কেলেঙ্কারি
- প্রকাশের সময় : ১২:৫০:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০১৭
- / ৭৯০ বার পঠিত
ঢাকা: আবারও ধাক্কা খেল বিশ্ব। আরেকটি আর্থিক কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস হলো আজ। কার নাম নেই এ কেলেঙ্কারিতে? ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প, এমনকি বিশ্বজুড়ে মহা নায়ক বনে যাওয়া কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো! প্রায় ১৪ কোটি গোপন নথি ফাঁস হওয়া এই কেলেঙ্কারির নাম দেওয়া হয়েছে প্যারাডাইজ পেপারস।
পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির ধাক্কা এখনো সামলে নিতে পারেনি অনেক দেশ। এক বছর আগের সে কেলেঙ্কারির নাম আবারও তুলতে হয়েছে আজ। গতবারের মতোই এবারও যে হাটে হাড়ি ভেঙেছে জার্মান দৈনিক জিটডয়েচ সাইতং। বারমুডায় অবস্থিত অ্যাপলবাই নামের এক আইনি সহযোগী সংঘটনের গোপন নথি জোগাড় করে সেটা তারা দিয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিক সংঘটনকে (আইসিআইজে)। ৬৭টি দেশের ৩৮০ জন সাংবাদিক ১ কোটি ৩৪ লাখ ডকুমেন্টস এখন তদন্ত করে দেখছে।
অধিকাংশ তথ্যই বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদদের। যারা কর থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে (কর দিতে হয় না কিংবা খুবই নিম্ন হারে কর দেওয়া যায় এমন দেশ) বিনিয়োগ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তদন্তের এখনো শুরু মাত্র। তাই পুরো তথ্য পাওয়া এখনো সম্ভব নয়। তবে এর মাঝেই চমকে দেওয়ার মতো কিছু তথ্য দিয়েছে বিশ্বের বড় বড় সব সংবাদমাধ্যম।
এক নজরে প্যারাডাইজ পেপারস
তদন্ত করছেন ৬৭টি দেশের ৩৮২ জন সাংবাদিক
১২০ জন রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনেতার নাম এসেছে
১০৪ টেরাবাইট তথ্য ফাঁস হয়েছে
১৯টি ট্যাক্স হেভেন অর্থ পাচার করা হয়েছে
অর্থ পাচারে সহযোগিতাকারী দুটো প্রতিষ্ঠানের নাম জানা গেছে।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ: গোপন নথিতে দেখা গেছে কেম্যান আইল্যান্ড ও বারমুডায় রানির নামে আলাদা তহবিল সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রায় ১ কোটি পাউন্ড পরিমাণের গোপন অর্থের হিসেব পাওয়া গেছে। এ দুটো জায়গায় রানির ৫০ কোটি পাউন্ডের ব্যক্তিগত সম্পত্তি দেখভাল করে ডাচি অফ ল্যাঙ্কাস্টার। ডাচি দাবি করছে, তারা বিনিয়োগ বিষয়ক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ায় জড়িত ছিল না। এবং রানি নিজে এ ব্যাপারে জানেন এমন কোনো ইঙ্গিতও দেওয়া হয়নি। এই বিনিয়োগে বেআইনি কিছুর ইঙ্গিত মেলেনি, বা বলা হয়নি রানি কর দিচ্ছেন না। কিন্তু রাজপরিবারের কারও অন্য দেশে বিনিয়োগ করা নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রাইট হাউস নামে একটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে। যারা দরিদ্রদের নিষ্পেষিত করছে বলে অভিযোগ আছে। প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ পাউন্ড কর বকেয়া আছে এই প্রতিষ্ঠানের। ৬ হাজার লোক তাঁদের চাকরি হারিয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প: ট্রাম্প প্রশাসনে বাণিজ্যসচিব হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত উইলবার রস। জনশ্রুতি আছে নব্বইয়ের দশকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছিলেন বলেই রসের এমন অবস্থান প্রাপ্তি। বিভিন্ন নথিতে দেখা গেছে রস এমন এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত, যারা রাশিয়ান সংস্থাকে তেল ও গ্যাস শিপিং করে। যে প্রতিষ্ঠানে অংশীদার ভøাদিমির পুতিনের জামাই এবং আরও দুজন ব্যক্তি যারা যুক্তরাষ্ট্রের চোখে অপরাধী।
এমনিতেই ট্রাম্প ও রাশিয়ার মধ্যকার গোপন আঁতাত নিয়ে সংবাদমাধ্যমে অনেক ঝড় তোলা হয়েছে। এবার রসের এমন তথ্য কীসের ইঙ্গিত দেয়, সেটা সময়ই বলে দেবে।
জাস্টিন ট্রুডো: কানাডীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনে আর্থিকভাবে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন স্টেফান ব্রনফম্যান। মাত্র দুই ঘণ্টায় ট্রুডোকে আড়াই লাখ ডলার তহবিল এনে দিয়েছিলেন ব্রনফম্যান। কিন্তু গোপন নথিতে দেখা যাচ্ছে, ব্রনফম্যান ও তাঁর প্রতিষ্ঠান কেম্যান আইল্যান্ডে প্রায় ৬ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন। অথচ ট্রুডো বারবারই ‘অফশোর’ (কর থেকে বাঁচার জন্য বিদেশে বিনিয়োগ) বিনিয়োগের বিপক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন। ট্রুডোর জন্য এটা বিরাট বড় এক ধাক্কা।
গতবার পানামা কেলেঙ্কারিতে লিওনেল মেসির নাম এসেছিল। এবারও ফুটবল বাদ পড়েনি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব এভারটন এফসিতে বিনিয়োগ করা বড় একটা অংশ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সূত্র: বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস, আইসিআইজে।
অ্যাপলবাই লিকসে যে দেশের নাগরিকদের নাম পাওয়া গেছে।
তালিকায় থাকা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবং দেশ:
৩১,১৮০- যুক্তরাষ্ট্র১
৪,৪৩৪- যুক্তরাজ্য
১২,০১৭- বারমুডা
৮,৬৪০- ক্যামান আইল্যান্ডস
৭,০৬৫- হংকং
৫,৯২৪- চীন
৩,১৭৬- কানাডা
৩,০৫৪- আইল অব ম্যান
২,৩৬৩- সুইজারল্যান্ড
২,১৬৬ ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস।
(প্রথম আলো)