লক্ষ্য এবার ওষুধের কাঁচামাল রপ্তানি
- প্রকাশের সময় : ০৩:৪২:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৩১ বার পঠিত
ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ১৫৭টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশে তৈরি ওষুধ। দেশে প্রায় সব ধরনের ওষুধ তৈরি হচ্ছে এবং তা রপ্তানি করা হচ্ছে। এছাড়া দেশে মোট চাহিদার ৯৮ ভাগ ওষুধ দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। অন্যদিকে তৈরি হচ্ছে ওষুধের কাঁচামাল (এপিআই)। আর তা রফতানিতে প্রণোদনা দিবে সরকার। এই বছরের জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা সামন্ত লাল সেন। কাঁচামাল রফতানি বাড়লে ২০-৩০ বিলিয়ন ডলার আয় হতে পারে বলে ধারনা সংশ্লিষ্টদের।
২০০৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়, ওষুধশিল্পের জন্য মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসংলগ্ন বাউশিয়া ও লক্ষ্মীপুর মৌজায় ২০০ একর জায়গাজুড়ে একটি অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্ট (এপিআই) পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়। দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোর নিজেদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটানো, প্রতিযোগিতামূলক বাজার ধরতে পণ্য বৈচিত্র্য সৃষ্টি করা ও পণ্যের মান উন্নয়নে গবেষণা করা হচ্ছে এই পার্কটির প্রধান উদ্দেশ্য।
এছাড়াও ওষুধ উৎপাদনে যেসব কাঁচামাল প্রয়োজন ও যেসব কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশেই তা উৎপাদন করা ও কাঁচামাল আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো বা বন্ধ করার লক্ষ্যে এই পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ফলে বছরে সাশ্রয় হবে প্রায় হাজার কোটি টাকারও বেশি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর দেশের প্রথম অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট এপিআই শিল্প পার্কের উদ্বোধন করেন। ২০০ একর জমির ওপর মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ৩৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় এই ওষুধ শিল্প পার্কটি।
বাংলাদেশ প্রধানত ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, ক্যান্সার, কুষ্ঠ, কিডনি ডায়ালাইসিস, হোমিওপ্যাথি, বায়োকেমিক্যাল, আয়ুর্বেদিক ও হাইড্রোসিলের পাশাপাশি পেনিসিলিন, স্ট্রেপটোমাইসিন ও এন্টি হেপাটিক ওষুধ রফতানি করে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ওষুধ শিল্পের যাত্রা শুরু পঞ্চাশের দশকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে এ শিল্পের পরিধি। বর্তমানে সারা দেশে ২৯৫টি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান তৈরি করছে প্রায় ৪৬ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল। এছাড়া দেশের ২৮৪টি ইউনানি ও ২০৫টি আয়ুর্বেদিক, ৭১টি হোমিওপ্যাথিক ও ৩১টি হার্বাল ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার ওষুধ উৎপাদন করছে।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প উত্তরোত্তর উন্নতি করছে। দেশের মোট চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশেই উৎপাদিত হয়।
ডা. সামন্ত লাল সেন আরও বলেন, দেশে উৎপাদিত ওষুধ বিদেশে রফতানিতে উৎসাহিত করতে উৎপাদনকারীদের সরকারিভাবে প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে। এই বছরের জানুয়ারি থেকে দেশে উৎপাদিত ওষুধের একটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রিডিয়েন্ট রফতানির জন্য ১০ শতাংশ হারে এবং ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য রফতানির জন্য ৮ শতাংশ হারে সরকারিভাবে প্রণোদনা প্রদান করা হবে বলে সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
২০২২ সালের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত বাংলাদেশে ওষুধের বাজারের আকার ছিল ৩ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। ১ দশকে বাজার ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে এটি ৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, লিকুইড প্রিপারেশন, ড্রাই সাসপেনশন, ইনজেকশন, ন্যাজাল স্প্রে ও স্যাশের মাধ্যমে গ্র্যানিউল সহ প্রায় সব ধরনের ডোজ উৎপাদনে সক্ষম। স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে ওষুধ তৈরির কাঁচামাল ও ল্যাবরেটরি স্থাপনে এপিআই শিল্প পার্ককে ২০৩২ সাল পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এখন, ওষুধ উৎপাদকরা তাদের প্রতিযোগিতামূলক শক্তিমত্তা বাড়ানোর জন্য ওষুধের কাঁচামাল বা এপিআই উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। কারন বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পেটেন্টকৃত ওষুধ উৎপাদনে ছাড় সুবিধা হারাবে। তখন পেটেন্টকৃত পণ্যের দাম বেড়ে যাবে এবং কিছু কমপ্লেক্স বায়োলজিকস দেশে আর পাওয়া নাও যেতে পারে।
বর্তমানে রাজধানী থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে মুন্সিগঞ্জের এপিআই পার্কে ১৫ প্রতিষ্ঠান এপিআই উৎপাদন করছে এবং আরও ২৭ প্রতিষ্ঠান সেখানে এপিআই অবকাঠামো নির্মাণ করতে যাচ্ছে। ৭ বছরে এ খাতে রপ্তানি আয় প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (বাপি) মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বমানের জেনেরিক ওষুধ উৎপাদন করে যা অন্য যেকোনো দেশের দুর্যোগ ছাড়া যে কোনো ধরনের সংকট মোকাবেলায় শক্তি অর্জন করেছে।
তার মতে, ফার্মাসিউটিক্যাল নির্মাতারা খুব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে এবং প্রতিযোগিতামূলক মূল্য সরবরাহ করতে পারে, যার জন্য আপাতত কিছু বাধার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও রফতানি বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, ওষুধ উৎপাদনের মতোই কাঁচামাল উৎপাদনেও স্বয়ংস্বম্পূর্ণ হওয়ার দিকে যাচ্ছি আমরা। ২০৩০ সালের মধ্যে সব কারখানায়ই এপিআই উৎপাদনে যেতে পারবে বলে আশা করি।
বিশেশজ্ঞদের মতে, এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পরে পেটেন্টসহ নানা সুবিধা হারানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ওষুধ শিল্পখাতে গবেষণা বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা তুলে ধরে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি আনায় জোর দিতে হবে। সঠিক প্রস্তুতি নিতে পারলে কম উৎপাদন খরচের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল রপ্তানিতে ২ থেকে ৩ হাজার কোটি ডলারের আয় করা সম্ভব। সূত্র : একাত্তর টিভি।