নিউইয়র্ক ০৫:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে গোল্ডেন পাসপোর্ট বিক্রির সিদ্ধান্ত নাউরুর

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:৫৯:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫
  • / ৬৩ বার পঠিত

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গলছে মেরুর বরফ, বাড়ছে সমুদ্রের উচ্চতা। এতে অনেক দ্বীপরাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এমনই এক দ্বীপদেশ নাউরু। বিশ্বের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম এ দেশের আয়তন মাত্র আট বর্গমাইল। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে জলবায়ু কর্মসূচির জন্য তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে নাগরিকত্ব বিক্রির মতো অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। মাত্র ১ লাখ ৫ হাজার ডলারে পাওয়া যাবে নাউরুর গোল্ডেন পাসপোর্ট।

সিএনএনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, সামুদ্রিক ঝড়ের তাণ্ডব ও উপকূলীয় ভাঙনের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নাউরু। এ ধরনের জলবায়ু সংকটে দায়ী মূলত ধনী দেশগুলো। উল্টো দিকে কার্বন নিঃসরণে বড় কোনো ভূমিকা না রেখেও সংকটে পড়ছে দ্বীপরাষ্ট্রগুলো। এর মোকাবেলায় নাউরুর মতো ছোট দেশগুলোর পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই। নাউরু সরকার জানিয়েছে, নাগরিকত্ব বিক্রির অর্থে দেশটির ১২ হাজার জনসংখ্যার ৯০ শতাংশকে উঁচু এলাকায় সরিয়ে নেয়া হবে। অর্থ একটি অংশ ব্যয় হবে নতুন জনপদ তৈরিতে। এ বিষয়ে নাউরুর প্রেসিডেন্ট ডেভিড অ্যাডেয়াং জানিয়েছেন, নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশটির গোল্ডেন পাসপোর্টের মূল্য ১ লাখ ৫ হাজার ডলার হলেও অপরাধের রেকর্ড থাকা ব্যক্তিরা এটি কিনতে পারবেন না। নাউরুর পাসপোর্টধারীরা যুক্তরাজ্য, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের ৮৯টি দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুবিধা পাবেন।

নাগরিকত্ব বিক্রি করে প্রথম বছরে ৫৬ লাখ ডলার এবং পরবর্তী সময়ে বছরে ৪ কোটি ২০ লাখ ডলার আয়ের পরিকল্পনা নাউরু কর্তৃপক্ষের। অর্থের এ অংক সরকারের মোট আয়ের ১৯ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। আবার এ কর্মসূচির সাফল্য নির্ভর করছে উপার্জিত অর্থ সঠিক খাতে ব্যয় হচ্ছে কিনা তার ওপর। এর আগে নব্বইয়ের দশকে চালু করা নাউরুর নাগরিকত্ব বিক্রির কর্মসূচিতে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছিল। ২০০৩ সালে মালয়েশিয়ায় দুই সন্দেহভাজন আল কায়েদা সদস্য নাউরুর পাসপোর্টসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন। তবে দেশটির বর্তমান সরকার বলছে, এবার কঠোর নিরাপত্তা যাচাই করা হবে এবং জাতিসংঘ তালিকা অনুযায়ী রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মতো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের নাগরিকদের জন্য এ পাসপোর্ট নিষিদ্ধ থাকবে। এছাড়া বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডেভিড অ্যাডেয়াং।

প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিরূপ ইতিহাস পেরিয়ে এসেছে নাউরু। একসময় পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট মানের ফসফেট সমৃদ্ধ দেশ ছিল এটি। ১৯০০ সালের শুরুর দিকে এখানে ফসফেট খনন শুরু হয়। শত বছর ধরে খননের ফলে দ্বীপটি অভ্যন্তরীণভাবে বসবাসের অযোগ্য পাথুরে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। দ্বীপটির ৮০ ভাগ এলাকা এখন বসবাসের অনুপযুক্ত। ফলে অধিকাংশ মানুষ উপকূলবর্তী এলাকায় বাস করছে, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্বের অন্য যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় দ্রুতই নাউরুর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। ফলে দেশটিতে আশঙ্কাও বাড়ছে। ফসফেট ফুরিয়ে যাওয়ার পর আয়ের নতুন উৎস খুঁজতে থাকে নাউরু। ২০০০ সালের শুরুর দিকে দ্বীপটি অস্ট্রেলিয়ার শরণার্থী ও অভিবাসী আটক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয়েছিল। তবে বন্দিদের মৃত্যুর ঘটনায় এ কার্যক্রম সীমিত করা হয়। বর্তমানে সবুজ জ্বালানির উপকরণ সংগ্রহে সমুদ্র খননের বিতর্কিত পরিকল্পনায় যুক্ত হয়েছে দেশটি। একসময় কুখ্যাত ক্রিপ্টো উদ্যোক্তা স্যাম ব্যাংকম্যান-ফ্রাইডও নাউরু কিনে নেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। মহাপ্রলয়ের সময় বেঁচে থাকার জন্য এখানে একটি বাংকার গড়তে চেয়েছিলেন তিনি। আর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এবার পাসপোর্ট বিক্রির পথ বেছে নিয়েছে নাউরু।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে গোল্ডেন পাসপোর্ট বিক্রির সিদ্ধান্ত নাউরুর

প্রকাশের সময় : ০২:৫৯:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গলছে মেরুর বরফ, বাড়ছে সমুদ্রের উচ্চতা। এতে অনেক দ্বীপরাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এমনই এক দ্বীপদেশ নাউরু। বিশ্বের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম এ দেশের আয়তন মাত্র আট বর্গমাইল। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে জলবায়ু কর্মসূচির জন্য তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে নাগরিকত্ব বিক্রির মতো অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। মাত্র ১ লাখ ৫ হাজার ডলারে পাওয়া যাবে নাউরুর গোল্ডেন পাসপোর্ট।

সিএনএনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, সামুদ্রিক ঝড়ের তাণ্ডব ও উপকূলীয় ভাঙনের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নাউরু। এ ধরনের জলবায়ু সংকটে দায়ী মূলত ধনী দেশগুলো। উল্টো দিকে কার্বন নিঃসরণে বড় কোনো ভূমিকা না রেখেও সংকটে পড়ছে দ্বীপরাষ্ট্রগুলো। এর মোকাবেলায় নাউরুর মতো ছোট দেশগুলোর পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই। নাউরু সরকার জানিয়েছে, নাগরিকত্ব বিক্রির অর্থে দেশটির ১২ হাজার জনসংখ্যার ৯০ শতাংশকে উঁচু এলাকায় সরিয়ে নেয়া হবে। অর্থ একটি অংশ ব্যয় হবে নতুন জনপদ তৈরিতে। এ বিষয়ে নাউরুর প্রেসিডেন্ট ডেভিড অ্যাডেয়াং জানিয়েছেন, নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশটির গোল্ডেন পাসপোর্টের মূল্য ১ লাখ ৫ হাজার ডলার হলেও অপরাধের রেকর্ড থাকা ব্যক্তিরা এটি কিনতে পারবেন না। নাউরুর পাসপোর্টধারীরা যুক্তরাজ্য, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের ৮৯টি দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুবিধা পাবেন।

নাগরিকত্ব বিক্রি করে প্রথম বছরে ৫৬ লাখ ডলার এবং পরবর্তী সময়ে বছরে ৪ কোটি ২০ লাখ ডলার আয়ের পরিকল্পনা নাউরু কর্তৃপক্ষের। অর্থের এ অংক সরকারের মোট আয়ের ১৯ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। আবার এ কর্মসূচির সাফল্য নির্ভর করছে উপার্জিত অর্থ সঠিক খাতে ব্যয় হচ্ছে কিনা তার ওপর। এর আগে নব্বইয়ের দশকে চালু করা নাউরুর নাগরিকত্ব বিক্রির কর্মসূচিতে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছিল। ২০০৩ সালে মালয়েশিয়ায় দুই সন্দেহভাজন আল কায়েদা সদস্য নাউরুর পাসপোর্টসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন। তবে দেশটির বর্তমান সরকার বলছে, এবার কঠোর নিরাপত্তা যাচাই করা হবে এবং জাতিসংঘ তালিকা অনুযায়ী রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মতো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের নাগরিকদের জন্য এ পাসপোর্ট নিষিদ্ধ থাকবে। এছাড়া বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডেভিড অ্যাডেয়াং।

প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিরূপ ইতিহাস পেরিয়ে এসেছে নাউরু। একসময় পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট মানের ফসফেট সমৃদ্ধ দেশ ছিল এটি। ১৯০০ সালের শুরুর দিকে এখানে ফসফেট খনন শুরু হয়। শত বছর ধরে খননের ফলে দ্বীপটি অভ্যন্তরীণভাবে বসবাসের অযোগ্য পাথুরে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। দ্বীপটির ৮০ ভাগ এলাকা এখন বসবাসের অনুপযুক্ত। ফলে অধিকাংশ মানুষ উপকূলবর্তী এলাকায় বাস করছে, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্বের অন্য যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় দ্রুতই নাউরুর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। ফলে দেশটিতে আশঙ্কাও বাড়ছে। ফসফেট ফুরিয়ে যাওয়ার পর আয়ের নতুন উৎস খুঁজতে থাকে নাউরু। ২০০০ সালের শুরুর দিকে দ্বীপটি অস্ট্রেলিয়ার শরণার্থী ও অভিবাসী আটক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয়েছিল। তবে বন্দিদের মৃত্যুর ঘটনায় এ কার্যক্রম সীমিত করা হয়। বর্তমানে সবুজ জ্বালানির উপকরণ সংগ্রহে সমুদ্র খননের বিতর্কিত পরিকল্পনায় যুক্ত হয়েছে দেশটি। একসময় কুখ্যাত ক্রিপ্টো উদ্যোক্তা স্যাম ব্যাংকম্যান-ফ্রাইডও নাউরু কিনে নেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। মহাপ্রলয়ের সময় বেঁচে থাকার জন্য এখানে একটি বাংকার গড়তে চেয়েছিলেন তিনি। আর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এবার পাসপোর্ট বিক্রির পথ বেছে নিয়েছে নাউরু।