আসছে অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলানোর বাজেট
- প্রকাশের সময় : ১১:১১:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ১১৬ বার পঠিত
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাক-বাজেট আলোচনা শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট উইংও চলতি অর্থবছরের বাজেট সংশোধন এবং আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। শিগগির তারাও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে। অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলানোয় গুরুত্ব দিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ চলছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানা গেছে, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে সরকারের আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয় উপস্থাপিত চলতি অর্থবছরের বাজেটের বাস্তবায়ন অগ্রগতি এবং তার ভিত্তিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সম্ভাব্য রূপরেখা তুলে ধরা হবে।
জানা গেছে, চলমান অর্থনৈতিক সংকট সমাধানের পথ দেখানোই হবে আগামী বাজেটের প্রধান লক্ষ্য। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়ে সরকার গঠন করলেও আন্তর্জাতিক নানা চাপ রয়েছে সরকারের ওপর। তৈরি পোশাক খাতের ওপর আমেরিকা বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিধিনিষেধ এলে বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ধাক্কা আসতে পারে। এমনিতেই উচ্চ বৈদেশিক ঋণ, ডলার সংকট, ব্যালেন্স অব পেমেন্টে নেতিবাচকতা, রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বাজার ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংকট, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে গতিহীনতায় দেশের অর্থনীতি থমকে আছে। ফলে নতুন মেয়াদের প্রথম বাজেটটি ধাক্কা সামলানোর বাজেট হবে বলে মনে করেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি পর্যালোচনা ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের বিষয়ে আলোচনা করতে ঢাকায় আসবে একটি প্রতিনিধি দল। তারাও তাদের ঋণের বিষয়ে দেওয়া নানা শর্ত পর্যালোচনা করবে।
জানা গেছে, আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা ও ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানো হবে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা ও আর্থিক খাতের সংস্কারেও জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সঙ্গে চলমান ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্তের প্রতিফলনও ঘটবে এবারের বাজেটে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সংস্কার, আর্থিক খাতের অবকাঠামোগত সংস্কার, আইনগত সংস্কার করতে হবে বাজেটের আগেই। অন্যথায় সংস্থাটির ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ও আটকে যেতে পারে। অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের স্থবিরতা কাটিয়ে অর্থনীতিতে গতি ফেরানোর পরিকল্পনা করছেন নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটাও তার জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।
অর্থ বিভাগ বলছে, আগামী বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার বাস্তবমুখী করতে লক্ষ্যমাত্রা কমানো হতে পারে। সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা ও আর্থিক খাতের সংস্কারেও জোর দেওয়া হবে। এদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পৃথক পরিকল্পনা করছে সরকার। যার প্রতিফলন এসেছে নতুন মুদ্রানীতিতে। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলেও সরকারের ভেতরের আর্থিক সংকট কাটাতে বন্ড ইস্যু করতে আবারও নতুন করে টাকা ছাপাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাও বড় চ্যালেঞ্জ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশবাসীকে স্বস্তি দিতে হলেও জিনিসপত্রের দাম কমাতে হবে। বাড়াতে হবে জোগান, উৎপাদন। তদারকি বাড়াতে হবে নিত্যপণ্যের বাজারে। বাজার থেকে তুলে নেওয়া হবে অতিরক্তি টাকা, ডলারের ঘাটতি মেটাতে বাড়ানো হবে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স। কম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হবে ধাপে ধাপে। এসব বিষয়কে আসছে বাজেটে গুরুত্ব দিতে হবে।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, নতুন বাজেটের আকার ধরা হতে পারে ৮ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার মতো। জিডিপির প্রবৃদ্ধি প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হতে পারে ৫ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনৈতিক সংকটকালে বাজেট সম্প্রসারণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে না পারলে বাজেটের আকার বাড়িয়ে লাভ নেই। ডলার ও রাজস্ব আদায়ে চ্যালেঞ্জ তো আছেই। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই বাজেটের আকার নির্ধারণ করতে হবে। ফলে স্বল্প প্রবৃদ্ধির বাজেটই সঠিক হবে। সূত্র : আমাদের সময়।