নিউইয়র্ক: বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর প্রকল্পে তথা কথিত দূর্নীতির ব্যাপারে ড. ইউনুসের সহযোগিতায় বিশ্ব ব্যাংক ডাহা মিথ্যাচার করেছে। এই প্রকল্পে দূর্নীতির অভিযোগের ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে ড. ইউনুসসহ যারা এই ডাহা মিথ্যা অভিযোগে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিশন গঠন করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দাবী এবং বিশ্বব্যাংক-কে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। নিউইয়র্কে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলীয় নেতৃবৃন্দ এই দাবী জানান। সিটির জ্যাকসন হাইটসস্থ নিউ মেজবান রেষ্টুরেন্টের পার্টি হলে গত ১৬ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সহ সভাপতি সৈয়দ বশারত আলী এবং পরিচলনাসহ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ। খবর ইউএনএ’র।
সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে মোবাইল ফোনে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল কাল্পনিক, মিথ্যা এবং বানোয়াট। এর প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ২০১২ সালের ১২জুলাই ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংক ভবনের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাস্ ীবাংলাদেশী ও দলীয় নেতা-কর্মীরা সেই দিন বিশ্বব্যাংক ৪ ঘন্টা ঘেরাও করে রেখে ছিল। ফলে বিশ্ব ব্যাংক প্রধানের প্রতিনিধি আমাতের সাথে সাক্ষাৎ করে স্মারক লিপি গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, কানাডীয়ান আদালতের রায়ের পর প্রমাণ হয়েছে যে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোন দূর্নীতি হয়নি। তিনি বলেন, মিথ্যা অভিযোগের কারণে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায় কি না তা চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ছাড়াও দলের অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান, সহ সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ, মহিউদ্দীন দেওয়ান ও আব্দুর হাসিব মামুন, প্রচার সম্পাদক দুলাল মিয়া (হাজী এনাম), মুক্তিযাদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম, মহিলা সম্পাদিকা শিরিন আক্তার দিবা, মানবধিকার বিষয়ক সম্পাদক মিজবাহ আহামেদ, শিল্প বিষয়ক সম্পাদক ফরিদ আলম, প্রবাসী বিষয়ক সম্পাদক সোলাইমান আলী, উপ প্রচার সম্পাদক তইয়বুর রহমান টনি, কার্যকরী সদস্য সামসুল আবদীন, শরিফ কামরুল আলম হিরা, আব্দুল হামিদ, আলী গজনবী, ইলিয়ার রহমান, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মমতাজ শাহানাজ প্রমুখ।
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাখাওয়াত বিশ্বাস, নূরুজ্জামান সরদার, দরুদ মিয়া রনেল, যুবলীগ নেতা সেবুল মিয়া প্রমুখ নেতৃবৃন্দ সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কানাডীয়ান আদালতের রায়ের পরই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বক্তব্য তুলে ধরাই আজকের সাংবাদিক সম্মেলনের লক্ষ্য। তবে পরবর্তীতে এব্যাপারে বিশ্ব ব্যাংক সহ কারো কোন বক্তব্য পেলে বা প্রয়োজন পরলে আমরা পরবর্তী কর্মসূচী নেবো।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে আব্দুস সামাদ আজাদ বলেন, সরকার, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা সহ বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য ও অভিযোগেই প্রামণ করে যে ড. ইউনুস পদ্মা সেতু প্রকল্পের তথা কথিত দূর্নীতির অভিযোগের সাথে জড়িত।
সাংবাদিক সম্মেলন শেষে বাংলাদেশের বিশিষ্ট পরমানু বিজ্ঞানী মরহুম ড. ওয়াজেদ মিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে কেক কেটে দিনটি পালন করা হয়। এসময় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ‘শুভ শুভ শুভদিন, ওয়াজেদ ভাইয়ের জন্মদিন’ শ্লোগান তোলে এবং কেক কেটে এক অপরকে খাইয়ে দেন। উল্লেখ্য, ড. ওয়াজেদ মিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী।
পাঠকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য হুবহু নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
সম্মানিত সম্পাদক, সাংবাদিক ও প্রতিনিধিবৃন্দ,
আসসালামু আলাইকুম। যুক্তরাষ্ট্র আওয়াী লীগের পক্ষ থেকে আজকের সাংবাদিক সম্মেলনে আপনাদের জানাই স্বাগতম ও শুভেচ্ছা।
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
অমর একুশে মহান শহীদ দিবস-এর আর মাত্র কয়েকদিন বাকী। মহান শহীদ দিসব উপলক্ষে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সকল ভাষা শহীদদের। ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা তথা স্বাধীনতা আন্দোলনের সকল শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। জাতিসংঘের সহযোগিতায় বিশ্ব দরবারে ২১শে ফেব্রুয়ারী ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিা লাভ করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান চিরস্মরনীয়।
প্রিয় সাংবাদিক ভায়েরা,
মূলত: বাংলাদেশের বহুল আলোচিত ও সর্বাধিক ব্যয় বহুল প্রকল্প ‘পদ্মা সেতু প্রকল্প’ নিয়ে বিগত দিনের তথাকথিত অভিযোগের পর কানাডীয়ান আদালতের রায়ের পর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বক্তব্য তুলে ধরতেই আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলন। আমরা, আপনারা তথা দেশবাসী এমনকি বিশ্ববাসী জানেন যে, দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে চরম মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া অভিযোগের প্রেক্ষাপটে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার এক চ্যালেঞ্জের মুখে বিশ্ব ব্যংকের অর্থায়ন ছাড়াই পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করছেন। অথচ বিশ্ব ব্যাংক সহ দেশের কতিপয় তথা কথিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস সহ মুখচেনা কতিপয় সুশীল সমাজ তৎকালীন সময়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিষয়ে মিথ্যা অভিযোগ করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালিয়েছেন এবং ষড়যন্ত্র করছেন। জনবান্ধব সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সততা, সাহসিকতা ও দৃঢ়তায় আজ সেই সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। সর্বশেষ কানাডীয়ান আদালতে পদ্মা সেতু প্রকল্প সম্পর্কিত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এই রায়ে বাংলাদেশ, দেশের জনগণ ও সরকারের জয় হয়েছে। এজন্য আমরা গর্ব অনুভব করছি। পাশাপাশি যারা এই অভিযোগ করেছিলেন তাদের প্রতি জানাই চরম ঘৃণা ও ধিক্কার জানিয়ে অবিলম্বে তাদের ভুল শিকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবী জানাচ্ছি। সময় এসেছে তাদের চিহ্নিত করে দেশের উন্নয়নের জয়যাত্রাকে অব্যাহত রাখার।
সম্মানিত সাংবাদিক ভাইয়েরা,
আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, বিশ্ব ব্যাংক সহ বিশ্বেও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশিদার। একের পর এক দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড দেখে তারা বিস্মিত, তারা অভিভূত। স্বয়ং বিশ্ব ব্যাংক প্রতিনিধি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অগ্রগতি সহ দেশের সার্বিক উন্নয়ন-অগ্রগতি দেখে অভিভূত হয়েছে। আর এর মধ্য দিয়েই প্রমানিত হলো যে আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সরকার, উন্নয়নের সরকার, অগ্রগতির সরকার। দেশ ও জনগণের স্বার্থে যেকোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষমতা শেখ হাসিনার সরকার রাখে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সহ তার সরকার ও মন্ত্রী পরিষদকে জানাই সংগ্রামী প্রাণঢালা অভিনন্দন।
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সকল কর্মকান্ডের অংশিদার আপনারাও। আমাদের সকল সুখ-দু:খের সাথী আপনারা। এজন্য দলের পক্ষ থেকে আমনাদের কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। তারপরও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে যখন ষড়যন্ত্র শুরু হলো, চরম মিথ্যাচার হলো তখন আমরা প্রবাসীদের নিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংকের সদর দপ্তরের সামনে প্রতিবাদ আর বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছি, দলের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংক প্রধানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সংগ্রামী ও সফল সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে দলের সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীসহ শত শত প্রবাসী সেই সমাবেশে অংশ নেন। সেই সমাবেশ ছিলো একটি ঐতিহাসিক ও স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ। সেই সমাবেশ ও স্মারকরিপি প্রদানের এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্ব ব্যাংক বিষয়টি গুরুত্বেও সাথে দেখার আশ্বাস দিয়ে উত্তর দেয়। সেই সময়ে বিশ্ব ব্যাংক বিশ্বাস না করলেও আজ বিশ্ব ব্যাংক বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছে যে, বাংলাদেশ সরকার, সরকারের মন্ত্রী, আমলারা দূর্নীতি করেনি। আমরা আজকের সম্মেলন থেকে সেই বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশগ্রহণকারী দলের সকল নেতা-কর্মী ও প্রবাসীদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, পাশাপাশি আপনাদের মাধ্যমে ড. ইউনুসসহ যারা এই ডাহা মিথ্যা অভিযোগে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিশন গঠন করে বাংলদেশের প্রচলিত আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানাচ্ছি এবং বিশ্ব ব্যাংকও যেন তাহাদের ভূল শিকার করে বাংলাদেশর জনগনের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে।
সম্মানিত সাংবাদিক ভাইয়েরা,
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি আগামী দিনে দেশ আরো এগিয়ে যাবে। সরকারের ভিষন ২০২০ বাস্তবায়ন সহ আমাদের আগামী দিনের নেতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য নাতি, প্রধানমন্ত্রীর আইটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ-এর ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আগামী দিনের চলার পথে আপনাদেও পাশে পাবো এই প্রত্যাশা রেখে এবং উপস্থিত সবার প্রতি আবারো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।
জয় বাংলা ॥ জয় বঙ্গবন্ধু ॥ বাংলাদেশ চিরজীবী হউক
ধন্যবাদান্তে
স্বাঃ/ স্বাঃ/
সৈয়দ বশারত আলী
সহ সভাপতি
ও
আব্দুস সামাদ আজাদ
ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক