ঢাকা: অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে সংবাদ পাঠকের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজপেপার্স অ্যান্ড নিউজ পাবলিসার্স (ডব্লিউএএন্ডআইএফআরএ)-এর সদ্য প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড প্রেস ট্রেন্ডস-২০১৬ এর রিপোর্টে এমনটাই উঠে এসেছে। রিপোর্টে বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের গতিধারা পর্যালোচনা করা হয়েছে। ২০১৫ সালে ৭০টিরও বেশি দেশের গণমাধ্যমের গতিপ্রকৃতি উঠে এসেছে। রিপোর্টের সার সংক্ষেপে বলা হয়, বর্তমানে বিশ্বে ২৭০ কোটিরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ মুদ্রণ সংস্করণে সংবাদপত্র পড়েন। ওদিকে ডিজিটাল সংবাদপত্রের পাঠকসংখ্যাও বাড়ছে। বিশ্বের সর্বাধিক উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর কয়েকটিতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংবাদ পাঠকের সংখ্যা মুদ্রণ সংস্করণের পাঠক সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের আনুমানিক কমপক্ষে ৪০ শতাংশ অনলাইনে সংবাদপত্র ও সংবাদ পড়েন।
আগের বছরের গতিপ্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ২০১৫ তেও মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ের বেশিরভাগ এসেছে পাঠকদের কাছ থেকে। ওয়ার্ল্ড প্রেস ট্রেন্ড তথ্য উপাত্ত থেকে দেখা গেছে, সংবাদপত্রগুলো ২০১৫ সালে সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন থেকে আয় করেছে ১৬ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। ৮ হাজার ৯০০ কোটি ডলার (৫৩ শতাংশ) এসেছে মুদ্রণ ও ডিজিটাল সার্কুলেশন থেকে। আর ৭ হাজার ৯০০ কোটি ডলার এসেছে বিজ্ঞাপন থেকে। ম্যাগাজিনসহ সংবাদপত্র খাত সারা বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম সাংস্কৃতিক ও সৃষ্টিশীল শিল্প। আর এ দুই খাত বিশ্বব্যাপী ২৯ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে বলে বলা হয়।
সংবাদপত্র এবং প্রকাশকরা কয়েক বছর ধরে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রূপান্তর নিয়ে কাজ করে আসছে। তবে, অনলাইন পাঠক ও অনলাইনে আয় বৃদ্ধিতে ২০১৫ ছিল অত্যন্ত সাফল্যমন্ডিত বছর। ঐতিহ্যগত সংবাদ মাধ্যমগুলো তাদের পুরোদস্তুর ডিজিটাল প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত উন্নতমানের সাংবাদিকতার স্বাক্ষর রেখেছে। একইসঙ্গে সাবক্রিপশন ও বিজ্ঞাপন আয়েও তারা এগিয়ে ছিল।
এ খাতে অব্যাহতভাবে অন্যতম মৌলিক একটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেটা হলো সকল প্ল্যাটফর্মে সংবাদ মাধ্যমের কন্টেন্টের জন্য নতুন বিশ্লেষণী সরঞ্জাম এবং নতুন পরিমাপকসমূহ। প্রকাশকরা তাদের কন্টেন্টের সাফল্য সঠিকভাবে আগাম পরিকল্পনা এবং পর্যালোচনা করতে না পারলে এবং পাঠক প্রবণতার বেশিরভাগ দিক বুঝতে না পারলে, নিজেদের কন্টেন্টের মূল্য সফলভাবে আদায় করতে সক্ষম হবে না। বিজ্ঞাপনের পণ্য সম্ভারও পূর্ণ সম্ভাবনা নিয়ে বিক্রি করতে পারবে না। গুরুত্বপূর্ণ হলো পাঠকদের সম্পর্কে বড় এমনকি ছোট খাটো তথ্যগুলো কিভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে তা।
রিপোর্টে আরো বলা হয়, ওয়ার্ল্ড প্রেস ট্রেন্ডস এবং ডব্লিউএএন্ডআইএফআরএ’র অন্যান্য গবেষণা ও প্রকাশনা উদ্যোগগুলোর লক্ষ্য হলো, ডিজিটাল জগতে সংবাদপত্র মাধ্যম নতুন যে ভূমিকা রাখবে তা আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে অবদান রাখা। মুখ্য বিষয় হলো– সংবাদের বিষয়বস্তু এবং সংবাদ ও উন্নত সাংবাদিকতা উপস্থাপন করা। সংবাদ মাধ্যম আমাদের সমাজে যে উপকারিতা ও তাৎপর্য যোগ করেছে তা নতুনভাবে উপলব্ধি হয়েছে ২০১৬ তে।
ডব্লিউএএন্ডআইএফআরএ’র সিইও ভিনসেন্ট পেরেনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ যদি আপনি দেখেন, আমাদের সবাইকে এটা ফের মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে যে, সংবাদ মাধ্যমের ওপর আস্থা হলো সর্বজনীন। ভবিষ্যতেও এমনই থাকবে।’