নিউইয়র্ক: ব্যাপক হাঙ্গামা, মারামারি আর ভাঙচুর ঘটনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো দাগনভুইয়া সমাজকল্যাণ সমিতির নির্বাচন। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। নির্বাচনে ‘নুর-মালেক’ প্যানেল থেকে সভাপতি পদে নুর মোহাম্মদ আর ‘বেলাল-শামীম’ প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে শামীম আহমদ বিজয়ী হয়েছেন। গত ২৭ নভেম্বর রোববার ব্রুকলীনের ফুলটনস্থ ব্রেডফোর্ড এভিন্যুর আকবর হলে এই নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণার সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। নির্বাচনে ‘নুর-মালেক’ ও ‘বেলাল-শামীম’ প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে বিজয়ী সভাপতি নূর মোহাম্মদ ২৭৭ ভোট পেয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোহাম্মদ বেলাল পেয়েছেন ২৬০ ভোট। অপরদিকে বিজয়ী সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ পেয়েছেন ২৭১ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল মালেক ভুইয়া পেয়েছেন ২৬৫ ভোট। সহ সভাপতি পদে বিজয়ী আলম আক্তার বিপ্লব পেয়েছেন ২৭৮ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ জয়নাল আবদীন পেয়েছেন ২৫৬ ভোট। সহকারী সম্পাদক পদে বিজয়ী রফিক উদ্দীন বাহার পেয়েছেন ২৮৩ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী জাকির হোসেইন পেয়েছেন ২৫০ ভোট।
জানা গেছে, ভোট গণনা শেষে নির্বাচন কমিশনের ফলাফল ঘোষণার আগে একদল উশৃঙ্খল ব্যক্তির তুমুল অরাজকতা ও ভাঙ্গচুরের কারণে শান্তিপূর্ন নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। পরবর্তীতে রাতে নির্বাচন কমিশনের প্রধান শহীদুল্লাহ কায়সার এই ঘটনার জন্য একটি বিশেষ মহলকে দায়ী করে বলেন, যারা গণতান্ত্রিক চেতনার বিরোধী তারাই এই ঘটনার জন্য দায়ী। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের ফলাফল ঘোষণার আনুষ্ঠানিকতাকে বানচাল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চেয়েছিল এই মহল। এজন্য চরম অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছিল। এদের বিরুদ্ধে শান্তিপ্রিয় সকলকে স্বোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
নির্বাচনের দিন সকাল থেকেই শান্তিপূর্নভাবে শত শত নারী পুরুষের সরব উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় ভোট গ্রহণ। নির্বাচন শেষে ভোট গণনার কাজও হয় সবার উপস্থিতিতে। আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণার আগেই সভাপতি পদপ্রার্থী মোহাম্মদ বেলাল অপর সভাপতি পদপ্রার্থী নুর মোহাম্মদকে অভিনন্দন জানান। এ সময় সবার উপস্থিতিতে দুজন কোলাকুলিও করেন। এই পর্যায়ে দুই পক্ষের নির্বাচনী এজেন্টরা ফলাফল সংক্রান্ত কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার রাত ১১টার দিকে নির্বাচন কমিশনার ফলাফল ঘোষণার উদ্যোগ নেন। এর আগেই ‘নুর-মালেক’ পরিষদের সমর্থক হিসেবে পরিচিত কতিপয় উশৃংখল ব্যক্তি নির্বাচনের ফলাফল না মানার ঘোষণা দিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি করে। তারপরও সমিতির মুরুব্বীরা ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার দাবী জানালে নির্বাচন কমিশনার আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার প্রাক্কালে ব্যাপক হাঙ্গামা, মারামারি, হুলস্থুল ও ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে চিহ্নিত মহল। এই অবস্থায় নির্বাচন কমিশনও ছিলেন ভীত বিহ্বল। এক পর্যায়ে তারা ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেয়ার প্রয়াস চালায়। এ সময় বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া তাদের নিবৃত্ত করার প্রয়াস চালাতে গিয়ে নিজেও প্রহৃত হন আক্রমনকারীদের হাতে।
দফায় দফায় আক্রমন ও ব্যাপক ভাংচুরের মধ্যে সৃষ্টি হয় এক নারকীয় পরিবেশ। আক্রমনকারীরা ভেঙ্গে ফেলে চেয়ার, টেবিল ও ব্যালট বাক্স। ছুড়ে মারে চেয়ার। ব্যাপক ভাংচুরের আওয়াজে সেখানে সৃষ্টি হয় ভীতিকর পরিবেশ। এ সময় বৃহত্তর নোয়াখালীর পরিচিত মুরব্বীদের বেশ কয়েকজন দেয়াল টপকে লাফ দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
ব্যাপক ভাংচুরের মধ্যে হল কর্তৃপক্ষ ছুটে আসে। তারা অবিলম্বে হল ত্যাগের অনুরোধ জানায়। এরই মধ্যে নতুন করে সূচনা হয় ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া আর মারামারি। আবার শুরু হয় ভাঙ্গচুর। এই পর্যায়ে হলের দায়িত্বে নিয়োজিতরা পুলিশ ডাকেন। তারা উপরে তান্ডব ও ভাঙ্গচুরের ভয়াবহতা দেখে এটাকে ‘বাঞ্চ ও অব এ্যানিমেল’ এর কান্ড বলে অভিহিত করতে থাকে।
এ সময় নোয়াখালী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিন্টুর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা প্রশমিত হলে উপস্থিত হয় পুলিশের গাড়ী। এসময় পুলিশ সবাইকে রাস্তা ছেড়ে ঘরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
দাগনভুইয়া সমাজকল্যাণ সমিতির নির্বাচনে অপ্রীতিকর ঘটনার কারণ সম্পর্কে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘বেলাল-শামীম’ প্যানেলের সভাপতি পরাজিত হলেও সাধারণ সম্পাদক সহ ১১টি পদের মধ্যে ৯টিতেই ‘বেলাল-শামীম’ প্যানেলের বিজয়কে তার প্রতিপক্ষ সহজভাবে নিতে পারেনি। যার ফলে তাদের সমর্থক কতিপয় উশৃংখল ব্যক্তি নির্বাচনের ফলাফল বানচালের উদ্দেশ্যে নজিরবিহীন এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদিকে নির্বাচন কমিশন দাগনভূইয়া সমিতির নির্বাচনের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার শহীদ উল্লাহ কায়ছার জানান, নির্বাচনে ৪টি পদে ‘নুর-মালেক’ পরিষদের সভাপতি প্রার্থী নুর মোহাম্মদ ২৭৭ ভোট এবং তার প্রতিদ্বন্দি ‘বেলাল-শামীম’ পরিষদের সভাপতি প্রার্থী মোহাম্মদ বেলাল ২৬০ ভোট পেয়েছেন। নুর মোহাম্মদ ১৭ ভোট বেশী পেয়ে সভাপতি নির্বাচিত হন।
সহ সভাপতি পদে ‘নুর-মালেক’ পরিষদের আলম আক্তার বিপ্লব ২৭৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ‘বেলাল-শামীম’ পরিষদের সহ সভাপতি প্রার্থী মোহাম্মদ জয়নাল ২৫৬ ভোট পেয়ে পরাজিত হন।
সাধারণ সম্পাদক পদে ‘বেলাল-শামীম’ পরিষদের শামীম মাহমুদ ২৭১ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন এবং প্রতিদ্বন্দি আব্দুল মালেক ভূইয়া ২৬৫ ভোট পেয়ে পরাজিত হন।
‘বেলাল-শামীম’ পরিষদের সহ সাধারণ সম্পাদক পদে রফিক উদ্দিন বাহার ২৮৩ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। তার প্রতিদ্বন্দি মোহাম্মদ জাকির হোসাইন ২৫০ ভোট পেয়ে পরাজিত হন।
উল্লেখ্য, সর্বমোট ১১টি পদের মধ্যে ‘বেলাল-শামীম’ পরিষদের ৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হন। তারা হলেন: সাংগঠনিক- সম্পাদক মোহাম্মদ সামছুল আহসান রবিন, কোষাধ্যক্ষ- আব্দুল আওয়াল, সমাজকল্যাণ সম্পাদক- ছিদ্দিক উল্লাহ (লিটন), প্রচার সম্পাদক- রুবেল আলী, কার্যকরী সদস্য- যথাক্রমে আবুল হোসেন (সোহেল) আবু তাহের ও আব্দুল্লাহ আল জাবের।