ঢাকা: জাতীয় প্রেসক্লাবের ৩১ তলা বঙ্গবন্ধু মিডিয়া কমপ্লেক্সের ভিত্তিফলক উন্মোচন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তোপখানা রোডে জাতীয় প্রেসক্লাবের পুরো জমি নিয়ে এ কমপ্লেক্সের নকশা করা হয়েছে। ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্তিত প্রেসক্লাবের সদস্য ও নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, স্বপ্ন দেখতে হবে। কিন্ত সক্ষমতা ছাড়িয়ে যেন স্বপ্নের জগতে চলে না যাই। তাহলে ঘুম ভাঙলে ধপাস করে পড়ে যেতে হবে।বঙ্গবন্ধু মিডিয়া কমপ্লেক্স নির্মাণে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার পক্ষ থেকে যা করার করব।
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কর্ণধারদের উদ্দেশে বলেন, মিডিয়া মালিকরা ১০/২০ কোটি করে টাকা দেবেন। অ্যাডভান্স দেবেন। আপনাদের জায়গা দেব, কেটে নেবেন।
পুরো ২ দশমিক ০৬ একর জমি নিয়ে প্রেসক্লাব বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স-এর নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। ভবনটি প্রতি তলার আয়তন ১৯,৮০০ বর্গফুট। প্রথম ১০ তলা সম্পূর্ণ প্রেসক্লাব এবং মিটিং, কনফারেন্সের ভাড়ার জন্য ব্যবহার হবে। ভবনটিতে থাকবে ১২০০ লোক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি অত্যাধুনিক অডিটরিয়াম। যেটিতে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য আলাদা পথ থাকবে। ১১ তলা থেকে ২৮ তলা পর্যন্ত বিভিন্ন সংবাদপত্র, দেশি-বিদেশি সংস্থা, টিভি, রেডিওর জন্য ভাড়া দেওয়া যাবে। ২৯ তলা থেকে ৩১ তলা পর্যন্ত হেলথ ক্লাব, সুইমিংপুল, জিমনেসিয়াম ইনডোর গেমস, গেস্ট হাউস, ডাইনিং হল সিনেপ্লেক্স ইত্যাদির জন্য বরাদ্দ। ভূমিকম্প সহায়ক নির্মাণ শৈলীর প্রয়োগে নির্মাণাধীন কমপ্লেক্সটির পুরো ওপেন স্পেসে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করে এক লেভেল উপরে প্লাজার সৃষ্টি করা হয়েছে, সামনে সৌন্দর্য বর্ধনে রাখা হয়েছে ঝর্ণা।
পুরো কমপ্লেক্সের নিচে দুটি বেজমেন্টে গাড়ি পার্কিং-এর ব্যবস্থা থাকবে। এক সঙ্গে প্রায় ৪২২টি গাড়ি পার্কিং করা যাবে। এই ভবনের পাশাপাশি জাতীয় প্রেসক্লাব আঙিনার উত্তর-পূর্ব কোণে খোলা জায়গায় ৪ তলা একটি ভবন ডিজাইনে রাখা হয়েছে। যা নামাজের ঘর, ইউনিয়ন অফিস, মিটিং রুম, শো রুম, ডিসপ্লে সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হবে। বর্তমানে প্রেসক্লাবে যেসব গাছ রয়েছে, ডিজাইনের ক্ষেত্রে সে সমস্ত গাছ যথাসম্ভব না কেটে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এ ছাড়াও ডিজাইনে পুরো কমপ্লেক্স এলাকায় সবুজ গাছপালা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৫৪ সালের ২০ অক্টোবর পূর্ব পাকিস্তান প্রেসক্লাব নাম নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭২ সালের ৫ মার্চ এর নাম পরিবর্তন করে জাতীয় প্রেসক্লাব রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। ১৯৭৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের মাধ্যমে এর নাম জাতীয় প্রেসক্লাব রাখা হয়।
জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন ২০ অক্টোবর ভিত্তিফলক স্থাপনের সময় জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, রেলমন্ত্রী মজিবুল হক, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, দৈনিক সমকাল সম্পাদক ও প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য গোলাম সরওয়ার, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান বাসেত মজুমদার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ন এবং বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগ মেজরিটির যুক্তফ্রন্ট সরকার ১৮, তোপখানা রোডের লাল দোতলা ভবনটি (বর্তমান স্থানের আগের অবকাঠামো এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন ক্ষতিগ্রস্ত) ‘পূর্ব পাকিস্তান প্রেসক্লাব’-এর নামে বরাদ্দ দেন। ২০ অক্টোবর সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ দেখা করেন যুক্তফ্রন্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। ওই বৈঠকে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও উপ¯ি’ত ছিলেন। এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম জাতীয় প্রেসক্লাব। আর আজ ৬২ বছর পর সেই জমিতেই প্রেসক্লাবের আধুনিক ভবন নির্মাণ হ”েছ।
প্রধানমন্ত্রী ‘জাতির পিতা’র প্রেসক্লাবে আগমনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৭২ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভায় ‘জাতির পিতা’ তার ভাষণে বলেছিলেন, গণতন্ত্রের একটা নীতিমালা আছে। সাংবাদিকতারও একটা নীতিমালা আছে। এ দুটো মনে রাখলে আমরা অনেক সমস্যা সমাধান করতে পারব।
প্রেসক্লাবের জায়গাটিও সাংবাদিদের জন্য চূড়ান্ত বরাদ্দ প্রদানে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে প্রেসক্লাবে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানো হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণও করেন। কিন্ত বঙ্গবন্ধু বলেন, তিনি খালি হাতে প্রেসক্লাবে আসবেন না, জমি বরাদ্দের চূড়ান্ত কাগজ নিয়েই তবে তিনি আসবেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, নানা প্রক্রিয়া শেষে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু লিখিতভাবে প্রেসক্লাবে জমির চূড়ান্ত লিজ বরাদ্দ দেন। কিন্তু পঁচাত্তরের আগস্টে নির্মমভাবে জাতির জনকের হত্যাকা-ের ফলে ওই জমি আর তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবকে হস্তান্তর করতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর থেমে যায় নতুন জমিতে ক্লাব ভবন নির্মাণের সমস্ত প্রক্রিয়া। (আমাদের সময়.কম)