নিউইয়র্ক: চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার সন্দ্বীপ চরে উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনসহ সন্দ্বীপের সাথে নোয়াখালী ও ফেনী জেলার অমিমাংসিত সীমানা নির্ধারণ এবং সন্দ্বীপ সীমানায় জেগে ওঠা নতুন চরসমূহ অন্য জেলার সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত না করার দাবীতে বাংলাদেশী অধ্যুষিত নিউইয়র্কের ব্রুকলীনে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সন্দ্বীপবাসী বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। ১১ মার্চ শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ব্রুকলীনের ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউতে ‘সন্দ্বীপ সীমানা রক্ষা আন্দোলন কমিটি, ইউএসএ’র ব্যানারে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এই কর্মসূচী চলে। এতে সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক প্রবাসী সন্দ্বীপবাসী সহ প্রবাসী বাংলাদেশীরা অংশ নেন। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা তাদের দাবী-দাওয়া সম্বলিত পোস্টার, প্লেকার্ড ও ব্যানার হাতে নিয়ে মুহুর্মুহ শ্লোগানে ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউ এলাকা প্রকম্পিত করে তোলেন।
মানববন্ধনকারীদের মূল দাবী ছিল সন্দ্বীপের পশ্চিমে জেগে উঠা ঠ্যাংগার চর, জাহাইজ্জার চর ও জাইল্যারচর সমূহে সন্দ্বীপের বাস্তুহারাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা এবং অনতিবিলম্বে সন্দ্বীপ সংলগ্ন চট্টগ্রাম জেলা ও নোয়াখালী জেলার সীমানা নির্ধারণ। তাদের শ্লোগান সমূহ ছিল: ‘বাপ দাদার ভিটা চর, সন্দ্বীপবাসী রক্ষা কর’, ‘আমরা হারব না হারব না, সন্দ্বীপের মাটির একটি কনাও ছাড়বো না’,‘ন্যামস্তি চর, ঠ্যাংগার চর, সন্দ্বীপবাসী রক্ষা কর’,‘ সন্দ্বীপের ভূমির অধিকার, কেড়ে নেবার সাধ্য কার’,‘সন্দ্বীপের নদী সিকস্তিদের, ঠ্যাংগার চরে পূনর্বাসন চাই’,‘দেশে এবং প্রবাসে সন্দ্বীপবাসী জেগেছে’,‘ভূমি দস্যুরা হুশিয়ার,ভিটে মাটি সন্দ্বীপের অধিকার’,‘আমার ভূমি, আমার চর, বীর চট্টলা রক্ষা কর‘,‘মোদের ভূমি, ঠ্যাংগার চর, সন্দ্বীপবাসী রক্ষা কর’,‘ভুলে গিয়ে নানা মত, সন্দ্বীপ বাঁচাতে ঐক্যমত‘,‘জাহাইজ্জার চর- ঠ্যাংগারচর, সন্দ্বীপবাসী বাঁধবে ঘর’,‘স্বর্ণদ্বীপ-সন্দ্বীপ’, One Day I want go back to my home, Do not take away my home. প্রভৃতি। খবর ইউএনএ’র।
মানববন্ধন কর্মসূচীতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সন্দ্বীপবাসীদের অন্যতম সামাজিক সংগঠন সন্দ্বীপ সোসাইটি ইউএসএ, সন্দ্বীপ অ্যাসোসিয়েশন উত্তর আমেরিকা ও সন্দ্বীপ এডুকেশনাল এন্ড কালচারল সোসাইটি সহ সন্দ্বীপ উপজেলা প্রবাসীদের বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত ১৬/১৭টি সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং সদস্যসহ হজারো প্রবাসী অংশ নেন বলে মানববন্ধন কর্মসূচীর মুখপাত্র এস এম ফেরদৌস ইউএনএ প্রতিনিধিকে জানান। মানববন্ধন কর্মসূচিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, নদী বক্ষে আবাদি জমিসহ ভিটে-মাটি হারা এক লাখ ৮৫ হাজার মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এদের পুনর্বাসনে আজ পর্যন্ত সত্যিকারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ভিটে-মাটি হারানো এসব লোকজন জমি জেগে ওঠলে সেখানে বসতি গড়ার আসায় বহু বছর যাবত অপেক্ষা করে আসছেন। সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে চর জেগে ওঠায় উদ্বাস্তুরা ওই জমির বন্দোবস্তের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। কিন্তু জেগে ওঠা চরে উদ্বাস্তুদের বাদ দিয়ে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের কথা বলা হচ্ছে।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বলা হয়, সন্দ্বীপের ন্যামস্তির চর তথা ঠ্যাংগার চরে সন্দ্বীপের ভিটে-মাটিসহ আবাদি জমিহারা উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের পর সেখানে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা হলে কারও আপত্তি থাকবে না। মানববন্ধন কর্মসূচিতে ১৯৭০ সালের ৩০ জানুয়ারী বিভাগীয় কমিশনার আদালত চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার প্রশাসককে আন্তঃজেলার সীমানা নির্ধারণের যে নির্দেশ প্রদান করেন তা বাস্তবায়ন এবং ঠ্যাংগার চরে সন্দ্বীপের বাস্তুহারাদের বসবাসের সুযোগ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান হয়। এছাড়া সন্দ্বীপের সিমানা নির্ধারণ বাস্তবায়নসহ সন্দ্বীপে জেগে ওঠা চরগুলোতে সন্দ্বীপের বাস্তুহারাদের পুনর্বাসন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
মানববন্ধন থেকে জানানো হয় যে, তাদের দাবীর ব্যাপারে শীঘ্রই নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেলের মাধ্যমে সরকারের কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, একই দাবীতে ‘সন্দ্বীপ সীমানা রক্ষা আন্দোলন কমিটি, ইউএসএ’র ব্যানারে গত ৯ মার্চ নিউইয়র্কে এক সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উল্লেখিত দাবী-দাওয়া বাস্তবায়নের জন্য সরকারের দৃষ্টি কামনা করা হয়।
ব্রুকলীনের মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশগ্রহনকারী সংগঠনসমূহ ও নেতৃবেৃন্দর মধ্যে ছিলেন- সন্দ্বীপ এসোসিয়েশন, উত্তর আমেরিকা’র সভাপতি মুক্তিযুদ্ধা মুজিবুল মাওলা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান মহিউদ্দিন, সন্দ্বীপ সোসাইটি, ইউএসএ’র সভাপতি মাফুজুল মাওলা নান্নু ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান পান্না, সন্দ্বীপ এডুকেশনাল এন্ড কালচারল সোসাইটি’র সভাপতি এস, এম ফেরদৌস ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হায়দার, বাউরিয়া জনকল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসাইন, সন্দ্বীপ এডুকেশন এন্ড কালচারল সোসাইটি’র সভাপতি সামছুদ্দীন আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম, হারামিয়া ইউনিয়ন জনকল্যাণ তহবিল সংস্থা’র সভাপতি মোহাম্মদ শাহাজাহান ও সাধারণ সম্পাদক মিলাদ বারি, গাছুয়া প্রবাসী দান তহবিল সংস্থা’র সভাপতি ইদ্রিস আলম ও সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদুল ইসলাম, মুছাপুর সামাজিক সাংস্কিৃতিক কল্যাণ সমিতি’র সভাপতি নুরুজজামান ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর ভূঁইয়া, মগধরা জনকল্যাণ সমিতি’র সভাপতি বখতিয়ার উদ্দিন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমির হোসাইন, সন্দ্বীপ পৌরসভা কল্যাণ সমিতি’র সভাপতি জাফরউল্যাহ ও সাধারণ সম্পাদক ইসমত পাশা খোকন, রহমতপুর জনকল্যাণ সমিতি’র সভাপতি হানিফ মোহাম্মদ আকবর ও সাধারণ সম্পাদক পাশা মাওলা, কালাপানিয়া সমাজ কল্যাণ সমিতি’র সভাপতি মোহাম্মদ নোয়াব ও সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন, সন্দ্বীপ গণ উন্নয়ন পরিষদ’র সভাপতি একেএম সাইফুল ও সাধারণ সম্পাদক: ফখরুল ইসলাম সহ সারিকাইত ইউনিয়নবাসী, সন্তোষপুর ইউনিয়নবাসী, আমানউল্যা ইউনিয়নবাসী ও সিতাকুন্ড সমিতির নেতা-কর্মী-সদস্য।
এছাড়াও আয়োজক কমিটির সদস্যদের মধ্যে মানববন্ধন কর্মসূচীতে আরো উপস্থিত ছিলেন আবু জাফর মাহমুদ, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, চন্দন দত্ত, দিদারুল আলম সাহাব, হেলাল উদ্দিন, মিজানুর রহমান মিল্টন ভূঁইয়া, এমলাক হোসেন ফয়সাল, ফিরোজ আহমেদ, রেফায়েত উল্যাহ চৌধুরী, নুরুছ ছাপা, মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, আবদুল কাদের মিয়া, আব্দুল ওয়াদুদ, আবুল হাসেম শাহাদাত, মোহাম্মদ মুনিরুল, জামশেদ চৌধুরী, অধ্যাপক কাজী ইসমাইল, আব্দুল বাতেন, মোহাম্মদ হামিদ, আজিম উদ্দিন অভি, সালাউদ্দিন বিপ্লব, আশ্রাব উদ্দিন, সোহেল মাহমুদ, হুমায়ুন কবির, কামাল উদ্দিন, আবুল হাসেম, সিরাজুর মাওলা, আব্দুল কাদের, মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মহিদুল মাওলা সুজন, মামনুনুল হক মামুন, আমিন রসুল, মাওলানা আবুল কালাম, আবুল হাশেম, মিলাদ বারি, আবদুল হান্নান পান্না, মোহাম্মদ হামিদ, বখতিয়ার উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম, মাকসুদুর রহমান, মনির উদ্দিন, শাহাব উদ্দিন, নুর ইসলাম, মোহাম্মদ আলমগীর, কামাল উদ্দিন, আবদুল মন্নান, কাউসার সর্দার প্রমুখ সন্দ্বীপবাসী।